somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঐশ্বরিক (১ম পর্ব)

২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রস্তাবনাঃ

অন্ধকার ঘর, ছাদ থেকে ঝুলানো লম্বা একটা স্টাডি লাইট ঠিক ঘরের মাঝ বরাবর ঝুলে আছে। স্টাডি রুমের জমাট বাঁধা অন্ধকার আরও ঘনীভূত হয়েছে তাতে।
এ ঘরে আলো ঢোকার কোনও ব্যবস্থা নেই। জানালার অস্তিত্ব কখনো ছিল না, পুরু দেয়ালগুলো ভারী কালো পর্দায় ঢাকা। বাড়ির মালিক এ ঘরে আলোর অস্তিত্ব চায়নি কোনোদিন।
কত হাজার বই এখানে সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো আছে, সঠিক হিসাবটা তার নিজের কাছেও নেই। চাহিদা অনুযায়ী বই খুঁজতে অথবা ঝেড়েমুছে গুছিয়ে রাখার কাজ করার সময়ই শুধুমাত্র ঘরের ফ্লুরোসেণ্ট বাতি জ্বালানো হয়। বই পড়ার সময় সেগুলো নেভানো থাকে। তখন জ্বলে শুধু মাঝ বরাবর ঝুলানো স্বার্থপর স্টাডি লাইট, নিজের অক্ষপথ বাদে চারপাশের পরিবেশকে আলো দিতে যে কখনোই শেখেনি।
স্টাডি লাইটের ঠিক নীচে কাঠের মেঝেতে একটা চারকোণা নিচু টেবিল রাখা, মাড়োয়ারি ব্যাবসায়ীরা হিসাব নিকাশের জন্য দোকানে যেধরনের টেবিল রাখেন অনেকটা সেরকম। তার আরেক পাশে পাখির পালকের তোষক পাতা। কাঠের টেবিলে বই রেখে সেই তোষকে গা এলিয়ে দেয় পাঠক।
তার হৃদয় তাতে আলোকিত হয়, চেতনার ভেতর লুকিয়ে থাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানগুলো পরিভ্রমণ করতে পারে সহজেই। নিজের ধ্যান ধারণা, বিশ্বাসগুলো আরও দৃঢ় হয়।
আলোর ভেতরেই খেলা করে আঁধার।
সৃষ্টির আদিতে ছিল নিশ্ছিদ্র আঁধার, এরপর জন্ম হয় আলোর। সৃষ্টির উদ্দেশ্যই হচ্ছে ধ্বংস, সেই নীতি মেনে মহাপ্রলয়ের পর আবার রাজত্ব করবে অমানিশা। চোখের মণির কেন্দ্রে রয়েছে কৃষ্ণ আঁধারবিন্দু, যার উপস্থিতির কারণেই মানুষ প্রাণখুলে দেখতে পায় সমস্ত সৌন্দর্য-কদার্য।
আলোর উদ্দেশ্য সাম্যতা বজায় রাখা, অন্ধকারকে আড়াল করা নয়।
ব্ল্যাক কফির কাপ থেকে ধোঁয়া উঠে হারিয়ে যাচ্ছে শূণ্যে, এখন মনকে শান্ত করার সময়। বিশোধনের নির্দেশ দিয়েছেন তার প্রভু। সেই প্রভু, যার অস্তিত্ব সম্পর্কে পৃথিবীর মানুষ অজ্ঞাত। সেই প্রভু যিনি তাকে পরিপূর্ণতার পথ দেখিয়েছেন। সেই প্রভু, যিনি তাকে আগলে রেখেছেন অপত্যস্নেহে।
অন্ধকারের মাঝে জন্ম তার, যাত্রা আলোর পথে।
প্রকৃতি তাকে স্বতন্ত্র করেছে। নির্বোধেরা এই আশীর্বাদকে অস্বাভাবিক ভেবে নিয়ে তামাশায় লিপ্ত হয়; বিসদৃশ, বিকলাঙ্গ, বিকৃত হিসেবে ধরে নেয়। সে হাসে, পবিত্র গোপনীয়তাকে আড়াল করে রাখতে হয়। নাহলে তার মর্যাদাকে টিকিয়ে রাখা যায় না।
আজ রাতটা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রভুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গের নির্দেশ এসেছে। পাপের বিনাশ ঘটিয়ে নিজেকে মহিমান্বিত করার সময় আসন্ন। পরিপূর্ণতা লাভের এমন সুযোগ আর ক’জন পায়?
এই মুহূর্তে কহলীল জিবরানের ‘দ্য প্রফেট’ বইটা চোখের সামনে খোলা। সাদা কাগজে ছাপানো অক্ষরগুলো তার চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ভাসছে। কাল্পনিক এক পথপ্রদর্শকের দার্শনিক বাণীকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করে সে। অপরাধ ও শাস্তি সম্পর্কে তিনি বলেছেন,

“তোমার চেতনা যখন বাতাসে ভর করে পরিভ্রমনে যায়,
তখন নিঃসঙ্গ অরক্ষিত সেই তুমি অপরের প্রতি অন্যায়ে লিপ্ত হও, যার ফলে তুমি অন্যায় কর নিজেরই প্রতি।

সে অন্যায়ের কারণে সাড়াবঞ্চিত হয়ে কিছুকাল অপেক্ষা করবে তুমি, কড়া নাড়বে আশীর্বাদপ্রাপ্তদের দ্বারে।
তোমাদের ঐশ্বরিকসত্তা মহাসাগরের ন্যায়, সে চিরকাল কলুষমুক্ত থাকে।
উদ্বায়ী ইথারের ন্যায় ডানাহীনকে উড্ডীন করে সে।
তোমাদের ঐশ্বরিক-সত্তা সূর্যেরও ন্যায়; সে ছুঁচোর চলার পথ সম্পর্কে জ্ঞাত নয়, খোঁজে না সাপের গর্তকেও।
তবে তোমাদের সত্তায় শুধু ঈশ্বরের বসবাস নয়।
তোমাদের ভেতরের একটি অংশ মানুষ, কিন্তু অপর অংশটি এখনও মানুষ হয়ে উঠতে পারেনি। বিকৃত আকারের এক বামন হয়ে আছে। কুয়াশার আবরণে নিদ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় হেঁটে হেঁটে জাগরনের সন্ধানে ব্যাস্ত সে।”

এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল তার মুখে। বইটা বন্ধ করে রাখল। বিশেষ জ্ঞানকে অন্তরে ধারণ করতে পেরেছে সে। কর্তব্যের ডাক এসেছে, আর দেরী করা যাবে না। ত্রানকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে আজ, মানব সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে লিখে রাখতে হবে কল্যাণের নতুন বার্তা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:৩৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×