ভারত আমাদের প্রতিবেশী, বিশাল দেশ, আমাদের তিনদিক ঘিরে আছে। অনেক ধরণের সংস্কৃতি তাদের। তার প্রভাব তো আমাদের উপর পড়বেই। তাই বলে এতটা। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি বলেতো কিছু আছে। কিন্তু এখনতো মনে হচ্ছে আমাদের কিছুই নাই। বিভিন্ন ঘটনায়, আচার-অনুষ্ঠানে আমরা যেভাবে নিজেদের সংস্কৃতি বিসর্জন দিচ্ছি, ভারতীয়টা আঁকড়ে ধরছি, তাতে কিছুদিন পর আমাদের সংস্কৃতি হয়তো বইয়ের পাতাতেই চিরস্থায়ী আসন পাবে। অনেকেই বলতে পারে আমার এতো চুলকায় কেন? আমি নিজেও জানিনা কেন যে আমার চুলকায়। এমন না যে, আমি হিন্দি সিনেমা দেখিনা, হিন্দি গান শুনিনা। কিন্তু তারপরও কেন যেন মনে হচ্ছে এর থেকে কি বের হবার কোন উপায় নাই। নিচে কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আর চিন্তা বর্ণনা করলাম।
গান -
রোযার মাসে বেশকিছু মার্কেট ঘুরলাম। যেই দোকানেই যাই না কেনো, গান হিন্দিটাই বাজে। বাংলা গান বাজালে মনে হয় ইজ্জতটা ঠিক মতো থাকেনা। আমরা বন্ধুরা মিলে প্রায়ই বিভিন্ন রেস্টুরেন্টএ খাওয়াদাওয়া করি। সেখানেও একি অবস্থা। গান বেশিরভাগ হিন্দিই বাজে। এক রেস্টুরেন্ট এর ম্যানেজারকে একবার জিজ্ঞেস করলাম, ভাই বাংলা গান বাজান না কেনো? উনি জবাব দিলেন যে উনি নতুন চাকরি নিয়েছেন। এরপর থেকে আর কাউকে জিজ্ঞেস করিনা ভয়ে, কি না কি বলে বসে।
আর আমাদের শহরগুলোতে বিয়ের অনুষ্ঠানের কথাতো বলাই বাহুল্য। হিন্দি গান ছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠানই হয়না। আর কি সেই গান একেকটা, বাংলায় অনুবাদ করলে যার অধিকাংশই অশ্লীলতার দোষে দুষ্ট। কিন্তু ভাষাটা যে হিন্দি, আমাদের কাছে অশ্লীল মনে হয়না।
হিন্দি গান বাজানোতে দোষের কিছু নাই, যদি সেটা বাংলার পাশাপাশি হয়। কিন্তু বাংলা গান যে এসব জায়গায় চরম অবহেলিত।
মিডিয়া -
নাটক সিনেমা নিয়ে কথা বলাটা বাহুল্য হবে। তাই এইদিকে আর গেলামনা।
কথা বলি বিজ্ঞাপন নিয়ে। আগে দেখতাম লাইফবয় এর মডেল হতো আমাদের মোনেম মুন্না; লাক্স এর মডেল বিপাশা, শমী এরা; হুইল এ আমাদের দেশীয় মডেল; ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম শুরু করলো তামিমকে দিয়ে। কিন্তু এখন? এর প্রত্যেকটা জায়গায় ভারতীয় মডেল। কারণ বাংলাদেশীরা এখন এগুলোই খায় (মিডিয়ার ভাষায়)। ফেয়ার এন্ড লাভলি তো আবার এক ডিগ্রি বেশি। তাদের ভাষ্যমতে ফেয়ার এন্ড লাভলি দেশি ফেয়ারনেস ক্রিম, বাকি রইল ৩০০/৪০০ টাকার বিদেশী ক্রিম। হতে পারে কোম্পানিগুলো ভারতীয় না, মাল্টিন্যাশনাল। কিন্তু বাংলাদেশে তাদের মার্কেটিং ভারতীয় মডেল দিয়ে কেন করবে? এদেশে কি মডেলের অভাব পড়েছে? না। কিন্তু ওইযে, পাবলিক খাচ্ছে। ওদের আর অতিরিক্ত কষ্ট করার দরকার কি? কলকাতার জন্য তৈরি করা বিজ্ঞাপনগুলো অনায়াসে তারা বাংলাদেশে চালিয়ে দিচ্ছে। আর বিলবোর্ড গুলোতে যেভাবে ক্যাটরিনা বা দিপিকা দৃশ্যমান তাতে কোন বিদেশি ভাবতে পারে ভুল করে আবার ভারতে চলে এলো কিনা।
