রাতুল আজও পাথরটাকে লালন করছে । এই পাথরটা তাকে সঙ্গ দিচ্ছে গত পনেরটি বছর । এক মুঠি পাথরটির দিকে তাকালে তার সেই ছোটবেলার বন্ধু আবিরের কথা মনে পড়ে । তারা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে রেললাইনের সুন্দর পাথরগুলো কুড়াতো । আর পকেট ভর্তি করে বাড়িতে নিয়ে আসতো । কিন্তু সেদিন... আবির ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে, রাতুলের মা তাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করতে করতে বলেছিল । আবিরকে সে আর দেখেনি । কারণ ট্রেনে কাটা পড়া লাশ তার মা তাকে দেখতে দেয়নি । এর পরদিন রাতুল লুকিয়ে রেললাইনে গিয়েছিল । রক্তমাখা একটি পাথরও কুড়িয়ে আনে । আর এই পাথরটাই হয়ে গেল তার কাছে আবির । তারপর থেকে রেললাইন দিয়ে সে কখনো স্কুলে যাওয়া আসা করেনি ।
রাতুল বিছানায় শুয়ে আছে । সে পাথরটাকে উপরের দিকে ছুড়ছে আর ধরছে । রাতুল সবসময় পাথরটাকে তার সঙ্গে রাখে । কোথাও গেলে পকেটে, ঘুমাতে গেলে বুকে, গোসলে গেলে সাবানের কেইসে, খেতে বসলে প্লেটের পাশে । সে পাথরটার দিকে তাকিয়ে প্রায় সময় কথাও বলে । কথাগুলো আবোলতাবোল । কেউ শুনলে বুঝবে না । তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, কার সাথে কথা বলছিস ? সে বলে, আবিরের সাথে । সে এই কাজগুলো গত পনের বছর ধরেই করে আসছে । সুদর্শন ছেলে বলে অনেক মেয়েরই প্রপোজ সে পেয়েছে কিন্তু একটাও গ্রহণ করেনি । তার পৃথিবী জুড়ে শুধুই আবির বাস করে আর এই পাথরের মধ্যেই তার আবির ।এ নিয়ে তার কাছের বন্ধুরা অনেক ঠাট্টা-তামাশা করে । তাকে বলে পাথরটাকে বিয়ে করে ফেলতে । কিন্তু রাতুল এসবে কান দেয় না । সে আসলে এদেরকে তার বন্ধুও মনে করে না । তার বন্ধু একটাই ছিল, এখনো একটাই, সে হল আবির । তার পরিবারের সবাই তাকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ভুগছে । তারা রাতুলকে অনেক সাইক্রিয়াট্রিস্ট দেখিয়েছে কিন্তু আশানুরূপ কোন ফল হয়নি । তারা বলে ছোটবেলার মানসিক চাপ শিথিল করা বেশ কঠিন তবে আশা করা যায় ঠিক হবে ।
রাতুল আজ সকাল থেকেই বিছানায় শুয়ে শুয়ে পাথরটাকে উপরের দিকে মারছে আর ক্যাচ ধরছে । তাকে অনেকবার নাস্তা করতে ডাকা হয়েছে কিন্তু সে এখনো নাস্তা করছে না । তার মন আজ বিষণ্ণ । আবিরকে হারানোর দিনটা এখনো তার স্পষ্ট মনে আছে । আজ সেইদিন । রাতুল মাঝে মাঝে মরে যাওয়ার কথাও ভাবে । তাহলে সে তার বন্ধু পাথরের আবির থেকে রক্ত-মাংসের আবিরকে দেখতে পেত । এখনো সে তাই ভাবছে । পাথরটা হঠাৎ চলন্ত ফ্যানের সাথে বাড়ি খেয়ে সজোরে এসে আঘাত করে রাতুলের কপালে । ঠিক সেই জায়গায় যেখানে রাতুল তার বন্ধু আবিরকে বারংবার আঘাত করেছিল এই পাথরটি কেড়ে নেওয়ার জন্য । পাথরটির আঘাতে রাতুলের শরীর ধীরে ধীরে নিথর হতে থাকে......
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:২৫