somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রোতার মৃত্যু। পাঠকের মৃত্যু। দর্শকের মৃত্যু।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ৯:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট বেলায় পাঠ্য বইয়ে একটা গল্প ছিল। নাম পাঠকের মৃত্যু। গল্পটা মনে হয় এখনও আছে। এক লোক রেল স্টেশনে বসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষাকালে পাশের লোকের কাছে একটা বই পেল। ট্রেন আসতে তখনও ২ ঘন্টার মত বাকি। বইটা খুবই দারুন। রুদ্ধশ্বাসে পড়ার পর যখন চার ভাগের এক ভাগ বাকি তখন দেখা গেল বাকি পৃষ্ঠা গুলো নেই। বেশ আপচুসের ব্যাপার। গল্পটা পরে করন জোহরের সিনেমা অথবা বালাজী টেলিফিল্মসের সিরিয়ালের মত ১০ বছর পরের ঘটনায় চলে গেল। ১০ বছর পর কোন এক বিয়ে বাড়িতে সেই বইটা লোকটা আবার খুঁজে পেল। শুধুমাত্র বইটা পড়ার জন্য বিয়ে বাড়ি রাত্রি যাপনে মনস্থির হল। যখন রাতে বেশ আয়োজন করে বইটা গোড়া থেকে পড়া শুরু করল হটাৎ দেখা গেল বইটি তার ভালই লাগছেনা। একেবারে রদ্দি মাল।

ঠিক এই ব্যাপার গুলা আমাদের মাঝেও হয়। আমি এটা আবিষ্কার করলাম কয়েকদিন আগে। ৩ বছর আগে সম্ভবত রোজার ঈদের আগে আগে ইফতারি কিনতে গেলাম। দেখি একটা গান হচ্ছে। সিডি এর দোকানে। শুনতে খারাপ লাগলোনা। জিজ্ঞেস করলাম দোকানদারকে এটা কার গান? বলে বালামের। কোন বালাম? ওয়ারফেজ এর? সে এরকম গান আবার কবে গাওয়া শুরু করল! বাসায় এসে ডাউনলোড করলাম। নাহ শুনতে খুব খারাপ লাগলোনা। কিন্তু এরপর বেশ কিছুদিন পর কিছু সমস্যা হয়েছে। কয়েক মাস আগে ঘুম আসছিল না! কি করা যায়? গান ছাড়লাম- বালাম বলে, "এক মুঠো রোদ্দুর হাতেএএএএএএএএ"---- আর সাথে সাথে আমার ঘুম চলে আসল। বুঝলাম, শ্রোতার মৃত্যু হয়েছে। গানটাকে এখন অন্যভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে। তবে সেটাও খুব বেশিদিন চালানো গেলনা। কবে জানি ঘুমানোর জন্য বালামের গানটা আবার ছাড়লাম। লুকোচুরি খেলোনা, দিয়োনা যাতনা, বলার পর আমার ঘুম আসা উচিত ছিল!! কিন্তু না!! গায়ে চুলকানি শুরু হল। শ্রোতার এরকম মৃত্যু হতে পারে জানা ছিলনা। সেই চুলকানি থেকে বাঁচার জন্য গোসল করতে হল। লাইফবয় গোল্ড সাবান দিয়ে। দেখা যাচ্ছে বালামের গান শুনে যে চুলকানিটা আমার হচ্ছে সেটা লাক্স সাবান দিয়ে পোষাচ্ছে না। লাক্স সাবান বিউটি আনে। চুলিকানী খাউজানি দূর করেনা। আফসুস। বেরাট আফসুস। এমনিতে জর্জ মাইকেলের কেয়ার লেস হুইস্পার ছোটবেলায় চাইনিজ রেস্টুরেন্টে গেলেই শোনা হত। ঐখানে খালি বাঁজাত আর ওয়েটার এসে জিজ্ঞেস করত কি লাগবে ফানটা না পেপসি, কর্ন স্যুপ না থাই স্যুপ! ঐটা এখন বাসায় শুনলেই মনে হয় যেন চাইনিজ রেস্টুরেন্টে আছি। কিছু গান থাকেই চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এর জন্য। থাই স্যুপ খাওয়ার সাথে সাথে শোনার জন্য।





