somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিয়া বাড়ির বাত্তি!

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এইবার ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স নামক একটা বেসিক কোর্স নিচ্ছি। তো এটা নিতে নিতেই ইচ্ছা হলো যে, ল্যাবে যা আছে তা দিয়ে একটা এলইডি ডিসপ্লে বানাই। এখন এই ধরনের ডিসপ্লে মাইক্রোকন্ট্রোলার দিয়ে বানানো যায় ইচ্ছেমতন। তারপরে লেখাগুলোকে ইচ্ছেমতন নাচানোকুদানো যায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যে, বেশিরভাগ জায়গাতেই ফিক্সড কোন কিছু একটা লেখা থাকে যেটা বানাতেও মাইক্রোকন্ট্রোলার ব্যবহার করা হয়। যেমন আমার ভার্সিটির লাইব্রেরি হলেই একটা ডিসপ্লে আছে যেটা দেখায়, "NO FOOD OR DRINKS ALLOWED"। এটা বানিয়ে নিয়ে আসতে প্রায় হাজার দুয়েক টাকা লেগেছে। এবং এই লেখাটা কখনোই পরিবর্তন হয় না। এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশনের জন্যে মাইক্রোকন্ট্রোলার ব্যবহার করা আমার কাছে মশা মারতে কামান দাগানোর মতন মনে হয়।

ল্যাব অ্যাসিস্টেন্টকে নিয়ে তাই বসে গেলাম মাইক্রোকন্ট্রোলার বিহীন একটা ডিজিটাল সিস্টেম বানাতে যেটা দেখাবে ECL এবং এই লেখাটিই বিয়া বাড়ির বাত্তির মতন নাচাকুদা করবে। এখন এই সিস্টেম বানানো কাহিনী না। ফ্লিপফ্লপ আইসি দিয়ে সহজেই বানায় ফেললাম। কিন্তু এটাকে কম পাওয়ার খরচ করে চালানোটা মেইন চ্যালেঞ্জ। সেজন্যে সহজ হিসেব হচ্ছে বাত্তির সংখ্যা কমাতে হবে। এজন্যে একটা বুদ্ধি বের করেছি। এলইডি গুলার সাথে ফাইবার অপ্টিক লাগায় দিবো। ফলে কম সংখ্যাক বাত্তির লাইট ফাইবার ক্যারি করে তা জ্বলজ্বল করার কথা। তবে ফাইবার এখনও হাতে পাই নাই। মানে আমাদের ল্যাবে নাই আরকি। সেটা হাতে পেলে করে দেখা যাবে কেমন কাজ করে। তবে ফাইবার হাতে আসতে আসতে যে সময় লাগবে, তার মধ্যে আজকে আরেকটা কাজ করে ফেললাম। ল্যাবের এক চিপায় অনেকদিন ধরে একটা সোলার প্যানেল পড়ে ছিলো। সেটাকে বের করে দেখি এফিশিয়েন্সির অবস্থা খারাপ। তবে কাজ চলে যাবে। আজ সেটাকে ডিভাইসের সাথে জুড়ে দিলাম। চমৎকার কাজ করলো। এটা এখন পুরোপুরি সেলফ-পাওয়ারড একটা সিস্টেম। এখন ফাইবার আসার অপেক্ষায় আছি।

এই ধরনের ডিজিটাল সিস্টেম ইচ্ছে করলে ছাত্রছাত্রীরা যে কোন রেগুলার ইলেকট্রনিক্স ল্যাবে থাকা যন্ত্রপাতি দিয়ে সহজেই বানিয়ে ফেলতে পারে এবং ভবিষ্যতে নিজেদের বিবাহের বাত্তির নর্তনকুর্দনের দায়িত্ব নিজ ঘাড়ে তুলে নিতে পারে।


বাই দ্যা ওয়ে, এইটা খুব সহজ সার্কিট হলেও বেশ কিছু কেরামতি এখানে করা লেগেছে। যেমন, সাধারণত D-FF এ একটা করে ইনভার্টেড আউটপুট থাকার কথা থাকলেও কোন এক অজানা কারণে ল্যাবে থাকা আইসিটাতে সেটা নেই! মডেল ভিন্ন। আর এই কাউন্টারে ইনভার্টেড আউটপুট থাকাটা জরুরী। কি আর করা? আরেকটা NOT আইসি দিলেই ল্যাঠা চুকে যাইতো। আমার ল্যাব অ্যাসিস্টেন্ট তাই করতে যাচ্ছিলো। কিন্তু ওকে মনে করায় দিলাম যে, চ্যালেঞ্জ হচ্ছে খরচ এবং পাওয়ার কন্সাম্পশন দুটোই সর্বনিম্ন রাখতে হবে। তাই একটা ট্রান্সিসটর আর রেজিস্টর দিয়ে একটা NOT গেট বানিয়ে ফেললাম। আইসি ব্যবহার করলে খরচ হতো ৮টাকা। এভাবে খরচ হলো ৩ টাকার মতন।

