চিত্ত-বিনোদন বা অবসর সময় কাটানোর জন্য মানুষ অনেক ধরনের খেলার জন্ম দিয়েছে। পাযল জাতীয় খেলাগুলোর দিকে মানুষের ঝোঁক বরাবরই বেশি। কারন, এতে তেমন শারীরিক শ্রম দিতে হয়না এবং নিজের বুদ্ধিমত্তারও প্রকাশ ঘটে।
এরকমই একটি খেলার নাম ট্যানগ্রাম। এটি মূলত, নির্দিষ্ট আঁকারে কাটিং করা সমতল কোন বস্তু।
Tangram (চীনা: 七巧板; পিনইন: qi qiǎo bǎn) যার আক্ষরিক অর্থ- "দক্ষতার সাত বোর্ড"।
এটি মুলত সাতটি সমতল আকারের পাযল যেগুলোকে 'ট্যান' বলা হয়, যেগুলোকে একত্রিত করে বিভিন্ন রকমের আকৃতি তৈরি করা যায়। এই পাযলটি, মূলত একটি নির্দিষ্ট আকৃতি থেকে কেটে তৈরি করা হয় যা দিয়ে নাকি প্রায় যেকোনো কিছুর আকৃতিই তৈরি করা সম্ভব। এটি সমতল যেকোন কিছু কেটে করা যায়। কাগজ, বোর্ড, কাঠ ইত্যাদি।
এটি মূলত চীনে সর্বপ্রথম উদ্ভাবিত হয়েছিলো তবে এর স্থান, কাল সম্পর্কে সঠিক কিছু জানা যায়নি।
১৯ শতকের দিকে কিছু বাণিজ্যিক জাহাজের মাধ্যমে এটি ইউরোপে প্রবেশ করে এবং একটা সময়ে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এটিকে বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় 'ব্যাবচ্ছেদ পাযল'।
'ট্যানগ্রাম' চীন এবং এর আসে- পাশে অনেক আগে থেকেই জনপ্রিয় ছিলো। আমেরিকায় এটি প্রথম নিয়ে আসেন 'Captain M. Donnaldson' -১৮১৫ সালে। তিনি সাথে করে একজোড়া Sang-hsia-k'o's Tangram- নিয়ে আসেন। আমেরিকায় 'ট্যানগ্রাম'- এর উপর প্রকাশিত প্রথম বইটি Donnaldson-এর আনা 'ট্যানগ্রাম' এর উপর ভিত্তি করেই লেখা হয়।
'The Eighth Book Of Tan'- নামক একটি কল্পকাহিনী বই প্রকাশের পর থেকে এই পাযল খেলাটির জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে যায়।
বইটিতে বলা হয়, এই খেলাটি ৪,০০০ বছর আগে 'ট্যান' নামক এক চীনা গড আবিষ্কার করেন। এই বইটিতে প্রায় ৭০০টি 'শেপ'-এর সমাধান করে দেয়া হয়েছে। কিছু শেপ এতোটাই জটিল ছিলো যা সমাধান করা সম্ভব হয়নি।
পাযলটি ইংল্যান্ডেও পৌঁছে যায় এবং সেখানে এটি নাকি এখনও খুব জনপ্রিয় এবং ফ্যাশনেবল একটি খেলা বিবেচিত হয়। ইংল্যান্ড থেকে খেলাটি ছড়িয়ে পরতে থাকে ইউরোপের অন্যান্য দেশে। ব্রিটিশরা এই পাযলটির সমাধানের জন্য অনেক বই প্রকাশ করে যা এর জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেয় ব্যাপক হারে। সেসব বইগুলোতে ট্যানগ্রাম-পাযল সমাধানের বিভিন্ন উপায় বলে দেয়া ছিলো। এভাবে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির ফলে চায়না থেকে 'ট্যানগ্রাম সেট' পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পরতে শুরু করে। কাঠ, প্ল্যাস্টিক, কাঁচ, কচ্ছপের খোলস ইত্যাদি দিয়েও চীনারা 'ট্যানগ্রাম সেট' তৈরি করা শুরু করে।
এই পাযল খেলাটির জনপ্রিয়তার আরও একটি কারন হলো- তখনকার যুগে ইউরোপের 'ক্যাথলিক চার্চ'-গুলো চিত্ত বিনোদনের জন্য এ ধরনের অনেক খেলাই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলো। 'ট্যানগ্রাম '- এর ক্ষেত্রে তারা কোন রকম বাধা- নিষেধ বা আপত্তি জানাননি।
সেই ১৯ শতক থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬,৫০০-র বেশি 'ট্যানগ্রাম' পাযল এর সমাধান করা হয়েছে এবং এটি দিন দিন বেড়ে চলেছে।
সময় কাটানোর জন্য খুবই মজার একটা জিনিষ। আমি যেদিন প্রথম জেনেছিলাম তখন হাতের কাছে অন্য কিছু না পেয়ে কাগজ কেটেই তৈরি করেছিলাম। ভালো কাজ দিয়েছে। তবে শক্ত কিছু দিয়ে তৈরি করতে পারলে বেশি ভালো হয়।
যেভাবে বানাবেনঃ
বোর্ড, কাগজ বা কাঠ যা-ই হোক, ছবির রেখা অনুযায়ী শুধু কেটে নিন। ব্যাস, তৈরি হয়ে যাবে আপনার 'ট্যানগ্রাম'-
কিছু নমুনা দেয়া হলো-
.............................................. ................................................
"ট্যানগ্রাম- পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও জটিল PUZZLE"...!!!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?
কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।
এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন
একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!
ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে
একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী
গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন
একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!
ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...
ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।
মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন