somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নুহ নবীর নৌকার খোঁজে

৩১ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রত্নতত্ত্ববিদরা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ ও পৌরাণিক কাহিনীর বিভিন্ন স্থানগুলো খুঁজে বের উদ্যোগ নিয়ে থাকেন। গ্রিক মহাকবি হোমারের ওডিসিতে বর্ণিত ট্রয় নগরী পুরাকীর্তি অভিযানের মাধ্যমে খুঁজে বের করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত শেবার রানী বিলকিসের প্রাসাদ প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযানে ইথিওপিয়ার আকসুম নগরীতে খুঁজে পাওয়া গেছে। দাম্ভিক রাজা সাদ্দাদের বেহেশত বলে কথিত ইরম নগরীর ধ্বংসাবশেষও আবিষ্কার করা হয়েছে। নুহ নবীর নৌকার ঘটনা কয়েক হাজার বছরের পুরানো। তখন সারা পৃথিবী পাপে পরিপূর্ণ ছিল। সৃষ্টিকর্তা সামান্য কিছু নির্বাচিত মানুষ ও পশুপাখি ছাড়া সব কিছু এক প্রলয়ঙ্কারী বন্যায় ধ্বংস করে দেন। এ কাহিনী প্রায় কম বেশি সবারই জানা। ধর্মগ্রন্থ আর অনেক পৌরাণিকে এর বিস্তারিত বর্ণনা আছে। পবিত্র কোরআনের সুরা হুদে বলা হয়েছে, পর্বতপ্রমাণ তরঙ্গের মধ্যে এ (নৌকা) তাদের নিয়ে বয়ে চলল, নুহ তার পুত্রকে (যে তাদের ডাকে পৃথক ছিল) ডেকে বললেন, হে বৎস আমাদের সঙ্গে আরোহন করো এবং অবিশ্বাসী কাফেরদের সঙ্গী হয়ো না। সূরা হুদে এ বিষয়ে আরও বলা হয়েছে, (আল্লাহর শাস্তি প্রদান ও কাফেরদের ধ্বংসের পর) বলা হল, হে পৃথিবী, তুমি পানি শোষণ করে নাও এবং হে আকাশ, তুমি ক্ষান্ত হও। এরপর বন্যা প্রশমিত হল এবং কার্য সমাপ্ত হল, নৌকা জুদি পর্বতের উপর স্থির হল এবং বলা হল ধ্বংসই সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়েরর পরিণাম। ১৯১৬ সালের ঘটনা। রাশিয়ার গোয়েন্দা বিমান নিয়ে আকাশে চক্কর দিচ্ছিলেন লেফটেনেন্ট রস্কোভিতস্কি। সকালের সোনারোদে আরারাত পর্বতের চূড়ায় ঝকমক করছে বরফের স্তর। হঠাৎ কী যেন চোখে পড়তেই নড়েচড়ে বসলেন লেফটেনেন্ট। পাহাড়চূড়ায় আছে বিশাল এক হিমবাহ হ্রদ। সেখানেই পুরনো জাহাজের মতো কিছু একটা চোখে পড়ল তার। খবরটা ছড়িয়ে পড়ল দেশের আনাচে-কানাচে। সবার ধারণা, নুহ নবীর সেই বিখ্যাত জাহাজ খুঁজে পেয়েছেন লেফটেনেন্ট রস্কোভিতস্কি। এ জাহাজে চড়ে নুহ নবী ও তার সঙ্গীরা মহাপ্লাবনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। দলে দলে মানুষ এসে হাজির হল আরারাত পর্বতের গোড়ায়। পাহাড় তন্ন তন্ন করে তারা খুঁজে বের করল সেই জাহাজের ধ্বংসাবশেষ। শুরু হল ছবি তোলা আর প্রমাণ সংগ্রহের প্রাণান্তকর চেষ্টা। কিন্তু সবকিছু করে ফেলার আগেই রাশিয়ায় শুরু হয়ে গেল বিপ্লব আর গৃহযুদ্ধ। বিপ্লবের উত্তেজনায় তখনকার মতো চাপা পড়ে যায় নুহ নবীর জাহাজের বিষয়টি। ১৯৫৩ সালে জেফারসন গ্রিন নামের এক প্রকৌশলী হেলিকপ্টারে আরারাত পাহাড়ের ওপর দিয়ে উড়ে যাবার সময় দেখতে পেলেন বড়সড় চৌকো আকৃতির এক বাক্স ঝুলে আছে খাড়া পাহাড়ের কিনারা ঘেঁষে। তিনি কিছু ছবি তুলে আনেন। আবার আলোচনায় চলে আসে নুহ নবীর নৌকা।
