somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোন শোককে বুকে ঠাই দেবো

১৫ ই আগস্ট, ২০১১ সকাল ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোন শোককে বুকে ঠাই দেবো

আগষ্ট মাসকে আবেগগ্রবণ মানুষগুলো শোকের মাস হিসেবে বিবেচনা করে। যাদের একটু আবেগ কম তারা ১৫ আগষ্টকে শোকের দিন হিসেবে শোক অনুভব করে। যারা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ, নিজের চিন্তার বাইরে দেশ ও দশের চিন্তা করে, ভবিষ্যতকে নিজের চোখের আলো ফেলে দেখতে চেষ্টা করে, তারা একজন মহান নেতা হারানোর শোককে মর্মে মর্মে অনুভব করে সারাটা বছর।
আবেগপ্রবণ মানুষগুলো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তাদের আবেগের মাত্রা থাকে প্রবল! তারা বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে দিশেহারা হয়ে পড়ে। সারাশহর জুড়ে দৃষ্টিনন্দন তোরণ বানায়, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোষ্টারে ছেয়ে ফেলে বাংলার জনপদ। পকেটের সব টাকা উজাড় করে দিতেই তাদের সব ভালোলাগা বাংলার সব পাখির গান একসাথে গেয়ে ওঠে। তার সব নিবেদনযজ্ঞের শিল্পকর্মের গায়ে তার নামটা বড় অক্ষরে লিখে দেয়। যেন যে-কোনভাবে তার নেতার চোখে পড়ে এই শোকে হত-বিহ্বল ভক্ত কর্মীগুলোর এই নিবেদনযজ্ঞ। আর খোদ পার্টি নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর চোখে পড়ে গেলেই মোক্ষ লাভ হয়ে গেলো। এই শোকের আবেগের স্রোত তাকে ভবিষ্যত বড় নেতার মসনদে টেনে নিয়ে যাবে। দায়িত্বশীল মানুষ স্বপ্নের ধূসরতার মাঝে অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে আপন মানুষকে সঙ্গে নিয়ে জীবনকে নিজের মতো করে নির্মাণ করতে চাইছেন, অনেক প্রতিঘাত তাকে ম্লানমুখচ্ছবির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, তাকে মাথা নিচু করে বারবার ফিরে আসতে হয়েছে। প্রেমিকার মতো অনেক উচ্ছ্বাসকে সুখময় মেলার মাঠে ফেলে রেখে সফল আয়োজনের সড়কে ছুটতে হয়েছে। তাদেরকে একটা আবেগময় দিনকে বিশেষভাবে স্মরণ করিয়ে দেবার পর তারাও শোকে আচ্ছন্ন হয় তাদের প্রিয় নেতার নামে। একান্ত অনুভবের জায়গা থেকে, শুদ্ধ আলোড়নের জায়গা থেকে সে অনুভব করে তার নেতাকে। এই অনুভূতি তার চাওয়া-পাওয়ার ব্যাবধানের মধ্যে একটা দীর্ঘশ্বাস ঢুকিয়ে দেয়। একটা পীড়ন একটা বঞ্চনা তাকে তার নেতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে অন্তরের আর্তনাদগুলো চোখে জল এনে দেয়। শুভচিন্তার মানুষ, মুক্তচিন্তার মানুষ যারা একটা রাষ্ট্রের অর্জনগুনোকে নির্ণয় করতে পারে, খুঁটিয়ে খুুঁটিয়ে বিচার করতে পারে, ইতিহাসের নিরোপেক্ষতাকে, মহান জায়গাগুলোকে চিহ্নিত করতে পারে এবং তার পাওনাকে মিটিয়ে দিতে কার্পণ্য করে না। তারা ইতিহাসের মুখ থুবড়ে পড়া জায়গাগুলোতেও অবিচল থাকতে পারে। আর ইতিহাসের ধ্বংসস্তুপের ভেতর দিয়ে বের হয়ে এসে সঠিক ইতিহাসকে পুর্ননির্মাণে সাহসী হয়ে ওঠে।
পনেরো আগস্টের শোকের দিনে সকল নাগরিকের শোকের জায়গাটাকে ভেবে দেখতে পারি কি আমরা? দু’জন সৃজনশীল মানুষকে হারানোর শোকের পাথর গড়িয়ে যাচ্ছে আমাদের বুকের ভেতর দিয়ে। চল”িত্রকার তারেক মাসুদ ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মিশুক মনির একটু ভিন্নধারার, শুদ্ধধারার ও প্রথাগতধারাকে ভেঙ্গে নতুন নির্মাণে সচেষ্ট ছিলেন। নতুনের দিগন্তের দিকে দিকে তাদের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন। আমরা তাদের হারালাম। আমাদের রাষ্ট্রের সবখানে লুণ্ঠন আর নৈরাজ্য। দায়কে অগ্রাহ্য করা। ব্যর্থতাকে কথার প্যাঁচে অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা চলে। নিজে মহান, আর অন্যরা নিকৃষ্ট। তোষামোদকারী, দালাল, প্রভুভক্ত ভৃত্যের দল আর নপুংশক বুদ্ধিজীবী ক্ষমতাসীনদের বন্ধু। এইসব