somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পায়ে হেঁটে কেউকারাডং।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন সময় সন্ধ্যা ৬টা। অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। বৃষ্টির ফোটা তখনো পড়ছিল। শরীরের সামর্থ্য অনেক আগেই শেষ হয়েছে, দৃঢ় মনোবলের কারণে এখনো টিকে আছি। সিঁড়ি গুলো খুবই পিচ্ছিল হওয়ায় রেলিং ধরে অত্যন্ত সাবধানে একপা একপা করে কোন মতে শরীরটাকে টেনে নিয়ে লক্ষ্যে পৌছলাম। ইমরান এসে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো, ভাই আমরা পেরেছি, “Nothing is impossible”.
গত কোরবানীর ঈদের পরদিন,
তারিখঃ ০৩/০৯/২০১৭
বিয়ের এর পর এবারই প্রথম ব্যতিক্রম ঘটলো। শশুড় বাড়ির আদর/আপ্যায়নের মায়া ত্যাগ করে চলে এলাম ঈশ্বরদী বাস টার্মিনালে। বাসের নাম সুপার সনি, সময় সকাল ১১.৩০ মিনিট। বাসের ৪টি টিকেট আমার ভাতিজা আসিব ঈদের আগেই করে রেখেছিল। আমাকে এগিয়ে দিতে আসা ভাইরা এম. এ. সোবাহানের থেকে বিদায় নিয়ে বাসে উঠলাম।
শুরু হলো আমাদের মিশন কেউকারাডং। দাশুড়িয়া মোড় থেকে ইমরান, বনপাড়া বাইপাস থেকে রবিউল এবং ফুড ভিলেজ থেকে হাফিজ বাসে উঠলো। লক্ষ্য ঢাকা। রাস্তায় বৃষ্টি আমাদের সাথেই থাকলো। বিকেল নাগাদ টেকনিকেলে বাস থেকে নামলাম। কল দিলাম বন্ধু রাজনকে। সে এখন আমাদের কাছে Most Important Person. কারণ তার কাছে রয়েছে আমাদের ঢাকা টু চট্টগ্রাম ট্রেনের টিকেট, যা সে ঈদের আগে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যোগাড় করেছে। রাজন টিকিট নিয়ে আসলো। হালকা চা নাস্তা করে রাজনের থেকে টিকেট নিয়ে সিএনজি করে চলে এলাম কমলাপুর স্টেশনে। ট্রেন রাত ১১.৩০ মিনিট, তূর্ণা এক্সপ্রেস।
রাতের খাবার স্টেশনের পাশের হোটেলেই সেরে নিলাম। প্লাটফর্মে চা কফি খেয়ে আড্ডা দিয়ে সময়মত ট্রেনে উঠলাম, বার্থের টিকেট হওয়ায় ভালোমত ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু ঘুম হলোনা। কি আর করা, প্রায় সারা রাতই গল্প চললো। শেষ রাতে একটু ঘুম হয়েছিল।
তারিখঃ ০৪/০৯/২০১৭
সকাল আনুমানিক ৬টায় ট্রেন চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌছুলো। ট্রেন থেকে নেমে প্রথমে বিশ্রামাগারে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। এবার আমাদের টার্গেট ফেরার টিকেট সংগ্রহ করা। কাউন্টারে টিকেট পাবোনা, তা আগেই কনফার্ম হয়েছিলাম। শুরু হলো দালাল খোজা, কিছুক্ষণের মধ্যে পেয়েও গেলাম। প্রায় ২গুন টাকা দিয়ে ০৮/০৯/২০১৭ তারিখের ৪টি টিকেট নিলাম। এতেও স্বস্তি যে, অন্তত দাড়িয়ে যেতে হবেনা।
স্টেশনে থেকে বের হয়ে সিএনজি নিলাম নতুন ব্রীজ যাওয়ার জন্য। নতুন ব্রীজ এ গিয়ে বান্দরবান যাবার বাস পেলামনা। সেখান থেকে চলে গেলাম বাস টার্মিনালে। বান্দরবান যাবার বাসের কাউন্টারগুলোতে সেকি ভিড়। ঈদের পর পর্যটকের ঢল নেমেছে বান্দরবান যাবার জন্য। ইমরান আর রবিউল প্রায় ঘন্টা খানেক চেষ্টা করে টিকেট কাটতে সক্ষম হলো। টিকেট কাটার পর পাশের হোটেলে সকালের নাস্তা করে নিলাম। বাস ছাড়লো আনুমানিক ৯টার দিকে। বাস এগিয়ে চলেছে তার নিজ গতিতে। বান্দরবান শহরে প্রবেশের কিছু আগে থেকেই শুরু হলো পাহাড়ি পথ। এই পথে আমার আর ইমরানের আগেও যাওয়া আসা থাকায় আগ্রহ কম, কিন্তু হাফিজ এবং রবিউলের জন্য এই পথে প্রথমবার। তাই তারা অতিব আগ্রহ নিয়ে পথের সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকলো।
প্রায় বারোটার দিকে বান্দরবান শহরে বাস থেকে নামলাম। আমাদের দেরী করার মত সময় নেই, কারণ আমাদের লক্ষ্য বান্দরবান শহর নয়, আরো অনেক দুর। স্থানীয় মানুষজনের থেকে রুমা যাবার বাস স্ট্যান্ডের খোজ নিয়ে সেদিকে এগিয়ে চললাম। ইমরানের কথামত শরীরকে ওয়ার্ময়াপ করার জন্য পায়ে হেটে এগিয়ে চললাম। রাস্তার পাশে আখ বিক্রি করছিল এক চাচা। তার থেকে আখ কিনে খেতে খেতে এগিয়ে গেলাম।
রুমা বাস স্ট্যান্ডে পৌছেই বাস পেয়ে গেলাম। টিকেট করে বাসে উঠতেই বাস ছেড়ে দিল। পাহাড়ি আঁকাবাকা রাস্তা ধরে বাস এগিয়ে চললো। বাস কখনো পাহাড়ের উপরে উঠছে আবার কখনো নিচে নামছে। ভয় হচ্ছিল, বাস যদি পাহাড়ের কিনারা থেকে পড়ে যায়, তাহলেই শেষ। বাঁচার কোন উপায় নেই। তার উপর যেই লক্কর ঝক্কর মার্কা বাস। এভাবেই এক সময় আমাদের বাস চলে এলো ওয়াই জংশনে। এখান থেকে ডান দিকের রাস্তা চলে গেছে নিলগিরি হয়ে থানছি। যে পথে আমি এবং ইমরান আগে নিলগিরি পর্যন্ত গিয়েছি। আর বাম দিকের রাস্তা চলে গেছে রুমা। আমাদের আপাতত লক্ষ্য এই রুমা পর্যন্ত যাওয়া। অতএব এখান থেকে যে রাস্তা তা আমাদের চার জনের জন্যই একেবারে নতুন।
ওয়াই জংশনে বাস কিছু সময়ের জন্য বিরতি দিল। এখানে বেশকিছু স্থায়ী অস্থায়ী দোকান রয়েছে। যে গুলোর বেশির ভাগই পাহাড়ি ফলের দোকান। আমরা বাস থেকে নেমে কলা, মালটা, পেঁপে এবং জাম্বুরা খেলাম। পেঁপে ভালো লাগলেও জাম্বুরা ভালো লাগেনি। আবারো বাস চলা শুরু হলো। পাহাড়ি রাস্তা ধরে বাস এগিয়ে চলেছে। বিপরিত দিক থেকে যখন কোন বাস বা ট্রাক আসে তখন বেশ ভয় লাগে। কারণ পাশাপাশি দুটো বড় গাড়ি ক্রশ করার সময় রাস্তার শেষ ভাগে একেবারে পাহাড়ের ঢাল দিয়ে চাকা গুলো পার হয়। আমার পাশে বসেছিলেন একজন বিজিবি সদস্য। তার সাথে বেশ ভালোই কথাবার্তা হলো।
এক সময় বাস থেমে গেলে। জানানো হলো, এই বাস আর সামনে যাবেনা। কারণ পাহাড় ধ্বসের কারণে রাস্তা বন্ধ। রাস্তার ক্ষতিগ্রস্ত অংশটুকু আমাদের হেঁটে পার হতে হবে। ওপাশে থেকে অন্য বাস আমাদের রুমা পর্যন্ত নিয়ে যাবে। সবার সাথে আমরাও বাস থেকে নেমে হাটা শুরু করলাম। পাহাড় ধ্বসে কেমন ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে তা এখানকার অবস্থা দেখেই বুঝতে পারলাম। আর্মি সদস্যগণ রাস্তা মেরামতের কাজ করছে। জানতে পারলাম কিছু দিন আগে টিভিতে সংবাদে দেখা জায়গাটি এটাই। যেখানে পাহাড় ধ্বসে সেনা সদস্য সহ কয়েকজনের প্রান হানি ঘটেছিলো। কাদা মাখা পিচ্ছিল পথ সাবধানে ধীরে ধীরে পার হতে হচ্ছিল। উপর দিকে তাকালে ভয় লাগছিল এই ভেবে যে যদি এখন ধ্বস নামে তা হলে শেষ। অবশেষে বিপদজনক অংশটুকু পার হয়ে এলাম। এপাশে এসে একটি ছোট ঝর্ণা পেলাম। স্থানীয় মানুষের দেখাদেখি আমিও ঝর্ণায় নেমে ঝর্ণার পানি খেলাম। উল্লেখ্য, জীবনে প্রথমবারের মত ঝর্ণার পানি পান করলাম। ঝর্ণার পানি অত্যন্ত সুস্বাদু ও শীতল। তাই আমাদের সবার সাথে থাকা পানির বোতল গুলো খালি করে ঝর্ণার পানি ভরে নিলাম।
