somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বইকথন:- ২০১৬ সালে আমার পড়া সেরা বইগুলো

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকাল শীত খুব বেশি। আমি ডোনাল্ড ট্রাম্প হলে, কিংবা আমাদের দেশে তুষারপাত হলে, হয়তো বলেই ফেলতাম, "It's freezing and snowing in New York. We need global warming!" চারদিক কুয়াশায় ঘেরা। গাছপালা, দোকান, বাজার ব্লুয়ার হয়ে আসছে চোখে। দেখা যাচ্ছে না কিছুই। দশ হাত দূরে যে বিল্ডিংটা, তার চারতালার জানালায় যে মেয়েটা দাঁড়িয়ে-তাকে পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না ভালো করে।
"এমন দিনে কী করা যায়/ এমন ঘনঘোর কুয়াশায়?"
গাঁজা টেনে চোখ লাল করে ফিরছিলেন শরিফুল ভাই। জিজ্ঞেস করলাম, "কী করা যায় বলেন তো এই শীতে?"
শরিফুল ভাই বেটে। কাঠির মত শরীর। চিকন লোকেরা লম্বা হয় সাধারণত। ভাই কীকরে খাটো হলেন, সে এক গবেষণা করার মত ব্যাপার বটে। বেটে বলে গায়ে জড়ানো চাদরটা ভূমি স্পর্শ করছে মাঝেমাঝেই।
তিনি, গায়ের চাদরটা আরেকটু ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে বললেন, "গাঁজা খ্যায়া ঘুম দে একটা। দেখবি ভবের দেশে চলে গেছিস। আরাম....."
শরিফ ভাই এমনভাবে আরাম শব্দটা উচ্চারণ করলেন, যেন এক্ষুনি তার একবার অর্গাজম হয়ে গেল!
গাঁজার মাহাত্ম আমি ভালই জানি। তবে শরিফ ভাই, নিজে গাঁজা খান বলে, আমাকেও যে গেঁজেল হতে বলবেন, এটা ভাবিনি। আপাতত, ভবের দেশে যাওয়ার ইচ্ছে মোটেও নেই। অগত্যা রুমে ফিরে এলাম।
গত সাতদিনে জানলাকপাট বন্ধ করে পড়েছি। কোন বন্ধুর সাথে আড্ডা মারিনি, চায়ের দোকানে বসে গালগল্প শুনিনি, নেট এক্সপ্লোর করিনি দরকার না হলে। তাই ঠিক করলাম, ব্লগিং করবো আজ। লিখবো যা ইচ্ছে। মনের কথাগুলো। তাছাড়া আজকের দিনে একটা পোস্ট দেয়া উচিৎ।
এমন দিন তো আর প্রতিদিন আসে না।
কিন্তু লিখতে চাইলেই যে লেখা আসে না! কত শ্রম লাগে, লাগে কত প্রচেষ্টা! লিখতে ইচ্ছে হলো কিছু, আর লিখে ফেললাম- লেখালেখি এতো খেলো হলে, আমি এতোদিনে দশবারোটা বই পয়দা করতে পারতাম। (অবশ্য মাঝেমাঝে লেখালেখিকে খেলোই মনে হয়। যেহারে একুশে বইমেলায় বই প্রকাশিত হয়- তাতে এটা মনে করাই স্বাভাবিক)। নারায়ন গাঙ্গুলি একবার বলেছিলেন, একটা পরিবেশ সৃষ্টি কর, একটা কোনরকম কাহিনী ঢালো, কিছু সংলাপ লাগিয়ে দাও- হয়ে গেল চলনসই একটা উপন্যাস! (প্রতিবছর একজন লেখক আর কোন উপায়ে চারপাঁচটা করে কিতাব নাজিল করেন?)
সে চেষ্টাও করলুম। হলো না। আমি যে কত নিম্নমানের লেখক, তার প্রমাণ পেলাম হাতেনাতে!
কিন্তু আজ যে একটা পোস্ট লিখতেই হবে, যে করেই হোক!
