somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কমফোর্ট উইমেন, পাকিস্তান- একটি ত্যানা

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কমফোর্ট উইমেনদের নিয়ে একটা ভিডিও কিছুদিন আগে পাওয়া গিয়েছিল। সেই সুবাদে, তখন, পড়েছিলাম ওদের নিয়ে সামান্য কিছু। যতটুকু পড়েছিলাম, উইকিপিডিয়ায়, শিউড়ে উঠেছিল গা।
২য় বিশ্বযুদ্ধে, জাপানি সৈন্যদের চিত্তবিনোদনের জন্য যে নারীদের ব্যবহার করা হয়েছিল, তাদের বলা হয় কম্পফোর্ট উইমেন। সোজা ভাষায় বেশ্যা। কিন্তু বেশ্যা শব্দটা কলুষিত করতে পারে জাপানি সৈন্যদের মাহাত্মকে(!), একথা ভেবে ওদের ডাকা হয় কমফোর্ট উইমেন!
এই কমফোর্ট উইমেনদের সংখ্যা কত ছিল, সেটা ঠিক জানা যায় না। তবে ধারণা করা হয়, কোরিয়া, চীন- এমনকি খোদ জাপান থেকেও দরিদ্র নারীদের চাকরির লোভ দেখিয়ে, কাউকেবা অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেনাদের কমফোর্ট স্টেশনে। বার্মা, ইন্দোনেশিয়া, পূর্ব তিমুর (তখন পর্তুগিজ তিমুর), তাইওয়ান, ভিয়েতনাম থেকেও বিভিন্ন বয়সের নারীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় কমফোর্ট স্টেশনে। ধারণা করা হয়, মোট কমফোর্ট উইমেনদের সংখ্যা ৩৬০০০০ থেকে চারলাখ ১০ হাজারের মত।
কমফোর্ট স্টেশনে সেসব নারীর উপর হত অকথ্য নির্যাতন। একজন নারীকে শুতে হতো অন্তত ২৫-৩০ জন পুরুষের সাথে। এমনকি শিশুদেরও ছাড়েনি জাপানি সেনারা। তারা তাদের অবাধ্য হলেই, দন্ড হিসেবে হতো মৃত্যু! কেউ গর্ভবতী হলে, জোর করে নষ্ট করা হতো ভ্রুণ। খেতে পর্যন্ত দেয়া হতো না।
জাপানি সৈন্যদের দ্বারা কমফোর্ট উইমেনদের প্রতি এই যে নির্যাতন, এর পুরো বিবরণ লিখতে গেলে দুইদিন লাগবে অন্তত। সেদিকে গেলাম না। শুধু এটুকু বলি, সেই সাড়ে তিন লাখ নারীদের মধ্যে খুব অল্প কজনাই বেঁচে ছিলেন যুদ্ধশেষে, এতো নির্যাতন সহ্য করে। সেই সাড়ে তিন লাখ নারীর ৮০% ই ছিলো কোরিয়ার। অথচ তাদের মাত্র ২৩৪ জনের খোঁজ পাওয়া যায়! ভেবে দেখুন, হত্যা করা হয়েছে কতজনকে! আসলে যুদ্ধ শেষে, জাপান পতনের আগে, বাধ্য করা হয় প্রত্যেক কমফোর্ট উইমেনকে আত্মহত্যা করার জন্য। কোন কোন স্টেশনে আগুনে লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় তাদের দেহ। এসবের পর ক'জনই পারে বাঁচতে!
বিশ্বযুদ্ধ শেষে, কমফোর্ট উইমেনদের কথা বিশ্ববাসীর কানে পৌঁছলে ক্ষমা চায় জাপান সরকার। ক্ষতিপুরণও দেয় কিছু। ১১ জন সেনাসদস্যের শাস্তি হয়, বিচারের পর। জানি, এই ক্ষমা চাওয়ায় কিচ্ছু যায় আসে না। যাদের উপর নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের সামান্য ব্যাথাও লাঘব হয় না এতে। কিন্তু এই ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনেক। ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমেই জাপান সরকার কমফোর্ট স্টেশনের অস্বতিত্ব স্বীকার করে নেয়। ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে, তারা মেনে নেয়, কতটা পাশবিক ছিল তারা। ১১ জনের বিচার- খুব কম হয়েছে অবশ্যই। কিন্তু এটুকুই সেই সব নারীদের ক্ষোভে একটু জল ঢেলেছে। ক্ষমা চাওয়া'র দরকার ছিল বৈকি!
এদিকে একাত্তরে, পাকিস্তানিরা ঠিক একই কাজ করেছে। পাশবিকতা,নির্মমতা কোন দিক থেকেই তারা জাপানি সেনাদের থেকে একসূত কম ছিল না। বাঙালি নারীদের উপর ওরা কীভাবে অত্যাচার করেছিল, পড়লে/ শুনলে হাত অবশ হয়ে আসে। অপরাধী তারা জাপানি সেনাদের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়!
অথচ একবারের জন্য পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে এজন্য ক্ষমা চায়নি!
যদ্দূর জানি, এপর্যন্ত পাঁচজন পাকি প্রধানমন্ত্রী এদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে এসেছিল, কেউ একবারের জন্যও ক্ষমার কথা মুখে তুলেনি। ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা, ওরা তো পারলে ৭১ এ যুদ্ধ হয়েছিল, ৩০ লাখ মানুষকে ওরা হত্যা করেছিল- সব অস্বীকার করে!
এই হলো পাকিস্তান! পৃথিবীর অন্যান্য দেশের থেকে এই হলো পাকিস্তানের পার্থক্য।
শাসন- শোষণ আমাদের ব্রিটিশরাও করেছিল। আসলে পাল আমলের পর তো বাঙালি কোন শাসকই আমরা পাইনি। এমনকি, যার পরাজয়ে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল বলা হয়- সেই সিরাজউদ্দৌলাও ছিলেন না বাঙালি! কিন্তু ব্রিটিশ, মুঘল কেউই বাঙালির উপর এতোটা চেপে বসেনি, এতোটা নির্মম ছিল না কোন শাসক। ব্রিটিশদের কারণে পেয়েছি বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়- পাশ্চাত্য শিক্ষ্যা। ওরা না এলে এতোদিনেও আমরা হয়তো মক্তবে পড়তাম। অনেক দিয়েছে আমাদের ব্রিটিশরা। আর এই পাকিরা মাত্র ২৪ বছরে আমাদের নিয়ে গিয়েছে শত বছর পিছনে।
একাত্তরের প্রতিটা দিনের জন্য ঘৃণা করা যায় এই দেশকে। আর এই ক্ষমা না চাওয়ার জন্য থুথু ফেলা যায় পাকি যেকোন কিছুর উপর। পাকিস্তানের শিল্পকে ঘৃণা করি, মানুষকে করি। ঘৃণা করি পাকিস্তান নামটাকেও।
মালালাকে নিয়ে খুব চিল্লাপাল্লা হয় এদেশে। তিনি বিশ্বে শান্তি বয়ে নিয়ে এসেছেন! তাকে আমার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, "একাত্তরে পাকিস্তান যে বাঙালির উপর গণহত্যা চালিয়েছিল, সেব্যাপারে আপনি কী বলবেন? এজন্য কী আপনি লজ্জিত? পাকিস্তানের কী ক্ষমা চাওয়া উচিত নয়?"
জানি এসবের কী উত্তর আসবে।
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×