এপাশের বাসটি এখনো এসে না পৌছায় আমরা কিছুক্ষণ সময় পেলাম। শুরু হয়ে গেলো ছবি তোলা এবং ভিডিও করা। আমাদের সাথে থাকা চিপস এর প্যাকেট গুলো শেষ করে ফেললাম। অতপর বাস এলো, আমরা বাসে উঠে এগিয়ে চললাম রুমার উদ্দ্যেশে। এবারে রাস্তায় বেশ কিছু ছোট ছোট ব্রীজ পার হতে হলো। ব্রীজ গুলো লোহার তৈরী এবং পাটাতন কাঠের। ব্রীজ গুলোর নিচ দিয়ে হয়তো ঝর্নার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গতাকাল সকাল থেকে আমরা একটানা জার্ণিতে থাকলেও ক্লান্তি আমাদের গ্রাস করতে না পারার একমাত্র কারণ চারিদিকের পাহাড়ি সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্য দেখতে দেখতে বিকেল নাগাদ আমরা পৌছে যায় রুমা বাজারে। বাস জার্নি আমাদের এখানেই শেষ হলো। গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত আমরা আমদের প্ল্যান মতই এগিয়ে চলেছি।
বাস থেকে নেমে আমরা একরাত থাকার জন্য একটি হোটেল খুঁজতে শুরু করলাম। রুমা বান্দরবান জেলার একটি প্রত্যন্ত উপজেলা। এখানে একটি বাজার রয়েছে, যার নাম রুমা বাজার। প্রত্যন্ত এলাকা হলেও এখানে থাকার মত বেশ কিছু হোটেল দেখলাম। বাজারটিতেও প্রয়োজনীয় সব জিনিষই পাওয়া যাবে আশা করা যায়। সাঙ্গু নদীর পাড়ে হোটেল সাঙ্গু রিভার ভিউ এর একটি রুম আমরা বুক করলাম। রুমে ব্যাগ রেখে আমি, হাফিজ এবং ইমরান সাঙ্গু নদীতে নামলাম গোসল করা জন্য। তীর থেকেই দেখে ছিলাম নদীতে স্রোত রয়েছে। কিন্তু স্রোতের টান যে বেশ বেশি তা নামার পর বুঝতে পারলাম। সাতার কেটে উজানো যাওয়ার যতই চেষ্টা করি ততই ভাটির দিকে চলে যায়। এই স্রোতের সাথে সাতার কেটে পারা যাবেনা। যারা সাতার জানেন না তাদের এই নদীতে না নামাই ভালো। আরো একটি বিষয় লক্ষ্য করলাম, নদীর তীর থেকে গভীরতা ধাপে ধাপে বেড়েছে। তীর থেকে নামার সময় আমার মনে হয়েছে প্রতি ধাপে ১ফুট করে পানির গভীরতা বাড়ছে। গলা পানিতে নামার পর পরের ধাপে নামার সাহস করিনি। কারণ নীচের দিকে পানির স্রোত আরো বেশি। নদীর পানি বেশ ঘোলাটে, স্রোতের কারণে এমন হতে পারে। নদী থেকে গোসল সেরে রুমে এলাম। এবার সবাই একসাথে বের হলাম খাবার খাওয়ার জন্য। তখন প্রায় সন্ধ্যা। দুপুরের খাবার না খাওয়ায় এবং একটানা জার্ণির কারণের আমরা সবাই তখন অত্যন্ত ক্ষুধার্ত। পাশের একটি হোটেলে খাওয়া সেরে নিলাম। এখন আমাদের কাজ হবে গাইড ঠিক করা।
এখানে বলে রাখা ভালো হবে যে, রুমা বাজার থেকে পরবর্তীতে আরো গহীন পাহাড়ি এলাকায় প্রবেশের জন্য বেশ কিছু ফর্মালিটি রয়েছে। যেমন নির্ধারিত ফর্ম প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে পূরণ করে স্বাক্ষর করতে হবে। একজন আনুমোদিত গাইডকে সাথে নিতে হবে। তারপর গাইড এবং ফর্ম সহ আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে ফর্ম জমা দিয়ে রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ নাম ঠিকানার পাশে স্বাক্ষর করে আর্মির অনুমতি নিয়ে তবেই আপনি গহীন পাহাড়ি এলাকায় প্রবেশ করতে পাবেন। এই ফর্মালিটি পাহাড়ী এলাকায় আপনাকে আরো কয়েকবার করতে হবে। যেহেতু আমাদের টার্গেট বগালেক হয়ে কেউকারাডং পর্যন্ত যাওয়া, অতএব আমাদেরকেও এই একই নিয়ম মেনে চলতে হবে।
এই রুটে আমরা সবাই নতুন, তাই নিয়ম কানুন ভালোভাবে জানা প্রয়োজন। স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে আর্মি ক্যাম্পের অবস্থান জেনে নিয়ে সেদিকে চললাম। রুমা বাজারের আর্মি ক্যাম্প বাজারের পাশেই একটি ছোট পাহাড়ের উপর অবস্থিত। উপরে ওঠার জন্য পাকা সিঁড়ি রয়েছে। উপরে ওঠার পর একটি ব্যাংকের ছোট শাখা অফিস দেখতে পেলাম। তার পাশেই ছাউনি দিয়ে গোল একটি বসার জায়গা। আলো পর্যাপ্ত না হওয়ায় সব কিছু ভালো ভাবে দেখা যাচ্ছিল না। এখানে কোন মানুষজনও দেখতে পাচ্ছিনা। বসার ছাউনির পাশেই রয়েছে একটি গেট, যা দিয়ে আরো উপরে ওঠা যায়। আমরা সেই গেটের দিকে এগিয়ে যেতেই উপর থেকে নির্দেশ ভেসে এলো “গোল ঘরে বসেন”। গোল ঘর বলতে আমি যেটাকে এতক্ষণ বসার ছাউনি বলছি, সেটিকে বোঝানো হলো। আমরা বুঝতে পারলাম উপরে সেনা সদস্যরা রয়েছে, আমরা তাদের দেখতে না পেলেও তারা আমাদের ঠিকই লক্ষ্য করছে। তাদের কথা মত আমরা গোলঘরে বসলাম। কিছুক্ষণ পর একজন সেনা সদস্য গোল ঘরে এলো। তাকে আমাদের পরবর্তী পরিকল্পনা বললাম এবং এ বিষয়ে নিয়ম কানুন জানতে চাইলাম। তিনি আমাদের এ বিষয়ে ভালোভাবে অবগত করলেন। আমরা আমাদের পরিচয় তাকে জানানোর পর তিনি আন্তরিক হলেন এবং বেশ অনেকক্ষণ যাবত আমাদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বললেন। তার সাথে কথা বলে পাহাড়ে চলা ফেরা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আমরা তাকে অনুরোধ করালাম একজন ভালো গাইড এর ব্যবস্থা করে দেবার জন্য। তিনি আমাদের অনুরোধ রাখলেন, ফোন করে স্থানীয় একজন প্রভাবশালী ব্যাক্তিকে বলে দিলেন আমাদেরকে ভালো একজন গাইডের ব্যবস্থা করে দেবার জন্য। সেনা সদস্যের থেকে বিদায় নিয়ে আমরা নিচে নেমে এলাম এবং তার রেফারেন্স করা ব্যাক্তির সাথে দেখা করে গাইড ঠিক করলাম।
আমাদের গাইডের নাম জয়নুল। শিক্ষিত ছেলে। শরীরে কোন চর্বি বা অতিরিক্ত মাংস নেই। একেবারে ফিট স্বাস্থ্য। মাথার চুল কামিয়ে নেড়া মাথা বানিয়ে রেখেছে, দেখতে নেড়া মাথার ফুটবলারদের মত লাগছিল। একটি হোটেলে বসে চা খেতে খেতে গাইডের সাথে পরিচয় পর্ব শেষ করলাম। এবার গাইডকে ১০০টাকা দিলাম প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করার জন্য। সে দ্রুতই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে ফিরে এলো। ফর্ম ফিলাপ করতে করতে গাইডকে আমাদের প্ল্যান জানালাম। গাইড এক কথায় বলে দিল পারবেন না। রুমা থেকে রওনা দিয়ে একদিনে কেউকারাডং যাওয়া সম্ভব না। যারা খুবই দক্ষ ট্রেকার তারা ব্যতিত অন্য কেউ নাকি একদিনে এই রুট কমপ্লিট করতে পারেনা। যেহেতু আমরা পাহাড়ে এই প্রথম, পূর্ব কোন অভিজ্ঞতা নেই, অতএব আমাদের পক্ষে নাকি কোনভাবেই সম্ভব হবেনা একদিনে কেউকারাডং পর্যন্ত যাওয়া। প্রথম রাত আমাদের অবশ্যই বগালেকে থেকে যেতে হবে। হোটেলে বসে থাকা আরো কিছু স্থানীয় ব্যাক্তি গাইডের কথার সাথে একমত হলো এবং আমাদেরকে প্রথম রাত বগালেকেই থেকেই যাবার পরামর্শ দিলো। কিন্তু তাদের কথাতে আমাদের মনোবল কিছুমাত্রও কমলোনা। গাইডকে স্পস্ট করে বলে দিলাম আগামীকাল ভোর ৬টার মধ্যে আমরা রওনা হবো। আমাদের টার্গেট হবে আগামীকালকেই কেউকারাডং পৌছানো, যদি না পারি, তখন ভিন্ন কিছু চিন্তা করবো। গাইডকে ভোর ৬টার মধ্যেই উপস্থিত থাকার জন্য জানিয়ে আজকে রাতের মত বিদায় দিলাম।
