somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্য পুরাণ ( ধারাবাহিক গল্প)

১৮ ই জুন, ২০১৮ রাত ৩:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[ প্রেক্ষাপট এবং ভূমিকা আলোচনার পর থেকে ]
অন্য পুরাণ: প্রথম অধ্যায় : ঈশ্বরের প্রতারণা!
এক
সেবছর ইশ্লাব চিকারিলগান মামলাকাটে এক অজানা মহামারি ছড়িয়েছিল। যার বাহক ছিলো অধিকাংশই যাযাবর। তাই ইশ্লাব চিকারিলগান মামলাকাটের রাজা শোহ কিরোল হুকুম দিলেন, সমস্ত যাযাবরদের দেখা মাত্র জ্যান্ত পুড়িয়ে ফেলা হোক। সব যাযাবরদের পুড়িয়ে মারা হল। ২৩০০জনের একটা যাযাবর কাফেলা প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে এসেছিল একেবারে দেশের শেষ সীমানায়, সাগর পাড়ের একটা জংগলে। গিজোটিয়ার জংগল। এই জংগলে রাজ্যের নির্বাসিত লোকজন থাকতো। কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচি একজন বৃদ্ধ অন্ধ ছুতোর। তিনি হলেন নির্বাসিতদের ধর্মীয় নেতা । তাঁর অপরাধ, তিনি শত সহস্র বছরের পুরানো এক ঈশ্বর যুডোর আরাধনা করেছিলেন। তাই রাজা তাঁকে ও তাঁর পরিবার কে গিজোটিয়ার জংগলে নির্বাসিত করে পাঠান। তিনি ও তাঁর ছেলেরা এসে জংগলের সকল নির্বাসিতদের জন্য নিজে হাতে বাড়ি বানিয়ে দেন। শিকারের জন্য উন্নতমানের ধনুক,ফাঁদ, বল্লম বানিয়ে দেন এবং সকল নির্বাসিতদের যুডোর ধর্মে ধর্মান্তর করেন। যাযাবরদের কাফেলা গিজোটিয়ার জংগলে পৌঁছানোর পর, নির্বাসিতরা সবাই কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচির নেতৃত্বে যাযাবরদের সবুজ গুঁইসাপের লোনা মাংস আর মিষ্টি ফলের মদ দিয়ে আপ্যায়ন করেছিল। এর ঠিক চারদিন পর বছরের নতুন নীল চাঁদ আকাশে দেখা দিলো, আর আদিম এক ঈশ্বর যুডো তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচিকে প্রথম দর্শন দিলেন নীল অগ্নি রুপে। সেদিন রাতে যথারীতি সবাই নতুন নীল চাঁদের আনন্দে মেঁতে খাওয়াদাওয়ার পর আকণ্ঠ মদ গিলে বেঘোরে ঘুমাচ্ছিল। কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচি নির্জনে একটা আগ্নি কুণ্ডর পাশে বসে হাত তাপাচ্ছিলেন আর যুডোর প্রাচীন ১৩টি মন্ত্র গুনগুন করে আওড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন তাঁর সামনের আগুনের রঙ নতুন চাঁদের মত নীল হয়ে দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো। এরপর তিনি ঠান্ডায় জমে যেতে শুরু করলেন,শুনতে পেলেন কেউ একজন তাঁকে নাম ধরে ডাকছেন। তিনি ভয়ে ভয়ে তাঁর ঈশ্বর নাম জপতে আরম্ভ করলেন। এইরকম সময় আদিম এক ঈশ্বর মহান যুডোর আবির্ভাব হল। যুডো বললেন,
“হে আমার ভৃত্যদের নেতা কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচি, আমি তোমার পূজনীয় ঈশ্বর, আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বস।”
“ কিন্তু আপনিই যে আমার আদিম এক ঈশ্বর যুডো তার প্রমাণ কি? যদি আপনি ইশ্লাবের নতুন দেবতাদের ছলনা হয়ে থাকেন, তবে?”
“কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচি, মূর্খের মত কথা বল না। তোমাকে মানায় না। আমি প্রমাণ দিয়ে নিজেকে এবং তোমার বিশ্বাসকে ছোট করবো না। হে অবুঝ! তুমি অন্ধ হয়েও যে চোখে নীল আগুন দেখতে পাচ্ছ, সেটাই কি যথেষ্ট উপমা নয়?বরং তুমি আমার কাছে কিছু চাও যা আমি তোমাকে দিবো, আমি তোমার এবং তোমার অনুসারীদের আরাধনায় মুগ্ধ! বল কি চাও? ”
“ প্রভু আমি ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। আমি ভয় পেয়েছি প্রচন্ড!”
