somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লাসফ্লেমি নিয়া ক্যাচাল -চা নিয়া , পান চাবাইয়া বসেন। লম্বা কথা আছে।

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লাসফ্লেমি ব্লাসফ্লেমি ব্লাসফ্লেমি -এখনটক অফ দা টাউন।
গত ৬ এপ্রিল হেফাযতে ইসলাম ঢাকায় যে শো ডাউন করল, তাতে ব্লাসফেমি আইন নিয়ে বিতর্কটা দেশের পলিটিকাল ল্যান্ডস্কেপ এর সামনের সারিতেনিয়ে আসছে।
যদিও হেফাজতের ১৩ দফা দাবী, তবুও ৬ তারিখে বক্তাদের কথা শুনলে বুঝা যায়, বেশীর ভাগ বক্তা রাসূলের অবমাননাকে সব চেয়ে গুরুত্ব দিছেন। লিস্টিঅনুসারে মুল দাবিটার ভাষা ছিল, এই রকম
“আল্লাহ্‌, রাসুল (সা) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবংমুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধানরেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।“

অন্য দিকে, ৮ তারিখ প্রধান মন্ত্রী বিবিসিকে স্বাক্ষাৎকারেবলেছেন, ব্লাসফ্লেমি আইন করা হবেনা। এরপর, আজ ৯ এপ্রিল, হেফাজত একটা সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছে্‌যে দাবি তারা আদায় করে ছাড়বে। হেফাজত ঢাকায় ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ এর মত জন সমাবেশ করছে আর প্রধানমন্ত্রি গন প্রজাতন্ত্রের প্রধান। ফলে সিচুয়েশান টা যথেষ্ট ক্রিটিকাল। অবস্থা দৃষ্টেমনে হচ্ছে, ইস্যুটা নিয়ে দেশে পরিস্থিতি আরো সহিংস পরিস্থিতিসৃষ্টি হতে পারে। এই অবস্থায় ব্লাসফেমি আইনএবং এই সম্পর্কে একটা বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন আছে।

চা নিয়া, পান চাবাইয়া বসেন। এইটা লম্বা ক্য্যাচাল।

ব্লাসফেমির সংজ্ঞা ও সীমানা:-
প্রথমে দেখি। ব্লাসফেমি কি জিনিস।
ব্লাসফ্লেমি টা একচুয়ালি ইউরপিয়ান ইম্পোরট।কিন্তু আমি ওই দিকে যাবনা।

যুগে যুগে দেশে দেশে ব্লাসফেমিকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে ট্রিট করা হইছে। আল্লাহর বিরুদ্ধে কথা বলা,রাসূলের সমালোচনা করা, নিজেকে রাসূল হিসেবে দাবী করা, রাসূলেরছবি আঁকা সহ বিভিন্ন আচরণ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে ব্লাসফেমীর আওতায় পড়ছে।
কোন কোন দেশে আবার কোরআনকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা দেয়া, মুসলমানদের সমালোচনা করা, নামাযেরসময় শীস দেয়া, মেক আপ করা বা সাজা, যোগ ব্যায়াম চর্চা করা, নন মুসলিমদের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া, নাস্তিকতারচর্চা করা, জুয়া খেলাসহ অনেক কার্যক্রমও ব্লাসফেমির আওতায় পড়ছে।

আমাদের দেশ এর প্রেক্ষাপটে ব্লাসফেমির সংজ্ঞা প্রদান ও সীমানা নির্ধারণ :-
ইসলাম এবং অন্যান্য ধর্মকে সমালোচনা করা , আমাদেরসোসাইটিতে খুব অস্বাভাবিক কোন প্রবণতা নয়। আমাদের সমাজে মৌলবাদী, নরমপন্থী, চরমপন্থীসবার মধ্যেই ধর্মকে সমালোচনামূলক আলোচনার একটা এক্সেপ্টেনস আছে এবং সোস্যাল স্পেসের বিভিন্ন পর্যায়ে, নিয়তই ধর্ম নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হয়ে থাকে। ফর এক্সাম্পল,জাকির নায়েকের টিভি প্রোগ্রামগুলো আমাদের দেশে যথেষ্ট জনপ্রিয়।সেখানে ধর্ম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা এবং বিভিন্ন সময় ভিন্নধর্মীদের হাজির করে ধর্ম কে নিয়ে খুবই চরম বিতর্ক, সমালোচনা এবং পর্যালোচনা করা হয়। এই প্রগ্রাম গুলো আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয়। সেইগুলোকে কখনও ব্লাস্ফেমাস আচরণ হিসেবে ধরা হয়না।

কিন্ত‍ু, ইসলাম আর নবী-রাসূল মোহাম্মাদ (সা)কে নিয়ে কুটনা এবং রাসূলের জীবনকে নিয়ে ব্যেঙ্গ এবং বিষোদগার – আমাদের সমাজে অফ লিমিট এবং অগ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।এই বিষয়গুলোই নেট থেকে খুঁজে নিয়ে আমার দেশ পত্রিকা হাইলাইট করে, যা সাধারণ মুসলমানদেরকে খেপিয়ে তুলছে এবং এইটা থেকেই মূল ক্ষোভটার উ‍ৎপত্তি হয়ে একটা বিস্ফোরণ ঘটছে।
ফলে, দেখা যাচ্ছে নবীকে বিষোদগার এবং কুৎসাই ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ক্ষোভের মূল কারণ।তাই, আমি এই আলোচনায় বাস্ফেমির স্কোপ শুধুমাত্র রাসূলকে নিয়ে সমালোচনা এবং রাসূলের জীবন নিয়ে কুৎসা রচনা করারমধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবএবং ব্লাসফেমি শব্দটা শুধুমাত্র এই অর্থে ব্যবহার করব। যুগে যুগে , দেশে দেশে ব্লাসফেমি রস্কোপ এক এক ভাবে নির্ধারিত হইছে। তাই এই লেখায় যদি ব্লাসফেমিকে শুধু মাত্র রাসূলকে নিয়ে কুটনা গাওয়াতে সীমাবদ্ধ করা হয়, সেইটা ভুল হবেনা।
ফ্রিডম অফ স্পিচের প্রেক্ষাপটে, এই সীমানাটা নির্ধারণের একটা তাত্ত্বিক ভিত্তি আছে। সেই ভিত্তি টাকে বোঝার জন্যে, আমি জন স্টুয়ার্ট মিলের হেল্প নিব।
স্টুয়ার্ট মিল রে মুক্ত সমাজের ধারণার প্রধান তাত্ত্বিক হিসেবে ধরা হয়।
স্টুয়ার্ট মিল বলেছেন,
” একজন ব্যক্তির যে কোন বিষয়ে আলোচনা করার, মতামত দেয়ার এবং পর্যালোচনা করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থাকতে হবে, তা যতই অনৈতিক হোক।“

