somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজ্ঞান ও ধর্মের সহাবস্থান: সম্ভব নাকি অসম্ভব?

১৪ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিজ্ঞান দিয়ে কোরআন প্রমাণের দরকার নেই। কোরআন দিয়ে বিজ্ঞান যাচাইয়েরও প্রয়োজন নেই। দুটো ভিন্ন বিষয়। দুটোকে আলাদা থাকতে দিন।

আপনি যদি বিশ্বাসী হয়ে থাকেন, কোরআনের সঙ্গে যদি বিজ্ঞানের সংঘর্ষ দেখেন তবে কোরআনই আঁকড়ে থাকুন। ঠকবেন না।

কিন্তু শুধু কোরআন দিয়ে আপনি যদি কোরআন বুঝতে চান, তাহলে আপনি ভুল বুঝতে পারেন। কারণ কোরআনে অনেক কিছু আছে যা কোরআনের সাথেই সাংঘর্ষিক বা বিভ্রান্তিকর। সে ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই হাদিসের শরণাপন্ন হতে হবে। ইজমা ও কিয়াসের দ্বারপ্রান্তেও যেতে হবে।

আপনার বিশ্বাসকে সময়ে সময়ে অবিশ্বাসীরা অন্ধবিশ্বাস বলে আপনাকে কোণঠাসা করতে চাইবে। আপনার বিশ্বাস তখনই অন্ধবিশ্বাসে পরিণত হবে যখন আপনি যাচাই না করেই বিশ্বাস করবেন। তাই যা জানেন আগে তার সত্যমিথ্যা যাচাই করে নিজের বিশ্বাসে আত্মবিশ্বাস আনুন।

তবে কি আপনি বিজ্ঞান দিয়ে ধর্ম যাচাই করবেন? মোটেও না। আপনি ধর্মকে ধর্মের ভিতর থেকেই যাচাই করবেন।

সেটা কিভাবে?

আপনি যা পড়বেন, যা শুনবেন সে বিষয়ে প্রশ্ন করবেন। মাওলানা একটা কিছু বললেন, আপনার সন্দেহ হলো, আপনি ওনার কাছে রেফারেন্স চাইবেন। কোরআন-হাদিসের কোথায় এটা বলা আছে, কোন ঈমাম কোন গ্রন্থে এটা বলেছেন জানতে চাইবেন। চ্যালেঞ্জ করতে পিছপা হবেন না।

একই বিষয়ে বিজ্ঞান কি বলছে তাও আপনি জানতে চাইতে পারেন। তবে সব বিষয়ে বিজ্ঞানের বিশ্বাস নেই। বিজ্ঞান আজ এক কথা বলবে তো কাল আরেক কথা বলবে। বিজ্ঞান নিয়ত পরিবর্তনশীল।

কিন্তু আপনি নিশ্চয় বিজ্ঞানের কাছে জানতে চাইবেন না নামাজে ফরজ কি কি! অথবা নামাজ পড়ার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিও নিশ্চয় জানতে চাইবেন না! তাই 'বিজ্ঞানের আলোকে নামাযের সুফল' জানতে চাওয়াটাও একটা হাস্যকর কাজ হবে।

বুঝতে পারছেন? বিজ্ঞান দিয়ে ধর্ম বা ধর্মের বিধিবিধানের বৈধতা বা সাড়তা বা উপযোগিতা প্রমাণ করতে চাওয়া একটি বোকামিপূর্ণ কাজ। একটি দিয়ে অন্যটিকে প্রমাণের বা সাপোর্টের কোন প্রয়োজন নেই। এমনটি যদি করতে যান তো ধারণা করতে হয় আপনার ধর্ম বিশ্বাসে দুর্বলতা আছে। এবং/অথবা আপনি অবিশ্বাসীদেরকে কনভিন্স করতে চাইছেন।

