somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"শার্লক হোমস"-এক অমর চরিত্রের নাম.....

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
"শার্লক হোমস"_____
নামটি শোনেনি এমন মানুষ খুব কমই আছে। যারা নামটি শুনেছে তারা এটাও জানে যে, সেই ১৮৮৭ সাল শুরু করে আজ অব্দি তার জনপ্রিয়তা বিন্দুমাত্র কমেনি। তার প্রতি মানুষের আগ্রহ দিন দিন যেনো আরও বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শার্লক হোমস একটি কাল্পনিক চরিত্র।
পেশায় একজন 'কন্সালটিং ডিটেকটিভ'।
লন্ডন শহরের তাবৎ পুলিশ অফিসার, স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড যখন কোন রহস্যের সমাধান করতে পারতেন না, তারা ছুটতেন 'হোমস' এর কাছে। 'হোমস' তার অসাধারন পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা আর বিশ্লেষণ শক্তি দিয়ে সেইসব রহস্যের সমাধান করতেন। তার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এতটাই ধারালো ছিলো যে একজন মানুষের শার্টের হাতা, কলার, প্যান্টের হাঁটু, হাতের বুড়ো আঙ্গুল দেখে তিনি লোকটার পেশা থেকে শুরু করে তার অতীত, বর্তমান নিয়ে অনেক কিছু বলে দিতে পারতেন। এবং সেগুলো হতো সম্পূর্ণ নির্ভুল। মুলত, এই জিনিসগুলোর কারনে তার জনপ্রিয়তা এত বেশি।
যিনি এই চরিত্রটি তৈরি করেছেন তিনি একজন স্কটিশ লেখক এবং চিকিৎসক,নাম- 'স্যার আর্থার কোনান ডয়েল'
'ডয়েল' যখন মেডিক্যালে পড়তেন, তার সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষক ছিলেন 'ড. জোসেফ বেল'।
ডয়েল কিন্তু এই 'হোমস' চরিত্রটি তার শিক্ষক 'ড. জোসেফ বেল' এর আদলেই গড়ে তোলেন। মানুষকে পর্যবেক্ষণের এমন অসাধারন ক্ষমতা সত্যিই ড. বেল-এর মধ্যে ছিলো। 'হোমস' এর চেহারা এবং স্বাস্থ্যও ছিলো ড.বেল এর মতই। অর্থাৎ, 'ডয়েল' তার 'হোমস' চরিত্রটি সম্পূর্ণই একজন সত্যিকার মানুষের আদলে গড়ে তোলেন।
১৮৮৭ সালে 'এ স্টাডি ইন স্কারলেট' নামক উপন্যাসের মধ্য দিয়ে পৃথিবী বিখ্যাত এই 'হোমস' চরিত্রের প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে। ১৮৯১ সালে "Strand Magazine"-এ তাকে নিয়ে ছোট গল্প লেখা শুরু হলে ঝড়ো-গতিতে তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পরে। হোমসের বেশিরভাগ গল্পগুলো বর্ণিত হয় তার সার্বক্ষণিক সঙ্গি ড. জন ওয়াটসনের দ্বারা। অর্থাৎ, লেখক কোনান ডয়েল ড. ওয়াটসনের মুখ দিয়েই হোমসের সব বিখ্যাত এ্যাডভেঞ্চারগুলো আমাদের কাছে বর্ণনা করেন। হোমসকে নিয়ে মোট ৪টি উপন্যাস ও ৫৬টি ছোট গল্প লিখেন কোনান ডয়েল। আর এগুলোই তাকে পৌঁছে দেয় খ্যাতির শীর্ষে।
জীবন বৃত্তান্তঃ
লেখক শার্লক হোমসকে কতটা চিন্তা ভাবনা ও যত্ন নিয়ে গড়ে তুলেছেন তা তার জীবন বৃত্তান্তের দিকে একনজর দেখলেই বোঝা যায়। লেখক শুধু তাকে বানিয়েই সন্তুষ্ট হননি। তার সাথে তার পুরো পরিবারে বৃত্তান্তও তুলে এনেছেন তার গল্পে-

নাম- উইলিয়াম শার্লক স্কট হোমস।
জন্ম- ইংল্যান্ড, ইয়র্কশায়ার, ১৮৫৪'র ৬ জানুয়ারি,শুক্রবার।
পিতা- সাইগার হোমস।
দাদা- মাইক্রফট হোমস।
মাতা- ভায়োলেট শেরিনফোড।
বড় ভাই- শেরিনফোর্দ হোমস (১৮৪৫)।
মেজো ভাই- মাইক্রফট হোমস (১৮৪৭)।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা- অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন।
প্রিয় গবেষণার বস্তু- তামাকের ছাই।
যেসব ব্যাপারে পারদর্শী ছিলেন- পিস্তল, তলোয়ার যুদ্ধ, বক্সিং, ঘোড়-সওয়ার, মার্শাল আর্টস।