“ একজন ভৃত্য হিসেবে তোমাকে সেইভাবেই মানায়।”
“ হে আদি অন্তহীন ঈশ্বর! আমাদের এখানে সাপের উপদ্রব অনেক বেশি, বিশেষ করে নীল চাঁদের মাস গুলিতে ওরা হিংস্র হয়ে ওঠে, দেখা যায় প্রায় প্রতিদিনই দুই একজন মারা যাচ্ছে। আপনি সাপের বিষের একটা ঔষধ বলে দিন!”
“ আমি আশীর্বাদ করছি আজ থেকে কেউ মরবেনা। আর কি চাও?”
“ হে প্রাণনাথ, আমাকে ইশ্লাব চিকারিলগান মামলাকাটের রাজা বানিয়ে দিন।তাহলে আমি সবাইকে আপনার পদতলে অর্পণ করবো।”
“ ও অন্ধ নেতা, সেটা সম্ভব নয়, কারন ইশ্লাব চিকারিলগান মামলাকাটের রাজা হলে, তুমিসহ আরও অনেকেই আমার অভিশাপ-মহামারীতে আক্রান্ত হবে। কিন্তু রাজা তুমি হবেই, আমি তোমাদের দান করবো এক স্বর্গ রাজ্য, প্রতিশ্রুত রাজ্য, যেখানে তোমার বংশধর এবং অনুসারীরা শাসন করবে চিরকাল। এইজন্য তোমাদের প্রস্থান জরুরী। তোমার অনুসারীদের নিয়ে তুমি এক নীল চন্দ্র মাসের মধ্যে ১০০টি নৌকা বানাবে। তারপর ২য় নীল চন্দ্রমাসে রাতের বেলা যাত্রা শুরু করবে সমুদ্রে দক্ষিণ দিক বরাবর। প্রথম লাল চন্দ্রমাসে তোমরা পৌঁছে যাবে সেখানে, যেখানে তোমাদের কঠিন পরীক্ষা নেয়া হবে এবং কৃতকার্য হলে পুরস্কৃত করা হবে প্রতিশ্রুত রাজ্য দিয়ে।”
কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচি, কেঁদে ফেললেন।
“ হায় অসহায়দের ঈশ্বর, নিঃসন্দেহে আমি অপবিত্র, আমাকে স্পর্শ করে পবিত্র করুন।”
এক ঈশ্বর যুডো তাঁর প্রতিনিধিকে আশীর্বাদ করে স্পর্শ করলেন এবং পবিত্র করলেন। কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচি কাঁপতে কাঁপতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। তাঁর মুখদিয়ে সাদা ফেনার মত বের হতে শুরু করলো। তাঁর গোঙানোর আওয়াজ শুনে তাঁর চার ছেলে ছুটে এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরল, মুখে পানির ছিটা দিলো। ভোর বেলা কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচির জ্ঞান ফিরে আসলো।তিনি তাঁর অনুসারী এবং যাযাবর কাফেলার সকলকে ডেকে তাঁর ঈশ্বর দর্শনের কথা বললেন। ঈশ্বরের আদেশ এবং প্রতিশ্রুতির কথা শুনালেন। শুধু ঈশ্বরের পরীক্ষা নেয়ার কথাটা চেপে গেলেন। তিনি জানতেন এটা বললে, সকলে উৎসাহ হারাবে।প্রতিশ্রুত রাজ্যের কথা শুনে তাঁর অনুসারী এবং যাযাবররা খুবই খুশী হল। তিনি সকলকে নিয়ে নৌকা বানাতে শুরু করলেন। জংগলে গাছ কাটতে শুরু করলে কয়েকজন যাযাবর সাপের দংশনে মারা গেল, কিন্তু কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচির ছেলেদের এবং তাঁর অনুসারীদের সাপের দংশনে কিছুই হল না। এই অলৌকিক ঘটনা লক্ষ করে সকল যাযাবর একসাথে যুডোর ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে গেল এবং নতুন উদ্যমে গাছ কাটতে লাগলো। ফলে দেখা গেল নির্দিষ্ট এক নীল চন্দ্র মাসের মধ্যেই ১০০ নৌকা তৈরি হয়ে গেল আর যুডোর অনুসারীদের কেউ সাপের দংশনে মারা গেল না। তারা সকলে মজুদকৃত খাদ্যসহ অধির আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকলো ২য় নীল চন্দ্র মাসের জন্যে।

দুই
ইশ্লাব চিকারিলগান মামলাকাট ছেড়ে আসার ১২ নীল চন্দ্রমাস, ৪ লাল চন্দ্রমাস অতিবাহিত হওয়ার পর, যাযাবরদের নৌ বহর এখন অথৈ সাগরে ভাসছে। কয়েকবার ঝড়ের কবলে পড়ে তাদের ২০টি নৌকা ডুবে গেছে,বাকিগুলির বেহাল দশা। এদিকে সব মজুদ করা রসদ প্রায় শেষের পথে। আদিম এক ঈশ্বর যুডো তাঁর অনুসারীদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন প্রথম লাল চন্দ্রমাসে তারা পাবে তাদের প্রতিশ্রুত স্বর্গ রাজ্য। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন কিনারা খুঁজে পায়নি তারা, বরং উল্টা না খেয়ে মরতে বসেছে সকলে। যাযাবরদের প্রধান নেতা নোমাদ এটাকচিসি সকলকে ধৈর্য ধারণ করতে উপদেশ দিচ্ছেন, তাদের ধর্মীয় নেতার দেখানো পথেই চলতে বলছেন। কিন্তু অধিকাংশ যাযাবর এবং নির্বাসিতরায় এখন হায় হায় করছে। কয়েকটা নৌকা অন্ধনেতা কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচির নৌকাটিকে আটকে রেখেছে মুক্সোলিফাট এটাকচিসির নেতৃত্বে। মুক্সোলিফাট এটাকচিসি যাযাবর নেতা নোমাদ এটাকচিসির আপন ভাই। মুক্সোলিফাট এটাকচিসি তার পাকানো দলকে উস্কানি দিচ্ছে,
“আরে হায়! নির্বোধের দল, একটা অন্ধ তোমাদের কি পথ দেখাবে? ওইসব ঈশ্বর দর্শন, প্রতিশ্রুতি, বাজে কথা, মাতাল বুড়োর মন গড়া গল্প। আর যদি সত্যিও হয়ে থাকে তবে ঐ আদিম ঈশ্বর একটা ধোঁকাবাজ, সে আমাদের মত আহাম্মকদের ধোঁকা দিয়েছে!অথাবা গিয়ে দেখ রাজার কাছ থেকে ঐ বুড়ো ভামটা কত খেয়েছে আমাদের দেশত্যাগী করানোর জন্য! ঘটনা যাইহোক এর একটা ফয়সালা করতে হবে।”
বিদ্রোহী একজন যাযাবর চিৎকার করে উঠলো,
“ কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচির নৌকা জ্বালিয়ে দেয়া হোক!”
সাথে সাথে বিদ্রোহী দলের সকলে হৈ হৈ করে উঠলো, হ্যা তবে তাই করা হোক।বিরিনচিসি ইশ্লাব চিকারুভিচি তার ভাই ইককিনচিদান ইশ্লাব চিকারুভিচি, ইউচিনচিদাম ইশ্লাব চিকারুভিচি এবং টোরটিনচি ইশ্লাব চিকারুভিচি কে নিয়ে বল্লম হাতে নৌকার চারপাশে একটা প্রতিরক্ষা গড়ে তোলার বৃথা চেষ্টা করতে থাকলো । এদিকে কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচি নৌকার ঠিক মাঝখানটায় হাটু গেড়ে বসে দুই হাত জোড় করে প্রার্থনা করে চলেছেন। তাঁর দুইচোখ অশ্রুস্নাত। মনে মনে প্রার্থনা করছেন “ হে আদিম এক ঈশ্বর, তুমি করুণাময়, আমাকে ক্ষমা কর, আমাকে ত্যাগ কর না।”
বিদ্রোহী দলের সাথে কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচির ছেলেদের এককথা দুই কথা হতে হতে কেউও একজন নৌকায় আগুন লাগিয়ে দিলো। আর সাথে সাথে চারিদিকে হৈ হৈ রব পড়ে গেল। যাযাবরদের প্রধান নেতা নোমাদ এটাকচিসি লজ্জায়, হতাশায় মুখে দুইহাত চাপা দিয়ে বসে পড়লেন। আগুন সারা নৌকার অনেক ক্ষানি পুড়িয়ে ফেলল। কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচির ছেলেরা নৌকা বাঁচাতে, নৌকা থেকে নেমে সমুদ্রের পানি দিয়ে আগুন নিভাতে চেষ্টা করলো। এমন সময় কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচিকে আবার তাঁর ঈশ্বর স্পর্শ করলেন। নৌকার আগুন নীল হয়ে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো। সকলের পলক সরছে না নৌকা থেকে,চোয়াল ঝুলে পড়েছে, চারিদিকে শুধু সমুদ্র স্রোতের শব্দ ছাড়া আর কিচ্ছু শোনা যায় না। কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচি কাঁপতে কাঁপতে নৌকার পাটাতনে লুটিয়ে পড়লো, তাঁর স্ত্রী সোনজ্ঞি লাটা মূর্ছা গেলেন। কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচি স্পষ্ট শুনতে পেলেন মহান আদিম এক ঈশ্বর যুডো বলছেন,
“ সূর্য অস্ত যাওয়া না পর্যন্ত সূর্যকে অনুসরণ কর! ”


তিন
একের পর এক নৌকাগুলি বড় বড় ঢেউয়ের সাথে এসে মসৃণ পাথুরি উপকূলে আছড়ে পড়ছে।তারপর ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে। নৌকার যাত্রীরা কেউ সাগর পানিতে স্রোতের জন্য হাবুডুবু খাচ্ছে। কেউ বা নৌকাগুলির মত মসৃণ পাথুরি উপকূলে আছড়ে পরে হাত, পা,কোমর ভাঙছে। কারওবা মাথা ফেটে মগজ বের হয়ে যাচ্ছে। অন্ধ নেতা কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচি তাঁর নৌকা থেকে ছিটকে পড়লেন একটা মসৃণ পাথরের ওপর তারপর কেঁকিয়ে উঠলেন,
“হায়! আদিম এক ঈশ্বর, আমার মনেহয় হাতটা গেল! ওহো হো হো!”