মিল থিউরাইজ করেন যে,
"সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিলে একটা যুক্তি তার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতারসীমা পেরিয়ে, তার যৌক্তিকতার শেষ সীমায় পৌঁছায়।"


আমরা স্টুয়ার্ট মিলের সাহায্য নিয়ে, রাসূল (সা) কে নিয়ে ব্যক্তিগত কুৎসা এবং নোংরা কদর্য রচনাকে , সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা পেরিয়ে যৌক্তিকতার শেষ সীমায় পৌঁছে কদর্য আক্রমনে রূপ নিছে বলে ধরে নিতে পারি।
আমরা পরবর্তীতে দেখব, এই সীমানা অতিক্রম করার লাইনটাকেই, পশ্চিমা বিশ্বের ফ্রি সোসাইটি এবং মুক্ত বুদ্ধির তাত্ত্বিকরা, ফ্রিডমঅফ স্পিচ এর বাউনডারি হিসেবে বেঁধে দিছেন।

কেন এই আলোচনটা প্রয়োজন ?
কিছু প্রতিক্রিয়াশীল গ্রুপ এর হাতে বিছিন্ন ঘটনা বাদে, বাংলাদেশের সমাজ এবং রাষ্ট্র ইসলাম বা অন্য ধর্ম চর্চার ব্যাপারে তেমন কোন গোঁড়ামি দেখায় না।
বাঙালি মূল্যবোধের সাথে, ইসলামী অনুশাসনের মিথস্ক্রিয়াতে বাঙালি সমাজে একটা ইউনিক ধর্ম চেতনা ঘড়ে উঠেছে, যা অনেক সহনশীল এবং আপোষকামী। সেই আপোষকামী মনোভাবে মৌলচেতনার দলগুলো অনেক ক্ষেত্রে চরমপন্থা আনার চেষ্টা করেছে। কিন্ত‍ু সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি কখনো তাদেরকে মূল ধারায় আসতে দেয়নি। এই জন্যেই , আমাদের দেশে এখনো দুই জন মহিলা পালাক্রমে দেশ চালাচ্ছেন (যদিও খুবই বাজে ভাবে চালাচ্ছেন ) কোন ধরনের ধর্মীয় প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীননা হয়েই।

কিন্ত‍ু শাহবাগ এর উত্তাল দিনগুলোর সময় রাজিবের হত্যাকাণ্ডের পর রাজিবকে দ্বিত্বীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ হিসেবে ব্রান্ড করাসহ অন্যান্য কর্ম কান্ডে,জাতীয়তাবাদী পত্রিকা আমার দেশ - বিএনপির রাজনৈতিক মিত্র জামাতকে রক্ষা করার জন্য, থাবা বাবার নোংরা এবং কদর্য লেখাগুলো দিয়ে পুরো শাহবাগ মুভমেন্টকে ডিলিটিমাইজ করার স্ট্রেটেজি নেয় এবং তারা থাবা বাবার লেখাকে রাজনীতিকিকরন করে।
দিনের পর দিন তারা একটা ভয়ঙ্কর পলিটিক্যাল গেম খেলেছে, নেটের কোনায়- কানায় পরে থাকা, জিরো হিট,জিরো একেসেপট্যাবল লেখা গুলো দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় বোধ কে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে।

থাবা বাবার লেখাগুলো ছিল চরম ঘৃণ্য এবং কদর্য।
গোড়া ধর্মীয় মৌলবাদীদের কথা বাদ দিলাম, সাধারণ মুসলমান এর কাছেই থাবা বাবার নামে লেখা গুলো টলারেবল ছিলনা। ফলে,আমার দেশের এই প্রোপাগান্ডাতে বিভিন্ন মৌলিক ইসলামী দলগুলোর মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া হয়, তার বিস্ফোরণ ঘটে ৫ এপ্রিল, যখন প্রায় ৫ হতে ১০ লাখ লোকের শোডাউন হয় ঢাকার রাস্তায় এবং সারাদেশে, যেখানে তারা ১৩ দফা দাবী পেশ করে।

তাদের এই বিক্ষোভ বাংলাদেশের জন্মের পর, এরশাদ বিরোধী বিক্ষোভকে বাদ দিলে সর্ববৃহৎ বিক্ষোভহিসেবে ধরে নেয়া যায়। সংখ্যার একটা ওজন আছে। ফলে এতো দিন ফ্রিঞ্জ লাইনে থাকা এই গ্রুপ গুলোর দাবী-দাওয়াকে এখন সিরিয়াসলি পর্যালোচনা করার প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে। কারণ এই ব্যেপক জন সমাবেশ করার পর, তারা এখন সরকারের উপর, রাষ্ট্রের উপর, সমাজের উপর বড় একটা প্রেসার গ্রুপ হিসেবে আবর্তিত হয়েছে।

এই অবস্থায় তাদের দাবীকে আওয়ামী লীগ এর কায়দায় ডিনাই করা সম্ভব কিন্ত‍ু তাদের উপেক্ষা করা সম্ভব নয় এবং তাদের কে কনফ্রন্ট করার প্রয়োজন রয়েছে।


সমস্যা হচ্ছে, ব্লাস্ফেমি আইন এর এই আলোচনটার ইন্সস্টিগেটর চরম প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মীয় মৌলবাদী হওয়ার কারণে এবং তাদের দাবীগুলো চরম এক্সট্রিম হওয়াতে এবং তাদের বেশীর ভাগ দাবী গুলো আমাদের সমাজের চেতনায় সম্পূর্ণ ভাবে অগ্রহণযোগ্য হওয়াতে, সত্যিকার এবং মিথ্যাকার উভয় শ্রেণীর প্রগতিশীল তাদেরকে কোন ভাবেই প্রশ্রয় দিয়ে তাদেরকে দাবী গুলো গুরুত্ব দিতে সম্মত নয়।
তাদের ১৩ টা দাবী নিয়ে আমি কোন আলোচনায় যাবনা। আমি শুধু আলোচনা করবো তাদের মূল দাবী নিয়ে যেটা থেকে এই ক্ষোভ এবং বিক্ষোভের জন্ম, সেইটা হলো

“আল্লাহ্‌, রাসুল (সা) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবংমুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধানরেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।“

এমনকি মৌলিক ইসলাম এর পারস্পেক্টিভ এইটা একটা অন্যায্য দাবী।
কারণ আমরা পরবর্তীতে আলোচনায় দেখব, যে ইসলামের ভিত্তিতে তারা এই দাবী গুলো তুলছে, সেই ইসলামের মূল গ্রন্থ আল-কোরআনে -ব্লাসফেমি আচরণে কখনোই মৃত্যুদন্ড তো দূরের কথা, এমন কি শাস্তির কথাও বলা হয় নাই। এই নিয়ে খুব পরিষ্কার পরিষ্কার আয়াত রয়েছে। ফলে এমনকি কোরানের আয়াত উপেক্ষা করে তাদের এই দাবী গুলো পরিষ্কার যুক্তি তে আলোচনা করা দরকার এবং তাদেরকে মোকাবেলা করার জন্যে সঠিক যুক্তি গুলো তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া দরকার।
তাছাড়া তাদের এই দাবী, মুক্ত বুদ্ধির চর্চার ক্ষেত্রে এবং সত্যিকার এর প্রগতিশীল সমাজ এবং রাষ্ট্র গড়ার পথে চরম একটা বাধা সৃষ্টি করবে, কারণ যুগে যুগে দেখা গেছে এইধরনের আইন সৃষ্টি করে,রাষ্ট্র এবং সমাজের মৌল অংশ টুকু অপশাসন, কু শাসন এবং আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে মূলত তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতাকেই সংহত করে এবং সমাজে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে। এইটাও দীর্ঘ আলোচনায় আসবে।

অন্যদিকে আছে চরমপ্রতিক্রিয়াশীল, তথাকথিত মুক্তবুদ্ধির ধারকেরা।
তারা এই বিষয়ে কোন আলোচনাই করতে রাজী না। তাদের কাছে,এই ডিসকাশন করাটাই হইলো বাংলাদেশ পাকিস্তান হয়ে যাওয়া।

শেখ হাসিনারে কটুক্তি করলে, বাংলাদেশে আইন থাকতে পারে, বঙ্গবন্ধুরে কটুক্তি করলে বাংলাদেশে আইন থাকতে পারে, কিন্ত‍ু রাসূলকে নিয়ে যা ইচ্ছে তা বলা যাবে এবং এই নিয়ে কোন আলোচনা করতে গেলে সেটা ফ্রি স্পিচের জন্য বাধা হিসেবে ট্রিট করে তারা।

মুক্ত আলোচনায় তাদের ইনটলারেন্স লেভেল, গোঁড়া মৌলবাদীদের থেকে কম নয়।

এই জন্য, পুরো প্রশ্নটাকে ধর্মীয় মৌলবাদ আর ভণ্ড প্রগতিশীলদের পারস্পেকটিভ টাকে মাইনাস করে, মুক্ত সমাজ, ফ্রিডম অফ স্পিচ এর মৌলিক আইন এবং কোরানে কি বলা আছে তার টেকনিক্যাল মেরিট আলোচনা করার প্রয়োজন আছে এবং আমি অল্প জ্ঞান নিয়েও তার একটা অক্ষম চেষ্টা করব।

এখানেআমি স্বীকার করে নিই। মুক্ত চর্চা, ফ্রিডম অফ স্পিচ,লিবার্টি আমার নিজস্ব ইন্টারেস্ট এর জায়গা। কিন্ত‍ু থিওলজি আমারি এরিয়া অফ ইন্টারেস্ট না। ফলে এইটা নিয়ে আমাকে নিজস্ব রিসার্চ করতে হইছে। এবং আমি যেহেতু কোরআনের তাফসীর না। ফলে,ধর্মীয় বিষয়ে আমার এ্যানাইসিস এ কোন ভুল থাকলে, আমি আগে থেকে তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।


ব্লাসফেমি এবং ফ্রিডম অফস্পিচ :

