somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প : আঁধারের গোপন আনন্দবিলাপ ।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরান চাঁদ প্রথম অজ্ঞান হয়েছিলেন প্রায় দু’বছর আগে তার অতি আদরের একমাত্র সন্তান ফুরকান চাঁদ নিখোঁজ হওয়ার ঠিক পরদিন সন্ধ্যায় । কিশোর বয়সী ছেলে ছিল ফুরকান বয়স ষোল কি সতের হবে । চঞ্চলপ্রকৃতির হাসিখুশির রেখা সবসময়ই ফুরকানের মুখে লেগে থাকতো । পরান চাঁদের অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ধারা সেই থেকেই এখনো নিয়ম করে চলছে । জ্ঞান ফিরলে অবাক হয়ে সবার দিকে তাকিয়ে থাকেন । সবাই তাকে সান্তনা দেন, পুলিশের তল্লাশি পুরোদমে চলছে পরান চিন্তা কোরো না তুমি, ফুরকানকে অবশ্যই খোঁজে পাওয়া যাবে । পরান চাঁদ তখনো বড় বড় চোখে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে দেখেন সবাইকে ।পুলিশ তো সেই দুই বছর ধরেই তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে এখনো তো কোন হদিস মিলেনি ফুরকানের ।

পরান চাঁদের বাড়ির পেঁছনেই একটা ঘন জঙ্গল আছে । তিনি প্রতিবারই জ্ঞান হারান এ ঘন জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে থেকে । এর অবশ্য একটা কারণও আবিষ্কার করেছে অনেকে সেটা হলো এই জঙ্গলের পাশ দিয়েই একটা চিকন রাস্তা চলে গেছে সাধারণত যে রাস্তাগুলো মানুষ হাঁটতে হাঁটতে তৈরি হয় । এই রাস্তা পেরোলেই জঙ্গলের অপর প্রান্তে বিশাল খেলার মাঠ । এই মাঠেই বিকালে খেলতে যেত ফোরকান আর প্রায় সন্ধ্যা হয় হয় এই সময় সে বাড়ি ফিরতো ।পরান চাঁদ হয়তো ফোরকানের বাড়ি ফেরা পথে চেয়ে থেকেই অচেতন হয়ে যান । সবাই এইরকমই কিছু একটা আন্দাজ করে নেয় ।

পরান চাঁদের বৌ সন্তান নিয়ে ছোট সুখের সংসার ছিল ।একমাত্র সন্তানকে হারানোর পর সবকিছুই উলট পালট হয়ে যায় । পরান চাঁদ এখন আগের মত নেই । আচরণে এসেছে অনেক পরিবর্তন । সবসময় নীরব হয়ে থাকেন । ক্ষেত খামারেও মনযোগ নেই ।রসকষওয়ালা সৌখিন লোক হিসেবে যার খ্যাতি ছিল গ্রামে সে এখন সম্পূর্ণ রসকসহীন । বউটাও শান্তিতে নেই আর থাকবেইবা কীভাবে চোখের সামনে স্বামীর এ অবস্থা দেখলে কেএইবা ঠিক থাকতে পারে । একে তো পুত্রশোক সাথে আবার স্বামীশোক ।

পরান চাঁদ নিজেই নিজের সাথে কি যেন বিড় বিড় করে বলেন। উঠতে বসতে হাঁটতে ঘুমাতে প্রায়সময়ই দুই ঠোঁটই নড়তে থাকে । তিনি নিজেও এই অমানসিক শোক থেকে বের হওয়ার শত চেষ্টা করে যাচ্ছেন । নিজেকে নিজেই প্রায়সময় এইভাবে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করেন, দক্ষিণের বাড়ির কলিম উদ্দিনের দুই সন্তানসহ পুরো পরিবারই তো তাদের নানার বাড়ি থেকে আসতে এক্সিডেন্টে মারা যায় বেশিদিন হয়নি অথচ কলিম উদ্দিন দিব্বি ঠিক আছে, পাশের বাড়ির রহিম মিঞাঁর ছেলেটা পানিতে ডুবে মারা গেছে গতবছর এখনতো রহিম মিঞাঁ শোক কাটিয়ে আগের মতই আছে, বলি বাড়ীর তপনের একমাত্র মেয়েকে তার শশুর বাড়ির লোকজন যৌতুকের জন্য পুড়িয়ে মেরে ফেলে প্রায় বছরখানেক হয়েছে অথচ তপনও তো সেই শোক কাটিয়ে উঠে গেছে । এইরকম আরও অনেক ঘটনা নিজের মনের মধ্যে সারাক্ষণ আওড়ায় আর বিড়বিড় করেন পরান চাঁদ শুধু পুত্র শোকের একটু সান্তনা পাওয়ার জন্য । কিন্তু কোনভাবেই পুত্রশোক তিনি ভুলতে পারছেন না । গ্রামের অনেকে বলেন পরান চাঁদ এইরকম ভেঙ্গে না পড়ে যদি পুলিশকে তাগাদা দিয়ে সন্তানের খোঁজ করতেন তাহলে অনেক আগেই হয়তো ফোরকানকে পেয়ে যেতেন । অথচ তিনি এতই ভেঙ্গে পড়েছিলেন যে পুলিশের কাছে ডায়েরীটাও খুলেছিলেন তার বৌ ।

পরান চাঁদের মনে পড়ে ফোরকানের নিঁখোজ হওয়া দিনের কথা ।ফোরকানের মা তার বাপের বাড়ি গিয়েছিল বেড়াতে ।ফোরকান গিয়েছিল বিকালে খেলতে ।বাড়িতে সে একাই ছিল ।ওইদিন খেলার মাঠ থেকে ফোরকান একটু তাড়াতাড়িই চলে আসে ।এসব কথা মনে করতেই পরান চাঁদের চোখ বেয়ে অঝরে পানি পড়তে থাকে ।পরান চাঁদ আজও দাড়িয়ে আছে সেই জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে । তার চোখের সামনে ভেসে উঠে ফোরকানের নিঁখোজ হওয়া সন্ধ্যারই কিছু দৃশ্য ।পরান চাঁদ নিজ থেকে কখনোই আসতে চায় না এখানে দৃশ্যগুলো দেখার জন্য ।কিন্তু এই দৃশ্যগুলো দেখানোর জন্য তাকে কে যেন নিয়ে আসে এখানে ।পরান চাঁদ এই দৃশ্যগুলো ফোরকান গত হওয়া থেকেই দেখে আসছে কিন্তু কাউকে কখনো বলতে পারেনি, কখনো কাউকে বর্ণনা করতে পারেনি । সে দেখতে পায়-

‘তার ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে ফোরকানের চাচী আলতা তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে চলে যাচ্ছে । ফোরকান ঘরের অপর কোণে দাড়িয়ে আছে চাচীর দিকে তাকিয়ে । এরপর কিছুক্ষণ ঝাপসা দেখায় । এরপর আবার দেখতে পায় একজন মাঝ বয়সী লোক তার কাঁদে একটা মৃতদেহ নিয়ে সন্ধ্যার আঁধারে টর্চ হাতে জঙ্গলের দিকে ঢুকে যাচ্ছে….’

ঠিক তখনই পরান চাঁদ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৭
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×