somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চায়ের মিথ্যে আশায় দাঁড়িয়ে আছি (প্রথম পর্ব)

১৭ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা শহরে খাবারের দোকানের বিচিত্র নাম রাখার একটা ট্রেন্ড চালু হয়েছে ইদানীং।

খালু'স ক্যাফে, মাম্মি'স কিচেন, শাহী দুই ভাই রেস্তোরা (প্রাইভেট লি:) ইত্যাদি ইত্যাদি। ব্যাপারটা ভালো; নামের স্বাতন্ত্র্য থাকলো আবার আত্মীয়তার সম্পর্কের বহি:প্রকাশও ঘটলো। বেশ, বেশ, বেশ!

এই মূহুর্তে আমি যে খাবারের দোকানটার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, তার নাম 'নাইট এন্ড ফাইট - উরাধুরা তেহারি'। নাম দেখে ফুডব্লগারস জাতীয় কোন ফেসবুক গ্রুপে গুতাগুতি করে লাভ হবে না। কালো রঙের এই ভ্যানগাড়ির কপালে সেই সৌভাগ্য জোটেনি। একদল উঠতি বয়স্ক টোকাই সম্প্রদায়ের বালক বালিকা যথেষ্ট আগ্রহ সহকারে ভ্যানের চারপাশে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে।

রাত প্রায় সাড়ে বারোটার মতো বাজে। এসএসসি পরীক্ষায় বাংলা সৃজনশীল প্রশ্ন হিসেবে 'উক্ত খাদ্যস্থলের নামকরণের স্বার্থকতা বিষয়ে আলোচনা করো' জাতীয় প্রশ্ন থাকলে ঝাড়া ছয় পৃষ্ঠা লিখে ফেলতে পারতাম। মাঝামাঝি পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথের দু'য়েক লাইন অনায়াসে ঝেড়ে দেয়া যেতো: কবিগুরুর সাথে তাল মিলিয়ে বলতে ইচ্ছে করে, আমার নিশীথ রাতের বাদল ধারা..ইত্যাদি ইত্যাদি।

"উরাধুরা তেহারির বিষয়টা কী? টেস্ট ভালো, তাই না? ওয়ারির দশ টাকার বিরিয়ানির মতো। তাই না?" আমার কানের কাছে মুখ এনে অতি সন্দেহজনক ভঙ্গিতে প্রশ্ন করলো ইমন। গুরুগম্ভীর ভাষায় বিষয়টা ব্যাখ্যা করতে যাবো, এমন সময় ভ্যানগাড়ির ওপাশ থেকে জনাব ফোরকানুদ্দিন হারুণ (প্রোপাইটর) হাসিমুখে উত্তর দিলেন। নামটা কীভাবে জানলাম? ভ্যানের গায়ে বড় বড় করে লেখা আছে।

"উরাধুরা তেহারি মাইনে বিয়াবাড়ির ঝুটা বিরানী, বস। গামলায় ফেরেশ পানি দিয়া ধুইয়া এইখানে আরেক দফা জাল বওয়ায় দেই। এক পেলেট দশ, পেয়াজ ভর্তা লইলে পনেরো। পুলাপাইনে শখ কইরা খায়। মুক্ষের মদ্দে গেলে বেহেশতি সোয়াদ পাইবেন। দিমু নাকি বস?"

বস ডাক শুনে ইমনকে বেশ হোমরা চোমরা ভঙ্গিতে ভ্যানের দিকে এগোতে দেখা গেলো। পেছন থেকে ঠুস করে শাটার পড়ার আওয়াজ শুনে ঘুরে তাকালাম। দাঁত কেলিয়ে ছবি তুলছে ও। মুখের ওপর বড়সড় একটা ক্যামেরা থাকলেও, তার নিচ দিয়ে দাঁতের পাটি বেরিয়ে আছে। মিনিট দশেক আগেও অবশ্য পরিস্থিতি অন্যরকম ছিল। কপাল কুঁচকে রেখে যা তা অবস্থা। অবশ্য তার একটা যুক্তিযুক্ত কারণ আছে। ইমনের সাথে প্রথম দেখায় কোন স্বাভাবিক মানুষের মেজাজ ঠিক থাকার কথা না। একটু আগের কথোপকথনের একটা বিশেষ অংশ উল্লেখ করি।

