মুয়াজ্জিন সাহেব যখন বললেন,"সামনে
মাসে আপনাদের ভাবীকে নিয়ে
আসবো।বাসা ঠিক করেছি।ফ্রিজ
কিনেছি।"
কথাশুনে আমরা তাজ্জব হয়ে গেলাম।
।
মসজিদের কাছেই আমাদের মেস হওয়ায়
মুয়াজ্জিন আমাদের সাথেই খেতো।
তাঁর আজানের ধ্বনি টা ভালোই
ছিলো। কিন্তু শহরের একটু বাহিরে
হওয়ায় তাঁর বেতন ছিলো কম,তিন-
সাড়ে তিন হাজারের মত। এই অল্প
টাকায় ফ্রিজ কেনা,বউ বাসায় এনে
সংসার চালানো কিভাবে সম্ভব
যেখানে অনেক বড় বড় অফিসার
২০-৪০হাজার টাকা ইনকাম করেও শুধু
'নাই নাই' করে।অবাক হয়ে আমরা
মেসমেম্বাররা তাঁকে বলতেই তিনি
বলেন,"বুঝলেন,সবই আল্লাহর রহমত।"
সত্যিই হালাল টাকার আলাদা একটা
জৌলুশ আছে।
।
কয়েকবছর আগে কুরবানি ঈদে আমার এক
পুলিশ দাদা তাঁর ছেলেকে দুই আলাদা
বান্ডিলে হাজার দশেক টাকা দিয়ে
বলে,"এই বান্ডিলের টাকা দিয়ে
কুরবানির জন্যে ছাগল কিনবি আর এই
বান্ডিলের টাকা দিয়ে তোর শীতের
পোশাক আর সদাই কিনবি। সাবধান
টাকা কিন্তু মিশাইসনা।"
একজনের টাকাই তো....মিশালে কি
হবে? ঘটনাটা তখন বুঝতে পারি নি।
কিন্তু এর তিন-চার মাস পরে যখন ঐ
চাচ্চুর নতুন কেনা দামী শীতের
জ্যাকেট টা রংচটা হয়ে নষ্ট হয়ে
গেলো আর আমার আম্মু ঐ চাচ্চুকে
উদ্দ্যেশ্য করে বললো,"দেখ জনি, ঘুষের
টাকার জিনিস এমনই হয়!"
তখন বুঝেছিলাম দুই বান্ডিলের টাকা
না মিলানোর সাবধানতার আড়ালে
কি হাকিকত লুকিয়ে ছিলো
(হাহাহা)।
.
চারিদিকের সাথে তাল মিলিয়ে
চলতে গেলে বাড়তি চাহিদা
মেটানোর জন্যে আমাদের অনেক সময়
অন্যায় কিছু ভাবতে হয়।কিন্তু তখন যদি
আমরা আমাদের নিচের অবস্থানে
যারা আছে তাদের জীবনযাপনের
দিকে খেয়াল করি,একটু
ভাবি....নিশ্চিত,সামান্য মনঃকষ্ট
হলেও অন্যায় কাজ থেকে আমরা
রেহাই পেতে পারি,সম্ভব।
আমরা যে যে কাজে আছি তা ছোট
হোক বড় হোক,সেখানেই যদি আমাদের
ফুল কনসেন্ট্রেশন দেই,দ্বায়িত্ব নিয়ে
কাজ করি দেখা যাবে সেই কাজেই
তৃপ্তি পাচ্ছি, সংসারে সচ্ছলতা
বিরাজ করছে।
।
আসলে কি....
"ফাও টাকা ফাও ভাবেই খরচ হয়।
মাঝখান থেকে শুধু পাপ কামাই।"
কোন উপদেশ না,বাস্তবতা এটাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪৩