somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তর্কমূলক অবস্থান, গালাগালি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর অন্যান্য প্রসঙ্গ

৩০ শে মে, ২০০৭ সন্ধ্যা ৬:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাইলকা কৌশিক একটা পোস্ট দিয়া মুইছা ফালাইলো...পোস্টটা যখন আসলো, ফ্রন্ট পেইজ থেইকা পইড়া ফেলতে পারছিলাম প্রায় পুরাটাই। ছোট পোস্ট...খুবই ফাংশনাল আর উদ্দেশ্যমূখীন...একটু স্যাটায়ারিক্যাল। সে যারা গালাগালির বিরোধীতা করে তাগো অবস্থানের ভ্রান্তি লইয়া তার বক্তব্য ব্লগাইছিলো...সে 'চোদনা' বইলা গালাগালির বিরোধীতামূলক সুশীল অবস্থানরে অভিযুক্ত করছিলো। আমি নিজেও রাজাকারগো বিরোধীতায় গালাগালি কৌশলের সঠিকতা নিয়া প্রশ্ন তুলছিলাম, আর তাই তার চোদনা গালিটা নিজের উপর লইতে বাধ্য হইলাম।

রাজাকার দেখলেই গালি দেওনের একটা সিদ্ধান্ত নিছেন কয়েকজন ব্লগার। আমি গালাগালি দেওনের বিরুদ্ধে থাকনের পক্ষপাতি না...কারন ব্যক্তিজীবনে গালাগালিটা অনেকেরই এক্সপ্রেশন হয়। আমি নিজেও পুরান ঢাকার ছেওইড়া হিসাবে বড় হইছি...তাই যৌনতা নিয়া অনেক কথার সেন্সরশীপের কাহিনী আমার ঠিক আসে না। কার সামনে আছি, কে কি মনে করবো, এইসব বিষয় অধিকাংশ সময়ই মাথায় থাকে না (ব্লগার যারা আমার লগে দেখা করছেন তারা অনেকেই আমার এই আচরনের সাথে পরিচিত)। কিন্তু তারপরও সবসময় এই অবস্থান রাইখা চলন যায় না। কারন যখন আমি মতাদর্শিক তর্কে লিপ্ত থাকি, তখন গালির চিহ্নায়ন আসলে একই পরিসরে থাকে না। তর্ক করতে হইলে বিরুদ্ধমতের লেইগা একটা স্পেস ছাইড়া দিয়া চলতে হয়...গালির একটা বেসিক চরিত্র হইলো সে জায়গা ছাড়ে না। সে দখল চায়। ধরা যাক কাওরে আমি গালি দিলাম 'চ্যুৎমারানি' বইলা, এর মানে আমি তারে ধইরাই নিলাম সে চোদাচুদি টাইপ কর্মকান্ডরে প্রাধান্য দেয় ব্যক্তিজীবনে। মানে তার মাথা কম খাটে। অর্থাৎ এইখানে ক্যাটেগোরাইজ কইরা ফেলনের একটা পরিষ্কার টেন্ডেন্সী পরিলক্ষিত। তর্ক করনের টাইমে ক্যাটেগোরাইজ করাটা পাপ! তর্ক করনের টাইমে জাজমেন্টাল হওনটা অপরাধ।

আর তাই গালাগালি দিয়া আর যাই হোক তর্কমূলক অবস্থানে যাওন সম্ভব না। ব্লগে যেই প্রসঙ্গটা উঠতেছে সেইটা হইলো রাজাকার দেখলেই গালি দেওনটা জায়েজ হয় কিনা...এক অর্থে রাজাকাররে গালি দেওনটা ঠিক। কারন রাজাকার আসলেই একটা চিহ্নিত গোষ্ঠী যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করছিলো। তাগো মুক্তিযুদ্ধকালীন অবস্থান নিয়া কোন প্রশ্ন নাই...এই বিষয়ে প্রমাণের কিছু নাই। আল বদর-আল শামস বাহিনীর তথ্য মানুষের কাছে পরিষ্কার। সুতরাং অনেকের মুক্তিযুদ্ধকালীন মতাদর্শিক অবস্থান নিয়াই গালি দেওন যায়...কিন্তু আমি যদি এই জমানার একজন ইসলামী রাষ্ট্র পদ্ধতির সমর্থকরে বিবেচনা করি, যে মুক্তিযুদ্ধকালে পরাজিত বিরোধী শক্তিরে কোন না কোন ভাবে সমর্থন করে, অথবা মুক্তিযুদ্ধ সমর্থনকারী কোন শক্তির মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী কোন ভূমিকার বিরোধ করতে গিয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর তৎপরবর্তী সেই বিষয়ক অনুভূতিমালা নিয়া প্রশ্ন তোলারে জাস্টিফাইড মনে করে। তার ব্যাপারে আমার অবস্থানটা কি হইবো? তার সাথে কি আমি তর্কমূলক বিবেচনায় যামু? নাকি তারেও আমি ক্যাটেগোরাইজ কইরা ফেলুম?