তাই এমন কিছু লিখবো ঠিক করেছি, যা লিখতে মাথা ঘামাতে হয় কম- লেখার দক্ষতা, চর্চা, ক্ষমতা- এসব অত্যাবশ্যকীয় গুনাবলী লাগে আরো কম। লিখবো, আমার কতগুলো প্রিয় বই নিয়ে।
গতবছর অবশ্য খুব বেশি বই পড়িনি। এবছরেও পড়তে পারবো খুব বেশি, এমনটা মনে হচ্ছে না। তবুও কিছু অসাধারণ বই এসেছিল হাতে। পড়েছি। আলোকিত হয়েছি। খুলে দিয়েছে তারা মনের অনেক রুদ্ধদুয়ার। আলো ফেলেছে হৃদয়ের অচেনা কোন কোনে।
আমার এই পোস্ট, আমার সবচেয়ে বেশি ভাল লাগা পাঁচটা বই নিয়ে। যে-বইগুলো নিয়ে লিখবো বলে ঠিক করেছি- আমার উচিৎ ছিল, তাদের প্রত্যেককে নিয়ে পূর্নাঙ্গ একটা করে রিভিউ লেখা। মুগ্ধতা প্রকাশ করা। কিন্তু পারিনি। আলস্য এই অপারগতার কারণ- এটা বলা মিথ্যে হবে। বোধকরি কারণটা আমার অক্ষমতা। বইগুলো এতোটাই আবিষ্ট করে রেখেছিল যে, সেমুহূর্তে কিছু লিখলে তা হত বইগুলোর নির্জলা প্রশংসা। রিভিউ নয়। কিছুসময় চিন্তা করে, ভাবনাগুলো গুছিয়ে নিয়ে, হৃষ্টশান্ত মনে না লিখলে- "রি-ভিউ" শব্দটার প্রতি, টার্মটার প্রতি সুবিচার করা হয় না ঠিক।
রিভিউ লেখার মত দুঃসাধ্য সাধনের প্রচেষ্টা করবো না আজও। শুধু লিখে যাবো বইগুলো নিয়ে মনের ভেতরে থাকা টুকরোটুারো অনুভূতিগুলো। কিংবা তুলে ধরবো বইগুলো সম্পর্কিত কিছু তথ্য মাত্র।
আর সে-সুবাদে দুই বছরপূর্তির পোস্টটাও দেয়া হয়ে যাবে।
"কেউ পড়েছেন পড়ার পুঁথি, কেউ পড়েছেন গল্প,
কেউ পড়েছেন হদ্দমতন, কেউ পড়েছেন অল্প।
কেউ বা তেড়ে গড়গড়িয়ে মুখস্থ কয় ঝাড়া,
কেউ বা কেবল কাঁচুমাঁচু মোটে না দেয় সাড়া।"
- সুকুমার রায়

১। এবছর যত বই পড়েছি, তার বেশিরভাগই ছিল ফেলে দেয়ার মত। টেবিলে রেখে জায়গা নষ্ট করার ইচ্ছেও করেনি অনেকসময়। সেপঙ্কে পদ্ম যে ফোটেনি- তা নয়। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর "পিতৃতান্ত্রিকতার বিপক্ষে" তাদের মধ্যে সুন্দরতম। অন্যতম। এবং বিরলতম অনেকক্ষেত্রে। বিরলতম একারণে যে, এমন লেখা পাওয়া যায় না খুব-একটা এদেশে; গেলেও তা হয়ে যায় অনেকসময় একপেশে।i
আমার লিস্টে তাই "পিতৃতান্ত্রিকতার বিপক্ষে" থাকছে একনম্বরে।
পিতৃতান্ত্রিকতার বিপক্ষেঃ- "মেয়েরাও পারে ছেলের মত লেখাপড়া করতে, খেলতে, বাইরে কাজ করতে"....ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থ্যাৎ মেয়েরা পিছিয়ে নেই কোন ক্ষেত্রেই। তারাও "ছেলেদের মতোই" সব কিছু করছে।
এসব কথায় কোন ভুল নেই। কিন্তু যখন বলা হয় "ছেলেদের মত" তখন হয়ে যায় সমস্যাটা। এটাই পিতৃতান্ত্রিকতা। এটাই পিতৃতান্ত্রিক ধারনা- এটা পিতৃতান্ত্রিক ধারনার ফসলও।
পিতৃতন্ত্র আর পুরুষতন্ত্র দুটোই ভিন্ন- পিতৃতন্ত্রকে যেমন পুরুষতন্ত্র বলা যায় না, পুরুষতন্ত্রও নয় তেমন পিতৃতন্ত্র। কিন্তু অবস্থান তাদের খুব কাছাকাছি। সামান্য একটা রেশমের পর্দা টানা মাঝে, একটু টেনে দিলেই দুটোর আর তফাত পাওয়া যায় না খুঁজে।
