somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ধ্বংস কার স্বার্থে

০৭ ই মার্চ, ২০১৫ ভোর ৪:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পবিত্র আল কোরআনের অনেকগুলো আয়াতেই মানুষকে পূর্ববর্তী সভ্যতার প্রত্নস্থলগুলো পরিদর্শন করে তার থেকে মহামহিমের পরাক্রমের শিক্ষা নেবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। কায়রো যাদুঘরে গেলে মানুষ ফেরাউন দ্বিতীয় রামিসেসের প্রায় অবিকৃত লাশটি দেখতে পায়। এই লাশ কোন রকমের মমি করার প্রযুক্তিতে সংরক্ষিত হয়নি। বরং হযরত মুসা (আঃ) এর কাছে পরাজয়ের পর নীলনদে ডুবে মারা যাবার পর সম্ভবত ১৮৯৭ সালের দিকে একদল ব্রিটিশ প্রত্ন লুটেরা নীলের তীরস্থ এক ভূগর্ভস্থ প্রকোষ্ঠ থেকে দ্বিতীয় রামিসেসের লাশ আবিস্কার করে। অথচ কোরআনে আল্লাহ আগেই বলেছিলেন, তিনি কেয়ামত পর্যন্ত দ্বিতীয় রামিসেসের মৃতদেহ সংরক্ষণ করবেন, যাতে মানুষ এই লাশ দেখে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। এর দ্বারা বুঝা যায়, ইসলামী দর্শনে পূর্ববর্তী সভ্যতার প্রত্নস্হল সংরক্ষণ ও পরিদর্শনের গুরুত্ব।

নবী হযরত সালেহ (আঃ) যে সভ্যতার প্রতি প্রবর্তিত হয়েছিলেন, তাদের জনবসতি ছিলো হালের সৌদি আরবের তাবুক প্রদেশের মাদাইন সালেহ নামক এলাকায়। তাবুকের যুদ্ধের সময় রাসুল (সাঃ) এর নেতৃত্বে মুসলিমরা যখন বাইজেন্টাইন সম্রাট হিরাক্লিয়াসের বাহিনীর আক্রমণ ঠেকাতে তাবুকে অবস্থান নিতে যাচ্ছিলেন, তখন মুহাম্মদ (সাঃ) মাদাইন সালেহ অতিক্রম করার কালে সাহাবীদের গতি বাড়াতে বলেছিলেন, কারণ সালেহ (আঃ) এর সময় এখানে আল্লাহর গজব পতিত হয়েছিলো। কিন্তু তিনি কখনোই মাদাইন সালেহের প্রত্নস্হলে হাতুড়ি, গদা, ছেনি-বাটাল চালাবার কথা বলেননি। কারণ আল্লাহ পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষার জন্য এই প্রত্নস্থল টিকিয়ে রেখেছেন, এবং এটা আজো টিকে আছে।

রাসুল (সাঃ) এর ওফাতের পর চার পূণ্যবান খলিফার শাসনামলে ইসলামী রাষ্ট্র ইরাক, পারস্য, আফগানিস্তান, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, লেবানন, মিশরের প্রাচীন ভূখণ্ডসমূহে বিস্তৃত হয়। আজ পর্যন্ত কোন একজন ঐতিহাসিকও এমন কোন প্রমাণ হাজির করতে পারেননি যে, তাঁরা উল্লেখিত প্রাচীন ভূখণ্ডসমূহের কোন প্রত্নস্হলে ভাংচুর চালিয়েছিলেন।

অথচ আমরা দেখেছি ২০০১ সালে আফগানিস্তানের বামিয়ানের প্রাচীন বৌদ্ধ মুর্তিগুলো ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়া হলো, সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ যাদুঘর হিসেবে পরিগণিত বাগদাদ যাদুঘর লুট করা হলো, সর্বশেষ খোদাদ্রোহী রাজা নমরূদের রাজধানীর প্রত্নসম্পদ ধ্বংস করা হলো।

সংগত কারণেই এসব যারা ধ্বংস করেছে, তারা মুসলিম হতে পারে না। আর যারা প্রাচীন প্রত্নসম্পদ ধ্বংসের সাথে কাবা শরীফে রাখা মুর্তি ধ্বংসকে এক করে দেখছেন, তারা আহাম্মক, নাকি শয়তানের স্বর্গে বাস করছেন, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই।

আমি বরং এসব অমূল্য প্রত্নসম্পদ ধ্বংস বা লুণ্ঠনকে ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে দেখতে চাই। এসব ঘটনার সাথে কোন ব্যক্তি স্বার্থ বা হুজুগ নয়, বরং সুচিন্তিত কোন পরিকল্পনা কাজ করতে পারে। যার উদ্দেশ্য, প্রথমত, কোরআনে অনেকবার করে উল্লেখিত এসব প্রত্নস্থল পরিদর্শনের তাগিদ অনুসারে যাতে মুসলিমরা এসব নিদর্শন দেখে আলোকিত হতে না পারে, এবং দ্বিতীয়ত, মুসলিম ভূখণ্ডগুলো যাতে নিজেদের প্রাচীনত্ব নিয়ে গর্ব করতে না পারে, এবং এই সুযোগে অন্য কেউ যাতে মানব সভ্যতার স্থায়ী মালিক-মোখতার হয়ে যেতে পারে।

একটি জাতির জন্য তার ইতিহাসের চেয়ে দামী সম্পদ আর কিছু হতে পারেনা। মুসলিমদের সাথে শত্রু শত্রু খেলতে গিয়ে মানব সভ্যতার জন্য অমূল্য এসব প্রত্নসম্পদ ধ্বংস করে মানব সভ্যতার অপূরণীয় ক্ষতি করা হয়েছে। ইরাকের এই অমূল্য ইতিহাস ধ্বংসে কাদের লাভ হতে পারে, তা চিন্তাশীল মাত্রই অনুধাবনে সক্ষম বলে আমার বিশ্বাস! যে নমরূদ নিজেকে আল্লাহ ঘোষণা দিয়ে আল্লাহর গজবে ধ্বংস হয়েছিলো, সেই নমরূদের শহর, যা মুসলিম জাতির জনক হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর পূণ্য স্মৃতি বিজড়িতও, সেটিকে আর যাই হোক মুসলিমরা ধ্বংস করতে পারেনা। এই শহরটিকে ইসলামের প্রচারের স্বার্থেই টিকিয়ে রাখা কর্তব্যসিদ্ধ হতো। আর যদি এসকল প্রত্নসম্পদ ধ্বংস বৈধই হতো, তাহলে এই কাজ খোলাফায়ে রাশেদিনের আমলেই সম্পাদিত হতো, যখন এসব অঞ্চলে ইসলামের পদার্পন ঘটেছিলো...।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×