যুদ্ধের ইতিহাস ঠিক কতটুকু পুরনো, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোন প্রমাণ নেই। তবে একটা কথা জোর গলায় বলা যায়: যেদিন পৃথিবীতে মানুষের জন্ম হয়েছে সেদিন থেকেই ঘোষিত হয়েছে যুদ্ধ-লড়াইয়ের আহবান। প্রাথমিক পর্যায়ের যুদ্ধকৌশলের যে নিদর্শনগুলো খুঁজে পাওয়া গিয়েছে, সেগুলোর বয়স আমাদের প্রাচীনতম সভ্যতার চেয়েও বেশি।
প্রাগৈতিহাসিক যুগের বহু সমাধির খোঁজ পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। হাজার-সহস্র বছর পুরনো এই সমাধিগুলোতে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে ফাটল ধরা অথবা আঘাতে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া মানুষের খুলি। আঘাতের ধরণ দেখে খুব সহজেই বোঝা যায়, ভারী অস্ত্র ছাড়া এমন হওয়া সম্ভব নয়।
সেই যুগের যুদ্ধ সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না। এমন কোন গণসমাধি খুঁজে পাওয়া যায়নি, যা থেকে কোন নির্দিষ্ট লড়াইয়ে মৃতের সংখ্যা ধারণা করা যাবে। তবে যেটুকু বোঝা যায়, তখনকার লড়াইগুলো মূলত ছিল "ধরো-তাড়া করো-মারো" ধরণের। হঠাৎ হয়তো কয়েকজন মিলে আক্রমণ করে বসতো কাউকে। জংগলে কিছুক্ষণ দৌড়াদৌড়ি হতো, তারপর ডাইরেক্ট একশন!
একটু বড় পরিসরে যুদ্ধের একমাত্র যে নিদর্শন পাওয়া যায়, তা বরফ যুগের শেষের দিকের কথা। চল্লিশ হাজার বছর আগে প্রাচ্য থেকে ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছিল একদল মানুষ, যারা মূলত ক্রো-ম্যাগনন নামে পরিচিত। পশ্চিমের যাত্রাপথে ওদের সাথে আরেক প্রাচীন জাতি, নিয়েন্ডারথাল মানবের দেখা হয়।
নিয়েন্ডারথাল মানবের আগমণ ক্রো ম্যাগননদের অনেক আগেই ঘটেছে। সভ্যতায় প্রাচীন হলেও নিজের দেশে ওরা সুনিয়ন্ত্রিত সমাজ গড়ে তুলেছিল। গুহায় বসবাসকারী এই জাতি জীবিকার তাগিদে শিকার করে বেড়াতো।
বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, এক নিমিষে ইউরোপ থেকে নিয়েন্ডারথাল মানবের বিলুপ্তি ঘটে। নবাগত ক্রো-ম্যাগননদের সাথে মিশে গিয়েছিল অথবা ওদের দাসত্ব বরণ করেছিল-এমন কোন প্রমাণ নেই। আজ থেকে প্রায় ত্রিশ হাজার বছর আগে, এভাবেই হঠাৎ করে উধাও হয়ে গিয়েছিল নিয়েন্ডারথাল মানব। নারী-শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে ওদের প্রত্যেককে ধরে ধরে খুন করা হয়েছিল, এমনটা হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত।
# প্রাগৈতিহাসিক যুগের অস্ত্র:
ক্রো-ম্যাগননেরা রাতারাতি নিয়েন্ডারথালদের পরাস্ত করেছিল। এর অন্যতম একটা কারণ ছিল ওদের তুলনামূলক উন্নত অস্ত্র। নিয়েন্ডারথালদের অস্ত্র বলতে ছিল শুধু পাথরের ছুরি আর কুড়াল। অন্যদিকে ক্রো-ম্যাগননেরা বহন করতো কাঠের তৈরি বর্শা। ফ্লিন্ট পাথরের তৈরি ধারালো ফলা সংযুক্ত থাকতো সেই বর্শার মাথায়। তীর-ধনুকেরও অভাব ছিল না ওদের। এমন অস্ত্রের কাছে পাথরের ভোতা ছুরি নি:সন্দেহে হার মানতে বাধ্য।
প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষ, শিকার এবং লড়াইয়ের কাজে একই অস্ত্র ব্যবহার করতো। কাঠের হাতলযুক্ত পাথরের কুড়াল দিয়ে একদিকে যেমন গাছ কাটা হতো, আবার সেটা দিয়েই কোপ বসানো হতো শত্রুর ঘাড়ে। তীর-ধনুকের সাহায্যে খুব সহজেই থামিয়ে দেয়া যেতো পলায়নরত পশু অথবা মানুষকে। ধারলো বর্শার এক খোঁচায় ধরাশায়ী হতো বন্য শূকর।
তবে হ্যাঁ, যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত অস্ত্রের সাথে শিকারের অস্ত্রের সাজসজ্জায় পার্থক্য ছিল। নানা রকমের মন্ত্রপুত নকশা খোদাই করা হতো যুদ্ধাস্ত্রের গা জুড়ে। প্রাচীন মানুষের বিশ্বাস ছিল, শত্রুর প্রাণ কেড়ে নিতে হলে বিশেষ ক্ষমতার দরকার। অস্ত্রের গায়ে অংকিত জাদুর নকশাই তার ধারককে সেই শক্তি যোগাবে। একই সাথে বয়ে আনবে সৌভাগ্য আর পরাক্রম।
...চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৩