একটা কথা আপনাকে বুঝতে হবে, বিজ্ঞান কিন্তু ধর্মের দিকে তেড়ে আসে না। ধর্মের দিকে তেড়ে আসে অবিশ্বাসীরা, বিজ্ঞানের পতাকা তুলে। তখন আপনার ভ্রম হয়, বিজ্ঞানই বুঝি তেড়ে এলো! কিন্তু অবিশ্বাসীরা বিজ্ঞানী না। স্রেফ কিছু অবিশ্বাসী মাত্র। তাদের নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। এমনকি বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানীদেরকে নিয়েও বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।

বিজ্ঞান আপনার বন্ধু, হয়তো ধর্মের ক্ষেত্রে না। তাই বলে ধর্মের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান আপনার শত্রুও না। বিজ্ঞান ধর্মকে অবিশ্বাস বা সন্দেহের চোখে দেখে - এই যা! এটাই বিজ্ঞানের চরিত্র। এটা মেনে নিন। অনেককিছু সহজ হয়ে যাবে।

আপনি বিজ্ঞানকে বিরূপ দৃষ্টিতে না দেখে বরঞ্চ বুদ্ধিমত্তার সাথে বিজ্ঞানের অবদানকে ধর্মের উন্নয়ন ও প্রচার-প্রসারে কাজে লাগান। ব্যস হয়ে গেল ধর্ম ও বিজ্ঞানকে আলাদা আলাদা অবস্থানে রেখেও সহাবস্থান!

অবিশ্বাসী "বিজ্ঞানবিদরা" (এরা বিজ্ঞানী না) আমার এই আইডিয়া হয়তো মেনে নিতে চাইবে না (যদিও আইডিয়াটা তাদের জন্য নয়)। কারণ বিশ্বাসীরা যদি স্বধর্ম বজায় রেখেও বিজ্ঞানকে সাদরে বরণ করে নেয় এতে তাদের মার্কেট খারাপ হয়ে যাবে। কার দিকে তারা বিজ্ঞানের ঝাণ্ডা নিয়ে তেড়ে যাবে যদি আপনি আগে থেকেই বিজ্ঞানকে ড্রইং রুমে বসিয়ে রাখেন!

তবুও এরা আসবে। কারণ বিজ্ঞান প্রচার তাদের লক্ষ্য নয়, বিজ্ঞানের মোড়কে অধর্ম/অবিশ্বাস প্রচারই তাদের উদ্দেশ্য। এদেশের তথাকথিত নাস্তিকরা বেশিরভাগই মূলত ধর্মবিদ্বেষী। আরও নির্দিষ্ট করে বললে ইসলাম বিদ্বেষী। নাস্তিক্যবাদ তাদের কাছে একটি রাজনীতি। অন্যসব রাজনীতির মতো এই রাজনীতির লোকেরাও দল ভারী করতে চায়।

মুসলিমদের কোরআন আছে, ঐতিহ্য আছে, কৃশ্চিয়ানদের বাইবেল আছে, হিন্দুদের সংস্কৃতি আছে, বৌদ্ধদের দর্শন আছে, নাস্তিকদের কাছে তেমন কিছু নেই। যেহেতু চারিদিকে বিজ্ঞানের জয়জয়কার তাই জনমনে সহজে প্রভাব বিস্তার করার জন্য তারা বিজ্ঞানকে বানিয়েছে তাদের আরাধ্য "গ্রন্থ", হাতিয়ার। এরা বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মকে মোকাবেলা করতে চায়।

এরা একেকজন নিজেদেরকে মহাজ্ঞানী মনে করে। নিজেদেরকে দাবি করে বিজ্ঞানবিদ, প্রগতিশীল, মুক্তমনা ইত্যাদি।

শুধু নিজেরা অধার্মিক হয়ে, নাস্তিক হয়ে বসে থাকলে একটা কথা ছিল। কিন্তু তাদের মিশন বিজ্ঞানই হতে হবে একমাত্র ধর্ম, সব ধর্মকে বিজ্ঞানের আওতায় চলে আসতে হবে।

