জামালের জীবনে রাজনীতি শুরু হয়েছে ক্ষমতাসীন দলে থেকে। এখন বিরোধী দলে থেকে রাজনীতি করায় জামালের শুধু রাজনৈতিক, অবৈধ ও অনিয়মতান্ত্রিক সুবিধা প্রাপ্তি বন্ধ হয়নি ক্রমাগত নায্যতা থেকেও সে বঞ্চিত হচ্ছে। বিরোধী দলে অবস্থানের পর থেকে জামাল বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে যত টেণ্ডারে অংশগ্রহণ করেছে বেশিরভাগ টেণ্ডারে সর্বনিম্ন দরদাতা বিবেচিত হওয়ার পরও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ইশারায় তাকে কাজ দেওয়া হয়নি ফলে দিনে দিনে জামালের ঠিকাদারী ব্যবসায় পতন শুরু হয়েছে। একের পর এক টেণ্ডারে অংশ গ্রহণ করতে করতে আর সিডিউল কিনে তার ঠিকাদারী ব্যবসা এক রকম গুটিয়ে ফেলার উপক্রম হয়েছে। জামাল লক্ষ্য করেছে দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় অফিসের যেসব কর্তা ব্যক্তিরা জামালকে সমীহ করে কথা বলতেন সেসব অফিসের পিয়নও আজকাল জামালকে এড়িয়ে চলে। বিরোধী দলে অবস্থান করে জামাল আজ তিলে তিলে ক্ষমতার মর্ম অনুভব করছে।
শুধু ঠিকাদারী কাজকর্ম পাবার ব্যাপারেই নয় রাজনৈতিক মিটিং কিংবা মিছিলে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের হামলা, মিথ্যা ও হয়রাণীমূলক মামলা একের পর এক চলছেই। ইতোমধ্যে মোস্তফা সাহেব ও বেলায়েত সাহেবসহ কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। তারা এখন হাজতে আছে। ভাগ্যক্রমে জামাল সেসময় ঢাকায় ছিল, তাই তাকে আসামি করা হয়নি। মিথ্যা ও হয়রাণীমূলক মামলার প্রতিবাদে এখনো মিছিল, মিটিং চলছে এবং মিছিল-মিটিংয়ের নের্তৃত্বে জামালই মুখ্য ভুমিকা পালন করছে। অনেক সময় জামালের ভয় হয়, হয়ত সামনে তারই হাজত বাসের পালা।
অবশেষে জামালের আশংকাই সত্যি হলো। একদিন জামাল মোস্তফা সাহেব ও বেলায়েত সাহেবের মুক্তির দাবিতে মিছিল চলাকালীন সময়ে হঠাৎ করেই মিছিলের উপর ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের হামলা শুরু হলো। মুহূর্তেই মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। জীবন বাঁচানোর জন্য সবাই ছুটাছুটি করে চলে গেল। জামাল কোনরকম পালিয়ে বাঁচলো। জামাল রিক্সায় চেপে সোজা বাসায় চলে গেল। জামালের চোখে মুখে উৎকন্ঠা আর তাকে হাঁপাতে দেখে অনন্যা জিজ্ঞেস করল, বসো, কী হয়েছে? এমন হাঁপাচ্ছ কেন?
জামাল চাপা স্বরে বলল, অনন্যা আস্তে কথা বলো, মা শুনতে পাবে।
অনন্যা জামালের পাশে বসে জিজ্ঞেস করল, এক গ্লাস পানি দেবো।
দাও।
অনন্যা এক গ্লাস পানি জামালের হাতে এনে দিতেই জামাল এক ঢোকে পানি শেষ করে ফেলল।
অনন্যা জামালের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, কী হয়েছে? আমাকে বলো?