ধর্ম এবং ধর্মীয় পুরুষদের ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করার নিষেধাজ্ঞার ধারণাটা মূলত লিবার্টি, ফ্রিডম অফ স্পিচ এবং ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশনের ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক। এইটা নিয়ে একটা ক্লাসিকেল ডিবেট হইছে এবং ডিবেটাটা মোটামুটি সেটেল্ড। কিন্তু আমরা এখন মুক্ত চেতনার বেসিক লেভেল এর পইরা আছি। তাই এইটা নিয়ে আমি একটু ডিপ এ যাব।
লিবার্টি, ফ্রিডম অফ স্পিচ,ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন যথেষ্ঠ আধুনিক কনসেপ্ট। মূলত ১৭০০ শতকের দিকে এই ধারণাগুলো পুর্ণতা পায় । তার আগে মানুষ এই ধারণাগুলোর ব্যাপারে সচেতন ছিলনা এবং এর প্রয়োজনীয়তাও খুব তীব্র ভাবে অনুভব করে নাই।
১৬০০ শতকের দিকে হবস, জন লক বা রুশো ঘরানার দার্শনিকেরা সোস্যাল কনট্রাকট বা সামাজিক চুক্তিকে ডিফাইন করেন।তারা দেখান যে, রাজার ঐশ্বরিক ক্ষমতা বলে কিছু নাই – রাজার যে ক্ষমতা তা মূলত জনগণের ক্ষমতার যোগফল। এবং তারা দেখান যে রাজার ক্ষমতা দিয়ে জনগণ পরিচালিত হয়না বরং জনগণের ক্ষমতা দিয়ে রাজা পরিচালিত হয়।
ফলে দার্শনিকদের ভাবনায়, রাজার ক্ষমতার বদলে ব্যক্তির ক্ষমতার উপর গুরুত্বটা চলে আসে । এই ধারণা থেকে, ব্যক্তি স্বাধীনতাটা একটা গুরুত্বপূর্ণ কনসেপ্ট হিসেবে আবির্ভূত হয়- এই সময়ে।
১৭৯৩ সালে ফরাসী বিপ্লব ব্যক্তির স্বাধীনতাটাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয় এবং ফরাসী বিপ্লবের প্রবক্তারা, ডিক্লেরেশন অফ দ্যা রাইটস অফ মান এন্ড অফ দ্যা সিটিজেন অথবা ব্যক্তি এবং নাগরিকের সার্বজনীন ক্ষমতা নামের একটা সার্বজনীন ঘোষণা পত্র দেন যাতে,
মানবতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা, নাগরিকের স্বাধীনতাসহ বেশ কিছু ঘোষণা দেয়া হয়-এই ঘোষণা পত্র টি বর্তমান লিবারটিয়ান পাশ্চাত্য সভ্যতার ভিত রচনা করে।

এই ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক হলেন- জন স্টুয়ার্ট মিল। ১৮৫৯ সালে যার লেখা “ও লিবার্টি” নামের প্রবন্ধটি আধুনিক ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং ফ্রিডম অফ স্পিচ এবং ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশনের মূল ধারণা এবং সীমানাকে ঘোষণা করে।

জন স্টুয়ার্ট মিলকে চোখ বন্ধ করে পাশ্চাত্যের ফ্রি সোসাইটির মূল তাত্ত্বিক হিসেবে ধরা যায়।
ফ্রিডম অফ স্পিচের সাথে ব্যক্তি স্বাধীনতা নিয়ে স্টুয়ার্ট মিলের দুইটা ক্রিটিকাল এক্সিয়ম বা স্বতঃসিদ্ধ আছে ।
প্রথম স্বতঃসিদ্ধ হইলো-
first, that the individual is not accountable to society for his actions, in so far as these concern the interests of no person but himself. Advice, instruction, persuasion, and avoidance by other people, if thought necessary by them for their own good, are the only measures by which society can justifiably express its dislike or disapprobation of hisconducরাট
"একজন ব্যক্তি সমাজের কাছে তার আচরণের জন্যে জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়। যতক্ষণ সে নিজের ইচ্ছায় শুধুমাত্র নিজের জন্যে কোন কাজ করা থাকে এবং শুধুমাত্র উপদেশ দেয়া,বোঝানো এবং এড়িয়ে যাওয়া বাদে সমাজ কোনভাবেই ব্যেক্তির আচরনের উপর জোর করতে পারবেনা ।"
Secondly, that for such actions as are prejudicial to theinterests of others, the individual is accountable, and may be subjected eitherto social or to legal punishments, if society is of opinion that the one or theother is requisite for its protection. (LV2)

এই প্রথম একজিওম টার লিমিট দেয়া আছে তার দ্বিতীয় একজিওমে। সেইখানে বলা আছে।
"যদি ব্যক্তির সেই কাজ বা আচরণ অন্যকারো কাছে অগ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে তো, ব্যক্তিকেসামাজিক বা আইনি শাস্তি দেয়া যেতে পারে, যদি সমাজ মনে করে, প্রথম ব্যক্তি বা দ্বিতীয় ব্যেক্তির কার্যকারণে অপর ব্যক্তির অধিকার রক্ষার জন্যে সামাজিক বা আইনি প্রতিরক্ষার প্রয়োজন দেখা দেয়।"

দ্বিতীয় স্বতঃসিদ্ধ টাকে, বর্তমানে সামাজিক কর্ত‍ৃত্বের তত্ত বলা হয়।

এ ইটা ইন্টারেস্টিং এই জন্যে যে, ফ্রি সোসাইটি বা ফ্রিডম অফ স্পিচের উপর বা ব্যক্তির উপর কর্ত‍ৃত্বের ক্ষমতা মিল, সমাজের উপর স্থাপন করতেছেন। সো শুধুমাত্র সমাজ যখন মনে করছে যে একটা আচরণ অন্যায়, তখনই সেটা অন্যায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে ।তাহলে পার্টিকুলার সমাজের গ্রহণযোগ্যতা, ফ্রিডম অফ স্পিচ বা ব্যক্তি স্বাধীনতার অন্যতম একটা ব্যরিয়ার।

এবং ব্যক্তির নিজের মতামত প্রকাশ বা ব্যক্তি স্বাধীনতার সীমানা হিসেবে মিল আরো একটা তত্তের জন্ম দেন,যাকে তিনি বলেন “হারম প্রিন্সিপাল" বা “ক্ষতির নিয়ম”

http://en.wikipedia.org/wiki/Harm_principle
হারম প্রিন্সিপাল এর মাধ্যমে মিল, ফ্রিডম অফ স্পিচ ও ব্যক্তি স্বাধীনতার সীমানা নির্ধারণ করে দেন । হারম প্রিন্সিপাল বলে, যতক্ষণ পর্যন্তনা অন্য একজন ব্যক্তি বা কমিউনিটির ক্ষতির সম্ভাবনা দাড়ায় ততক্ষণ পর্যন্ত একজন মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা বা ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাবেনা।