আমি: পরিচয় করিয়ে দেই, ইমন। ও হচ্ছে সাজ্জাদ, আমার ভার্সিটি জীবনের বন্ধু। খুব ভালো ছবি তোলে। সাজ্জাদ, ও হচ্ছে ইমন। আমার প্রতিবেশী, এলাকার ছোট ভাই।"

ইমন: আপনার লেন্সটা তো অনেক ছোট, ব্রাদার। সাদা লেন্স নাই? এই জিনিসে তো পার্ট আসে না! ভালো কথা, আমি রোকন ভাইয়ের প্রতিবেশী না। ওনার বাড়ির আশেপাশের চল্লিশ ঘরের আওতাভুক্ত না আর কি। মিস্টেক, বিগ মিস্টেক। ধর্মকর্মের দিকে রোকন ভাইয়ের মনই নাই আসলে।

সাজ্জাদ (কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে): রাতের বেলা দামী লেন্স নিয়ে বের হওয়া রিস্ক। এনিওয়েজ, আপনার কাছে আগুন হবে? স্মোক করা দরকার।

ইমন: আগুন তো বুকে, ব্রাদার। বোতাম খুলে দেই। ঘষে ধুম্রশলাকা জ্বালিয়ে নেন। সেলফ সার্ভিস, আমাদের কোন শাখা নেই।"

এমন কথাবার্তা শুনলে মেজাজ বিগড়ানো স্বাভাবিক। আমিই পকেট থেকে লাইটার বের করে দিয়ে তখনকার মতো পরিস্থিতি হালকা করলাম। সিগারেটে বড়সড় টান দিয়ে চুপচাপ পেছন পেছন হাঁটছিল সাজ্জাদ। অত:পর নাইট এন্ড ফাইটের সামনে আগমণ।

সাজ্জাদের হাসির কারণটা বোঝা যাচ্ছে। ভ্যানের বামদিকে একটা ছেলে বেলুন মুখে ঠেস দিয়ে বসে আছে। নয়-দশ বছর বয়স হবে বড়জোর। উদাস ভঙ্গিতে ফোলাচ্ছে একটু একটু করে। সাজ্জাদ খুব আয়োজন করে ছবি তুলছে ওর।

পেছন থেকে কাঁধে হাত রাখলাম আমি।

"মাস্টারপিস, দোস্ত। রাতের বেলা একটা ছেলে খাবারের গাড়ির পাশে বসে বেলুন ফোলাচ্ছে। ক্ষুধার এই জগতে বাতাস তার ঝলসানো রুটি, আহ! মারাত্মক একটা ফ্রেম। এই ছবি দিয়ে আমি এওয়ার্ড পাব, দেখিস। মাথায় একটা টাইটেল চলে এসেছে, অভুক্ত বাতাসের সুর। ভ্যানে ঝোলানো লাইট যেন শুভ্র চাঁদের আলো.."

"ইয়ে মানে, ব্রাদার," ইমনের গলা শোনা গেলো পাশ থেকে। "ওটা বেলুন না। পলিথনে মাখানো এক নম্বুরি জুতার আঠা। উহাকে ডান্ডি বলে।"

"হোয়াট রাবিশ! ডান্ডি কী আবার?"

"ডান্ডি মানে ডান্ডি, দ্য রাইট চয়েস। পলিথিনে ভরে বেলুন ফোলানোর মতো করে শ্বাস টেনে সেবন করতে হয়। ঠিকমতো টানতে পারলে, দোজাহানের ফায়দা। বিশ টাকায় স্বর্গরাজ্য ভ্রমণ। নেশার জগতে ডান্ডি এক বৈপ্লবিক নাম। আর ইয়ে, শ্বেতশুভ্র চাঁদের আলো কই দেখলেন? ওখানে তো নীলচে আলোর মরা এনার্জি বালব জ্বলছে। স্টার এনার্জি লাইট, শুধুমাত্র কোম্পানির প্রচারের জন্য একশো টাকা, একশো টাকা..."

[চলবে]

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৪
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×