বিকাল ৩টায় ফোন। বেরিয়েছো?
- এত রোদ! এখনই বেরোতে হবে?
- নাহ, এখন বেরোবে কেন? সূর্যাস্তের পরে বেরিয়ো।
তারপর নিচুস্বরে কি গালিটালি দিয়ে যেন রাগ প্রকাশ করলো। বেশি পাত্তা দিলাম না। এমন কি গালি আর দিবে? সবই তো আমার কাছ থেকেই শেখা। আর আমি শিখেছি ব্লগ থেকে। যা ব্লগের সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য, তাতে আমার নিশ্চয়ই চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার হবে না। তাই মন খারাপ হলো না। কোন কালারের শার্ট পরবো, নাকি টি-শার্ট, তাই নিয়ে গবেষণায় লিপ্ত হলাম।
মাইয়া মানুষ ব্যাপক ভেজাইলা জিনিস। কারো চয়েস ভদ্র পোলা, কারো আবার উড়াধুড়া। এতদিন এমএসএন মোবাইল কইরাও এই মাইয়ার ভাবগতিক পুরা ধরতারি নাই। শার্ট পরলে একটু ভদ্র ভদ্র লাগবে; কিন্তু অনেক মাইয়া খ্যাত ভাবতারে। বিশেষ করে এই গরমে শার্ট পরলে স্মার্টনেস বজায় রাখা টাফ হয়া যাইবো। টি-শার্ট পরলে ভাববে, এইডা ডোন্ট কেয়ার পোলা, কোনো দায়বদ্ধতা নাই, এর লগে প্রেম করলে বিয়ার সময় চাপাচাপি কইরা ফায়দা তুলন যাইতো না। হালায় মহা ঝামেলায় পড়লাম। এরপর আবার আছে, কালার নিয়া ফ্যাকড়া। কোনো মাইয়ার পছন্দ অ্যাশ কালার, আবার কোনো মাইয়ার অ্যাশ কালার দেখে কান্না আসে। তার প্রিয় রঙ সবুজ। সবুজ রঙের মানুষের মন নরম হয়। কিন্তু এই বয়সে সবুজ পইরা স্কুলবয় সাজতে আমার প্রেস্টিজের চাকা পাংচার হইয়া যাইবো। ধুর, এত ভাবাভাবির কি আছে। প্রেম হইলে হইবো, না হইলে নাই। আকাশী রঙের ওপরে কাজ করা টি-শার্ট পরলাম।
আগের পোস্টে অনেকে অনেক রকম টিপস দিয়েছিলেন। ডেটিংয়ে গিয়ে এত সূক্ষাতিসূক্ষ জিনিস মনে থাকে না জানতাম। তবে নীলার সাজেশন বেশ জুতসই হয়েছিলো। প্রেম দিঘীতে না বুইঝা-শুইনা ঝাঁপ দিলে আমি একাই প্রেমজ্বরে কাঁপাকাঁপি করবো আর ওই মাইয়া থার্মোমিটার লইয়া জ্বরই মাইপা যাইবো। জ্বর কমানোর ওষুধ লইয়া আইবো না। অতএব, সিদ্ধান্ত হইলো, মন যতই আউলা হয়া যাক, বেশি পাত্তা দেওন যাইবো না। মেয়েদেরকে ইগনোর থেরাপি দিলে অনেক সময়ই কাজ হয়।
সাড়ে ৪ টায় দেখা হলো। সেও তেমন সাজে নাই। নরমাল ড্রেস। ভেবেছিলাম, শাড়িটাড়ি পরবে। তা পরে নাই। তবে বেশ পরিপাটি বুঝা যায়। চুল আঁচড়িয়েছে বেশ যত্ন করে। চুলের কাঁটাও মানানসই। মাথা থেকে পায়ের জুতা পর্যন্ত কালার ম্যাচিং। তার রূচিবোধ পছন্দ হলো।
সে কথা বলে শুদ্ধ করে, দাঁড়িকমা মেপে। আমি পুরা গাঁইয়া স্টাইলে চালাই। অনেকবারই ফোনে সে অভিযোগ করেছে; কিন্তু আমি জানি, সে এটা লাইক করে। দুনিয়া জুড়ে নেগেটিভ পজেটিভের খেলা।
আলোচনা হলো অনেক কিছু নিয়ে। রাজনীতি বাদে। শুয়োরের বাচ্চারা দেশটাকে কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছে, তা ভেবে মাথার চুল ছিঁড়তে ছিঁড়তে এই মধুর সময়টার অপচয় করতে সে ও চায় না, আমিও না।
একরামুল হক শামীম মজা করে বললেও তার বিষয়টা মাথায় ছিলো। কথা বলে বের করে ফেললাম, তারা দুই বোন, ১ ভাই। ভাইটা পিঠাপিঠি, এবার ইউনিতে থার্ড ইয়ারে, বোনটা পিচ্চি, স্কুলে পড়ে।
বললাম, শামীম নামে আমার একটা দোস্ত আছে।
- কোন শামীম? যে ত্রিভুজ নামে বিভিন্ন ফোরামে আইটি বিষয়ে টিপস দেয়?
- আরে, না না। ত্রিভুজ আমার দোস্ত হবে কেন? আমার দোস্তের পুরা নাম একরামুল হক শামীম। কিন্তু তুমি ত্রিভূজ শামীমকে চেন কিভাবে?
- আইআরসিতে আগে আড্ডা হতো। ত্রিভুজ ওখানকার বেশ কর্মতৎপর অ্যাডমিন।
- অন্য কোথাও ত্রিভুজের লেখা পড়ো নাই? কোনো ব্লগ-ট্লগ?
- না তো!
আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। সে সামহোয়্যারইনে আসে না। ত্রিভুজের সম্মানও বাঁচলো, আমিও অনেক কৈফিয়তের হাত থেকে বাঁচলাম। মেয়েরা অকারণেও রাখঢাক পছন্দ করে। তার সাথে ডেটিং নিয়ে সামহোয়্যারইনে পোস্ট দিয়েছি জানলে যে নার্গিস আসবে, তা প্রতিরোধ করতে আমার সময় এবং ধৈর্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যাবে।
মিয়ানমারে নার্গিস আঘাত হেনেছে। আজ রাত্রে ঢাকায়ও ঝড় হওয়ার পূর্বাভাস। বেশিক্ষণ বাইরে থাকা যাবে না। সাড়ে ৭টার দিকেই যার যার ফিরতি পথ ধরি।
প্রেমের কথাটা আজ বলা হলো না। তবে তার চোখে আমি মুগ্ধতা দেখেছি। আমি নিজেও কি মুগ্ধ হই নি?