somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের সংস্কৃতি কি মৌলিক না যৌগিক?

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারত আমাদের প্রতিবেশী, বিশাল দেশ, আমাদের তিনদিক ঘিরে আছে। অনেক ধরণের সংস্কৃতি তাদের। তার প্রভাব তো আমাদের উপর পড়বেই। তাই বলে এতটা। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি বলেতো কিছু আছে। কিন্তু এখনতো মনে হচ্ছে আমাদের কিছুই নাই। বিভিন্ন ঘটনায়, আচার-অনুষ্ঠানে আমরা যেভাবে নিজেদের সংস্কৃতি বিসর্জন দিচ্ছি, ভারতীয়টা আঁকড়ে ধরছি, তাতে কিছুদিন পর আমাদের সংস্কৃতি হয়তো বইয়ের পাতাতেই চিরস্থায়ী আসন পাবে। অনেকেই বলতে পারে আমার এতো চুলকায় কেন? আমি নিজেও জানিনা কেন যে আমার চুলকায়। এমন না যে, আমি হিন্দি সিনেমা দেখিনা, হিন্দি গান শুনিনা। কিন্তু তারপরও কেন যেন মনে হচ্ছে এর থেকে কি বের হবার কোন উপায় নাই। নিচে কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আর চিন্তা বর্ণনা করলাম।
গান -
রোযার মাসে বেশকিছু মার্কেট ঘুরলাম। যেই দোকানেই যাই না কেনো, গান হিন্দিটাই বাজে। বাংলা গান বাজালে মনে হয় ইজ্জতটা ঠিক মতো থাকেনা। আমরা বন্ধুরা মিলে প্রায়ই বিভিন্ন রেস্টুরেন্টএ খাওয়াদাওয়া করি। সেখানেও একি অবস্থা। গান বেশিরভাগ হিন্দিই বাজে। এক রেস্টুরেন্ট এর ম্যানেজারকে একবার জিজ্ঞেস করলাম, ভাই বাংলা গান বাজান না কেনো? উনি জবাব দিলেন যে উনি নতুন চাকরি নিয়েছেন। এরপর থেকে আর কাউকে জিজ্ঞেস করিনা ভয়ে, কি না কি বলে বসে।
আর আমাদের শহরগুলোতে বিয়ের অনুষ্ঠানের কথাতো বলাই বাহুল্য। হিন্দি গান ছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠানই হয়না। আর কি সেই গান একেকটা, বাংলায় অনুবাদ করলে যার অধিকাংশই অশ্লীলতার দোষে দুষ্ট। কিন্তু ভাষাটা যে হিন্দি, আমাদের কাছে অশ্লীল মনে হয়না।
হিন্দি গান বাজানোতে দোষের কিছু নাই, যদি সেটা বাংলার পাশাপাশি হয়। কিন্তু বাংলা গান যে এসব জায়গায় চরম অবহেলিত।
মিডিয়া -
নাটক সিনেমা নিয়ে কথা বলাটা বাহুল্য হবে। তাই এইদিকে আর গেলামনা।
কথা বলি বিজ্ঞাপন নিয়ে। আগে দেখতাম লাইফবয় এর মডেল হতো আমাদের মোনেম মুন্না; লাক্স এর মডেল বিপাশা, শমী এরা; হুইল এ আমাদের দেশীয় মডেল; ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম শুরু করলো তামিমকে দিয়ে। কিন্তু এখন? এর প্রত্যেকটা জায়গায় ভারতীয় মডেল। কারণ বাংলাদেশীরা এখন এগুলোই খায় (মিডিয়ার ভাষায়)। ফেয়ার এন্ড লাভলি তো আবার এক ডিগ্রি বেশি। তাদের ভাষ্যমতে ফেয়ার এন্ড লাভলি দেশি ফেয়ারনেস ক্রিম, বাকি রইল ৩০০/৪০০ টাকার বিদেশী ক্রিম। হতে পারে কোম্পানিগুলো ভারতীয় না, মাল্টিন্যাশনাল। কিন্তু বাংলাদেশে তাদের মার্কেটিং ভারতীয় মডেল দিয়ে কেন করবে? এদেশে কি মডেলের অভাব পড়েছে? না। কিন্তু ওইযে, পাবলিক খাচ্ছে। ওদের আর অতিরিক্ত কষ্ট করার দরকার কি? কলকাতার জন্য তৈরি করা বিজ্ঞাপনগুলো অনায়াসে তারা বাংলাদেশে চালিয়ে দিচ্ছে। আর বিলবোর্ড গুলোতে যেভাবে ক্যাটরিনা বা দিপিকা দৃশ্যমান তাতে কোন বিদেশি ভাবতে পারে ভুল করে আবার ভারতে চলে এলো কিনা।
আজকাল ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানে টিভিতে দেখা যায় স্টার বা জি সিরিজের হিন্দি নয়তো বাংলা চ্যানেল গুলো চলছে। খুব ব্যতিক্রম হলে খেলার চ্যানেল। কেন বাবা, আমাদের দেশী ২৬ টা চ্যানেল আছে, ওগুলো চালালে দোষ কোথায়। অজুহাত খাড়া, ওইগুলো তুলনামূলক পরিষ্কার আমাদের গুলোর তুলনায়। আমাদের চ্যানেল মালিকদের এদিকে কোন হুশ নাই। তারা ব্যস্ত হিন্দি সিরিয়াল ধরণ এর নাটক বানাতে। তাও তো কেউ দেখেনা, বিজ্ঞাপনের জালাতনে।
আচার-অনুষ্ঠান
হিন্দি সিনেমা বা নাটকের মাধ্যমে আমরা দেখি যে ভারতীয় বিয়ের অনুষ্ঠান মানেই সেখানে নাচগানের একটা ব্যপার আছে। বিষয়টা আমাদের বর্তমান প্রজন্ম খুব ভালোভাবে নিয়েছে। এখন আর আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান ডিজে পার্টি ছাড়া হয়ইনা। কিছুদিন পর সিনেমা স্টাইলটাও শুরু হবে, দুই পক্ষ থেকে নায়ক নায়িকা দাঁড়িয়ে যাবে নাচতে। আর অন্যান্য রীতিনীতি তো সেই কবেই জেকে বসেছে। মঙ্গল প্রদীপ তার একটা। দেখা যাক আর কি কি হয়।
বানান রীতি
ছোটবেলায় পড়েছি ব্রিটিশ ধরণের ইংরেজি। আমরা অনার্স পর্যায়ে আসতেই চালু হলো আমেরিকান ধরণ। ব্রিটিশ টা নাকি আর চলে না। কেন বাবা, ব্রিটিশরা কি আমেরিকানদের বশ্যতা মেনে নিয়েছে, নাকি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। যাই হোক দুটো পদ্ধতি মিলিয়েই চলছিলাম। হঠাৎ দেখি নতুন আরেক পদ্ধতি এসে হাজির। জেনে আসছিলাম লক্ষণ, দ্রাবিড়, যুবরাজ; হয়ে গেল লাক্সমান, দ্রাবিদ, ইউবরাজ। বিটিভিতে আগে যোগ ব্যায়াম এর চর্চা দেখাতো। হঠাৎ সেই যোগ ব্যায়াম হয়ে গেল ইয়োগা। ঠিক আছে, ভারত তাদের নিজস্ব পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। আমাদের কেও কি তাই অনুসরণ করতে হবে?
আমার এক মেয়ে বন্ধুকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ki korchho?
reply - boi podi
আবার জিজ্ঞেস করলাম, podi mane?
reply - are pori
- pori ke podi likhle bujhbo ki kore
- ekhon ebhabei likhe, janona kisu?
মেয়ে কিন্তু মাস্টার্স পাশ। এই হলো অবস্থা।