রাতের খাওয়া সেরে নিলাম। এবার কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সময়। পাহাড়ে চলার জন্য এখানে রাবারে স্পেশাল সেন্ডেল পাওয়া যায়। প্রায় সব দোকানেই এই সেন্ডেল বিক্রি হয়। দামও সব দোকানে একই, মাত্র ১৩০টাকা। ফিতা সহ পুরোটাই রাবারের তৈরী। সেন্ডেল গুলো দেখে খুব একটা ভরসা পাচ্ছিলাম না। দোকানদার জানালো, পাহাড়ে চলার ক্ষেত্রে এটিই নাকি সব থেকে ভালো, কোন রকম সমস্যা হবেনা। ফিতে ছিড়ে যাওয়া বা অন্য কোন সমস্যা যদি হয় তাহলে ফিরে যাবার সময় তিনি ২গুণ টাকা ফেরত দিবেন। দোকানদারের কথাই ভরসা রাখলাম। পরে পাহাড়ে চলার সময় এই সেন্ডেল এর রেটিং ১০/১০ দিয়েছি। অত্যন্ত কাজের জিনিস এটা। প্রত্যেকের জন্য এক জোড়া করে এই সেন্ডেল কেনা হলো। এবারে কিছু বিস্কিট, চিপস, খেজুর ইত্যাদি কিনে নিলাম। তারপর কেনা হলো প্রাথমিক কিছু ঔষধ। কেনাকাটা শেষে বাজারে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলাম, ডাব খেলাম, তারপর হোটেলে রুমে ফিরে এলাম।
রুমে ফিরে আমরা পরের দিনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করালাম। আগামী কাল থেকেই শুরু হবে আমাদের ভ্রমণের মূল অংশ। আমরা সকলেই আমাদের ব্যাগ থেকে অপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্র বের করে একত্রিত করে একটি ব্যাগে রাখলাম, উদ্দ্যেশ্য আমাদের বহন করা ব্যাগের ওজন যথাসম্ভব কম রাখা। প্রত্যেকের মোবাইল এবং পাওয়ার ব্যাংক চার্জে দিয়ে রাখলাম, যেন সারা রাতে ফুল চার্জ হয়। মোবাইলে ভোর ৫টায় এলার্ম দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

তারিখঃ ০৫/০৯/২০১৭
এলার্ম বাজার আগেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। সবার আগে আমিই বিছানা ছেড়ে উঠলাম, বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখলাম হাফিজের ঘুম ভেঙ্গেছে। সে বাথরুমে গেল। আমি ইমরান আর রবিউলকে ডেকে তুললাম। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আমরা সবাই রেডি হয়ে গেলাম। কিন্তু গাইডকে ফোন দিলেও সে ফোন রিসিভ করছিল না। আমি এবং ইমরান তাকে অনেকবার ফোন দিলেও সে ফোন রিসিভ করেনা। অবশেষে আমরা হোটেলের ম্যানেজারকে চাবি বুঝিয়ে দিয়ে বের হয়ে এলাম সকালের খাবারে উদ্দ্যেশে। পাশের হোটেলেই সকালের নাস্তা করলাম, পরোটা, ডিম পোচ আর ডাল। তখন প্রায় সকাল ৬.১৫ মিনিট। নাস্তা শেষে চা এর অর্ডার দিলাম, গাইড জয়নুলকে ফোন দিলাম, এবার সে রিসিভ করলো, কথা শুনে বুঝতে পারলাম সে সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠলো। তার এরকম আচারণে বেশ বিরক্তই হলাম।
অবশেষে সকাল ৭টায় জয়নুলের বাবার দোকানে অতিরিক্ত জিনিপত্রের ব্যাগ রেখে আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে রিপোর্ট করে আমাদের মিশন কেউকারাডং শুরু করলাম। রুমা বাজার থেকে বের হওয়ার পথে জানতে পারলাম, আজকে আমাদের দলটিই প্রথম বগালেকের দিকে যাচ্ছে। আমরা হাটতে হাটতে একটি পুলিশ চেকপোষ্টে চলে এলাম। এখানেও রেজিস্টারে নাম ঠিকানা লিখে স্বাক্ষর করতে হলো। এখানে একটি ক্যান্টিন রয়েছে। ক্যান্টিনে আমি আর রবিউল চা খেলাম, ইমরান আর হাফিজ ক্যালসিয়াম (গরম দুধের সাথে এক জাতীয় পাওডার এর মিক্স, যা নাকি ক্লান্তি দুর করে শরীরে শক্তি ফিরিয়ে আনে) খেলো। ক্যান্টিনের পাশেই একটি ছোট লেক আছে, যার উপর রয়েছে একটি ছোট ঝুলুন্ত ব্রীজ। গাইড আমাদের জানালো চান্দের গাড়ি (ফোর হুইল ড্রাইভ জিপ গাড়ি) ৯কিলো নামক স্থান পর্যন্ত যেতে পারবে। তারপর থেকে পুরোটাই পায়ে হেঁটে যেতে হবে। গাইডকে আমাদের বাজেট অনুযায়ী একটি চান্দের গাড়ি ঠিক করতে বললাম। গাইড জয়নুল কয়েকজন চান্দের গাড়ীর ড্রাইভারের সাথে মোবাইলে দরদাম করে একজনকে ফাইনাল করলো। গাড়ি আসার আগ পর্যন্ত আমরা ঝুলন্ত ব্রীজে উঠে কিছু ছবি তুললাম।
গাড়ি আসার পর গাড়িতে চড়ে আবারো যাত্রা শুরু। ওরে সেকি রাস্তা, আর সে কি ড্রাইভিং। সত্যি বলছি, এমন ভাঙ্গাচুরা পাহাড়ি আকাবাকা রাস্তায় এমন বেপরোয়া ড্রাইভিং এ এতটাই ভয় পেয়েছিলাম যে প্রায় অর্ধেক রাস্তায় আল্লাহর নাম স্বরণ করেছি। পাহাড়ী টার্ণ গুলো যেন এক একটা মৃত্যু ফাঁদ। এবড়োথেবড়ো মাটির রাস্তায় যখন গাড়ী ঝাঁকি লাগে তখন যদি ঠিকভাবে ধরে না বসা হয়, তাহলে নিশ্চিত গাড়ি থেকে ছিটকে বাহিরে পড়তে হবে। এ যেন জীবন্ত রোলার কোষ্টার। অবশেষে ৯কিলো নামক যায়গায় এসে গাড়ি থেকে নেমে যেন পুনরায় জীবন ফিরে পেলাম। এখান পর্যন্ত আর্মি রাস্তা মেরামতের কাজ করছে। গাড়ি থেকে নামার পর দেখালাম আমরা অনেক উচু পাহাড়ের উপর রয়েছি। এখান থেকে আমাদের হাঁটা পথ শুরু হবে, একই সাথে শুরু হবে আমাদের মনোবল ও স্ট্যামিনার পরীক্ষা। গাড়ীর ড্রাইভারকে তার ভাড়ার টাকা বুঝিয়ে দিয়ে তার সাথে একটা সেলফি নিয়ে বিদায় জানালাম।
আমরা তখনো হাটা শুরু করিনি। ছবি তুলছি আর আশে পাশের পাহাড়ি সৌন্দর্য উপভোগ করছি। এমন সময় বিপরীত দিক থেকে তিনজনের একটি দল অত্যন্ত ক্লান্ত এবং ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে আমদের কাছে এসে দাড়ালো। তাদের প্রথম কথা, “ভাই জাইয়েন না ভাই, কিচ্ছু দেখার নাই, খালি একখান পুকুর, আর কিছু নাই। গতকাল গেছিলাম, আজ ফিরতেছি। শরীরে অবস্থা একেবারে শ্যাষ। জান বের হয়ে যাবে, ফিরে চলেন ভাই।“ তাদের কথাতেই বোঝা গেল তারা বগালেক থেকেই ফিরে আসছে। এবং তাদের এই টুকুতেই অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। তাদের সাথে কিছুক্ষণ কথা হলো। তারা এসেছে মিরপুর, ঢাকা থেকে। তাদের সাথে কিছু সেলফি নিলাম। তারা তাদের বাঁশের লাঠি গুলো আমাদের গিফট দিলো। উল্লেখ্য, এই বাশের লাঠি পাহাড়ী পিচ্ছিল উচা নিচা আকাবাকা পথে চলার সময় অত্যন্ত কাজের একটি জিনিস। দলটির সাথে বিদায় নিয়ে এবার আমাদের পথ ধরলাম।