আজকাল ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানে টিভিতে দেখা যায় স্টার বা জি সিরিজের হিন্দি নয়তো বাংলা চ্যানেল গুলো চলছে। খুব ব্যতিক্রম হলে খেলার চ্যানেল। কেন বাবা, আমাদের দেশী ২৬ টা চ্যানেল আছে, ওগুলো চালালে দোষ কোথায়। অজুহাত খাড়া, ওইগুলো তুলনামূলক পরিষ্কার আমাদের গুলোর তুলনায়। আমাদের চ্যানেল মালিকদের এদিকে কোন হুশ নাই। তারা ব্যস্ত হিন্দি সিরিয়াল ধরণ এর নাটক বানাতে। তাও তো কেউ দেখেনা, বিজ্ঞাপনের জালাতনে।
আচার-অনুষ্ঠান
হিন্দি সিনেমা বা নাটকের মাধ্যমে আমরা দেখি যে ভারতীয় বিয়ের অনুষ্ঠান মানেই সেখানে নাচগানের একটা ব্যপার আছে। বিষয়টা আমাদের বর্তমান প্রজন্ম খুব ভালোভাবে নিয়েছে। এখন আর আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান ডিজে পার্টি ছাড়া হয়ইনা। কিছুদিন পর সিনেমা স্টাইলটাও শুরু হবে, দুই পক্ষ থেকে নায়ক নায়িকা দাঁড়িয়ে যাবে নাচতে। আর অন্যান্য রীতিনীতি তো সেই কবেই জেকে বসেছে। মঙ্গল প্রদীপ তার একটা। দেখা যাক আর কি কি হয়।
বানান রীতি
ছোটবেলায় পড়েছি ব্রিটিশ ধরণের ইংরেজি। আমরা অনার্স পর্যায়ে আসতেই চালু হলো আমেরিকান ধরণ। ব্রিটিশ টা নাকি আর চলে না। কেন বাবা, ব্রিটিশরা কি আমেরিকানদের বশ্যতা মেনে নিয়েছে, নাকি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। যাই হোক দুটো পদ্ধতি মিলিয়েই চলছিলাম। হঠাৎ দেখি নতুন আরেক পদ্ধতি এসে হাজির। জেনে আসছিলাম লক্ষণ, দ্রাবিড়, যুবরাজ; হয়ে গেল লাক্সমান, দ্রাবিদ, ইউবরাজ। বিটিভিতে আগে যোগ ব্যায়াম এর চর্চা দেখাতো। হঠাৎ সেই যোগ ব্যায়াম হয়ে গেল ইয়োগা। ঠিক আছে, ভারত তাদের নিজস্ব পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। আমাদের কেও কি তাই অনুসরণ করতে হবে?
আমার এক মেয়ে বন্ধুকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ki korchho?
reply - boi podi
আবার জিজ্ঞেস করলাম, podi mane?
reply - are pori
- pori ke podi likhle bujhbo ki kore
- ekhon ebhabei likhe, janona kisu?
মেয়ে কিন্তু মাস্টার্স পাশ। এই হলো অবস্থা।
আরো অনেক আছে। কিন্তু কথা হল আমাদের দেশপ্রেম কি তবে শুধু নির্দিষ্ট দিনগুলোতেই সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে? ভারতীয়দের দেশপ্রেমটা তো আমরা শিখতে পারলাম না। অন্যকিছু শিখে অস্থির। আদৌ কি পারবো শিখতে?
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৫