পরবর্তীতে মিলের হারম প্রিন্সিপালের কিছু দূর্বলতা বেরিয়ে আসে। কারণ দেখা যায় যে, কারো হারম করা বা ক্ষতি করার আগেই অন্য কোন ব্যক্তি বা কমিউনিটি ব্যক্তির আচরণের কারণে মানসিক ভাবে আঘাত প্রাপ্ত হচ্ছে এবং মানুষের মানসিক আঘাত অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক আঘাত থেকেও বড় হচ্ছে।
এই আইডিয়া থেকে ফ্রি সোসাইটিতে মিলের হারম প্রিন্সিপালটাকে এক্সপান্ড করা হইছে এবং

ফ্রিডম অফ স্পিচ এবং এক্সপ্রেশনের বাউনডারির সীমা হিসেবে যুক্ত হইছে নতুন একটা প্রিন্সিপাল যাকে বলা হচ্ছে অফেনস প্রিন্সিপাল যাকে আমি বাংলায় ভাব অনুবাদ করলে বলতে পারি, আঘাত এর নিয়ম।
http://www.mendeley.com/research/harm-principle-offense-principle-skokie-affair/
অফেনস প্রিন্সিপাল এর আইডিয়াটা হইলো ব্যক্তির কিছু আচরণ, কাজ,কথা যদি অন্য ব্যক্তিকে মানসিকভাবেও আহত করে, তবে তার বিরুধ্যে আইনের ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ থাকতে হবে । কিন্ত‍ু এও বলা হইছে, যেহেতু অফেনসিভ আচরণ, মানুষের ক্ষতি করার থেকে কম সিরিয়াস, তাই এর শাস্তির মাত্রা হারম প্রিন্সিপাল থেকে কম হওয়া উচিৎ।
কিন্ত‍ু এখন কোনটা অফেনসিভ, কোনটা অফেনসিভ না এটা কিন্ত‍ু সোস্যাল ভ্যালুজ এর উপর ডিপেন্ড করে এবং তার গুরুত্ব নির্ভর করে বক্তার উদ্দেশ্য, যে আঘাত প্রাপ্ত হইছে তার আঘাত এর মাত্রা, কত বড় জনগোষ্ঠীকে মানসিক আঘাত করা হইছে এবং সমাজের সামগ্রিক ইন্টারেস্ট এর উপর।
আরো দেখা গ্যেছে , কোন্ আচরণ বা কথা ক্ষতি বা মানসিক আঘাত হিসেবে বিবেচিত হবে সেটা সময়ের সাথে সাথে চেঞ্জ হয়। এই জন্য কিন্ত‍ু কনটেক্সটাকেও দেখতেবলা হইছে। এইটা একটা খুবই খুব্ই খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ব্লাসফেমি(রাসূল এর বিরুদ্ধে কটূক্তি) এবং ফ্রিডম অফ স্পিচ:
এইটাকে যদি আমরা ব্লাসফেমির কনসেপ্ট-এ ফালাই তাইলে দেখব, রাসূলের বিরুদ্ধে কটূক্তি ডাইরেক্টলি কারো হারম করেনা। কিন্ত‍ু অফেন্স প্রিন্সিপাল-এ এসে রাসুল এর বিরুদ্ধে কটুক্তি এবং কুৎসা কিন্ত‍ু একটা লিগাল প্রটেকশান দাবী করে এবং এই ব্লাসফেমি ধীরে ধীরে জমতে জমতে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে বিস্ফোরিত হয় এবং ৬ এপ্রিলের মতো একটা সামগ্রিক বিস্ফোরণ ঘটে ।
ফলে ক্লিয়ারলি অফেন্স প্রিন্সিপালের আইডিযা থেকে রাসূলের বিরুদ্ধে কটূক্তি করা, আইনের সীমানায় আসতে পারে, প্রাশ্চাত্বের গোঁড়া লিবার্টি এবং ফ্রিডম অফ স্পিচ এর তত্তের মধ্যেই। এইটা পিউর টেকনিক্যাল একটা কথা। এইখানে কোন বুগি জুগি নাই। তাত্তিক রা,ফ্রিডম কে এবসুলিট করতে বলেছেন এবং বলেই তারা বুঝেছেন এই স্বাধীনতা টা সবাই ঠিক মত ব্যবহার করবেনা, তাই তিনি এই স্বাধীনতার সীমানাটাও নির্ধারণ করে দিছেন।

অনেকে হয়তো অবাক হবেন। বলবেন, সারা রাত রামায়ণ পড়ে এখন বলছি সীতা কার বাপ। কিন্তু, ইন্ট্রেস্টিংলি মিল এর একজিওম অনুসারে ব্লগারদেরকে গ্রেপ্তার করাটা ভুল ছিল।কারণ,এই তত্ত অনুসারে তারা কোন লিগাল অফেন্স করে নাই।


ওয়েল এই জন্যেই ডিপ-এ যেতে হয়। মিল এর তত্ত দুটা সিম্পল কয়েককটা লাইন। কিন্ত‍ু, এর ইন্টাপ্রিটেশান অনেক অনেক গভীর।
একটু বলে নেই, যে ব্লগারদের গ্রেপ্তার করা হইছে, তাদের কাউকে ব্যক্তিগত ভাবে আমি চিনিনা এবং কারো লেখার সাথে পূর্ব পরিচিত নই। কোনো এক সময় আসিফ মহিউদ্দিন এর কিছু লেখা পড়েছি। কিন্ত‍ু, থিওলজি আমার ইন্টারেস্ট এর সাবজেক্ট না। ফলে তা কখনো স্টাডি করি নাই এবং রিলিজিয়াস ডিবেটগুলোতে কখনো আমি নিজেকে এংগেজ করি নাই। ফলে এই ব্লগাদের পার্সোনাল লেখার মেরিট বা ডিমেরিট সম্পর্কে মন্তব্য করার ব্যাপারে আমি যথেষ্ঠ জ্ঞান রাখিনা।

যাই হোক, দেখা যাক তাহলে কেন বলছি যদি কেউ অফেনসিভ কিছু লিখে লিবার্টির তত্ত অনুসারে যে ব্লগারদেরকে ধরা হইছে, তাদের অপরাধী বলা যাবেনা?

