somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ঔপন্যাসিক জিল্লুর রহমান
চোখের সামনে যেকোন অসঙ্গতি মনের মধ্যে দাগ কাটতো, কিশোর মন প্রতিবাদী হয়ে উঠতো। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে, নির্যাতন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবিতা। তারপর গল্প, উপন্যাস। এ যাবত প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা-২১ টি।

দুর্নীতিবাজের ডায়েরি-০৩

২৬ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নীলার রুম মেট মোহনা, সব সময় মোবাইলে কথা বলতে থাকে। দিন নেই, রাত নেই প্রায় সময়ই মোবাইলে কথা বলে, যেন ক্লান্তি নেই। কখনো জিজ্ঞেস করলে বলে মামাতো ভাই, ফুপাতো ভাই, ক্লাস ফ্রেন্ড তার সম্পর্কের অভাব নেই। নীলার মোবাইল নেই, সে তার বাবা আর বৃষ্টিকে মোহনার মোবাইল নাম্বার দিয়েছে তার বাবা মাঝে মাঝে মোহনার মোবাইলের মাধ্যমে তার খোঁজখবর নিয়ে থাকে আর প্রায় দিনই বৃষ্টিও রাতে একবার করে মোবাইল করে।
তখন রাত দশটা বাজে।
নীলা পড়ছিল মোহনা নীলাকে বলল, নীলা তোর ফোন।
নীলা মোবাইল রিসিভ করে বলল, হ্যালো আস্সালামুয়ালায়কুম।
ওয়ালেকুম আসসলাম মা আমি, তুই কেমন আছিস্?
জি বাবা আমি ভালো আছি, তুমি? মা?
আমরাও ভালো আছি, তোর লেখাপড়া ঠিক মতো চলছে তো?
জি বাবা, লেখাপড়া ঠিক মতো চলছে, তুমি আমাকে নিয়ে কিচ্ছু ভেবো না।
ভাবি কী আর সাধে রে মা। তুই ভালোভাবে লেখাপড়া করে একদিন অনেক বড় অফিসার হবি, ভালো একটা ছেলের হাতে তোকে আমি তুলে দিব সেদিন আমার সব ভাবনা শেষ হবে।
বাবা তুমি আমাকে নিয়ে এত ভাবছ কেন বল তো? আমি কি এখনো ছোট আছি যে হারিয়ে যাব?
সেটা তুই বুঝবি না মা, তুই যেদিন মা হবি সেদিন বাবা-মা’র দুশ্চিন্তার কারণ বুঝবি। আর হ্যাঁ তোর টাকা লাগবে নাকি রে মা?
বাবা আজ কত তারিখ বলো তো?
পনেরো তারিখ।
পনেরো তারিখে আমার টাকা লাগবে কেন? তুমি তো আমাকে এক তারিখে টাকা পাঠিয়েছ আর টাকা লাগলে তো আমিও বলি।
ও তাই তো, আজ তো সবেমাত্র পনেরো তারিখ তোকে তো টাকা পাঠাতে হবে আবার এক তারিখে। তবু কখনো টাকা লাগলে তুই আমাকে বলবি।
বাবা তুমি তো কোনদিন রাতে মোবাইল কর না, আজ আবার রাতে হঠাৎ মোবাইল করলে কেন?
না মা আজ তোর কথা খুব মনে হচ্ছিল।
নীলা তার বাবার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে মোবাইলটা মোহনার হাতে দিয়ে পড়তে বসল।
কিছুক্ষণ পর আবার মোবাইলের রিং বেজে উঠল।
মোহনা মোবাইল রিসিভ করে আবার নীলার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, নীলা তোর ফোন।
নীলা মোবাইল রিসিভ করতেই আকাশের কণ্ঠস্বরভেসে এলো, হ্যালো নীলা।
আকাশ তুমি মোহনার মোবাইলে রিং করেছ কেন?
সরি নীলা, এবারের মতো-
এটা খুব অন্যায় আকাশ।
নীলা তোমাকে খুব ফিল করছিলাম, তাই বৃষ্টির কাছ থেকে তোমার রুম মেটের মোবাইল নাম্বার নিয়ে তোমাকে মোবাইল করলাম। প্লিজ ডন্ট মাইন্ড।
ঠিক আছে আর কোনদিন এই নাম্বারে মোবাইল করবে না।
নীলা কাল তো ভার্সিটি বন্ধ, এসো না আমাদের বাসায়। আমি আর বৃষ্টি না হয় কাল গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসব।
ঠিক আছে গেটে এসে স্লিপ দিও, আমি চলে আসব, ঠিক আছে এখন রাখ আমার পড়া আছে।
আচ্ছা ঠিক আছে।
নীলা মোবাইলটা মোহনার হাতে দিল।
মোহনা মোবাইলটা নিয়ে একটা দুষ্টামির হাসি হেসে বলল, কে রে?
আকাশ, আমার যে বান্ধবীটা আসে বৃষ্টি, ওর মামাতো ভাই?
ও এতদিন তো জানতাম শুধু আমারই মামাতো ভাই, ফুপাতো ভাই, পাড়াতো ভাই আছে এখন তো দেখি তোরও সব আছে।
নীলা কোন কথা বলল না।
মোহনা বলল, আমি তোর রুম মেট আমার কাছে কিছু লুকাবি না। এখানে আমাদের কেউ নাই রুমে তুই আর আমি পরষ্পরের সুখ-দুঃখ নিজেদের মধ্যে শেয়ার করতে হবে। আর আমার কাছে লুকিয়েই বা তোর লাভ কি? আমি তো তোর ফ্রেন্ডকে কেড়ে নিচ্ছি না।
মোহনার মোবাইলের রিং বেজে উঠল।
মোহনা মোবাইল রিসিভ করল, হ্যালো আস্সালমুয়ালায়কুম।
কেমন আছ বন্যা?
জি ভালো, আপনি?
ভালো আছি তবে আজ তোমাকে খুব মনে পড়ছিল।
মোহনা হেসে উঠল, তাই নাকি?
বন্যা একটা ব্যাপার কি জানো?
কী?
আমি যেন না দেখেই তোমার প্রেমে পড়েছি।
এটা কিন্তু ঠিক না, এই মনে করুন আমি খুব বিশ্রী একটা মেয়ে। মনে করুন গায়ের রং কালো, খাটো নাকটা বোঁচা। মানে যাকে বলে অখাদ্য। তাহলে কি করবেন? আমাকে দেখে দৌড়ে পালাবেন?
তাহলে তো একবার দেখা হওয়াই দরকার।
মোহনা কিছু বলল না।
বন্যা তুমি কি কাল একবার আমার সঙ্গে দেখা করতে পারবে?
কেন বলুন তো?
এই এমনি এতদিন থেকে আমরা মোবাইলে কথা বলছি, অথচ কেউ কাউকে দেখিনি।
কাল আপনার অফিস নেই।
না কাল তো অফিস বন্ধ, এসো না প্লিজ।
ঠিক আছে কোথায় দেখা করবেন বলুন?
আগামীকাল সকাল দশটায় তুমি আড়ংয়ের নীচে চলে এসো।
আমি আপনাকে কিভাবে চিনবো?
তুমি আড়ংয়ের মেইন গেটে এসে আমার মোবাইলে কল করবে।
আচ্ছা ঠিক আছে।