ব্যাথা সহনীয় পর্যায় এলে তিনি সহজাত প্রবৃত্তিতে মসৃণ পাথরে হাত বুলিয়ে অনুভব করলেন, এটা বেশ উষ্ণ। সাগরের ঢেউ এসে পড়ার সাথে সাথে ফোস করে বাস্প হয়ে যাচ্ছে। কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচির হাতে ফোস্কা পড়ে গেল। তিনি দুইবার ডাকলেন।
“ হে অসহায়দের প্রভু, সৃষ্টিকর্তা যুডো আমাদের রক্ষা কর!”
তারপর নিজের বড়ছেলেকে ডাকলেন,
“বিরিনচিসি ইশ্লাব চিকারুভিচি!বিরিনচিসি ইশ্লাব চিকারুভিচি! তুমি কোথায়?”
কেউ একজন এসে তাঁর কাঁধ স্পর্শ করলো,
“ কে? বিরিনচিসি ইশ্লাব চিকারুভিচি কোথায়, ওহ আমার হাত!”
“ চিন্তা করবেননা জনাব! আপনার ঈশ্বর তাঁর কথা গোপন করার জন্য, আপনার ওপর কিঞ্চিৎ রুষ্ট হয়েছেন!”
“ আপনি? কে আপনি? আপনাকে তো চিনলাম না? আমরা কোথায় এখন? আপনি কি এদেশের বাসিন্দা?”
“ জ্বি না জনাব, আমি একজন পবিত্র আত্মা! আদিম এক ঈশ্বর যুডোর সেবাদাস। পূর্বজন্মের নাম উচ্চারণ করা নিষেধ।”
“ হে ঈশ্বর , রক্ষা কর আমায়, তবে কি আপনি আমাকে…?”
“ অবশ্যই না, আমি আপনার ঈশ্বরের কিছু বার্তা পৌছে দিতে এসেছি মাত্র। আপনি কি প্রস্তুত?”
“ কিন্তু আমার হাত, এটা কোন জায়গা? এ পাথর গরম কেন?”