তাই বিজ্ঞান ও ধর্মের যে সহাবস্থানের কথা বললাম, আমার মনে হয় না তাতে এরা রাজি হবে। যারা হবে তারাই প্রকৃত (শান্তিকামী) নাস্তিক, যারা হবে না তারা স্পষ্টতই নাস্তিকের মোড়কে ধর্মবিদ্বেষী। অন্যদিকে, বিশ্বাসীদের মনে হয় না বিজ্ঞানের অবদান মেনে নিতে কোন আপত্তি আছে, বেশিরভাগই নিয়েছেন। যাদের আপত্তি আছে তারা গোঁড়ামি করছেন।

বিজ্ঞান সবার জন্য। বিশ্বাসী, নাস্তিক, ধার্মিক, অধার্মিক সবার। কিন্তু কতিপয় উগ্র নাস্তিকের ধারণা বিজ্ঞান তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি, তারা মহাবিজ্ঞানবিদ, বিজ্ঞান তারাই সবচেয়ে ভালো বোঝেন, একেকজন বিজ্ঞানাচার্য, বিজ্ঞানযাজক, হেন-তেন। তাদের ধারণা, যে ধর্ম করে সে বিজ্ঞান বোঝে না, বুঝতে পারে না, বোঝা অসম্ভব। কারণ বুঝলে সে ধর্ম-কর্ম আর করতো না। ধর্ম যে কতো বড় অবৈজ্ঞানিক একটা ব্যাপার এটা বুঝলে সে ধর্ম ছেড়ে দিয়ে নাস্তিক হয়ে যেত! সুড়সুড় করে তাদের দলে চলে আসতো!

হাহা মাথায় এই পরিমাণ জৈব সার নিয়ে এরা হয়েছেন নাস্তিক বিজ্ঞানবিদ! এরাই আবার গল্প-কবিতা-উপন্যাস পড়েন, নাটক-সিনেমা দেখেন, চিত্রকলা উপভোগ করেন। এদের কাছে কখনও মনে হয় না, এই সব শিল্পকর্ম চর্চা কতোটা অবৈজ্ঞানিক-অর্থহীন ব্যাপার-স্যাপার! তা মনে হবে কোত্থেকে, এরা যে "বিজ্ঞানবিদ" হয়েছেন এসব করে করে!

এই সব উগ্র নাস্তিকদেরকে বুঝতে হবে, এই পৃথিবীতে সবকিছু বিজ্ঞানের জন্য আসেনি, বিজ্ঞান সবকিছুর জন্য আসেনি। বিজ্ঞানের কাছে আমার ভালবাসার কোন মানবিক মূল্য নেই, তার কাছে এটা কেবলই কেমিকেল রিএকশন। বিজ্ঞান আমার আধ্যাত্মিক প্রয়োজন বোঝে না, এটা তার কাছে অবোধগম্য। মানুষের প্রয়োজনে বিজ্ঞান। মানুষের প্রয়োজনে ধর্ম।

বিজ্ঞানবিদ হতে হলে নাস্তিক হতে হয় না। কেউ ধার্মিক হলে সে বিজ্ঞানবিরোধী হয়ে যায় না।

বিজ্ঞানকে যারা ধর্মের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করাতে চায় তারা আসলে শান্তি চায় না। এই উৎকট তাত্ত্বিক ঝামেলা তৈরি করে সুবিধা লুটতে চায় স্বার্থান্বেষীরা।

কিন্তু আমি দুটি ভিন্ন ধর্মের সহাবস্থান যেমন সম্ভব মনে করি, তেমনি ধর্ম ও বিজ্ঞানকে নিজ নিজ অবস্থানে রেখেও তাদের সহাবস্থান সম্ভব মনে করি।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:০৬
১৪টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×