শখ এবং ব্যাক্তিত্বঃ
ওয়াটসনের বর্ণনা অনুযায়ী হোমস কিছুটা 'বোহেমিয়ান' টাইপের ছিলেন। মুখে সবসময় একটা পাইপ থাকতো। খাওয়া- দাওয়ার ব্যাপারে তেমন একটা মনযোগ দিতেন না। 'ফরেন্সিক সাইন্স' নিয়ে তিনি প্রচুর গবেষণা করতেন এবং নিজের উপরেই তিনি অনেক ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতেন। যখন হাতে কোন কেস থাকতো না তখন তিনি উত্তেজনা দমন করতেন 'প্যাথেডিন' ব্যাবহার করতেন। মেয়েদের ব্যাপারে সে তেমন একটা আগ্রহ বোধ করতেন না তবে একটি মাত্র মেয়ের কথা সে তার গল্পে মাঝে মাঝে টানতেন। তার নাম 'আইরিন অ্যাডলার'।
সাধারন জ্ঞান ও প্রচলিত ব্যাপারে ধারনাঃ
প্রথম গল্পেই 'ওয়াটসন' তার বন্ধু 'হোমসের' যাবতীয় খুতিনাতি জ্ঞান নিয়ে একটি খসড়া তৈরি করেন,তা এরকম-
সাহিত্য জ্ঞান - শূন্য.
দর্শন জ্ঞান - শূন্য.
জ্যোতির্বিদ্যা জ্ঞান - শূন্য.
রাজনীতি জ্ঞান - ক্ষীণ.
উদ্ভিদবিদ্যা জ্ঞান - নানারকম প্রাকৃতিক বিষ সম্বন্ধে ভালো জ্ঞান আছে তবে বাগান করা সম্পরকে কিছুই জানতেন না।
ভূতত্ত্ব জ্ঞান - প্রাকটিক্যাল, কিন্তু সীমাবদ্ধ। প্যান্টের তলায় লেগে থাকা মাটি দেখে বলে দিতে পারতেন এটা লন্ডনের কোন এলাকার মাটি।
রসায়ন ও জ্ঞান - গভীর।
শারীরস্থান জ্ঞান - সঠিক, কিন্তু অগোছালো।
উত্তেজনাপূর্ণ সাহিত্য জ্ঞান - অঢেল। সকল শতাব্দীর ভয়াবহ ঘটনাগুলো সব তার মুখস্ত।
ভালো বেহালা বাজাতে পারতেন এবং ব্রিটিশ আইনের ব্যাপারে অনেক ভালো জ্ঞান ছিলো তার।

'হোমসের' যে তথ্যগুলো না জানলেই নয়ঃ
পুরো পৃথিবীতে 'হোমস' কে নিয়ে বিভিন্ন সময় অনেক হৈ চৈ হয়েছে। একটি উপন্যাসের চরিত্র কিভাবে উপন্যাসের গণ্ডি পার করে চলে আসতে পারে বাস্তব জীবনে, 'হোমস' তার জলজ্যান্ত প্রমান। 'হোমস' কে নিয়ে লিখতে লিখতে 'ডয়েল' নিজেই একসময় ক্লান্ত হয়ে তাকে মেরে ফেলতে চান এবং মেরেও ফেলেন ১৮৯৩ সালে 'THE FINAL PROBLEM' নামক গল্পে, তবে পাঠকদের প্রচণ্ড তোপের মুখে কয়েক বছর পরই অনেকটা বাধ্য হয় 'হোমসকে' ফিরিয়ে আনেন 'ডয়েল'।
আবার শুরু হয় ' হোমসের' কাহিনি। এমনকি, ডয়েলের মৃত্যুর পরও হোমস ভক্তরা হোমসকে মরতে দেয় নি। আজ অব্দি অনেক লেখক লিখে যাচ্ছেন হোমসকে নিয়ে। যদিও আসল সৃষ্টিকারীর অভাব পাঠকরা ভালোভাবেই বোধ করে, এবং সবসময় করবে। হলিউডে তাকে নিয়ে অসংখ্য মুভি তৈরি হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। পাঠকরা তাকে মনে-প্রানে এতটাই বিশ্বাস করে নিয়েছিলেন যে কেউ কেউ ভাবতেন 'হোমস' নামে সত্যিই কেউ ছিলেন। খোদ লন্ডন, জাপান থেকে শুরু করে কানাডা, এবং পৃথিবীর বহু দেশে রয়েছে 'শার্লকিয়ান সোসাইটি'।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, গল্পে তার ঠিকানা '২২১/বি বেকার স্ট্রিটে এখন পর্যন্ত সপ্তাহে গড়ে ৪০টি করে চিঠি 'হোমসের' কাছে আসে এবং সেখানে বিভিন্ন রকম সমস্যার সমাধানের অনুরোধ থাকে। পৃথিবীতে হয়তো এটিই একমাত্র উপন্যাস-চরিত্র যা এতো বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সমসাময়িক অনেকেই 'হোমসের' মতো একটি চরিত্র তৈরি করতে চেয়েছেন তবে সেটা সম্ভব হয়ে উঠেনি। আজ অব্দি 'শার্লক হোমস' রয়ে গেছে একটি অমর চরিত্র হিসেবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৪৮
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×