তখন সকাল ৯.০৮ মিনিট আমরা হাটা শুরু করলাম ৯ কিলো নামক স্থান থেকে। কাঁধে ব্যাকপ্যাক, ঘাড়ে গামছা, চোখে সানগ্লাস আর মাথায় ক্যাপ। এখান থেকে রাস্তা একটানা নিচে নেমে গেছে, অর্থাৎ পাহাড়ি ঢাল ধরে আমরা নেমে চলেছি। নামার রাস্তা বৃষ্টি পানির স্রোতে মাঝখান থেকে ধ্বসে চলে গেছে। মাটি ফাঁকা হয়ে গেছে অনেক যায়গায়। আমরা লাফ দিয়ে এই জায়গা গুলো পার হয়েছি। খুবই ভালো লাগছিল, জীবনে প্রথম বার এত বড় পাহাড় থেকে নামছি, পাহাড়ি রাস্তায় হাটছি, সবাই খুবই এক্সাইটেড, তবে সাবধানতাও অবলম্বন করছি। একটানা নিচে নামা যখন শেষ হলো তখন আমরা পৌছে গেলাম ১১কিলো পাড়া তে। এখান থেকে হাফিজ এবং গাইডের জন্য ২টি বাঁশের লাঠি কিনে নিলাম। ১১কিলো পাড়াতে আমরা বিরতী না দিয়ে এগিয়ে চললাম।
পথে আমাদের সাথে দেখা হলো দুজন পাহাড়ি মানুষের। তাদের কাঁধে রয়েছে বড় আকারের বোঝা জাতীয় ব্যাগ। কথা বলে জানতে পারলাম, রুমা বাজার থেকে তারা তাদের সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কেনা কাটা করে এভাবেই কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের বাড়ির উদ্দ্যেশে। তাদের বাড়ি কেউকারাডং পার হয়ে আরো অনেক দূরে, প্রায় বাংলাদেশের বর্ডার এলাকায় থাকেন তারা। পাহাড়িদের জীবন যে কত কস্টের তার কিছুটা ধারণা পেলাম মাত্র। তাদের দুজনের সাথে আমরা বেশ অনেক দুর হাঁটলাম। তারা অনেক ভার বহন করায় হাটার গতি কম ছিল। একসময় আমরা তাদের রেখে এগিয়ে গেলাম। পথে একটা বড় দলের সাথে দেখা হলো। তারা আমাদের বিপরীত দিক থেকে আসছিল। একটা বড় গাছের নিচে বসে তারা বিশ্রাম করছিল। কথা হলো তাদের সাথে, তারা গতকাল বগালেক গিয়েছিল, আজকে ফিরে যাচ্ছে। তাদের সাথে বিদায় নিয়ে আবার এগিয়ে চললাম পাহাড়ি পথ ধরে। পাহাড়ের সৌন্দর্য আমাদের সকল ক্লান্তি ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে বলছিল।
হাটতে হাটতে একসময় আমরা একটি যাত্রী ছাউনি জাতীয় জায়গা পেলাম রাস্তার পাশে। সিদ্ধান্ত হলো এখানে আমরা কিছুক্ষন বিশ্রাম নিবো। বাঁশ দিয়ে তৈরী একটি যাত্রী ছাউনি। ক্লান্ত পথিকের জন্য বিশ্রামের অত্যন্ত সুন্দর একটি যায়গা। একেবারেই নিরব প্রকৃতি। পাখির ডাক, পোকা মাকড়ের শব্দ একেবারে স্পস্ট সোনা যাচ্ছিল। কোন মানুষের আনাগোনা নেই। বাঁশের মাচায় বসে আমরা গেঞ্জি খুলে শরীরে ঘাম মুছে নিলাম। পানি এবং স্যালাইন খেলাম। সূর্য তখন বেশ ভালোই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বেশীক্ষন বসে থাকলে অলসতা ধরতে পারে। তাই আমরা আবার এগিয়ে চললাম।
পথ একটিই, তাই পথ হারানোর ভয় নেই। অনেক সময় পর পর দুয়েক জন পাহাড়ি মানুষের সাথে দেখা হচ্ছিল। এছাড়া কোন মানুষজন নেই। অপরদিক থেকে আসা একজন পাহাড়িকে জিজ্ঞাসা করলাম বগালেক আর কতদুর, তিনি হাত দিয়ে দেখালেন ২/৩টি পাহড়ের পরে বড় যেই পাহাড়, তার পরেই। পথের পাশেই একটি পাড়া, পাড়াটির নাম মনে নেই। হাতে গোনা কয়েকটি ঘর মাত্র। এগিয়ে চলেছি সামনে, কখনো নিচের দিকে নামছি, আবার কখনো উপরের দিকে উঠছি। সম্পূর্ণ শরীর ঘেমে গোসল। রবিউল আর হাফিজ বার বার পিছ পড়ে যাচ্ছিল। ইমরান সবার আগে এগিয়ে চলেছে। এভাবেই একসময় আমরা পৌছে যায় কমলা পাড়া নামক স্থানে।
কমলা পাড়া হলো বগালেক পৌছানোর পূর্বে বেসক্যাপ জাতীয় একটি যায়গা। কারণ সামনে যেই বিশাল পাহাড়টি রয়েছে, সেটা টপকাতে পারলেই বগালেগ। তাই সবাই এই কমলা পাড়াতে একটু বিশ্রাম নিয়ে নেয় সামনের পাহাড়ে ওঠার প্রস্তুতি হিসেবে। হ্যাপি দিদি এবং মিল্টন দার দোকান রয়েছে এখানে। আসলে এটা দোকান ও বাড়ি একসাথে। বাড়ির সামনের অংশই দোকান হিসেবে ব্যবহৃত। আমরা বসলাম হ্যাপি দিদির দোকানে। হ্যাপি দিদি অত্যন্ত হাস্যজ্জল একজন মানুষ। তার ২টি পিচ্চি মেয়ে, দিনা এবং ক্যান্ডী। পাহাড়ি বাচ্চা গুলো অত্যন্ত কিউট। দিনা বাংলা বোঝে এবং বলতে পারে। আমাদের কথার উত্তর সে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভাবে বাংলাতে দিতে পারছিল। হ্যাপি দিদিকে লেবুর সরবত বানাতে বললাম। একটি টেবিলে রয়েছে পেঁপে ও কলা। কলা ২টাকা পিচ, পেঁপে ২৫টাকা পিচ। আমরা কলা খাওয়া শুরু করলাম। ১১কিলো পাড়া পার হওয়ার পর যেই দুজন পাহাড়ি মানুষের কথা বলেছিলাম, তারা এসময় এসে হ্যাপি দিদির দোকানে পৌছালো। তারা কাধের ভারি ব্যাগ নামিয়ে রেখে দোকানে থাকা ক্যারাম বোর্ডে গুটি সাজাতে শুরু করলো। আমি কলা খেতে খেতে তাদের সাথে কিছুক্ষণ ক্যারাম খেলে নিলাম। কলা খাওয়া শেষে একটি পেঁপে পছন্দ করা হলো। হ্যাপি পেঁপেটি সুন্দর করে কেটে দিলেন। পেঁপে সুসাদু হওয়ায় আরো একটি কাটা হলো। পাশের মিল্টন দার দোকান থেকে মালটা খাওয়া হলো। মালটা অত্যন্ত সুস্বাদু ছিল। এরপর হ্যাপি দিদি এবং মিল্টন দার দোকানের বিল পরিশোধ করে আমরা এগিয়ে চললাম সেই পাহাড়টির দিকে, যার উপরেই রয়েছে বগা লেক। সময় তখন ১১টা ০৩ মিনিট।