মোহনা মোবাইল রেখে দিতেই নীলা জিজ্ঞেস করল, কিরে নতুন নাকি?
নতুন ঠিক না কয়েকদিন আগে পরিচয় হয়েছে।
নাম কি?
হৃদয়।
নামটা তো বেশ সুন্দর, কোথায় লেখাপড়া করে?
বলেছে সে নাকি এক শিল্পপতির ছেলে একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে এম.বি.এ করে এখন নিজেদের কোম্পানিতে ডাইরেক্টর পদে জয়েন করেছে।
এত বড় মানুষের সঙ্গে তোর পরিচয় হলো কীভাবে?
মোবাইলে।
মোবাইলে পরিচিত একজন মানুষের সঙ্গে তুই দেখা করতে যাবি?
হ্যাঁ, অসুবিধা কি?
অসুবিধা কী মানে? কত কী হতে পারে?
আরে না, কী হবার আছে? তাছাড়া হৃদয় আমার ঠিকানা জানে না। আমার ঠিক নামও জানে না। হৃদয় আমাকে বন্যা নামে জানে।
এমনও তো হতে পারে লোকটা খারাপ, কোন সন্ত্রাসী? নারী পাচারকারী? প্রতারক? আর তুই যেমন তোর আসল নাম বলিস্নি সেও হয়ত তার আসল নাম তোকে বলেনি।
নীলা তুই আসলে বেশি চিন্তা করিস্, আমার খুব ভালো লাগছে যেন একটা নতুন অনুভুতি, তাই না?
নীলা মুখ আংশিক বিকৃত করে বলল, তোর ভালো লাগলেই ভালো।

মোহনার চোখের সামনে তার বাবার অসহায় মুখটা ভেসে উঠল। মোহনা তার বাবাকে কথা দিয়েছে সে পার্ট টাইম জব করে নিজেই নিজের লেখাপড়ার খরচ বহন করবে। গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরে এসে মোহনা বিভিন্ন অফিসে চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু অনেকদিন হলেও একটা চাকরি পায়নি। তার বাবা কয়েকদিন আগে মোবাইল করে তার চাকরির খোঁজখবর নিয়েছেন। মোহনার চাকরি হয়নি শুনে তিনি খুব নিরাশ হয়েছেন।
অবশ্য মোহনা তার বাবাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছে, বাবা কয়েকটা অফিসে ইন্টারভিউ দিয়েছি। এক মাসের মধ্যে ইনশাআল্লাহ একটা ব্যবস্থা হবে, তুমি আমাকে আর কিছুদিন সময় দাও বাবা।
তাই যেন হয় মা।
তার পরদিন তিনি মোহনার নামে টাকা পাঠিয়েছিলেন।
আবার বাবার কাছ থেকে টাকা চাইতে মোহনা যেন সংকোচ বোধ করছে।
মোহনাকে চুপ করে থাকতে দেখে নীলা বলল, কি রে হঠাৎ চুপ করে গেলি কেন?
মোহনা হাসবার একটা ব্যর্থ চেষ্টা করে বলল, আমার কথা থাক, এখন তোর কথা বল্?
আমার আবার কী কথা?
কাল তো ভার্সিটি বন্ধ তুইও তো বাইরে যাচ্ছিস্?
আমি কাল বৃষ্টির মামার বাসায় যাব, ফিরে এসে আমি তোর সঙ্গে যোগাযোগ করব, ও কাল তো আবার তোর ফিরতে দেরি হবে।
আমি জানি না, হৃদয় যে কী কী প্রোগ্রাম করেছে, আসলে না হৃদয়ের সঙ্গে কথা বলে যতটুকু বুঝেছি ওর মনটা খুব বিশাল হয়ত এমন এমন প্রোগ্রাম করে বসেছে যা আমি কল্পনাও করতে পারিনি।
নীলা কোন কথা না বলে পড়ায় মনোযোগ দিল।
চলবে...


আমার এই লেখাটি প্রথম থেকে পড়তে ক্লিক করুন:দুর্নীতিবাজের ডায়েরি-০১
আমার সব লেখা একসাথে পড়তে ক্লিক করুন:আমার ঠিকানা
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:০৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×