বন্ধুরা রাষ্ট্রের নির্বাহীকে ঠুলির চশমা পরিয়ে দেয়। সে তখন আত্মগরিমায় অন্ধ হয়ে থাকে, সরিষার হলুদ ক্ষেতের ভেতর শুধুই ঝাঁকে ঝাঁকে প্রজাপতির উড়াউড়ি দেখে। এইসব নৈরাজ্যের শিকার হলেন আমাদের দু’জন কৃত্তিমান ব্যক্তিত্ব। আইনকে পরোয়া না করা, আইনের ন্যায়ত প্রয়োগে আইন শৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যর্থতা, এমনকি আইনের অস্ত্রটাকে তাক করে লুণ্ঠন ও নৈরাজ্যে হামলে চলেছে। অদক্ষ, অপরিশিক্ষিত চালককে টাকার বিনিময়ে লাইসেন্স দেয়া। আমাদের জনসংখ্যার তুলনায় যানবাহন কম, যানবাহনের তুলনায় রাস্তা আরো কম। আর শৃঙ্খলার জন্য আইনের ন্যায়ত গ্রাহ্য করার মানুষ আরো কম। আমাদের সড়কগুলো প্রাইভেট গাড়ির-দঙ্গল দখল করে রাখে। পাবলিক পরিবহনের সংথ্যা অপ্রতুল। তাইতো জনসাধারণ সবসময় নৈরাজ্যের ভেতর দিয়ে, ঝুঁকির ভেতর দিয়ে চলাচল করে। যে যতটুকু ফাঁকা রাস্তা পায়, সেটা ব্যবহার করে দ্রুত সময়ে অতিক্রম করার চেষ্টা করে। সেইতো আরো একটা নৈরাজ্যেকর ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এই নৈরাজ্যকর ঠেলাঠেলি, দৌড়াদৌড়ির ফাঁসে আটকে পড়ে খসে যাচ্ছে তাজা প্রাণ। তারেক ও মিশুকের গাড়ির সহযাত্রীদের মধ্যে আরো তিনজন তাদের মৃত্যুপথের সহযাত্রী হলেন। কয়েকদিন আগে একই গাড়ির যাত্রী ৪৮জন ছাত্রের সবাই মারা গেলো, তাদের হাহাকার বাতাসে ভেসে আসে আজো। সড়ক দূর্ঘটনায় প্রতিবছর নিহতের সংখ্যা পুলিশের খাতায় ২০০০, পাবলিকের খাতায় ১২০০০, আর বিদেশি সংস্থার কস্পিটারের হিসাবে ২০০০০ জন। এত কান্না, এতো শোক আমরা কোন বুকে ঠাই দেবো?
আমাদের এলিট ফোর্স রাষ্ট্রের মহান দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নেমেছে। প্রতিনিয়ত জনসাধারণের উপর গুলি চালিয়ে উৎসব করছে। অধিকাংশ নিরাপরাধ মানুষকে রাতের অন্ধকারে ধরে নিয়ে গিয়ে গলি করে হত্যা করছে। সন্দেহভাজনকে, অভিযুক্তকে বিচারের সুযোগ না দিয়ে, বিনাবিচারে হত্যা করে নাটক সাজানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়, হত্যার পর এলাকার মানুষকে উল্লাস প্রকাশ করতে বাধ্য করা হয়। এই এজেন্ডা প্রভু রাষ্ট্রের নির্দেশে বাস্তবায়িত হচ্ছে। আমাদের সরকার চাইলেও এটা থামাতে পারবে না। বিচার বহির্ভুত হত্যার সংখ্যা কি ৫০০০০ ছাড়িয়ে গেলো? সঠিক পরিসংখ্যান জানা সম্ভব নয়। এ শোক বাতাসের বুকে গড়ায় সারাক্ষণ। পুলিশ হেফাজতে খুন হচ্ছে নিরিহ মানুষ। পুলিশের প্ররোচনায় খুনীর হাতে খুন হচ্ছে মানুষ। পুলিশের প্ররোচনায় অতিউৎসাহী, বিকৃত মস্তিস্কের মানুষ জোট বেঁধে হত্যা করছে কলেজ ছাত্র, কিশোরসহ নিরাপরাধ মানুষকে। প্রতিবছর পুলিশের হেফাজতে, পুলিশের গুলিতে, পুলিশের প্ররোচনায় হত্যার সংখ্যা কতোÑ এটাও জানা সম্ভব কি? সব শোক বাতাসের বুকে গড়িয়ে যাচ্ছে। এই বাইরেও রয়েছে অসংখ্য হতাহতের ঘটনা। রাজনৈতিক সংঘর্ষের কারণে হত্যা। রাষ্ট্রকে দেখা যায় সবসময় খুনীর পক্ষে অবস্থান নিতে। বিচারের দণ্ড মওকুব করে রাষ্ট্র খুনীকে উৎসাহিত করে, খুনীর পক্ষে অবস্থান গ্রহন করে। আমরা শোকাহত মানুষ সান্তনার জায়গায় আরো বেশি ক্ষত-বিক্ষত হই। আমাদের জনপদ আরো বেশি অনিরাপদ হয়ে ওঠে। আমাদের জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে গড়াগড়ি যাই। আর এতো এতো শোক আমরা কোন বুকে ধারন করি?
আমাদের অনিরাপদ ও নৈরাজ্যেকর পরিস্থির জন্য দায়ী যে রাষ্ট্র, তার মাথার উপর আঙুল তুলে দাঁড়িয়ে থাকে যে নেতা, তার প্রতি শ্রদ্ধা আর আসে না। নতুন রাষ্ট্রে নতুন জীবনের স্বপ্ন খানখান হয়ে যাবার পর মহান নেতার কৃতিত্ব ম্লান হয়ে যাবার পর ইতিহাস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছে করে। কোমর অব্দি রক্তের মধ্যে দাঁড়িয়ে আমরা কোন শোককে বুকে ঠাই দেবো?
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×