রোদের তেজ অনেক বেড়ে গেছে। মাটি থেকে উত্তাপ বের হচ্ছিল। পাহাড়ের ঢালে চাষ করা জুমের ধানের গাছ থেকে গরম তাপ এসে পা উতপ্ত করছিল। আর আমরা উঠে চলেছি একে বারে খাড়া পাহাড়ী পথ ধরে। মাত্র দেড় দু ফিট চড়া পথ ধরে উপরে ঊঠতে হচ্ছে। একপাশে পাহাড় অন্য পাশে পাহাড়ের খাড়া ঢাল। রুমা থেকে কমলা বাজার পর্যন্ত পথ এবং পথের ক্লান্তি এখন মনে হচ্ছে কিছুই নয় এখানকার তুলনায়। পাহাড়ে ওঠার জন্য যে মানসিক শক্তির সাথে সাথে শরীরে ওজন কম হওয়া কত জরুরী তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। কারণ আমাদের মধ্যে আমিই সব থেকে বেশি মোটা সোটা। পাহাড়ের নীচ থেকে যতটুকু উঠেছি , আমাদের সবার শারিরীক শক্তির একেবারে চরম পর্যায়ে পৌছেছি। ইমরানও বেশি এগোতে পারছেনা। বর্তমানে আমাদের কেউ কারো সাথে কথা বলছেনা, কারণ কথা বলতে গেলেও শক্তি লাগবে। লাঠিতে ভর দিয়ে একপা একপা করে আমরা উপরে উঠছি। কচ্ছপ গতি যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে এটাই হয়তো সেই গতি। আমরা হাঁপাচ্ছিলাম। একজনের শাসপ্রসাসের শব্দ কাছে থাকা অন্য জন শুনতে পাচ্ছিলাম। সূর্য আমাদের উপর তার তাপ ১০০% প্রয়োগ করছিল। আমরা বসার মত কোন ছায়া খুজছিলাম, কিন্তু আশে পাশে কোথাও ছায়া নেই যে বসা যায়। এক জাগায় দাড়ানোও যাচ্ছিল না। কারণ মাটি থেকে উত্তাপ বের হচ্ছিল। আমি পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল গাইডকে বলি আমাকে টেনে তুলতে, কিন্তু বললাম না। কারণ আমার দূর্বলতা হয়তো অন্য সবার মাঝে ভয়ের সঞ্চার করতে পারে। তখন তারাও দূর্বল হয়ে পড়তে পারে। সবার আগে রয়েছে ইমরান, তারপর গাইড, আমি, রবিউল, হাফিজ। আমি আর পারছিনা। পা তোলার মত শক্তি নেই আমার, রোদের তাপ থেকে রক্ষার জন্য গামছা দিয়ে মাথা মুখ ঢেকে রেখেছি। আমি লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। রবিউল একপা একপা করে আমিকে পার করে গেলো। হাফিজ জোরে জোরে হাপাতে হাপাতে আমাকে পার করলো। আমি হাফিজ ভাইয়ের পিছে পিছে আবার ওঠা শুরু করলমা। অবশেষে আলাহ আমাদের উপর সহায় হলেন। আমরা ছায়া যুক্ত একটি জায়গা পেলাম, এখানে ধানের খড় রয়েছে, যার উপর আমরা বসে পড়লাম। কাধের ব্যাগ নামিয়ে গেঞ্জি খুলে ফেললাম। আহ কি শান্তি। গাইড জানালো, আমরা অর্ধেক উঠে এসেছি, উপরের দিকে একটি চূড়া দেখালো, ওটায় আমাদের লক্ষ্য।
পানি খেয়ে আমরা আবার ওঠা শুরু করলাম। পূর্বের মতই কষ্ট করে বাকি পাহাড়টুকু ওঠার পর যখন সামনে তাকালাম, সব কস্ট আর ক্লান্তি এক নিমিষেয় দুর হয়ে গেল। চারিদিকে পাহাড় আর মাঝে একটি লেক, যার নাম বগালেক, আমাদের সামনে হাজির। লেকের পাড় দিয়ে হেটে আমরা চলে এলাম আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করার জন্য। এখন সময়য় ঠিক ১১টা ৩০মিনিট। অর্থাৎ ২৭ মিনিট লেগেছে কমলা বাজার থেকে বগালেক উঠতে। গাইড জানালো আমাদের পারফর্মেন্স অনেক ভালো। এত কম সময়ে নাকি খুব কম টুরিষ্ট এই পথ উঠতে পারে। আর্মি ক্যাম্পের গোল ঘরে বসার কাঠের পাটাতনের উপর আমি আর হাফিজ শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর একজন আর্মি সদস্য এসে আমাদের তথ্য রেজিস্টারে লিখে আমাদের সাক্ষর নিয়ে নিলেন। রিপোর্টিং এর কাজ সেরে আমরা পাড়াতে চলে এলাম। এখানে অনেক গুলো ঘর রয়েছে। বেশীর ভাগ ঘরই ট্যুরিস্টদের জন্য কটেজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সিয়াম দিদি বগালেকের একজন বিখ্যাত মানুষ। এখানকার বেশিরভাগ কটেজই তার। কটেজ গুলো বগালেকের পাড়েই তৈরী করা। আমরা লাল জিক বমের কটেজে চলে এলাম। কটেজের সামনে রাখা টেবিল চেয়ারে নিজেদের ব্যাগ পত্র রেখে আগে একটু বিশ্রাম নিলাম। বগালেকে অনেক কটেজ রয়েছে। প্রায় সবগুলোই কাঠের তৈরী। কিছু কিছু কটেজ দুই তলা। নিচ তলায় মালিক থাকেন, আর উপরের তলা ট্যুরিস্টদের জন্য কটেজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। একটি দোকান থেকে আমরা কিছু কলা খেলাম। কলা খাওয়ার পর সবাই ডাব খেলাম। এবার লাল জিক বমের স্ত্রী (নাম ভুলে গেছি) কে আমাদের জন্য দুপুরের খাবারের তৈরীর কথা জানালাম। তিনি বললেন এখন ডিম দিয়ে খেতে হবে, মুরগী হবেনা। (বগালেকে এসে আপনি যা চাবেন তাই খেতে পারবেন বিষয়টি এমন না। এটি অত্যন্ত প্রত্যন্ত এলাকা। এখানে সাধারণত ট্যুরিস্টদের জন্য মুরগীর মাংস অথবা ডিমের তরকারীর ব্যবস্থা করা হয়।) আমরা তাতেই রাজি। তাকে খাবার তৈরী কথা বলে গোসল করার জন্য লেকের পাড়ে চলে এলাম। আর্মির অনেক কড়াকড়ি এখানে। লেকের পানিতে নেমে সাতার কাটা যাবেনা। চিল্লাপাল্লা করা যাবেনা ইত্যাদি ইত্যাদি। লেকের এই জাগায় পাড় ইট দিয়ে বাধাই করা। এখানেই সবাই গোসল করে। সিড়ি দিয়ে নেমে গলা পানি পর্যন্ত গিয়েছিলাম। পানি অনেক স্বচ্ছ। কয়েক ফুট নিচ পর্যন্ত স্পস্ট দেখা যায়। পানিতে ছোট ছোট অনেক মাছ আছে। স্থীর হয়ে পানিতে দাড়িয়ে থাকলে এরা পায়ে আস্তে আস্তে কামড়াতে থাকে। তবে ভয়ের কিছু নেই ব্যাথা লাগেনা বা ক্ষত হয়না। হাফিজ একটি মগ দিয়ে এই মাছ গুলো ধরার চেস্টা করলো, কিন্তু একটি মাছও ধরতে পারলোনা। গোসল করে আমাদের শরীর ও মন আবারো চাঙ্গা হয়ে ওঠলো। পেশি গুলো আবারো সতেজ হয়ে উঠলো। এখন দরকার ভরপেট খাবার। খিদেয় আমাদের পেট চোঁ চোঁ করছে। গোসল সেরে আমরা কটেজে চলে এলাম। নীচতলার বারান্দায় খাবারের ব্যবস্থা। আমরা ভেবেছিলাম যে শুধু ডিম আর ভাত খেতে হবে। কিন্তু বিষয়টা তেমন না, ডিমের কথা বলা হলেও আইটেম অনেক কিছু। ভাত, ভর্তা, আচার, ডাল, ডীমের তরকারি, এবং বাঁশ ভাজি। জীবনে প্রথম বাঁশ ভাজি খেলাম। ভালই লাগলো। খেতে অনেকটা পাতা কপি ভাজির মত। জুম চালের ভাত বেশ মজার। পেটে খিদে থাকায় সবাই তৃপ্তি করে ভর পেট খেয়ে নিলাম। খাবার পর বেঞ্চের উপর শুয়ে বিশ্রাম নিলাম। অনেকক্ষন সময় বিশ্রাম শেষে শরীরে পূর্ন শক্তি এনে এবার আমাদের মূল লক্ষ্য কেউকারাডং এর উদ্দ্যেশে রওনা হবার প্রস্তুতি নিলাম। কটেজে খাবার বিল পরিশোধ করে ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিয়ে আবারো চলে এলাম আর্মি ক্যাম্পে। কেউকারাডোং যাবার জন্য রিপোর্ট করে রওনা হলাম।
দুপুর ২টা ৩০মিনিট নাগাদ আমরা বগালেক হতে কেউকারাডং এর উদ্দ্যেশে রওনা দিলাম। আবারো শুরু হলো হাটা। গল্পে গল্পে আমরা এগিয়ে চলেছি। একটার পর একটা পাহাড় পর্বত পেরিয়ে চলেছি। পাহাড়ের সৌন্দর্য সুন্দর থেকে সুন্দরতর হয়ে ঊঠছে। কারণ আমরা অনেক উপরে উঠে যাচ্ছি। উপর থেকে দূরে নিচের পাহাড় গুলো দেখতে অনেক ভালো লাগে। ভালো লাগে দূরের বড় বড় চূড়া গুলো দেখতে। অনেক সুন্দর সুন্দর ভিউ পয়েন্ট পাচ্ছি। কিছুক্ষণ করে দাড়িয়ে থেকে প্রকৃতি দেখছি, ছবি তুলছি আবার এগিয়ে চলছি। এ যেন এক মোহের মধ্যে আমরা রয়েছে। শারীরিক কস্ট, ক্লান্তি ভুলে আমরা হেটে চলেছি, ডিঙ্গিয়ে চলেছি এক একটি চূড়া।