আমাদের সমাজে পিতার একটা নির্দিষ্ট ইমেজ আছে। পিতা উপার্জনকারী, রক্ষাকর্তা- তিনি বটবৃক্ষের মত একটি পরিবারকে ছায়া দান করেন, হেফাজত করেন। তিনি শাসনকর্তা- পরিবারের নিয়মশৃংখলা রক্ষায় কঠোর, কেউ ভুল করলে শাস্তিদানকারী। আবার তিনিই আকুল স্নেহময়- রাতদিন দৌড়ঝাপ করেন কেউ অসুস্থ হলে, বিপদে পড়লে। পিতার এই ইমেজটি তৈরী হয়নি একদিনে। (চরিত্রটিও। একটা আদর্শ ইমেজ ধরেই চরিত্র তৈরী হয়। পূর্বপুরুষের চালচিত্র, আচার- এসবই উত্তরপুরুষের চরিত্র গঠন করে।) এই শ্রদ্ধা ও ভয়মিশ্রিত ইমেজটি তৈরী হয়েছে ঠিক সেদিন থেকে, যেদিন থেকে পুরুষ নিজেকে পরিবারের অধিপতি ঘোষণা করেছে। সমাজের যেমন থাকে একজন অধিপতি, তেমন থাকা উচিৎ পরিবারেরও। আর সেই অধিপতির পদ দখল করে পুরুষ একজন রক্ষাকর্তা, শাসনকর্তা, নিয়ন্তাতে পরিনত হয়েছে। ধরেই নেয়া হয়েছে মেয়েরা দুর্বল, তারা অপারগ শাসন করতে, অদক্ষ উপার্জন করতে, অপুষ্ট রক্ষা করতে। তাই পিতাই পরিবারের প্রধানপুরুষ, একমাত্র সিদ্ধান্ত গ্রহনকারী।
এই ধারণা অবিচল ছিল ইউরোপে রেনেসার পূর্বপর্যন্ত। রেনেসা পরবর্তী সময়ে মেয়েরা এগিয়ে এসেছে কর্মক্ষেত্রে- উপার্জন করা শুরু করেছে নিজ হাতে। আস্তে আস্তে ফিরিয়ে নিয়েছে স্বাধীনতা পুরুষের হাত থেকে। এদেশে সে-বিপ্লবের আচ আসতে সময় লেগেছে আরো কয়েকশত বছর। দরিদ্র, তথাকথিত নিম্নশ্রেনীর বাঙালি নারীরা আদিম কাল থেকেই কাজ করে আসছে পুরুষের সাথে সাথে- মাঠে, ক্ষেতে, মানুষের বাড়িতে। বন্দী ছিল চারদেয়ালের মাঝে নিম্ন ও উচ্চ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের নারীরা। বিংশ শতাব্দীতে এই মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়েরা কর্মক্ষেত্রে নামার পরপরই পরিবর্তন হতে শুরু করে অনেককিছু। ভেঙ্গে যেতে থাকে পুরাতন মূল্যবোধ, ধ্যানধারণা।
আজ মেয়েরা অনেকটাই স্বাধীন। তারা লেখাপড়া করছে, খেলছে, নিজের ইচ্ছেমত পেশা বেছে নিচ্ছে- কিন্তু আজও মুক্ত হয়নি, আমরাও হইনি- পিতৃতান্ত্রিকতার শেকল থেকে। আজো তাই কোন মেয়ে মাঠে খেললে, তাকে শুনতে হয় "ছেলেদের মত বাইরে খেলে"। বাইরে কাজ করলে, "ছেলেদের মত বাইরে কাজ করে"। হোক তা ইতিবাচক ভাবে বলা।
"ছেলেদের মত" এই শব্দদুটিই আমাদের বুঝিয়ে দেয় আমরা মেয়েদের কোন চোখে দেখি। এর অর্থ হচ্ছে, খেলা, পড়া, বাইরে কাজ করা, পরিবার শাসন করা, দেশরাষ্ট্র চালনা করা- এসব ছেলেদের কাজ। কোনমেয়ে যদি এসব করে থাকে, তবে সে "ছেলেদের মত" করছে। এখনও যত প্রগতিশীল পরিবারই হোক না কেন, তার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পুরুষ তথা স্বামী বা পিতা। যদি কোন মেয়ে পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণ করে, দায়িত্ব পালন করে স্বামীর উপস্থিতিতে না অনুপুস্থিতে কিংবা অক্ষমতায়- তখন বলা হয় "সেই পরিবারের পুরুষ ঐ মেয়েটাই!"