১৯৫৫ সালে ফরাসি পর্বতারোহী ফার্নান্স নাভারা আরারাত পাহাড়ে উঠতে গিয়ে বহু প্রাচীন কিছু কাঠের টুকরো পান। কালো রঙের ফসিল হয়ে যাওয়া সেই কাঠের টুকরো স্পেনের গবেষণাগারে পরীক্ষা করে জানা যায় প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পুরানো। ১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস কমিটির সদস্য ফ্রাঙ্ক মস জানালেন উপগ্রহ থেকে পওিয়া আরারাত পর্বতমালায় যে নৌকার আকৃতি দেখা যায় সম্ভবত ওটাই নুহ (আ)-এর নৌকা।
তুরস্ক সরকারের নিরাপত্তার কড়াকড়ি আর রাশিয়ানদের হুমকিতেও খোঁজার গতি কমেনি। এখন পর্যন্ত সেই জাহাজ নিয়ে কৌতূহল আর আগ্রহ আছে আগের মতোই। ধর্মগ্রন্থগুলোতে বর্ণিত যে জাহাজে চড়ে নুহ নবী মহাপ্লাবনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন সেটি ছিল কাঠের তৈরি বিশাল এক জলযান। শোনা যায়, কম করে হলেও এটির দৈর্ঘ্য ছিল ৪৫০ ফুট ও প্রস্থ ৭৫ ফুট। ভেতরের ডেকসহ এটির উচ্চতা ছিল ৪৫ ফুট। বিংশ শতাব্দীর আগে নির্মিত সবচেয়ে বড় জলযান হিসেবে স্বীকৃত এ জলযান। এর নির্মাণকৌশল আর নিরাপত্তার বিষয়টি ছিল সময়ের তুলনায় অনেক আধুনিক। শোনা যায়, মহাপ্লাবনের শেষে আরারাত কিংবা জুদাই পর্বতের আশপাশে কোথাও নোঙর ফেলেছিল সেই জাহাজ। তবে এদিক থেকে আরারাত পর্বতের পাল্লাই বেশি ভারি। গত দেড়শ’ বছরে অসংখ্য মানুষ দাবি করেন, তারা নুহ নবীর জাহাজ খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু কেউ আজ পর্যন্ত উপযুক্ত প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ১৯৭৬ সালে হলিউডি সিনেমা ‘ইন সার্চ অব নোহাস আর্ক’ মুক্তি পায়। এটি মুক্তি পাওয়ার পর আবার পৃথিবী জুড়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, নুহ নবীর জাহাজের খোঁজ মিলেছে। গুজবের মূল উৎস হল একটি ফটোগ্রাফ। মানুষ সেটা নিয়েই ব্যাপক হইচই করতে থাকে। পরে অবশ্য দেখা যায়, ছবিটি একটি বিচিত্রদর্শন পাথর ছাড়া আর কিছু নয়। এরকম ঘটনা শুধু একবার নয়, অসংখ্যবার ঘটেছে। খ্রিস্টপূর্ব যুগ থেকেই চলছে এই খোঁজার পালা। তবে আজ পর্যন্ত মীমাংসা হয়নি এ রহস্যের। অসংখ্য অভিযাত্রী, পর্যটক আর প্রত্নতত্ত্ববিদের ধারণা, নুহ নবীর সেই জাহাজ আজও লুকিয়ে আছে আরারাত পর্বতের গভীর কোনো বরফ স্তরের আড়ালে। আর কোনো একদিন হয়ত সত্যি সত্যি এ জাহাজের রহস্য উন্মোচিত হবে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×