এভাবেই একসময় আমরা একটি ঝর্ণার কাছে পৌছে গেলাম। গাইড জয়নুল জানালো, এই ঝর্ণার নাম লতা ঝর্ণা। ঝর্ণাতে আমরা চোখে মুখে মাথায় পানি দিয়ে নিলাম। পা ভালো ভাবে পানিতে পা ভিজিয়ে নিলাম। পানির বোতল গুলো খালি করে ঝর্ণার শীতল পানি ভরে নিলাম। এখানে লক্ষ্য করলাম ঝর্ণার মাঝে একটি পাথরের নিচ থেকে প্লাস্টিকের একটি নীল পাইপ বের হয়ে নিচের দিকে চলে গেছে। গাইড জানালো এই পাইপ চলে গেছে বগালেক পাড়াতে । এই ঝর্ণার পানিই বগালেকে খাওয়ার পানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আমরা আবার সামনে চলা শুরু করালাম। পাহাড়ে উপরের দিকে উঠতে উঠতে যখন একটু সমতল পাওয়া যায় তখন কিযে ভালো লাগে তা বলে বোঝানো যাবেনা।
কিছু কিছু জাগায় গাছ দিয়ে ব্রিজ বানানো হয়েছে একপাশ থেকে অন্য পাশে যাবার জন্য। নিচ দিয়ে ঝর্ণার পানি দ্রুর গতিতে বয়ে চলেছে। অনেক জাগায় পথ এতটাই সংকীর্ণ যে পাশাপাশি দুই পা একসাথে রাখা যায়না। পা সামনে পিছনে রেখে এগিয়ে যেতে হয়। বিশেষ করে ঝর্ণা গুলোর কাছে এমন অবস্থা বেশি। এখন আমরা মেঘ এর অনেক কাছে চলে এসেছি। মেঘ প্রায় আমদের সমান্তরালে চলে আসছে অনেক যায়গায়। কিছু কিছু যায়গায় মেঘ আমাদের নীচে অবস্থান করছে। মেঘ গুলো পাহাড়ে ধাক্কা লেগে জমাট বাধা অবস্থা থেকে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রকৃতি যেন আমাদের চারিদেকে তার রুপ লাবন্য মেলে ধরেছে। আমাদের কাজ শুধু দুচোখ ভরে দেখা।
পথের ধারে শূকর ধরার জন্য ফাঁদ পাতা রয়েছে দেখলাম। বিপরীত দিক থেকে আসা দুজন পাহাড়িরকে দেখলাম কাধের সাথে বেঁধে শূকর নিয়ে যাচ্ছে। এখানে অনেক আদার চাষ হয়। পাহাড়ের ঢালে আদা লাগানো। অনেক দূরে পাহাড়ের গায়ে একটি পাড়া দেখতে পেলাম। পাড়াটির নাম এখন মনে নেই। বিপরীত দিক থেকে ৪/৫ জনের একটি দল আসছিল। তাদের সাথে কথা হলো, তারা ঢাকা থেকে এসেছেন। আজকে সকালে বগালেক থেকে কেউকারাডং এর উদ্দ্যেশে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু তারা কেউকারাডোং পর্যন্ত যেতে পারেনি, চিংড়ি ঝর্ণা থেকে ফেরত আসছেন। তাদের সাথে বিদায় নিয়ে আবারো চলা শুরু। পথে যেখানে যেখানে ভালো ভিউ পেয়েছি সেখানে দাড়িয়ে দেখেছি, সাথে থাকা সুকনো খাবার এবং পানি খেয়ে আবারো এগিয়ে চলেছি।
হাটতে হাটতে একসময় ঝর্ণার শব্দ পেলাম, কিন্তু আসে পাশে কোন ঝর্না নেই। গাইড জানালো এটা হলো চিংড়ি ঝর্ণার শব্দ। ঝর্ণাটি অনেক বড়, তাই অনেক দুর থেকে পানির শব্দ পাওয়া যায়। এগিয়ে চললাম সেদিকে। একসময় আমরা পৌছে গেলাম চিংড়ি ঝর্ণায়। ঝর্ণাটি আসলেই অনেক বিশাল আকৃতির। অনেক উপর থেকে পানি নেমে আসছে। পানির শব্দ এতো বেশি যে আমাদেরকে অনেক উচ্চস্বরে কথা বলতে হচ্ছে। ঝর্ণার উপরে দিকে ওঠার পথ ১০০% ডেঞ্জারাস। অত্যন্ত সাবধানতার সাথে ধীরে ধীরে আমরা মাঝামাঝি পর্যন্ত উঠলাম, আরো অনেকটা উঠতে হবে। সিদ্ধান্ত হলো, আজকে আর ঝর্ণার উপরে উঠবোনা। আগামীকাল কেউকারাডং থেকে ফেরার পথে এই ঝর্ণার উপর পর্যন্ত ঊঠে গোসল করবো। আমরা পানির বোতল গুলো খালি করে ঝর্ণার শীতল পানি ভরে নিলাম। এবার ঝর্ণার নিচের দিকে নামতে হবে। ঝর্ণার উপরের দিকে ওঠার থেকে নিচের দিকে নামা আরো বেশী কঠিন। অনেক বড় বড় পিচ্ছিল পাথর, ভাঙ্গা গাছপালা, পানি স্রোত এগুলোর সাথে যুদ্ধ করে আমরা নীচে নেমে এলাম। সাহসী না হলে এই ঝর্ণার উপরের দিকে না ওঠায় ভালো।
আবারো আমাদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চললাম। পথ কোথাও কোথাও ভেজা দেখে বোঝা যাচ্ছিল কিছুক্ষন আগে এখানে বৃস্টি হয়েছে। আসলে পাহাড়ে কখন যে কোথায় বৃস্টি হবে তার কোন ঠিক নেই। এখন মেঘ গুলো অনেক কাছে চলে এসেছে। হতো যেকোন সময় বৃস্টি শুরু হবে। আমরা হাটার গতি বাড়ীয়ে দিলাম। ইমরান কখনো কখনো দৌড়ে আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে যাচ্ছিল, হাফিজ ইমরানের পিছু ধাওয়া করছিল। আমি আর রবিউল একই গতিতে ওদের পিছে পিছে এগিয়ে চলেছি। অনেকটা সমতল যায়গা পেরোনোর পর আবার উপরের দিকে ওঠা শুরু হলো। উঠছিতো উঠছিই, যেন চূড়া আর পাওয়া যায়না। এখন রোদ না থাকায় মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে থেকে একটু করে রেস্ট নিয়ে নেই, আবার লাঠিতে ভর দিয়ে উপরে ওঠা শুরু করি। ক্লান্তিতে আবার শরীর ভেঙ্গে পড়ছে। একটু রেস্ট নেই আবার উঠি। ইমরান সবার আগে, তারপর হাফিজ, আমি , রবিউল, গাইড। ঊঠে চলেছি। একসময় আমরা এই পাহাড়ের চূড়ায় পৌছলাম। আমি যখন চূড়ায় পৌছলাম তখন দেখি ইমরান হাটুতে ভর দিয়ে নিচু হয়ে হাপাচ্ছে, জিজ্ঞাসা করলাম সে ঠিক আছে কিনা, সে উত্তর দিলোনা। কারণ কথা বলার মত এনার্জি তার নেই। আসলে ইমরান অনেক দ্রুত উপরে ওঠায় ওর এই অবস্থা হয়েছে। পাশেই একটি যাত্রী ছাউনি পেলাম। সবাই যাত্রী ছাউনিতে গিয়ে কাধের ব্যাগ নামিয়ে রেখে আগে একটু বিশ্রাম নিলাম। সাথে থাকা খেজুর এবং পানি খেলাম। সামনে দিক থেকে মেঘ ভেসে আসছে। মেঘ গুলো নীচে থাকায় আমাদের কাছে পৌছচ্ছেনা। আমাদের নিচে পাহাড়ে ধাক্কা লেগে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্রাম শেষে আবার ব্যাগ কাঁধে নিয়ে রওনা হলাম। হাটতে হাটতে উপরের দিকে উঠে চলেছি। পাহাড়, পর্বত, মেঘ, সবুজ প্রকৃতি দেখতে দেখতে আমরা এগিয়ে চলেছি। একসময় একটি পাহাড়ে বাঁক ঘোরার পর অসাধারণ একটি ভিঊ পেলাম। সামনে অকেবারে খোলা উন্মুক্ত যায়গা। অনেক দুর পর্যন্ত দৃস্টি যায়। কিছুটা দুরে বিশাল সুন্দর একটি পর্বত চূড়া, দেখতে অনেক সুন্দর। গাইড জানালো ওটাই হলো কেউকারাডং এর চুড়া, আমাদের ফাইনাল ডেস্টিনেসন। এই যায়গাটি অসাধারণ। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে প্রকৃতি দেখলাম মন ভরে। আবারো চলা শুরু হলো।
