somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ঔপন্যাসিক জিল্লুর রহমান
চোখের সামনে যেকোন অসঙ্গতি মনের মধ্যে দাগ কাটতো, কিশোর মন প্রতিবাদী হয়ে উঠতো। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে, নির্যাতন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবিতা। তারপর গল্প, উপন্যাস। এ যাবত প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা-২১ টি।

গডফাদার-৪৩

২৭ শে এপ্রিল, ২০১২ সকাল ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
জামাল গভীর রাতে বাসায় ফিরে। স্বামীর অপেক্ষায় অনন্যা ততক্ষণ জেগে থাকে জামাল বাসায় ফিরলে এক সঙ্গে রাতের খাবার খায়। এ নিয়ে জামাল দু'একবার বকাবকিও করেছে এবং অনন্যাকে সময়মত খেয়ে নিতে বলেছে কিন্তু অনন্যা কোনদিন একা রাতের খাবার খায়নি। অনন্যা বিছনায় শুয়ে জামালের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমের মাঝে হাত বাড়িয়ে জামালকে না পেয়ে চমকে উঠল। অনন্যা ঘড়ির দিকে তাকাল। রাত তিনটা বাজে জামাল বাসায় ফিরার সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। সে ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ল। জামাল তো এখনো কোনদিন বাসার বাইরে রাত কাটায়নি। অনন্যা কী করবে ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না পাশের রুমে তার শ্বশুর-শাশুড়ি জানে না জামাল বাসায় ফিরেছে কী না। তাদের জানানো ঠিক হবে কী না। অনন্যা শেষ পর্যন্ত কাউকে জানালো না। বিছানায় শুয়ে ছটফট্‌ করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ল।
অনন্যার ঘুম ভাঙ্গল তার শাশুড়ির ডাকে। দরজা খুলে বের হতেই ফাহমিদা চমকে উঠলেন, বউমা তুমি ঘুমাওনি? তোমাকে তো কোনদিন ঘুম থেকে ডেকে তুলতে হয় না।
অনন্যা অস্ফুটস্বরে বলল, মা।
হ্যাঁ বউমা বলো কী হয়েছে? জামাল কিছু বলেছে?
মা ও রাতে বাসায় ফিরেনি।
রাতে বাসায় ফিরেনি! তোমাকে বলে যায়নি? ওতো কোনদিন বাসার বাইরে রাত কাটায়নি। আচ্ছা তুমি চিন্তা করো না আমি তোমার শ্বশুরকে বলে দেখি কী করা যায়?
ফাহমিদা তার রুমে গিয়ে জহির সাহেবকে বললেন, শুনছ।
জহির সাহেব যেমনভাবে ছিলেন তেমনিভাবে বললেন, হ্যাঁ বলো?
জামাল রাতে বাসায় ফিরেনি।
জহির সাহেব চমকে উঠলেন, বাসায় ফিরেনি মানে। বউমাকে বলে যায়নি?
না।
আমার মোবাইলটা দাও, দেখি কোথায় গেছে?
জহির সাহেব জামালের মোবাইলে রিং করলেন। কিন্তু মোবাইল বন্ধ দেখে বললেন, মোবাইল তো বন্ধ, এখন কীভাবে খুঁজি বলো তো। ওর ইঞ্জিনিয়ারের মোবাইলও বন্ধ। মোস্তফা, বেলায়েত ওরাও তো হাজতে বলে জহির সাহেব চেয়ারে বসে পড়লেন।
হকার পেপার দিয়ে গেল। জহির সাহেব পেপারটা হাতে নিয়ে বুকে প্রচণ্ড আঘাত পেলেন। পত্রিকার প্রথম পাতায় জামালের ছবি ছাপানো হয়েছে। ছবির নীচে বড় বড় করে লিখা বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক দলের ছাত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার। জহির সাহেব নিউজটা পড়েই আর পেপার পড়লেন না। ফাহমিদাকে বললেন, ফাহমিদা ভিতরে এসো বউমাকে ডাকো।
ফাহমিদা ও অনন্যা ঘরে ঢুকল। ফাহমিদা আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোন, বউমা তুমিও শোন একটা দুঃসংবাদ আছে। শোনার পর কান্নাকাটি করবে না। ভেঙ্গে পড়বে না মনে রাখবে এটা খুব সাধারণ ঘটনা।
ফাহমিদা উৎকন্ঠিত স্বরে বললেন, কেন কী হয়েছে?
জামালকে পুলিশ এ্যারেষ্ট করেছে।
জহির সাহেবের বলা শেষ হওয়ামাত্র ফাহমিদা এবং অনন্যা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। জহির সাহেব ধমকের সুরে বললেন, সেজন্য তো আগেই বললাম কান্নাকাটি করবে না। চুপ করো। আমি থানায় গিয়ে দেখি কী করা যায়, বলে জহির সাহেব বেরিয়ে পড়লেন।
জহির সাহেব থানায় ঢুকে ডিউটি অফিসারকে সালাম দিলেন। পুলিশ অফিসার মুখ তুলে তাকাতেই দাঁড়িয়ে সালাম দিলেন, চাচা বসুন।
জহির সাহেব বললেন, আমি একবার ওসি সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে চাই।
স্যান্ট্রি চাচাকে ওসি সাহেবের কাছে নিয়ে যাও তো।
ওসি সাহেব জহির সাহেবকে সালাম দিয়ে বসতে বললেন। জহির সাহেব বললেন, ওসি সাহেব জামালকে এ্যারেষ্ট করেছেন কেন?