একটা আউটপুটে একটা এলইডি জ্বললে আপনি একই আউটপুটে আরও একাধিক এলইডি বাত্তি প্যারালাল কানেকশনে জ্বালাইতে পারবেন। কিন্তু কাহিনী হইলো যে, এতে প্রতি বাত্তির ঔজ্বল্য অনেক কমে যাবে। কমার্শিয়ালি বিয়া বাড়ির যেসব বাত্তি জ্বলে সেগুলোতে তাই এরকম প্রত্যেক আউটপুটে একাধিক বাত্তি একইরকম ঔজ্বল্যে জ্বালানোর জন্যে প্রত্যেক আউটপুটে একটা করে ট্রান্সিস্টর ব্যবহার করে কারেন্ট অ্যামপ্লিফাই করে নেয়া হয়। এছাড়াও বাত্তির লুমিনেন্স ঠিক রাখার জন্যে বাত্তির অ্যারেগুলাকে প্যারালাল-সিরিজ কম্বিনেশনের মাধ্যমে কানেকশন দেয়া হয়। কি কারণে এটা করতে হবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা না জানলেও, এটা ছাড়া যে কাজ হবেনা তা তারা ভালোই জানে। ইলেকট্রনিক্সের দোকানে কাজ শিখেছে এমন লোকজনের জন্যে এগুলো খুব কমন নিয়ম। এরকম কেউ সাথে থাকলে অনেক বিষয় বোঝা সহজ হয়ে যায় এবং কাজের গতিও অনেক স্মুথ হয়।

আমরা শিক্ষকরা থিওরি পড়ায় আর ল্যাব করায় কোর্স খালাস করে দেই। এই সকল টেকনিক শিখাই না। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সকল টেকনিক আমরা নিজেরাই জানিনা। শিখাবো কিভাবে? এই কারণে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা এই সকল ডিভাইস ল্যাবে ফটাফট বানিয়ে ফেললেও এগুলোর কমার্শিয়াল ইমপ্লিমেন্টেশন করতে পারেনা।

ল্যাব করানো নিয়েও আমার নিজের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। আগে নিজেরা যে গৎবাঁধা ল্যাব করে এসে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলাম, সেই একই স্টাইলে ল্যাব করাতাম। ল্যাবের শিরোনাম হয়, "To Construct an Astable Multivibrator using 741 Opamp". গলদ। বিশাল গলদ নিয়ম। আপনি সার্কিট বানানোর জন্যে ইলেকট্রনিক্স শিখতে আসেন নাই। সামনে ডায়াগ্রাম থাকলে যে কেউ একটা সার্কিট বানাতে পারবে। আপনি ইলেকট্রনিক্স শিখতে এসেছেন সার্কিট ডিজাইনিং করা শিখতে। কন্সট্রাকশন আর ডিজাইনিং এই শব্দ দুইটার মধ্যে আসমান-জমিন ফারাক। এখন ল্যাবের শিরোনাম দেই "To Design an Astable Multivibrator to generate a frequency of 1KHz using 741 Opamp". এখন আপনাকে নির্দিষ্ট একটা আউটপুট দিতে পারে এমন একটা সার্কিট ডিজাইন করতে হবে। উড়াধুরা কানেকশন দিয়ে অসিলোস্কোপে একটা কিছু আনাটা ল্যাব করানোর উদ্দেশ্য না।

বিদেশে উচ্চতর শিক্ষা নিলে মানুষের জ্ঞানের পরিধি আসলেই বাড়ে। আমার নিজের সেই সৌভাগ্য এখনও হয় নাই। তবে আমেরিকায় পিএচডি করছে এমন এক বন্ধুর সাথে কথাবার্তার সময় তাদের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেলে ল্যাব কিভাবে করানো হয় সেটা আমাকে বুঝিয়েছিলো। বন্ধুর সেই কথা শোনার পরে ল্যাব করানোর ব্যাপারে আমার নিজের মানসিকতার এ পরিবর্তন এসেছে। আশা করি, আমার ছাত্রছাত্রীরা এ ধরনের পদ্ধতিতে উপকৃত হবে এবং আমি যা পারি তার চাইতেও ভালো কিছু শিখতে পারবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×