হাটতে হাটতে আমরা একটি পাড়ায় প্রবেশ করলাম। এই পাড়ার নাম দার্জিলিং পাড়া। অনেক গুলো ঘর রয়েছে এখানে। পাড়ার মাঝামাঝি একটি দোকানে বসলাম আমরা। কলা, বিস্কিট এবং ক্যালসিয়াম খেলাম। পাড়াটি অনেক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। ঘর গুলোর পাশে খালি জাগায় ফুলের গাছ লাগানো আছে, যা পাড়াটির সৌন্দর্য অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা যেখানে বসে আছি সেখান থেকে কেউকারাডং এর চূড়া স্পস্ট দেখা যায়। সামনে যে বিশাল পাহাড়টি রয়েছে সেটাই এখন আমাদের সর্বশেষ পরীক্ষা। এটা জয় করতে পারলেই আমরা পৌছে যাবে সেই চূড়ায় যার নাম সেই শিশু কালেই জেনেছি (বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গের নামঃ কেউকারাডং)। কাঠের তক্তায় বসে, বাঁশের খুঁটিতে হেলান দিয়ে, সামনের দিকে পা ছড়িয়ে দিয়ে সেই চূড়ার দিকে তাকিয়ে আছি। স্বপ্নের মত লাগছে সবকিছু। একসময় ঘন মেঘ এসে ঢেকে দিল চূড়াটিকে। এখন আর দেখা যাচ্ছে না। মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়েছে। মেঘ আস্তে আস্তে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। এই দোকানে পরিচয় হলো আরো তিন জনের একটি দলের সাথে। তারা আমাদের আগে এসেছেন। তাদের একজনের নাম ডলার, একজন নাইম, আরকজনের নাম ভুলে গেছি। তাদের সাথে কিছুক্ষণ কথা হলো। তারা এখানে ভাত তরকারী খেয়ে কেউকারাডং এর দিকে যাবেন। তাদের সাথে বিদায় নিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে চললাম। চারিদিকে মেঘ আমাদের ঘিরে ফেলেছে। আমরা রেইনকোট পরে নিয়েছি। দার্জিলিং পাড়া পার নাহতেই বৃষ্টি শুরু হলো। মূষল্ধারে বৃষ্টি। সাথে বিকট শব্দে ব্রজ্রপাত। এত উচুতে থাকায় ব্রজ্রপাতের শব্দ খুবই ভয়ানক লাগছিল। চূড়াটি যেখান থেকে খাড়া উপরের দিকে ওঠা শুরু হয়েছে, সেখানে একটি ঘর দেখে সেদিকে এগিয়ে গেলাম, ঘরের মালিক আমাদেরকে বারান্দায় বসার জন্য ঘর থেকে বেতের মূড়া বের করে দিল। আমরা বারন্দায় বসলাম। কিন্তু বৃষ্টির পানি বাতাসের সাথে ভেসে বারান্দায় চলে আসছিল, আমাদের ভিজিয়ে দিচ্ছিল। এই অবস্থা দেখে বাড়ির মালিক আমাদের ঘরের ভেতর যেতে বললেন। আমরা ঘরের ভেতর গেলাম। সম্পূর্ণ বাড়িই একটি ঘর, দুজন মাত্র বাসিন্দা। বাড়ির মালিক এবং তার স্ত্রী, দুজনেই বয়স্ক। তাদের দুজনের নামই ভুলে গেছি। পুরুষ ব্যক্তি বাংলায় ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভাবে কথা বলতে পারেন। মহিলাটি বাংলা বুঝলেও বাংলা বলতে পারেননা। তারা আমাদেরকে শশা খেতে দিলেন। আমরা অবাক হলাম, পাহাড়ি মানুষের এই অতিথি পরায়নতা দেখে। আসলে এই শশাই তাদের ঘরে রয়েছে যা তারা আমাদের দিতে পারে। অন্য কিছু নেই। কিন্তু তারা কোন কার্পন্য করেনি সেই সম্বল্টুকু আমাদের দিতে। তারা বৃষ্টির পানি বিভিন্ন পাত্রে ধারন করে রাখছিল। কারণ এই পানিই তারা খাবার পানি হিসেবে পরে ব্যবহার করবে।
বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেল এখানে আমরা বসে রয়েছি, কিন্তু বৃষ্টি কমার কোন লক্ষণ নেই। অন্যদিকে সূর্য গড়িয়ে পড়েছে। অন্ধকার হবার আগেই আমাদের চূড়ায় পৌছানো দরকার। সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, এই বৃষ্টির মাঝেই উপরে উঠবো। বাড়ির মালিক ও তার স্ত্রীর থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম। ডলার ভাইয়ের দলও চলে এসেছে। আমরা দুই গ্রুপ একসাথে উপরে ওঠা শুরু করলাম। মূষল্ধারে বৃষ্টি চলছে। উপর দিক থেকে বৃষ্টির পানি সজরে নিচে নেমে আসছে। পথ পিচ্ছিল হয়ে আছে। তবে পথে পা আটকানোর জন্য কাটা কাটা থাকায় উপরে ওঠা যাচ্ছিল। আমরা শুধু উপরে উঠছি আর উঠছি। ইমরান অনেক এগিয়ে গেছে। বড় বড় ঝোপ থাকায় ইমরানকে দেখা যাচ্ছিলনা। প্রচন্ড বৃষ্টির কারনে কেউ কারো সাথে কথা বলতে পারছিলাম না। পথ পিচ্ছিল থাকায় অত্যন্ত সাবধানে এগোতে হচ্ছিল। হঠাত লক্ষ্য করলাম আমার পায়ে জোঁক ধরেছে। রবিউল আমার পেছনেই ছিল। রবিউল জোঁকটি ছাড়িয়ে দিল। আবার চলা শুরু করলাম। যে সমস্ত জাগায় ঝোপ ঠেলে পার হতে হচ্ছিল সেখানে জোঁকের ভয় বেশি হচ্ছিল। প্রখর রোদের পরবর্তে একটানা বৃষ্টির মাঝে উপরে উঠতে শরীর থেকে ঘাম কম বের হওয়ায় ক্লান্তি কিছুটা কম ছিল। একটানা অনেকদুর ওঠার পর বিশ্রামের জন্য একটু দাড়ালাম। রবিউল আর হাফিজও দাড়ালো। গাইড জানালো আমরা প্রায় উঠেই গেছি। আর সামান্য। চারিদিকে অন্ধকার নামা শুরু হয়েছে। হাটতে থাকলাম। গাইড আঙ্গুল দিয়ে দেখালো, ঐ যে চূড়া। আন্ধকারে ভালোভাবে দেখা যাচ্ছিলনা। জোঁকের ভয় থাকায় জোরে জোরে এগোতে থাকলাম। অবশেষে একটি বাড়ীর সামনে এসে হাজির হলাম। কয়েকজন মানুষ রয়েছে বাড়ীর সামনে। জিজ্ঞাসা করলাম চূড়া কোন দিকে। তারা হাত ইশারা করে দেখালো। আমার বাম পাশেই একটি পাকা সিঁড়ী উপরের দিকে উঠে গেছে। সেদিকে যেতে হবে। আমার আর দেরি সয্য হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে দৌড়ে সিড়ি ধরে উপরে ঊঠে যায়। কিন্তু সেই শক্তি এখন শরীরে অবশীষ্ট নেই। খালি ভাবছিলাম, এইতো আর কয়েকটা সিড়ি মাত্র পেরোতে হবে, তাহলেই পূর্ণ হবে মনের মাঝে বুনে রাখা এতদিনের স্বপ্ন।
তখন সময় সন্ধ্যা ৬টা। অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। বৃষ্টির ফোটা তখনো পড়ছিল। শরীরের সামর্থ্য অনেক আগেই শেষ হয়েছে, দৃঢ় মনোবলের কারণে এখনো টিকে আছি। সিঁড়ি গুলো খুবই পিচ্ছিল হওয়ায় রেলিং ধরে অত্যন্ত সাবধানে একপা একপা করে কোন মতে শরীরটাকে টেনে নিয়ে লক্ষ্যে পৌছলাম। ইমরান এসে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো, ভাই আমরা পেরেছি, “Nothing is impossible”. আমি কিছু বলতে পারলাম না। চারিদিকে তাকিয়ে রইলাম। হাফিজ এবং রবিউল একসাথে চূড়ায় এসে পৌছলো। আমাদের স্বপ্ন পূরণ হলো।
তখন সম্পূর্ণ অন্ধকার হয়ে গেছে। চুড়া থেকে সিড়ি দিয়ে নেমে সেই বাড়িটিতে চলে এলাম। বাড়ীর মালিক লালা বম। তার সাথে কথা বলে চূড়ার অপরপাশের একেবারে চূড়ার কোলঘেষে তৈরী কটেজে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করতে বললাম। লালা বম সে মোতাবেক ব্যবস্থা করলেন। কটেজে এসে লক্ষ্য করলাম আমার পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে জোঁক লেগে রয়েছে, রবিউলের পায়েও জোঁক লেগে আছে। লালা বম একটি পাত্রে থাকা লবন পানি দিয়ে আমাদের পায়ের জোঁক ছাড়ীয়ে দিলেন। আমরা তাকে রাতের খাবার তৈরীর কথা বললাম। কটেজটি সম্পূর্ন কাঠের তৈরী, উপরে সুধুমাত্র চালা হিসেবে রয়েছে টিন। পাশে থাকা একটি ড্রামের পানি দিয়ে আমরা হাত্মুখ ধুয়ে নিলাম। চলে এলাম লালা বমের বাড়ীতে। লালা বমের পরিবারে এখানে সদস্য মাত্র ৭ জন। চূড়ার উপর রয়েছে আর্মি ক্যাম্প। সেখানে গিয়ে রিপোর্ট করে এলাম। ডলার ভাইয়ের গ্রুপও খাবার জন্য এলো। আজকে কেউকারাডং এ ট্যুরিষ্ট মাত্র ৭ জন, আমরা চার জন আর ডলার ভাইয়ের দলের তিন জন। রাতের খাবার মুরগীর মাংষ দিয়ে। পেটে খুদা থাকায় ভালোয় খেলাম। খাওয়া শেষে কটেজে চলে এলাম। এখানে সব সময় শীত লাগে। কারণ মেঘ সর্বদা চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে মেঘ এসে সবকিছু ভিজিয়ে দিচ্ছে। গায়ে কম্বল জড়িয়ে চেয়ার গুলো বাইরে এনে উন্মুক্ত স্থানে বসলাম। জ্যোসনা ভরা রাত ছিল। কেউকারাডং এর চূড়ায় বসে জ্যোসনা বিলাস, কি যে মজার, বলে বোঝানো যাবেনা। গভীর রাত পর্যন্ত বাইরে বসে থাকলাম। তারপর রুমে এসে দিলাম ঘুম।