চাচা বসুন, বলে ওসি সাহেব কলিং বেল এ টিপ দিয়ে বললেন, স্যান্ট্রি চা নিয়ে এসো।
স্যান্ট্রি চলে গেলে ওসি সাহেব বললেন, প্রতিপক্ষের মিছিলে হামলা-ভাংচুর, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলায় বিঘ্ন সৃষ্টি এবং জনস্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশ জনদরদী পার্টি বাদী হয়ে জামাল সাহেবসহ আরো চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে।
জহির সাহেব বললেন, ওসি সাহেব আপনি বলুন, আপনি তো আমাকে চেনেন, জামালকেও চেনেন সত্যি করে বলুন তো জামাল কি দোকান ভাংচুর করেছে? আমি চেম্বার অফ কমার্সের একজন পরিচালক শহরে দোকান ভাংচুর হলো, একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে না হোক চেম্বার অফ কমার্সের পরিচালক হিসাবেও কেউ তো আমাকে জানালো না। কোন দোকান ভাংচুর হলে চেম্বার অফ কমার্সে জানানোর কথা কিন্তু কেউ তো আমার কাছে ক্ষতিপুরণের দাবি নিয়ে আসেনি? আসলে বলুন তো কার দোকান ভাংচুর হয়েছে?
ওসি সাহেব কোন কথা বললেন না।
তারমানে কোন্‌ দোকান ভাংচুর হয়েছে তা আপনিও জানেন না?
দেখুন কেসটা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন আছে, একজন সাব-ইন্সপেক্টর তদন্ত করছেন। আমরা আসামি এ্যারেষ্ট করেছি, আজ কোর্টে চালান দিব। জামাল সাহেব যদি নির্দোষ হন তবে বেরিয়ে আসবেন।
জহির সাহেব একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন, ঠিক আছে তাহলে আমাকে একটা আরজির কপি দিন।
ওসি সাহেব স্যান্ট্রিকে ডেকে বললেন এস.আই মামুনের কাছ থেকে কালকের ভাংচুর কেইসটার একটা আরজির কপি নিয়ে এসো তো।
জহির সাহেব রুদ্ধকন্ঠে বললেন, আমি কি জামালের সঙ্গে দেখা করতে পারি?
জি অবশ্যই, চলুন, বলে ওসি সাহেব চেয়ার ছেড়ে উঠে হাজত খানার দিকে গেলেন।
জামাল তখন মেঝেতে বসে ছিল তার বাবাকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, বাবা তুমি!
হ্যাঁ মান-সম্মান আর রাখলে কই?
জামাল বিনয়ের সুরে বলল, বাবা তুমি বিশ্বাস করো আমি কোন দোষ করিনি। আসলে প্রতিপক্ষের মিছিলে হামলা, দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গ, আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।
জহির সাহেবের দু'চোখ সজল হয়ে উঠল। তিনি বললেন, আমি সব বুঝতে পেরেছি বাবা, আমি আগে তোর জামিনের ব্যবস্থা করি। তুই ভেঙ্গে পড়িস্‌ না বাবা, বলে জহির সাহেব চোখ মুছতে মুছতে জামালের কাছ থেকে এসে ওসি সাহেবের চেম্বারে ঢুকলেন। ততক্ষণে স্যান্ট্রি চা নিয়ে এসেছে, আরজির কপিও ওসি সাহেবের টেবিলে দেখে বললেন, ওসি সাহেব আরজির কপিটা আমাকে দিন।
জি, প্লিজ বলে ওসি সাহেব আরজির একটা কপি জহির সাহেবের হাতে দিয়ে বললেন, চা নিন প্লিজ।
জহির সাহেব চা শেষ করে থানা থেকে বের হলেন।
মোজাহার সাহেব সিনিয়র উকিল, অনেক জটিল মামলায় তিনি তার মক্কেলকে জয়ী করার মাধ্যমে উকিল হিসেবে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন এবং প্রশংসিতও হয়েছেন। মোজাহার সাহেব জহির সাহেবের বাল্যবন্ধু কিন্তু জহির সাহেব কখনো মামলা মোকদ্দমার শিকার না হওয়ায় কোনদিন মোজাহার সাহেবের কাছে যাবার প্রয়োজন হয়নি। তাই মোজাহার সাহেব জহির সাহেবকে দেখে কিছুটা অবাক হলেন, বন্ধু আমার কাছে কী মনে করে? তোমাকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে?
জহির সাহেব মলিনমুখে বললেন, মোজাহার গতকাল পুলিশ জামালকে এ্যারেষ্ট করেছে।
হ্যাঁ আজ পেপারে পড়লাম।
আমি তো জীবনে কোনদিন মামলা মোকদ্দমায় জড়াইনি আমি এসবের কিছু বুঝিও না।
তোমার কিছু বুঝতে হবে না, আমি দেখছি কী করা যায়? তুমি থানা থেকে আরজির কপি এনেছ?
জহির সাহেব পকেট থেকে আরজির কপি বের করে দিলেন।
মোজাহার সাহেব মনযোগ দিয়ে পড়ে বললেন, তুমি কিছু চিন্তা করো না, আমি প্রথমে জামিনের জন্য মুভ করবো, ইনশাল্লাহ্‌ জামিন হয়ে যাবে?
কিন্তু যদি জামিন না হয়?
জামিন না হলে হাই কোর্ট থেকে জামিনের চেষ্টা করতে হবে। তুমি কিছু চিন্তা করো না।
দেখ ভাই ওর মা, আমার বউমা সবাই খুব ভেঙ্গে পড়েছে আমি নিজেও খুব দুঃশ্চিন্তায় আছি।
মোজাহার সাহেব বললেন, চিন্তা করো না, আমি তো আছি।
চলবে...
গডফাদার-০১
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×