“ হে অন্ধ আদিম ধর্মীয় নেতা, এখন থেকে আপনি আপনার ঈশ্বরের কোন কথায় গোপন করবেন না।সেটা সরাসরি হোক বা হোক কোন বার্তা বাহক দ্বারা। আজকে কিছুক্ষণ পর সূর্য অস্ত যাবে। আপনি আপনার স্থান পরিবর্তন না করে, এখানেই বসে নিজের কৃত কর্মের জন্য অনুশোচনা করবেন। ক্ষমা চাইবেন আপনার প্রাণনাথের কাছে। এরপরের দিন সকালে আপনি আপনার সকল অনুসারীদের ডেকে, প্রথমে সত্য কথা বলবেন। তারপর যাঁরা জীবিত তাঁরা মৃতদের জন্য প্রার্থনা করবেন। নিশ্চয় তাঁরা পরকালে আদিম এক ঈশ্বর যুডোর সেবা করার সুযোগ পাবেন। জীবিতদের মধ্যে আপনি তিনটি গোত্র ভাগ করবেন। প্রথম গোত্র হবে নির্বাসিতদের, তাঁরা আপনার সেবা এবং ঈশ্বর আরাধনা ছাড়া আর কিছুই করতে পারবে না। দ্বিতীয় গোত্র হবে যাযাবরদের, এদের ভেতরে যাঁরা আপনার অপর বরাবর বিশ্বাস রেখে এসেছে তাঁদের নিয়ে এই গোত্র হবে। এরা এখন থেকে শিকার, চাষ, ব্যবসা করে প্রথম গোত্রদের ভরণপোষণ করবে।তৃতীয় গোত্র বাতিল গোত্র এরা তারা যারা আপনার নৌকা আটক করেছিল এবং তাতে আগুন দিয়েছিলো। নিঃসন্দেহে তারা অভিশপ্ত আপনার ঈশ্বরের পক্ষ থেকে। তবে আপনি চাইলে তাদের বিচার করতে পারেন। ঈশ্বর চান আপনি তাদের প্রতি কঠোর হোন। কিন্তু এখন থেকে আজীবন এরা নিকৃষ্ট বলেই বিবেচিত হবে। এক গোত্র সাথে অন্য গোত্রর কোনপ্রকার সামাজিক যোগাযোগ, মেলবন্ধন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এখন প্রতি বছর প্রথম নীল চাঁদে আপনাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করতে হবে। শীঘ্রয় আপনি রাজা হবেন।আগামীকাল গোত্র ভাগের পর আপনি সমুদ্র উপকূল ধরে উত্তরে হাঁটতে থাকবেন এবং সকল গোত্র আপনাকে অনুসরণ করবে।”
“বিরিনচিসি ইশ্লাব চিকারুভিচি! বিরিনচিসি ইশ্লাব চিকারুভিচি!”
বেশকিছুক্ষন ব্যাথায় কোঁকানোর পর কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচি অনুভব করলেন, বেশ শীত করছে, পায়ের নিচের উষ্ণ পাথর আরামদায়ক লাগছে। বাতাসের সাথে অপর থেকে ঠান্ডা ছাই পড়ছে। তিনি হাত, পা, মাথা পাথরে লাগিয়ে মনে মনে ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চাইতে শুরু করলেন।

চার
মোট ১২০ জন বেঁচে আছেন। নারী ৪৬ জন,৫৪ জন পুরুষ, ২০ কিশোর কীশোরী বেঁচে আছে। বিরিনচিসি ইশ্লাব চিকারুভিচি তাঁর বাবাকে ঘাড়ে করে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সকলের সামনে। কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচির ছোট দুই ছেলে মারা গেছে। একজনের মাথা ফেটে, অন্যজনের কোমর ভেঙে।তাঁর স্ত্রী সোনজ্ঞি লাটার বাম পা ভেঙেছে, তাঁর নিজের হাত। কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচি এই সবকিছুর জন্য নিজেকেই দায়ী করছেন। তিনি বুকে পাথর চাপা দিয়ে আদিম এক ঈশ্বর যুডোর পাঠানো বানী সবাইকে শুনালেন।গোত্র ভাগ করলেন। মুক্সোলিফাট এটাকচিসি আবারো ভিড় ঠেলে খোঁড়াতে খোঁড়াতে সামনে এসে কাঁদতে লাগলো, কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“ এই ঈশ্বর আমাদের ঠকিয়েছে, স্বর্গ রাজ্য দেবে বলে, আমাদের দেশ, পরিবার সাবাইকে কেড়ে নিয়েছে। চারিদিকে তাকিয়ে দেখ, গাছ পালা তো দূরের কথা একটা সরীসৃপও নেই। চারদিকে কে বিষাক্ত লাভা আর বাষ্প। এর মধ্যেই আমাদের শরীরে বিষক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এ কেমন স্বর্গ রাজ্য?উন্মাদের দল! যে ঈশ্বর নিষ্ঠুর, সে কিভাবে অসহায়দের ঈশ্বর হতে পারে? এই ঈশ্বর প্রতারক! এরপরও কি তোমরা এই প্রতারক ঈশ্বরের কথা শুনবে? ” কিছুক্ষণ আগে কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচি বাতিল গোত্রের সকলকে তাঁর মহানুভবতা দেখানোর জন্যে ক্ষমা করেছিলেন, এখন মনেহচ্ছে ঈশ্বরের কথায় ঠিক, এঁদের ওপর কঠোর হতে হবে। তিনি অন্য দুই গোত্রকে বাতিল গোত্রের সকল নারী পুরুষকে দাস হিসাবে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে বললেন। আর মুক্সোলিফাট এটাকচিসিকে পাথরের আঘাত করতে বললেন ততক্ষণ, যতক্ষণ না তার মৃত্যু হয়।
[চলবে ]
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৮ রাত ৩:১৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×