তারিখঃ ০৬/০৯/২০১৭
আমি আর হাফিজ ভাই খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে চূড়ায় চলে এলাম সূর্যদয় দেখার জন্য। কিন্তু চারিদিকে মেঘ থাকায় সেটা সম্ভব হলোনা। কিছুক্ষণ পরে ইমরান আর রবিউল এলো। সবাই মিলে হেলিপ্যাডে গেলাম। হেলিপ্যাডে জঁকের প্রভাব বেশী হওয়ায় ফিরে এলাম চূড়ায়। মেঘগুলো এতো উপরে আসতে পারছেনা। বেশ নিচে রয়েছে মেঘ। বড় বড় পাহাড়ের মাঝের খালি জায়গা গুলো মেঘ দখল করে রয়েছে। মেঘ জমাট বেধে থাকায় নিচের দিকে কিছু দেখা যাচ্ছিলনা। মাঝে মাঝে কিছু মেঘ বাতাসের সাথে ভেসে আসছিল, কিন্তু আমাদের উচ্চতায় উঠতে পারছিলনা। আমরা অপেক্ষায় রইলাম কখন মেঘ এসে আমাদের ঢেকে দিবে। কিন্তু কোন মেঘই চূড়া পর্যন্ত আসছিলনা। এভাবে কিছু সময় পার করার পর আমরা সকালের খাবারের জন্য লালা বমের কটেজে এলাম। ডিম ভাজি আর খিচুরি দিয়ে সকালের নাস্তা হলো। নাস্তা সেরে আমাদের কটেজে গিয়ে ক্যামেরা নিয়ে আবারো হ্যালিপ্যডে গেলাম। এখন রোদ উঠেছে। বাতাস বইছে, সাথে মেঘ গুলো ভেসে চলেছে। চূড়ায় গেলাম আবার হেলিপ্যাডে গেলাম, এভাবেই সময় পার হতে লাগলো।
দুপুর বারোটা নাগাদ আমরা কটেজ থেকে ব্যাগপত্র কাধে নিয়ে ফেরার জন্য বের হলাম। লালা বমের কাছে থাকা খাওয়ার বিল পরিশোধ করলাম। শেষ বারের মত আবারো চূড়ায় ঊঠে এলাম। আমাদের কপাল খুবই ভালো। আমরা চূড়ায় উঠতেই একটি ঘন মেঘ এসে আমাদের ঢেকে দিল। অসাধারণ এক অনুভূতি। সবাই দুহাত ছড়িয়ে মেঘকে আলিঙ্গণ করলাম। মেঘ চলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। এরপর চুড়া থেকে নিচে নেমে ফেরার পথে হাটা ধরলাম।
ফেরার পথে চিংড়ী ঝর্ণার একেবারে উপরে ঊঠে গোসল করলাম। বিকেল নাগাদ বগালেক পৌছলাম। লালজিক বমের কটেজে ব্যাগপত্র রেখে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করলাম। রাতে বার বি কিউ করার জন্য একটি বন মোরগ ব্যবস্থা করার জন্য লালজিক বম কে বলা হলো। সন্ধ্যার দিকে নাইম ভাইয়ের সাথে দেখা হলো। তারা আমাদের আগে বগালেক এসেছে পৌছেছেন। সিয়াম দিদির কটেজে আছেন। তার সাথে অনেক গল্প হলো। তিনি এর আগে অনেকবার এমন পাহাড়ের গহীনে এসেছেন। তার কাছে সেই সব গল্প শূনলাম। সন্ধ্যার পর আমরা গেলাম বগালেকের গীর্জায়। আজকে সেখানে ধর্মীয় উপাসনা চলছিল। পায়ের জুতা খুলে গীর্জায় প্রবেশ করলাম। উপাসনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা বসে রইলাম। উপাসনা শেষ হবার পর বাহিরের দোকানে এসে চা খেলাম।
অনেক গুলো দল আজকে বগালেক এসেছে। ভিড় অনেক বেশী হয়ে গেছে। নাইম ভাই তাদের কটেজে কফির আমন্ত্রণ জানালো। ইমরান, রবিউল আর হাফিজ তাদের কটেজে গেল। আমি গেলাম না। কারণ আমি একটু নির্জনতা চাইছিলাম। বগালেকের পাশের ছাউনিতে গিয়ে বসে রইলাম। একেবারে নিরবে প্রকৃতিকে অনুভব করছিলাম। রাত বাড়তে থাকায় কটেজে ফিরে এলাম। লালজিক বম বার বি কিউ এর আয়োজন প্রায় শেষ করে ফেলেছে। রাত ১২টা নাগাদ সবাই মিলে বার বি কিউ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
তারিখঃ ০৭/০৯/২০১৭
ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠলাম। দেখলাম পাহাড়ী মানুষগুলো ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। বারান্দায় দাড়িয়ে লেকের দৃশ্য দেখতে থাকলাম। কিছুক্ষন পর ফ্রেশ হয়ে লেকের পানিতে নেমে গোসল সেরে নিলাম। সকালের নাস্তা করে আমরা এবং ডলার ভাইয়ের দল একসাথে ফেরার পথ ধরলাম। আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করে ফেরার পথে এগিয়ে চললাম। বগালেক থেকে পাহাড় ধরে নেমে কমলা পাড়ায় পাড়ায় পৌছলাম। সেই হ্যাপি দিদির কটেজে চলে এলাম। আজকে দিনা নেই, ক্যান্ডী আছে। ক্যান্ডীর চেহারা একেবারে ক্যান্ডীর মতই মিষ্টি। সরবত, কলা, পেপে, মালটা খেয়ে আবারো যাত্রা শুরু। নাইম ভাই একের পর এক তার পাহাড় পর্বত ভ্রমণের গল্প বলেছেন। আমরা মন দিয়ে তার গল্প শুনে চলেছি। তার থেকে পাহাড়ে চলাচলের অনেক পরামর্শ পেলাম, যেগুলো ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। একসময় আমরা ১১কিলো পাড়া পৌছে গেলাম। ইমরান আর হাফিজ অনেক আগেই আমাদের ফেলে অনেক দুর এগিয়ে গেছে। ভেবেছিলাম তারা এখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে। কিন্তু তাদেরকে পেলাম না। গাইড কিছুক্ষণ আশেপাশে তাদের খুজে এসে জানালো তারা বেশ আগেই সামনের পাহাড়ে উঠে গেছে। আমরা এখানে সরবত খেলাম এবং কিছুক্ষণ রেষ্ট নিলাম। আবার হাটা শুরু। এবারে একটানা উপরের দিকে উঠতে হবে। গত ৫ তারিখে গাড়ি থেকে নেমে আমরা যেই পাহাড় ধরে নেমে গিয়েছিলাম, এখন সেই পাহাড় ধরেই আবার উঠতে হবে। রোদ অত্যন্ত প্রখর হয়ে উঠেছে। আমরা ধীরে ধীরে উঠে চলেছি। গাইড আগে, তারপর আমি আর রবিউল। প্রায় মাঝামাঝি জাগায় এসে ছায়া যুক্ত একটি যাগায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। আবার চলা শুরু করলাম। আস্তে আস্তে হেটে উঠে এলাম উপরে। ইমরান আর হাফিজ অনেক আগেই এখানে চলে এসেছে। কিছুক্ষন পর ডলার ভাইয়ের দল এসে পৌছলো। ডলার ভাইয়ের দলকে নিতে আসা গাড়িতে করেই আমরা বান্দরবানের দিকে রওনা দিলাম।
এই ছিল আমার কেউকারাডং ভ্রমণ কাহিণী। অনেক বেশি লিখে ফেলিছি। ধর্য্য সহকারে পড়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। বানান ভুল নিজ গুনে ক্ষমা করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৬
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×