somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৩৫৫ নম্বর বাড়ি ও বিজয় দিবস।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ৮:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এলিফ্যান্ট রোডের ইষ্টার্ণ মল্লিকার উল্টাদিকে গলির শেষ প্রান্তে, বাসা নম্বর ৩৫৫। এই ৩৫৫ নম্বরটা আমাদের বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে গভীরভাবে জড়িত। গলির মোড়ে ঢুকছি আর ভাবছি দূর এ আবার কোথায় আসলাম!! এখানে কি জাহানারা ইমাম মিউজিয়াম থাকতে পারে নাকি? আবার পরবর্তিতে মনে পড়ল না না এখানেই তো আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে রুমী,নামে এক অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা ধরা পড়েছিল। কত শুনেছি তাদের কাহিনি কত পড়েছি একাত্তরের দিনগুলো। ৩৫৫ নম্বর বাড়িটি এখন একটা এপার্টমেন্ট। শহীদ জননী পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য জামী ভাইয়ের সেখানে দুটো ফ্লাট আছে। একদিন তিনি রুবিনা আপা নামক এক বিশাল হৃদয়ের মহিলাকে বললেন মায়ের জিনিষগুলো গুছিয়ে দিতে। রুবিনা আপা তখনও জানতেননা কি হতে যাচ্ছে। আমেরিকা থেকে জামী ভাই জানালেন যাদুঘর হবে। মুক্তিযুদ্ধে হারানো বাবা ও ভাইয়ের যাদুঘর। মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকারের চেতনা নিয়ে সংগ্রাম করা মায়ের স্মৃতি।

যেদিন থেকে রুমী'র কথা জানি সেদিন থেকে খালি জানতেই চাই। গতকাল বিজয় দিবসে আরও জানলাম। জানলাম রুমীর আপন ভাই জামী ভাইয়ের কাছে। দেখলাম রুমীর ব্যবহৃত সব কিছু। সব সময় একটা কথা শুনি মুক্তিযুদ্ধ করেছিল এ দেশের গরীব শ্রেণী। কৃষক, শ্রমিকরা। জাহানারা ইমাম, শরীফ ইমাম (রুমী'র বাবা) দের মত আভিজাত্ পরিবারের ত্যাগের কথা শোনার পর সে ধারনা থেকে বেরিয়ে আসতে হয়। ক্র্যাক প্লাটুনের জীবিত মুক্তিযোদ্ধারা গতকাল ছিলেন। ছিলেন একাত্তরে পাকিস্তান ক্রিকেট দলে প্রায় সুযোগ পেয়ে যাওয়া রকিবুল হাসান। একাত্তরে এই দলের প্রতিটা মুক্তিযোদ্ধাদের মা ছিলেন তিনি। রুমীকে হারানোর পর তাদেরও উৎসাহ দিয়ে যেতেন। কাল আরেকটা ব্যাপার জানলাম মুক্তিযোদ্ধা হ্যারিসের কাছ থেকে। এই দলের নাম কিন্তু ক্র্যাক প্লাটুন ছিলনা । এই নামকরন পরে হয় তাদের অবিশ্বাস্য কান্ডকারখানার কারনে। ঢাকা শহরে যুদ্ধের মাঝকালীন সময়ে পাকিস্তান বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধ করা আর সুইসাইড করা নাকি একই কথা। তার মাঝে ধানমন্ডির ১৮ নং রোড এটাকের সময় রুমি যেভাবে হাতের বন্দুক ঘুরিয়ে জীপের পিছনটা ভেঙ্গে খানসেনাদের মেরেছিল তা নাকি সিনেমাকেও হার মানাবে। এই ছি ছি সিনেমার উদাহরন এখানে দিলাম কেন!! কাল আরেকটা ব্যাপার জানলাম। কেন রুমীকে নিয়ে এখনও সিনেমা হয়নি। সেখানে ছিলনা জামী ভাইয়ের অনুমতি।



(চেক জামা পড়া (নীল জিন্স) জাহানারা ইমামের ছোট ছেলে রুমির ছোট ভাই জামী ভাই। আর এখানে সবাই ক্র্যাক প্লাটুনের জীবিত সদস্যরা। জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার রকিবুল হাসানও আছেন।)