আরো অনেক আছে। কিন্তু কথা হল আমাদের দেশপ্রেম কি তবে শুধু নির্দিষ্ট দিনগুলোতেই সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে? ভারতীয়দের দেশপ্রেমটা তো আমরা শিখতে পারলাম না। অন্যকিছু শিখে অস্থির। আদৌ কি পারবো শিখতে?
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৫
৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় প্রতারক চক্রের সন্ধানঃ সতর্ক হোন!

লিখেছেন মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৪

একটি নতুন ভারতীয় প্রতারক দল সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য এই পোস্টের অবতারণা। সবাই পড়বেন দয়া করে।

গত ২৬ মার্চ ২০২৪ তারিখে এক ভারতীয় দাদা 01677119057 নাম্বার থেকে ফোন করে জিজ্ঞেস করল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি কি কারো অবিশ্বাস নষ্ট করি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:০১




আমার কাজ হলো বিশ্বাস সুদৃঢ় করা, তাতে অবিশ্বাসী মাইন্ড খেয়ে বসে কেন? বিশ্বাসেই আমি পেয়েছি সরল সঠিক পথ। সেটাই আমি বিশ্বাসীগণকে বলছি। অবিশ্বাসী তাতে ক্ষেপে যায় কেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনের মসজিদ

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:০৩


প্রচলিত রূপকথা অনুযায়ী কোন এক অমাবস্যার রাতে জ্বীন-পরীরা এই এলাকা উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় এলাকাটি পছন্দ করে । তারপর তারা মাটিতে নেমে এসে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করে, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

×