অনন্যা তুমি ওসব বুঝবে না, আমি যাই আমার ফিরতে দেরি হতে পারে, বলে জামাল অনন্যাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বেরিয়ে গেল।
ততক্ষণে সবাই পার্টি অফিসে এসেছে। সবার চোখে-মুখে ভীতি ও অনিশ্চয়তার ছাপ ফুটে উঠেছে। সভাপতি ও জেনারেল সেক্রেটারী জেলে, সাংগঠনিক সম্পাদক, প্রচার সম্পাদকসহ দলের জুনিয়র নেতারা আন্দোলন পরিচালনা করছে। কেন্দ্রের নির্দেশ আন্দোলন চাঙ্গা করে এখান থেকেই সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করে তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া। জামাল জুনিয়র নেতাদের অন্যতম হলেও দলের কর্মসূচী হতে শুরু করে যেকোন সিদ্ধান্তের জন্য অনেক সিনিয়র নেতাই তার মুখের দিকেই তাকিয়ে থাকে। আজকেও পার্টি অফিসের সবাই বসার পর জামাল কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে আন্দোলনের কর্মসূচী নিয়ে সকলের সঙ্গে কথা বলল, তারপর পরবর্তী কর্মসূচী চুড়ান্ত করল। কর্মসূচী চুড়ান্ত করার পর কর্মীদের উদ্দেশ্যে একে একে বক্তৃতা শুরু করল। জামালও ইতোমধ্যে বক্তৃতায় বেশ দক্ষতা অর্জন করেছে। সে কর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতায় বলল, উপস্থিত নির্যাতিত বন্ধুগণ আপনারা সবাই জানেন যে, আমাদের প্রিয় নেতা মোস্তফা ভাই এবং বেলায়েত ভাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে এখন জেল হাজতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আমাদের প্রিয় নেতা এবং সারাদেশে নির্যাতিত কর্মীদের প্রতি জানাই গভীর সহানুভূতি ও আমার সশ্রদ্ধ সালাম। আপনারা জানেন এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাজারে জিনিসপত্রের দাম অনেকগুণ বেড়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। দেশে একরকম নীরব দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীরা ফ্রি স্টাইলে সন্ত্রাস, টেণ্ডারবাজী, চাঁদাবাজী শুরু করেছে। এ সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিরোধী কাজ কর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সারাদেশে আমাদের দলের শত শত নেতা কর্মী বিনা দোষে হাজতবাস করছে, এলাকায় আধিপাত্য বিস্তার করার জন্য আমাদের দলের নেতা কর্মীদেরকে হত্যা ও নির্যাতনের হুমকিসহ হয়রাণীমূলক মামলা করে হাজতবাস করাচ্ছে কিংবা নিরপরাধ হওয়া সত্ত্বেও অসংখ্য মামলার আসামি এ্যারেষ্ট ভয়ে আত্মগোপন করেছে। আপনারা সবাই জনেন মোস্তফা ভাই, বেলায়েত ভাইয়ের বিরুদ্ধে প্রকৃতপক্ষে কোন অভিযোগ নেই। অথচ তাঁরা আজ হাজতে, তাঁদের মুক্তির জন্য আমরা ধারাবাহিকভাবে সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। আজ ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করেছে। তার মানে এই দাঁড়ায় যে, একটা গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী দলের প্রতিবাদ করার সুযোগ নেই। এটা হতে পারে না, এদেশের জন্য রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, আমাদের দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দেশের গণতন্ত্র দেশে এবং বিদেশে সুনাম অর্জন করেছিল আজ সে সুনাম ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে ক্ষমতাসীন দল জনগণের স্বাধীন মতামতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ শাসন করছে। বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার অপচেষ্টা করছে। আমরা আমাদের নেতা মোস্তফা ভাই ও বেলায়েত ভাইয়ের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। আমি এখন মোস্তফা ভাই ও বেলায়েত ভাইয়ের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে তিন দিনের আন্দোলন কর্মসূচীর ঘোষণা করছি।
০১. আগামীকাল সকাল দশটায় মানব বন্ধন, বিকেলে পার্টি অফিসে আলোচনা সভা,
০২. দ্বিতীয় দিন বিক্ষোভ সমাবেশ,
০৩. তৃতীয় দিন সকাল-সন্ধ্যা হরতাল।
আমি আশা করি আপনারা সবাই এসব কর্মসূচীতে স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশ গ্রহণ করবেন।
উপস্থিত সকল নেতা-কর্মী হাত তালি দিয়ে জামালের ঘোষণা দেয়া কর্মসূচীকে অভিনন্দন জানালো।
জামাল আবার বক্তৃতা দিতে শুরু করল। তিন দিনের মধ্যে মোস্তফা ভাই ও জামাল ভাইয়ের নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচীর ঘোষণা করবো। আপনারা ধৈর্য্য সহকারে আমার বক্তৃতা শুনেছেন, দলের কর্মসূচীকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে স্বাগত জানিয়েছেন সেজন্য আপনাদের জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ, বলে জামাল তার বক্তৃতা শেষ করল।
পার্টি অফিস থেকে বেরিয়ে জামাল বাসার উদ্দেশ্যে রিক্সায় উঠছিল এমনসময় পুলিশের একটা পিক আপ ভ্যান রিক্সার সামনে এসে দাঁড়ালো। জামাল কোন কিছু বুঝার আগেই একজন পুলিশ অফিসার বলে উঠলেন, হ্যান্ডস আপ, ইউ আর আণ্ডার এ্যারেষ্ট, তারপর একজন কন্সটেবলকে বললেন, এই হ্যাণ্ডকাপ পরাও।
জামালকে হ্যান্ডকাপ পরানোর পর জামাল জিজ্ঞেস করল, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ?
আপনার বিরুদ্ধে ওয়ারেণ্ট আছে।
দেখি ওয়ারেণ্টের কাগজ।
পুলিশ অফিসার একটা কাগজ বের করে জামালের হাতে দিলেন।
জামাল আর কোন কথা না বলে নিজেই পুলিশ ভ্যানে গিয়ে উঠল।
চলবে...
গডফাদার-০১
আলোচিত ব্লগ
গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ
একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন
কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।
ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ
মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!
বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন