somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ঔপন্যাসিক জিল্লুর রহমান
চোখের সামনে যেকোন অসঙ্গতি মনের মধ্যে দাগ কাটতো, কিশোর মন প্রতিবাদী হয়ে উঠতো। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে, নির্যাতন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবিতা। তারপর গল্প, উপন্যাস। এ যাবত প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা-২১ টি।

রূপার বিয়ে-০৩

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রায় ঘণ্টা খানেকের মধ্যে মুহিত এলো। বাসায় ঢুকেই ইয়াসমিনের ওপর এক চট নিলো, কী হয়েছে বলোতো?
আগে বাসায় আসো, বাইরে থেকে চেঁচামেচি করো না, বলে ইয়াসমিন দরজা বন্ধ করে দিলো।
মুহিত ডাইনিং স্পেসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে?
আগে বেড রুমে চলো, তারপর বলছি।
মুহিত বেড রুমে ঢুকলো। ইয়াসমিন বেড রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে চাপা স্বরে শোনো, বলে বলতে শুরু করলো।
মুহিত দাঁড়িয়ে ইয়াসমিনের কথা শুনছিলো সবকিছু শুনে তার মাথাটা যেন এলোমেলো হয়ে গেলো, আমাদের ছেলে, তমাল এমন কাজ করেছে!! বলে সে ধপাস করে খাটে বসে পড়লো।
হ্যাঁ আমাদের ছেলে, কী পাপ করেছিলাম যে এমন ছেলে পেটে ধরেছি!
কিছুক্ষণের নীরবতা। তারপর ইয়াসমিন প্রথমে কথা তুললো, এখন সবার আগে প্রয়োজন এই পাপ থেকে মুক্ত হওয়া।
মুহিত সরল প্রকৃতির মানুষ, একটু উদাসীন টাইপেরও। খুব সহজে ঘাবড়ে যায়, মাথার ঘিলু এলোমেলো হয়ে যায়। সে ভেঙ্গে পড়লো। মাথা নত করে বসে রইলো।
ইয়াসমিন তাড়া দিলো, চুপ করে বসে থাকো না, কিছু একটা করো?
আমি কী করবো? এই কলঙ্কের কথা কাকে বলবো? কাকে বলবো যে আমার ছেলে..., বলে সে আর বলতে পারলো না, ঘৃণার সুরে বললো, ছিঃ, ছিঃ, ছিঃ।

তমাল বাসায় ফিরল সন্ধ্যা নাগাদ। প্রতিদিন মা দরজা খুলে দিয়েই তমালকে জিজ্ঞেস করে, কী রে দেরি করলি কেনো? মুখটা শুকনা কেনো? ইত্যাদি, ইত্যাদি। সাধারণত মায়েরা যেসব কথা বলে কিন্তু আজ ইয়াসমিন তার মুখের দিকে তাকালো না। তমাল কিছুটা অনুমান করলো, মায়ের মাথা নিচু করে মুখ কালো করে দরজা খুলে দেয়ায় ভয়ে তার বুক কেঁপে উঠলো। সে কিছু বললো না। সোজা তার রুমে চলে গেলো।
তমালের ডাক পড়লো কয়েক মিনিট পরই। মায়ের গম্ভীর কণ্ঠের ডাক, ডাকটা তমালের কানে ভয়ংকর শোনালো, তমাল এই রুমে আয় তো।
তমাল কোনো কথা বললো না। তার রুম থেকে মায়ের রুমে গেলো। বাবা যে বাসায় আছে তমাল আগে বুঝতে পারেনি। সাধারণত মুহিত বাসায় থাকলে চুপ করে রুমে বসে থাকে না। তমাল বাসায় পা দিয়েই বাবার উপস্থিতি টের পায়। অবশ্য বাবা-মা’র সঙ্গে তার সম্পর্কটা ভয় পাবার মতো না, আতঙ্কেরও না, গার্জিয়ান আর সন্তানের মতো না, যেন একেবারে বন্ধুত্বপূর্ণ কিন্তু আজ যেন বাবাকেও তার ভয়ংকর বলে মনে হলো। তার চিরপরিচিত বাবা-মা’কে অন্য গ্রহের মানুষ বলে মনে হলো।
মুহিত বালিশে গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে আছে, ফ্যানটা জোরে চালু করা আছে কিন্তু তারপরও সে শুধু ঘামছে। ইয়াসমিন মুহিতের পায়ের কাছে পা ঝুলিয়ে দিয়ে বিছানায় বসে আছে। দু’জনের চোখে-মুখে যেন একটা দুশ্চিন্তা, একটা অনিশ্চয়তা, একটা গভীর আতঙ্কের ছাপ পড়েছে।
এতক্ষণে তমালের কাছে বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তার মুখের ওপরও একটা কালো মেঘ জমেছে, হৃৎপিণ্ডটা দ্রুতগতিতে চলছে। সে রুমে ঢুকে মাথা নত করে অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে রইলো।
ইয়াসমিন বরাবরই কোনো কথা বলার আগে ভণিতা করে, অনেক বুঝিয়ে-সুজিয়ে কথা বলে, আজ তার কোনোটিই করলো না। সোজাসুজি জিজ্ঞেস করলো, রূপার সর্বনাশ করেছিস্‌ কেনো?
তমাল অস্বীকার করার চেষ্টা করলো, রূপার!!
ইয়াসমিন তমালের গালে ঠাস করে একটা চড় মারলো, মনে হয় বুঝতে পাচ্ছিস্‌ না?
তমাল আর কোনো কথা বলতে পারলো না।
এজন্য তোকে পেটে ধরেছিলাম, না? এজন্য তোকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করতে চাচ্ছি, না? একটা ফুলের মতো নিষ্পাপ মেয়ের জীবনটা নষ্ট করার জন্য...
তমালের দু’চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। সে আর অস্বীকার করতে পারলো না।
চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিসের সনদের মান নির্ধারণ করা শয়তানী কাজ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪০



সূরাঃ ৯ তাওবা, ১০১ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০১। মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক। মদীনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ মোনাফেকী রোগে আক্রান্ত। তুমি তাদের সম্পর্কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×