somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবন্ধ ও বাঙালিয়ানা

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্কুল জীবনে বাংলা বইয়ের প্রতি আমার ভালোবাসা ছিলো অন্যরকম। গল্পের বইয়ের অভাবে পড়লেই বাংলা প্রথম পত্র বইখানা নিয়ে বসে পড়তুম। বেছে বেছে গল্প গুলো পড়তাম, এড়িয়ে যেতাম প্রবন্ধগুলো। মনের আনন্দে পড়তাম, সুনিপুণ ভাবে কঠিন প্রবন্ধগুলো এড়িয়ে। তারপরো একদিন হঠাত করে, পাতা উল্টাতে উল্টাতে, একটা প্রবন্ধের দুখানা শব্দে আমার নজর আটকে গেলো, "বৈজ্ঞানিক নিউটন"। আমি তখন বিজ্ঞানের ভক্ত, বিজ্ঞানের অনুরাগী। নিউটন, আর্কেমেডিস, গ্যালিলিও, এডিসন, হুক, আইনেস্টাইন এদের গল্প আর তত্ত্ব আমার জানা। নিউটনের নামখানা দেখে আমি লাইনটা পড়লাম, পুরো লাইনটা ছিলো এরকম,
"বৈজ্ঞানিক নিউটন যখন বালক, তখন তাঁর বইয়ের পাশে হাতুড়ি করাতের স্থান ছিলো"
মাথায় ভজঘট লেগে গেলো, এই গল্পতো আমার জানা নেই। পুরো লেখাটা পড়া দরকার। ঘটনা যদি পুরোপুরি জানতে হয় বিস্তারিত পঠন আবশ্যক। শুরু করলুম পড়া, আদা জল খেয়ে লেগে পড়লুম নিউটনের গল্প জানার স্পৃহায়। সে প্রবন্ধটা ছিলো ডাঃ লুতফর রহমানের লেখা উন্নত জীবন গ্রন্থের দ্বাদশ পরিচ্ছদ "শারীরক পরিশ্রম" (পুস্তকটা আমি পরে যোগাড় করে তার থেকে প্রবন্ধখানা খুজে বের করেছি)। সেইদিনের পর থেকে প্রবন্ধগুলোও বাদ পড়তো না, আনন্দ আর আগ্রহ নিয়ে পড়তাম। এই প্রবন্ধগুলো আমার দর্শন, আমার আদর্শ, আমার জ্ঞান সমৃদ্ধ করতে লাগলো। সৈয়দ মুজতবা আলীর বই কেনা, মুহম্মদ শহীদুল্লাহর পল্লীসাহিত্য, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর শিক্ষা ও মনুষত্ব, প্রমথ চৌধুরীর বইপড়া, কামরুল হাসানের আমাদের লোকশিল্প এরকম আরো অনেক ছোট প্রবন্ধ পড়েছিলুম সে কয়েক কাল হয়ে গেছে। আনন্দের জন্য পড়েছি; কিন্তু ভাবি নাই কেনো লিখলো, কার জন্য লিখলো। এখন এসে দেখি এই ছোট প্রবন্ধ গুলোর ভেতরকার মসলাটা বেশ চটকদার বটে। ঐ বয়সে চমকটা ধরতে পারি নাই। স্মৃতিচারন করা আমার ইচ্ছে নয়, বরং একটু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করাটাই আমার ইচ্ছে। তাই এবার কোমরে গামছা বেধে নেমে পড়ি।
বাঙালি জাতি খুব সৌভাগ্যবান, আর সেই সৌভাগ্যের ভাগিদার হতে পেরে আমিও কৃতজ্ঞ আল্লাহ তাআলার কাছে। এই যে এতসব প্রবন্ধ আর এত সুন্দর সাবলীল ভাষায় তা লেখা এইরকম আর কোন জাতির জন্য আছে কিনা আমার জানা নেই। বাঙালি, তাকে পথ দেখানোর জন্য এত নিবেদিত প্রাণ পেয়েছেন যা আমাকে বিমোহিত করে। জ্যাক জা রুশো, ভলতেয়ার, নিটতসে কিংবা দস্তয়ভস্কি আমাদের জাতে জন্ম নেয়নি, কিন্তু তাদের থেকে উত্তম চিন্তাবিদ আমাদের ছিলো। তাদের চেয়ে উত্তম দিশারী আমাদের ছিলো। তাহলে আমরা ব্যর্থ কোথায়? রাশিয়ানরা ডাঃ লুতফর রহমানের নাম জানে না, কিন্তু আমরা দস্তয়ভস্কিকে চিনি। আবার নিটতসের নাম আমাদের মুখে মুখে ফিরলেও মোতাহার হোসেন চৌধুরীর নাম জার্মান মাত্রেরই অজানা। এহেন সমস্যার মূল কোথায়? এর মূল বাঙালির মাঝেই। আমরাই আমাদের নিজেদের সৃষ্টির লালন করিনি। সার্বভৌম জাতি হিসেবে স্বতন্ত্র স্বাক্ষর যখন আমাদের রাখার সময় তখন আমরা আমাদের সংস্কৃতি ভুলে যাচ্ছি। বিশ্বে অনন্য হবার প্রাক্কালে আমরা আমাদের ভুলে গেছি। বাঙালি এখন দিশেহারা এক জাতি, যে তার স্বরূপ চিনে না। তার সমস্ত চেতনটাই যে পরচর্চা, আর পরসংস্কৃতির নেশায় চুর তা বুঝতে কিছুমাত্র কষ্ট হয়না। এই নেশায় মাতাল জাতি সামনে অনেকদূর যাবে ঠিকই কিন্তু একদিন সে আর বাঙালি থাকবে না। আমার আফসোস এই যে বাঙালির যশ আর নাই। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ স্যারকে এই সময়ে পেলে বলতাম, বাঙলা সাহিত্যে যে Proletariat literature-এর সম্ভাবনার কথা আপনি পল্লীসাহিত্য প্রবন্ধে বলেছেন, তার হাটিহাটি পা-পা-ও আমরা শুরু করতে পারিনি। পরচর্চা আর পরসংস্কৃতির ভালোবাসা যেভাবে বাড়ছে তার সঙ্গে সঙ্গে বাঙালিয়ানা মনস্তত্ব-এর অবক্ষয় সমানুপাতিক হারে হচ্ছে। বাঙালি হায় হায় করবে কিনা জানিনা, তবে সত্ত্বার পরিচয় হারিয়ে একদিন এই জাতি যে আর থাকবে না তা বুঝতে আমার লেশ মাত্র মাথা ঘামাতে হচ্ছে না। আবার স্মৃতিচারণে ফিরে যাই, আমার মনে আছে “শারীরিক পরিশ্রম” প্রবন্ধ পড়ার পর পরই বাসার টুল ব্যাগ খুজে বের করে সেটা পুরোটা আমার বইয়ের পাশে টেবিলের উপর রেখে দিয়েছিলাম। আমার মা তাতে বিন্দুমাত্র খেপেননি বরং বলেছিলেন, যেদিন টেবিল থেকে ব্যাগ সরাবে আবার জায়গামতো রেখে দিও। সপ্তাহখানেকের মধ্যে টুলব্যাগ সরে গিয়েছিলো, কিন্তু আজকে পর্যন্ত টেবিলে স্ক্রু ড্রাইভার আর একটা রেঞ্চ রাখা আছে। শারীরিক পরিশ্রমে আমার অনীহা থাকলেও, অযাচিত এটা ঐটা ব্যবচ্ছেদের নেশা আমার প্রবল, সেই নেশায় মেটাতেই সাথে রেখেছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×