মিলের সেকেন্ড এক্সিয়মএ বলা হইছে, ইনডিভিজুয়াল যা ইচ্ছে তা করতে পারবে, এবং সেইটা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য না হলে, তা আইন এর মাধ্যমে বা সামাজিক ভাবে শাস্তিযোগ্য।

ধরে নিলাম একজন ব্লগার ব্লাসফেমাস কথা-বার্তা লিখছে, যেইটা আমাদের ইট পাথরের সমাজে সামাজিক ভাবে অগ্রহনযোগ্য এবং হারম প্রিন্সিপাল কিংবা অফেনস প্রিন্সিপাল অনুসারে শাস্তিযোগ্য।
এখন সামাজিক কর্তৃত্বের তত্ত অনুসারে আমাদের কিন্তু এইটাও দেখতে হবে, কোন সমাজে তার লিখাটা লিখসে? তারা কি, আমাদের ইট-পাথর এর সোসাল-এর স্পেসে এ লেখা গুলো লিখছে ?
এইটার উত্তর হইলো, না।তারা লিখছে, ভারচুয়াল ওয়ার্ল্ড এর জন্যে।
ভার্চুয়াল ওয়ার্লড, সম্পূর্ণ সেপারেট একটা সামাজিক প্রেক্ষাপট।সেইটার রিলেশনশিপ ডিফারেন্ট। সেইটারদাতা-গ্রহীতা ডিফারেন্ট। সেইটার গ্রহণযোগ্যতার সীমা এবং রাষ্ট্রের ভেতরে অবস্থিত সমাজের গ্রহনযোগ্যতা সীমা একই নয়।
ফলে, আমাদের ইট পাথরের সমাজের এর সামাজিক কর্তৃত্বে সমাজ যেইটা মেনে নেয়, ভার্চুয়াল ওয়ার্লড এর সামাজিক কর্তৃত্বে সেইটা কিন্তু এক্সেপ্টেবল হইতেও পারে। ফলে, মিলের তত্ত অনুসারে, আজ ব্লগারদের কোন লেখা যদি ভার্চুয়াল ওয়ার্লড-এ অফেনসিভ না হয়ে থাকে, তাকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভেতরের ইট-পাথরের সমাজের নিক্তিতে মাপাটা গ্রহণযোগ্য নয়।
কারণ, আবার বলছি। ভার্চুয়াল ওয়ার্লড-এ কি গ্রহণযোগ্য কি গ্রহণযোগ্য না, তার এক্সেপটিবিলিটি বাংলাদেশ-এর সামাজিক স্পেস থেকে ডিফারেন্ট। তাই, সামাজিক কর্তৃত্বের তত্ত অনুসারে , একজন ব্যক্তি কিছু একটা লিখে অপরাধ করছে কি করে নাই তা সে যেই জগতে লিখেছে সেই ভাচুয়াল জগতের গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে দেখতে হবে।
কিন্ত‍ু আবার, ভার্চুয়াল স্পেসেও যদি সেইটা গ্রহণযোগ্য না হয়ে থাকে এবং হারম বা অফেন্স প্রিন্সিপাল অনুসারে সেই স্পেসের মানুষদের জন্যে সেটা গ্রহন যোগ্য না হয়ে থাকে, একজন ব্লগার তার ব্লাসফেমাস লেখার কারণে শাস্তি পাওয়ার দাবী রাখেন । লিবারটি মানলে এইটা মানতে হবে।

এইখানে ক্রিটিক্যাল একটাবুঝার বিষয় হইলো। নেট-এর ব্লাসফিমাস লেখাগুলো মূলত ২০০৯ বা ১০ এর পূর্বের। যখন ফেসবুক মেইনস্ট্রিম হয় নাই।

তখন গুটি কয়েক মানুষ ব্লগ-এ বিচরণ করতো। এই সময় নেট ছিল একটা আইসোলেটেড জায়গা। একটা লুনী মানিয়্যাক, কীবোর্ড এর পেছনে বসে যা চায় তা লিখতে পারতো।
নেট ফানডামেন্টালি পরিবর্তন হয় , যখন ফেসবুক আসলো। তখন নেটের বিচরণ হয়ে গেল সোসাল। মানুষ ঘুমাইতে গেলেও স্ট্যাটাস দিয়া যায় , আমি ঘুমাইতে গেলাম। সবকিছু হয়ে গেল পাবলিক । আমাদের লাইফ হয়ে গেল পাবলিক প্রপার্টি।

এখন কেউ একটা মুভি দেখলেও সারা দুনিয়ারে জানান দেয় ,দেখ, আমি আতেল, আমি এই মুভিটা দেখছি। ফলে, নেটের স্পেসটার অনেক এক্সপানশন হইছে গত তিন বছরে। নেট যখন সোসাল হয়ে পাবলিক স্পেস হয়ে গেল তারপর আমার জানা মতে খুবই সীমিত পরিমাণ লোকজন তখন ব্লাসফেমাস লেখা লেখি করছে।

পয়েন্টটা কি ? পয়েন্ট টা এত খন যে বলছি তাই ? একজন যে, হারম বা অফেন্স প্রিনসিপ্যাল ভাঙ্গছে কিনা তা যাচাই করতে তার সোসাল স্পেসটা কনসিডার করতে হবে।