আমার নিজের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেইকা জানি যে, এই ধরনের কিছু মানুষের সাথে যুক্তি করনের অবকাশ থাকলে বিশ্বাসে ভাঙন ধরানো যায়। এমনকি ইসলামী রাষ্ট্রের মোহমুক্তি ঘটনের ঘটনাও আমার জানা আছে। তয় আমি মুক্তিযুদ্ধের জাস্টিফিকেশনের ক্ষেত্রে কোনরম তর্কমূলক অবস্থানের কথা বুঝাইতেছিনা এই ক্ষেত্রে...মুক্তিযুদ্ধের জাস্টিফিকেশন আবার কিসের!

কৌশিক রাজাকারদের মায়ের ধর্ষণকারী হিসাবে অপরাধী বিবেচনা কইরা চোদনা বইলা গালি দিছেন...কিন্তু যেই লোক রাজাকার ছিলো কিন্তু কখনো কোন ধর্ষণমূলক ঘটনায় তার উপস্থিতি ছিলো না...বরং সেইসবে তার বিরোধী অবস্থান ছিলো নীরব, তারে কি আমরা অপরাধী কমু না!

মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতা করনে আসলে অপরাধটা কোথায়? কোন যুক্তিতে আসলে বিরোধীতাকরনের প্রশ্নটা আসছিলো? বাঙালীর নিজস্ব চেতনার থেইকা বৈষম্যের বাড়াবাড়ি মুক্ত একটা রাষ্ট্রের স্বপ্ন কি ছিলো মুক্তিকামী-স্বাধীনতাকামী বাঙালীর চোখে? পাকিস্তানীরা ভিন্ন ভাষায় কথা কয়, তারা গড়পরতা বাঙালীগো চাইতে বড় শরীরের এইটা কি কোন বিবেচনা ছিলো? নাকি এই দেশের সাধারণ বাঙালীর সাথে পাকিস্তানীগো অর্থনৈতিক শাসন- শোষণের প্রশ্নটাই সবচেয়ে বড় ছিলো? সর্বোপরি পাকিস্তানীরা একটা ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গড়তে চাইছিলো, কিন্তু বাঙালীরা কি ধর্মভিত্তিকতার বাইরে গিয়া ধর্মনিরপেক্ষ এক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছিলো, যেইখানে ধর্মের নামে ভিন্ন ধর্মের একজন প্রতিবেশী বঞ্চিত হইবো না-ধর্মের নামে কখনোই রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারক হইতে পারবো না এমন হইবো না?

এইরম অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর আমি আমার মতো কইরা জানি...এইসবের বিরোধেই এক প্রজন্মের সাথে আরেক প্রজন্মের মতপার্থক্য তৈরী হইয়া যায়। কিন্তু এই মতপার্থক্যে যদি যথার্থ তর্কের অবকাশ থাকে তাইলে তা দূরীভূত হয়...যদি তর্কের প্রশ্ন আসে রাষ্ট্রের ধর্মীয় অবস্থান নিয়া তাইলে তালগাছ আমার জাতীয় মনোভাব বাদ দিয়াই আসতে হইবো। যদি কারো কাছে তালগাছ থাকে তাইলে তর্ক আগাইবোনা একচুলও! তখনই আসে গালাগালির প্রশ্ন। সেই গালাগালি যৌনতার ইঙ্গিতবহ হইতে পারে...অবৈধ সম্পর্কের বিচারে হইতে পারে...যুক্তির অবকাশ না থাকলে আসলে আপনাসেই ক্যাটেগরি তৈরী হইয়া যায়। আর ক্যাটেগরি করা থাকলে মনে হয় গালাগালিটাও জায়েজ হয়...
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০০৭ সন্ধ্যা ৬:৫০
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×