আমার ধারনা সবার ক্ষেত্রেই এই ব্যাপারটা ঘটে। হুমায়ুন আহমেদ এর বইয়ের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ঘটছে। ক্লাস সিক্স সেভেনে যখন পড়তাম তখন হুমায়ুন আহমেদ ছাড়া কিছুই বুঝতাম না। সিক্স সেভেন না, ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্তই ব্যাপারটা দারুন পর্যায়ে ছিল। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হুমায়ুন আহমেদের দোষ। মানুষ নিজের কোয়ালিটি কতটা নিচে নামাতে পারে এটা তাকে না দেখলে বোঝা যেত না। বাংলাদেশের ইতিহাসে কেউ কোনোদিন আরেকটা “কোথাও কেউ নেই” অথবা “বহুব্রীহি" বানাতে পারবেনা। বাংলাদেশের ইতিহাসে আশা করি কেউ কোনোদিন “হলুদ হিমু কালো RAB” টাইপ কিছু লেখার চেষ্টা করবেনা। একটা জিনিষ আমি বুঝলাম না সারা জীবন জেনে আসছি বাদল হল হিমুর ফুপাতো ভাই। হিমুর ফুপা মদ্যপ অবস্থায় আবল তাবল কথা বলেন। আর ফুপু চেঁচামেচি করেন। এর বাইরে মাজেদা খালা, রেশমা খালারা থাকেন। কিন্তু কোন জায়গায় জানি দেখলাম বাদল হয়ে গেছে খালাতো ভাই। সে যাই হোক, হিমুর ক্ষেত্রে পাঠকের মৃত্যু ঘটেছে কারন যখন একটু বড় হলাম তখন ফ্যান্টাসি আর বাস্তবের পার্থক্য ধরতে শিখলাম। হিমু যা বলে তাই ঘটে। হিমু গালি দিলেও মেয়েরা ইম্প্রেস হয়। একগাদা লোকজন প্রভাবিত হয় বাস্তব ব্যাপারটা তা না। হিমু খালি পায়ে হেটে যায় পকেটে টাকা থাকেনা দোকানে গিয়ে বলে রুপাকে ফোন দিব দোকানদার দৌড়ে এসে টেলিফোন খুলে দেয়। হিমু বলে আগামী দু’একদিনের মধ্যে ভুমিকম্প হবে ভুমিকম্প হয়। হিমু বলে ওসি সাহেবের বউ অসুস্থ দেখা যায় সে ঠিকি অসুস্থ। এইগুলা একটা বয়সের পর আর ভালো লাগেনা কারন তখন পাঠকের মৃত্যু ঘটে। তবে তারপরেও হিমুর দ্বিতীয় প্রহর, রুপালি রাত্রি, পারাপার যে মাপের হাইপ তুলে গিয়েছিল বর্তমান গুলা পড়ার পর মনে কষ্ট লাগে। শেষ যে হিমুটা পড়া শুরু করলাম সেখানের বর্ননায় কার জানি পকেট থেকে চাকু খুলে যায় আর তার অন্ডকোষ (ভাল শব্দ ব্যাবহার করলাম) খুলে পড়ে যায় এই জাতীয় কথা বার্তা লেখা। পাঠকের মৃত্যু ঘটতে বাধ্য। তবে তাই বলে হুমায়ুন আহমেদের মাস্টার পিস গুলার কোন তুলনা হয়না। মিডিয়া জগতে তার দশ ভাগের এক ভাগ ট্যালেন্ট এর লোকজন (নির্মাতা) ও এখন নেই।





এবার আশা যাক দর্শকের মৃত্যু।অনেকেই অবশ্য হেসে উঠবেন। ২০০০ সালের জানুয়ারী মাসের ঘটনা। কহনা পেয়ার হে মুক্তি পেল বলিউডে। সবার মুখে একই নাম , হৃত্বিক রোশান, হৃত্বিক রোশান। কহনা পেয়ার হে ছাড়া কেউ কিছু বুঝেনা। সেটার একটা কারন ছিল অবশ্য। মানুষ তখন মোটামুটি শাহরুখ খানকে দেখতে দেখতে বিরক্ত। ফর এ চেঞ্জ হৃত্বিক রোশান এর আবির্ভাব। ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশেও তখন হৃত্বিক রোশানের ক্রেজ। তার এক পাল কা জিনা গান সব জায়গায় বাজিয়ে রাখা হয়। ছোট ছেলেপেলে সেরকম নাচ শিখে। তখন ডিভিডি ছিলনা। সিডিতে তিনটা পার্ট হয়ে পাওয়া যেত ভিসিডি। সেই জিনিষ ২২০ টাকা দিয়ে কিনে আনলাম। মুগ্ধ হয়ে দেখলাম। কহোনা পেয়ার হেএএএএএএএএএএ। হৃত্বিক রোশান। হৃত্বিক রোশান। পরবর্তিতে হৃত্বিক রোশানের অবস্থা অনেকটা আমাদের আশরাফুলের মত হয়ে গেল। ওভার কনফিডেন্ট হলে যা হয় আর কি। কোন রোলে তাকে মানাবে সে সম্পর্কে তার কোন ধারনা না থাকায় এই অবস্থা। সবাই তো আমির খান হয় না যে নিজের প্রিপারেশনটা নিজেই নিতে পারবে। হৃত্বিক রোশান হল ডিরেক্টর অভিনেতা। ডিরেক্টর ভাল হলেই তার কাছ থেকে কাজ আদায় করে নিতে পারবে। সেই প্রমান সে দিয়েছে। লাকস (ফারহান আখতারের, দিল চাহতা হ্যায় এর পরিচালক) সিনেমাটা দেখার পর আমার তাই মনে হয়েছে। যাই হোক কয়েকদিন আগে সনি টিভিতে কহোনা পেয়ার হে দেখালো। সি সি সি । কি সিনেমা এইডা!! ফাজলামির জায়গা পায় না। একটা থাকে নিউজিল্যান্ড একটা ইন্ডিয়া দুইটার চেহারা আবার একরকম। নিউজিল্যান্ড এ যে থাকে তার আর কাজ কাম নাই জীবনে ইন্ডিয়া আসেনায় এসে পুলিশ তার পেছন পেছন ঘুরতেসে আর সে পালায় বেড়াইতেসে। নাহ আর দেখা যাচ্ছেনা। দর্শকেরও মৃত্যু হয়ে গেল।

তবে হা কিছু কিছু জায়গায় মৃত্যু হয় নায়। এই যেমন টিনটিন। এই জিনিশ ২০ বছর পরে পড়লেও আমার মনে হয়না মজা এতটুকু কম পাওয়া যাবে।তাই এখন "আমেরিকায় টিনটিন" পড়তে বসব।




সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১:৫৭
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×