এইটা কনসিডার করলে দেখবেন, হাতে গোনা দু ইএকজন এই ধরনের লেখা লেখি করে। এমন কি আসিফ মহিউদ্দিন আমার জানা মতে ২০০৯ এর পরে আর লেখেই নাই। কারণ তার স্পেসের এক্সপানশন হইছে। সে দেখছে, এই স্পেসে সে যা আগে লিখছে , তা দেশের সার্বজনীন সামাজিক স্পেসে বা সোসাল মিডিয়া বা ফেসবুকের স্পেসে গ্রহণযোগ্য না।

এবং সাথে আর একটা বিষয় কন্সিডার করতে হবে। সেইটা হল - যেহেতু কোনটা অফেনসিভ, কোনটা অফেনসিভ না, সেইটা এক এক জনের কাছে এক এক রকম সেইজন্যে, কোন টা ঠিক কোন ঠিক না সেইটাকে আইনের আয়তায় আনতে হইলে সমাজকে এবং ইভেনচুয়ালি রাষ্ট্রকে সেইটা আগে থেকে ডিফাইন করতে হয়।


কিন্ত‍ু আমাদেরসমাজ/রাষ্ট্র, এই ডেফিনিশনটা দেয় নাই এবং এখনো দিচ্ছেনা। ফ্রি স্পিচের নামে, এই ডেফিনিশন ক্রিয়েট করার পথে আর্গুমেন্ট সৃষ্টি করা হচ্ছে, যেইটা ফ্রি স্পিচেরই পরিপন্থী।
ফলে, আপনি যেহেতু বাউন্ডারি টা ক্রিয়েট করেন নাই, তখন আপনি এক জন রে ধরতে পারবেন না এবং ধরে জেল এ ঢোকাতে পারবেন না। কোনটা অফেন্স এবং কোনটা অন্যায় সেইটা আপনাকে আগে ডিফাইন করতে হবে। নইলে, আপনি কিসের ভিত্তি কোন কাজ টারে অপরাধ বলবেন ??


আইন টা ভঙ্গ করেছে মুলত আমার দেশ
পিওরলি ওয়ের্স্টান লিবারটিয়ান কনসেপ্ট এ, আমার দেশ কিন্ত‍ু প্রচন্ড অপরাধী হয়ে দাঁড়ায়। কারণ ক্লিয়ারলি, নেটের কোনায় কাচায় পরে থাকা, কমিউনিটি তে অগ্রহণযোগ্য এবং মার্জিনালাইজড ব্যক্তিদের লেখাগুলোকে, সামনে প্রথম পাতায় বড় বড় লাল কালি দিয়ে ছেপে, দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে খেপিয়ে দেয়া ক্লিয়ারলি হারম প্রিন্সিপালের ভায়লেশান হবে।

কারণ লেখাগুলো পড়লে, লেখক হারম এর সম্মুখীন হতে পারে এবং এই লেখাগুলো সামাজিক অস্থিরতা ছড়িয়ে দিয়ে, সমাজকে ডিস্টাবলাইজডকরতে পারে এবং পরবর্তীতে তার থেকে বৃহৎ দাঙ্গা সহ আরো অনেক ক্ষতি হতে পারে যার ফলে অস্থিরতা থেকে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এই গুলো ডাইরক্টলি হারম প্রিন্সিপাল ভায়োলেশন ।
তারা ভারচুয়াল সমাজের চিপা থেকে একটা আইটেম তুলে এনে, একটা পাবলিক সমাজে নিয়ে আসছে, যেইগুলো কোন মতেই আমাদের ইট পাথরের সোসাইটিতে গ্রহন যোগ্য না। আমার দেশ গ্রুপ তখন খুব এই বড় একটা অন্যায় এর জন্যে দন্ডিত হওয়ার দাবী রাখে। কারণ তারা একটা জনগোষ্ঠীকে উসকানি দিচ্ছে, সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।

আজ তাই আইন প্রয়োজন। কিন্তু প্রবলেমটা আরো ডিপ।

ঠিক এই পারস্পেকটিভ থেকেই। আজ নেট ব্যবহার কারীদের জন্যেই রাসূলকে কটূক্তি শাস্তি যোগ্য অপরাধ করে, একটা আইন থাকতে পারে। কারণ, ফেসবুক আসার পর নেটের স্পেসটা সামাজিক স্পেসের সাথে মিশে গেছে। এখন আপনি যা ইচ্ছে তাই লিখলে অন্যদের অফেন্স হয় এবং ক্ষেত্রে বিশেষে হারম ও হয়।
আমার মনে হয় প্রবলেমটা আরো ডিপ।
বেসিক্যালি গত ১৫/২০ বছরে ডিসের আগমনের পর আমরা একটা আনপ্রিসিডেনটেড সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মুখে পড়ছি। আমাদের সমাজে ২০০/৩০০ বছরে একটা টলারেনসের চর্চা করে কী একসেপট্যাবল কি আনএকসেপট্যাবল সেই মাত্রাটা দাড়াইছে। কিন্ত‍ু হুট করে, এখন টিভি দেখার সময় ক্যাটরিনা, মালাইকা আারোরার জাওয়ানি চলে আসতাছে, বডি স্প্রে এড এর সময় গ্রুপ সেক্স এর প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে । এইটা আমরা কোন ডিবেট বাদ দিয়ে ঢুকতে দিছি।
এরপর আসলো ইন্টারনেট। এই খানে একটা ফেইক নিক নিয়া যেখানে সেখানে যা ইছে তা বলা যায়। কারো পছন্দ হইলনা, সে রাসূলরে নিয়ে, নেটের ইহুদি এবং খ্রিস্টান ক্রুসেড প্রপাগান্ডা পেজ এর রেফারেন্স কপি কইরা যা ইচ্ছা বলা শুরু করলো।