আমরা এখন মেয়েদের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারিনি ঠিক। মেয়েরা সার্ট পরলেও শুনতে হয় একই কথা। বলা হয়ে থাকে "ছেলেদের মত হওয়ার" প্রচেষ্টা। এসবই পিতৃতান্ত্রিক মনোভাবের ফলাফল। পিতৃতন্ত্রই আমাদের শেখায়, "সব ধরনের ভারী কাজ, বাইরের কাজ" পুরুষ করবে, পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণ পুরুষ করবে আর মেয়েরা ঠেলবে চুলা। তাই মেয়েরা লাকড়ি ঠেলার বাইরে কিছু করলেই "ছেলেদের মত" খেতাব অর্জন করতে হয়।
আমাদের সমাজ পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। পুরুষ তিনচারটা বিয়ে করতে পারে এখনো এসমাজে। এখানে যতই আন্দোলন করা হোক নারী ক্ষমতায়ন, অধিকার ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে- সব যাবে বিফলে। কারণ চাইতে হবে আন্দোলন করে তো পুরুষের কাছেই! আজ গত আড়াই দশক ধরে এদেশ শাসন করছেন নারী। কিন্তু তারা ঠিক সে কাজটাই করছে, যেকাজটা তার জায়গায় দাঁড়িয়ে একজন পুরুষ করত। বস্তুত এদেশ এখনও শাসন করছে পুরুষই- শেখ হাসিনা পুরষের অন্যরুপ মাত্র!
এই পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে বেরুনো হয়তো এখন সম্ভব নয়। কিন্তু একটা সময় সত্যিই আসবে, যেদিন নারী আর পিছিয়ে থাকবে না কোন ক্ষেত্রেই, কোন সেক্টরেই। কোন কাজই যে একা পুরুষের নয়, সেটা বুঝতে পেরে যাবে। তখন হয়তো পরিবারে কোন তন্ত্র থাকবে না। পরিবারের অধিকর্তা হবে স্ত্রীস্বামী দুজনই। "ছেলেদের মত" খেতাবে ভূষিত হবে না আর কেউ।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী অসাধারণ আলোচনা করেছেন এই পিতৃতন্ত্র নিয়ে, তার প্রভাব আর মুক্তিপথ নিয়ে। পিতৃতন্ত্রকে তিনি শুধু পিতার শাসনেই আবদ্ধ করেননি। বিস্তৃত করেছেন পুজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ পর্যন্ত। এছাড়া মৌলবাদ, ধর্ম ও সমাজ নিয়ে আছে নিবিড় পর্যবেক্ষণ পূর্বক প্রবন্ধ। আছে হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে স্মৃতিচারণ। আর খুব বেশি করে বলা আছে মানবতার কথা-নিজেকে মানুষ হিসেবে পরিচিত করার কথা।
আমার জীবনদর্শন পাল্টে দিয়েছে "পিতৃতান্ত্রিকতার বিপক্ষে"। আমি জানি, আমি মানি- সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এই পঙ্কিলতায় বেঁচে থাকা শুভ্রতম প্রাবন্ধিক।
read this book- Click This Link
২। সতীর্থবলয়ে ডারউইন, দ্বিজেন শর্মাঃ- ডারউইনে আগ্রহ নেই এমন মানুষ হয়তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না। সেই আগ্রহ থেকেই বইটা সংগ্রহ করা। বইটা পাবলিক লাইব্রেরীর ধুলিধুসর অন্ধকারাঞ্চলে পড়ে ছিল বহুকাল। বইয়ের পাতাগুলো সোনালী হয়ে গিয়েছিল আর ইঁদুরদাঁতের কচকচানির স্বীকার মলাট। ত্রিশবছর আগে কেনা বইটি আমার আগে হয়তো পড়ে দেখেনি কেউ, এই লাইব্রেরী থেকে নিয়ে। কোন বুকমার্ক নেই। একফোঁটা নেই কালির দাগ কোথাও!
বোদ্ধা পাঠকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় দ্বিজেন শর্মা, কিন্তু আমার মত আমপাঠকের কাছে তিনি পৌঁছতে পারেননি কোনদিনও। এবং অবশ্যই পাঠকের কাছে লেখা পৌঁছে দেয়াটা লেখকের কাজ নয়। লেখক, তার মননের গভীর থেকে শব্দ এনে এক অনন্য জগৎ তৈরী করেন। সেজগত খুঁজে নিয়ে প্রবেশ করার দায়িত্ব পাঠকের। এ কাজে প্রকাশক গাইড আর বিজ্ঞাপন অনুপ্রেরণার কাজ করে। নিজেদের অক্ষমতা, প্রকাশকদের গাফিলতি কিংবা বিজ্ঞাপনের অভাব- যেকারণেই হোক না কেন; আমরা প্রবেশাধিকার পাইনি এখনও দ্বিজেন শর্মার জগতের। বাংলার পাঠকের এ এক বিশাল ব্যর্থতা।
যাক বইয়ের কথায় আসি। বইটায় শর্মা ডারউইনের সমসাময়িক ও কাছের অন্যান্য বিজ্ঞানীদের নিয়ে লিখেছেন অন্তন্ত সুললীত ও সুষম ভাষায়। সাধারণত মহামানবকে নিয়ে লেখা বইগুলোতে সেই মহামানবকে নিয়ে যাওয়া হয় সবার উপরে, তার সতীর্থ বা প্রতিযোগীদের দেখানো হয় ছোট করে। দ্বিজেন শর্মা করেননি এমন। সবার প্রতি দিয়েছেন সমান দৃষ্টি।
ডারউইনের শৈশব, তার পিতামাতা, তার ভাবনার জগৎ- এসবের অসাধারণ চিত্র এঁকেছেন তিনি। তার সতীর্থদের মাঝে, সেই সময়ের বিজ্ঞপন্ডিত মানুষের মাঝে ডারউইনের আবিষ্কার কেমন প্রভাব ফেলেছিল-তাও বলতে ভোলেননি তিনি।
বইটি শেষ হয়েছে লেখকের "ডারউইন তীর্থে" গমনের অনুপম বর্ণনা দিয়ে। ডারউইনের জন্মস্থান ল্যাংকশায়ারে। শ্রুসবেরি নামের ছোট্ট এক শহরের মাউণন্ট নামের স্থানে। লেখক দ্বিজেন শর্মা সেখানে গিয়েছিলেন একদিনের জন্য। দেখেছিলেন তার বাসস্থান ও স্কুল।
সুন্দর সেই একদিনের ভ্রমণকথা পড়ার জন্য হলেও বইটা কেনা উচিৎ।
৩। Playing It My Way by Shachin Tendulkar one of the doctors asked me how important that series was for me and why I was so determined to play. I said that it would be like missing my own wedding reception and there was no way I would want to do that!" :) :)
-Shachin Tendulkar
২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় শচীনের আত্মজীবনী। সব ধরনের ক্রিকেট থেকে তার অবসের কিছুদিন পর। আর সেই বই পড়ার সুযোগ হলো ২০১৬ তে। ক্রিকেটেশ্বের নিজের কলমে, নিজের ভাষায়, তার জীবন পাঠের ইচ্ছে ছিল বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই।
শচীনের শৈশব, তার ক্রিকেটার হয়ে ওঠা, ক্রিকেটপাগল একটা জাতির দায়িত্ব কাধে নিয়ে ২২ গজে কাটানো তার ২৪ বছরের জার্নির গল্প playing it my way...
শচীন জন্ম নিয়েছেন লেখক পরিবারে। তার বাবা রমেশ টেনডুলকার একজন মারাঠি কবি, লেখক ও সমালোচক। চার ভাইবোনের মধ্যে সর্বকণিষ্ঠ শচীন।
তার জীবনের নানা অলিগলি এ বইয়ের মুখ্য আকর্ষণ।
গল্পের শুরু হয় ১৬ নভেম্বর, ২০১৬ তে, ওয়াংখেরে স্টুডিয়ামে বিরাট কোহলির ডাকে। ফেয়ারওয়েল ভাষণের পর, বিরাট এসে বলেন তাঁকে, "paaji, you asked me to remind you that you had to go to the pitch one final time"।
শুরু হয় তাঁর গল্প।
শচীন টেনডুলকার ক্রিকেটার, লেখক নন, এটা মাথায় রেখেই পড়তে হবে বইটা। তিনি চেষ্টা করেছেন তার সর্বোচ্চটা দেয়ার, যেমনটা তিনি করতেন ক্রিজে। আর এভাবেই তার অপেশাদার কলমে উঠে এসেছে,সর্বশ্রেষ্ঠ এক ক্রিকেটারের উপাক্ষান।
৪। জলাঞ্জলি, তারাপদ রায়ঃ হাসতে ভুলে গিয়েছে বাঙালি পাঠক। ভোরে ঘুম থেকে উঠে চাট্টা খেয়ে বাসে ঝুলতে ঝুলিতে অফিস গমন। ঘণ্টা কয়েক মাথা ঘামিয়ে, বাড়ি ফিরে বৌয়ের ঘ্যানঘ্যান । বাজারের উচ্চমূল্য। টিভিতে বিজ্ঞাপন। ছাত্র হলে- পঠন পঠন পঠন!