এইটা আমাদের ফ্রিডম অফ স্পিচের লিমিটটাকে টেস্ট করছে।
নাউ ওয়াট ? উই হ্যাভ টু কনফ্রন্ট দিস। ডিনায়েল কোন অপশন না, lডাকিং কোন অপশন না, কল্লা কাটা কোন অপশন না, ব্লগার দের গ্রেফতার কোন অপশন না, ব্যেক্তি স্বাধীনতা এবং ফ্রিডম অফ স্পিচ কে লিমিট করা তো কোন মতেই অপশন না।
তাই, এক দিকে যেমন আমাদের ফ্রিডম অফ স্পিচকে প্রটেস্ট করতে হবে, আরেক দিক থেকে আমাদের ফ্রিডম অফ স্পিচের সীমানা নির্ধারণ করে দিতে হবে।


আমাদের সোসাইটির থিংকাররা যখন পশ্চিমা বিশ্বের ভ্যালুজ গুলো ডাইরেক্টলি ইমপোরট করেন এবং সেইটারে ফ্রিডম অফ স্পিচ বা ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশান বলে চালিয়ে দেন। তখন কিন্ত‍ু তারা ফ্রিডম অফ স্পিচের মূল টেনেন্ট টাকেই বিরোধীতা করেন, না বুইঝা ।

কারণ, তারা ওইটা করার সময়, সামাজিক কর্তৃত্বের তত্ত অনুসারে সোসাল কনটেক্সটাকে উপেক্ষা করেন, এবং না বুঝে পশ্চিমা সোশিয়াল কন্টেক্সট টা আমাদের মত দেশে প্রয়োগ করতে জোরাজুরি করেন এবং হারম প্রিন্সিপাল বা অফেন্স প্রিন্সিপাল সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞতা প্রকাশ করেন ।
ফলে যেইটা হয়, ওয়েস্টার্ন ভ্যালুজের ডাইরেক্ট প্রয়োগে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।

মিলের এক্সিয়ম দুইটার জনপ্রিয়তার অন্যতম একটা কারণ এই গুলো প্রাকৃতিক তত্ত । এইগুলো কোন আবিষ্কারকের উদ্ভাবনের উপর ভিত্তিতে সোসাল এক্সপেরিমেন্টনা। এইগুলো, সোসাইটিতে মানুষের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে এক্সপ্লেইন করে মাত্র। তাই এইসব আইন আমেরিকাতে যেমন খাটে, বাংলাদেশের মতো আবদ্ধ দেশেও খাটে।

এই সব ন্যাচারাল ল কে বুঝতে পারার ব্যার্থতা এবং প্রাশ্চাত্ত থেকে ডাইরেক্টলি ভ্যালুজ ইমপোর্ট করে এবং ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকে বিনা বাধায় ঢুকতে দিয়ে যুগে যুগে গড়ে ওঠা ভ্যালু স্টাকচার ভেঙ্গে দেয়াটা, আমাদের জন্যে যে কি ক্ষতি করছে এবং কী পরিমাণ অশান্তি এবং অস্থিরতার জন্ম দিছে তার চাক্ষুষ প্রমাণ ৬ এপ্রিলের বিস্ফোরণ।

আজকে তাই রাসূলকে নিয়ে কটূক্তি করাতে আইন সৃষ্টি করার প্রয়োজন খুব ক্লিয়ার।কিন্তু অবশ্যিই সেইটা হেফাজতের দাবী অনুসারে নয় এবং আমাদের প্রয়োজন থেকেই।

হেফাযতীরাযে বলছে ,আল্লাহ খোদা কে নিয়ে কটূক্তি করলে, তার শাস্তি মৃত্যুদন্ড দিতে হবে, সেইটা স্টুয়ার্ট মিলের তত্ত বাদ দিলাম ইভেন আমাদের শরিয়া পরিভাষায় গ্রহণযোগ্য নয়।

দ্বিতীয় পর্বে যা থাকবে
ইসলামে আল কোরানে রাসূলকে নিয়ে কটূক্তি কারিদের উদ্দেশ্যে কী বলে। এই বিষয়ে ডিটেইল আলোচনা আমি দ্বিতীয় পর্বে করব। আমরা দেখব, আল-কোরআন ও হাদিসের ডাইরেক্ট রেফারেন্স অনুসারে ব্লাসফেমি নিয়ে কি বলা হইছে এবং হেফাজতের দাবীর সাথে তা কতটা সাংঘর্ষিক।

আরো আলোচনা করব, রাসূলকে নিয়ে কটূক্তি করে আইন সৃষ্টির সাথে সেকুলারিজম এর সম্পর্ক কতটুকু আছে কত টুকু নাই। যারা গেল গেল বলে রব তুলছেন, তাদের জন্যে থাকবে ২০০৭ সালে, জার্মানি তে হলকাস্ট ডিনায়াল এর কারনে এক ব্যেক্তি কে, ৫ বছরের জেল দেয়ার একটা রেফারেন্স। এবং ব্লাস্ফেমি আইন এর অপ প্রয়োগ নিয়ে পাকিস্তানে, মালাহি নাম এর একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধি ১৪ বছরের ক্রিশ্চিয়ান কিশোরীর জেল এ যাওয়ার পর বিশ্ব ব্যাপি নিন্দা হওয়ার বিবরণ।আমি আরো আলোচনা করবো ইকুয়ালিটির সাথে রাসূলকে নিয়ে স্পেসিয়াল আইন জারির একটা সত্যিকার এর বিরোধ আছে এবং এই দ্বন্দ্ব টা নিয়ে দ্বিত্বীয় কিস্তীতে বিশদ আলোচনা থাকবে।


সেইটা প্রায় ৪০০০ ওয়ার্ড এর আলোচনা তো, চা বিস্কিট রেডি রাইখেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:৩৮
৯০টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×