এতো প্যারায় হাসা যায়?
এদিকে আমাদের সাহিত্যিকেরা আছেন হাড়ির মত মুখ করে। তারা পৃথিবীতে শুধু পঙ্গিলতা, অবিশ্বাস দেখতে পান। সরস কিছু যে লিখবেন, সেসময় কোথায় তাদের? তাছাড়া রম্যরচনা? ইনফিরিওর আর্ট! ওতে সময় নষ্ট কেন?
তারাপদ রায় সেসব সুপিরিওর ইনফিরিওর আর্ট-ফার্টের ধার ধারেন না! তিনি সারাজীবন কলম চালিয়ে গেছেন মানুষের মুখে সামান্য হাসি ফোটাতে। তিনি মজার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন, ব্যাঙ্গ করেছেন। প্রতিবাদও করেছেন এর মাধ্যমেই।
জলাঞ্জলি সেই রম্যরচনাগুলির মধ্যে কয়েকটির সংকলন। সাহিত্যম থেকে প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদ করেছেন দেবাশীষ দেব। ১৩০ পৃষ্ঠার বইটিতে আছে ষাটেরও অধিক রম্যরচনা।
জলাঞ্জলি কিনলে আপনার টাকা জলে যাবে না, গ্যারান্টি দিতে পারি।
৫। Tell Me Your Dreams by Sydney Sheldon: চকচকে মলাটের নতুন ইংরেজি বই কিনে পড়াটা বাঙালি সাধারণ পাঠকের জন্য দুঃস্বপ্নের মত। "বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না" কথাটা আজ বেঁচে থাকলে হয়তো মুজতবা আলী সাহেব বলতেন না। ৮-৯ ডলার আমেরিকানদের কাছে হয়ত কিছুই না। কিন্তু আমাদের জন্য সেটাই পাহাড়সমান।
আমাদের কাছে তাই ইবুক আশীর্বাদের মত। দুএক ডলার খরচ করলেই হস্তগত করা যায় নিউ ইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলার লিস্টে ছয়মাস ধরে থাকা বইটি। আর আমার মত আবাল পাঠকের জন্য আছে শতশত ফ্রি ইবুক ডাউনলোডের ওয়েবসাইট। তেমনি একটা ফ্রি ওয়েবসাইট থেকেই হাতে আসে "Tell me your dreams" বইটি। সিডনি শেলডনের।
আমরা যেমন প্রেমে পড়লে, ছ্যাকা খেলে, কারণে অকারণে কবিতা লিখি, আমেরিকানরা হয়তো তেমন করেই থ্রিলার লেখে তিনবেলা। প্রতিদিন অন্তত কয়েকশ' থ্রিলার প্রকাশিত হয় (ইবুক)। তাদের মধ্য থেকে বেস্টটা বেছে নেয়াটা আধকানার উঁকুন বাছার মত। অবশ্য এটা খুঁজে পেতে অসুবিধা হয়নি আমার। বিশ্বখ্যাত লেখক শেলডন। থ্রিলার খেকোরা বুঝি তার বই মুখস্তই করে ফেলেছে!
শেলডনের বাকি সব বইয়ের মতই থ্রিলার এটিও। আল্টার নিয়ে খুব বেশি কিছু জানা ছিল না আমার। বইটায় বিস্তারিত লেখা আছে সেসম্পর্কে।
খুন, সন্দেহ, আত্মত্যাগ, চেস- কী নেই এখানে!
ঢিমা জীবনে সামান্য উত্তেজনা আনার জন্য বইটা পড়ে ফেলতে পারেন।
*****
আরো কিছু বই আছে যাদের কথা বলতে ইচ্ছে করছে খুব করে। কিন্তু পোস্ট অলরেডি ডিকনারি সাইজের হয়ে গিয়েছে, তাদের নিয়ে লিখবো অন্যকোন দিন।
happy reading
১৯-২১ জানুয়ারি, ২০১৭
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৩৪
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×