জামী ভাই আমাকে বললেন, আই এম গ্রেটফুল টু ইউ পিপল। গ্রেট ফুল!! আমাদের উপর গ্রেটফুল!! দেশ স্বাধীন করার জন্য যিনি তার একমাত্র ভাইকে, তার বাবাকে হারিয়েছেন তিনি আমার উপর গ্রেটফুল!! জামী ভাই, দা হোল কান্ট্রি ইজ গ্রেটফুল টু ইউর ফ্যামিলি। এখনও মনে পড়ে জাহানারা ইমাম শহীদ জননীর সেই বাক্য। কথায় না পেরে রুমীকে বলা, যা দিলাম তোকে দেশের জন্য কোরবানী করে। কোন রুমীকে? যার ১৯৭১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর কথা ছিল আমেরিকার ইলিনয় ইন্সটিউট অফ টেকনোলজি'তে ক্লাস শুরু করার, সেই ৪ সেপ্টেম্বর (সম্ভবত, জামী ভাই অবশ্য নিশ্চিত না তাই কখনই তা পালন করেন না)। যার জন্মের সময় একজন বলেছিল ২০ বছর পর এই ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে। তখন তার মা বলেছিল, ইঞ্জিনিয়ার না হলেও কিছু একটা হবে। কিছু একটা হয়েছিল। দেশের জন্য জান বিলিয়ে দিয়ে হয়েছেন বীর বিক্রম রুমী।

রুমী যখন আটক ছিল তখন তার দৃঢ়তা দেখে পাকিস্তানি অফিসার বলেছিল, তাকে যদি পাকিস্তানি ধরি, সে হচ্ছে একটা জুয়েল। এরকম খাঁটি হীরাকে মারতে আমার কষ্ট হবে। দেখি তাকে না মেরে থাকা যায় কিনা। তার মানে রুমীকে বাঁচতে হলে পাকিস্তানী হতে হবে। এত ঠুনকো ধারনা তারা আমাদের রুমী সম্পর্কে পেল কোথা থেকে কে জানে।

যাদুঘরে ছবি তোলার অনুমতি নেই। তারপরেও দু'একটা তুলেছি যা এখন আপলোড করার মত অবস্থায় নেই। দেশ কতটুকু এগিয়েছে এই প্রশ্নে জামী ভাই বিরক্ত হন। বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে স্বাধীন হওয়ার জন্য। আমরা যে বাংলাদেশী সেটা প্রতিষ্ঠার জন্য। স্বাধীনতা যুদ্ধ দেশ এগিয়ে নেওয়ার জন্য না। আর হ্যাঁ, আমার ভাই সম্পর্কে বই আছে দেখে সবাই তাকে জানে, যেসব মুক্তিযোদ্ধাদের কথা যখনি যে জানবে তার উচিত প্রকাশ করা, এগুলো সব সরকারের দায়িত্ব না, দেশের মানুষদেরও দায়িত্ব। জামী ভাইয়ের বুকের কষ্ট বের হয়ে আসল এরপরেই, মায়ের মৃত্যু দিবস ২৬ শে জুন, বাবার ১৩ ডিসেম্বর, ভাইয়ারটা জানিনা। তাইতো রুমী'র ছবির পাশে লেখা শাফী ইমাম রুমী (জন্ম ২৯ মার্চ ১৯৫১-একাত্তরে শহীদ)। জামী ভাই আরেকটা কথা জিজ্ঞেস করলেন, মায়ের কবর জিয়ারত করতে গিয়ে দেখলাম এক লোকের পাশে শহীদ লেখা কিন্তু তার মৃত্যু ১৯৯৬ সালে। কি জানি , এই প্রশ্নের জবাব কিভাবে দিব?



( ছবির এটাই সেই ৩৫৫ নম্বর বাড়ি যেখান থেকে রুমীকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার পিছনে ক্র্যাক প্লাটুনের সবার ছবি। শহীদ রমী, শহীদ বদি, শহীদ আজাদ (আনিসুল হকের ‘মা’ উপন্যাসের আজাদ।)। পিছনে শহীদ জননীর ছবি। আর বড় করে ছবিটা ১৯৪৮ সালে জাহানারা ইমাম ও শরীফ ইমামের বিয়ের ছবি।)

মুক্তিযোদ্ধা কাইয়ুম ছিলেন, তিনি বললেন, ১৯৭১ সালের পর সরকারী প্রথম গ্যাজেটে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৮২,০০০। এখন নাকি তা বেড়ে হয়েছে ৩ লাখ। এই শুভঙ্করের ফাঁকির সাথে না প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা মিলাতে পারেন। না সচেতন নাগরিকেরা।

আসার আগে একবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারর জন্য প্রস্তুতকৃত শহীদ জননীর পোস্টারগুলো দেখলাম। কোনভাবে কি এই পোস্টারগুলো এখন কাজে লাগানো যায়?

শহীদ জননী জাহানারা ইমাম মেমোরিয়াল মিউজিয়ামের যাওয়ার দিন হল শনিবার। ঠিকানা ৩৫৫ এলিফ্যান্ট রোড। ইষ্টার্ন মল্লিকা শপিং কমপ্লেক্সে বিপরীতে যে গলিটা আছে তার শেষ প্রান্তে। কোনরকম সরকারী অনুদান বা সাহায্য ছাড়াই চলছে। একাত্তরের দিন গুলি পড়ে যারা শিহরিত হয়েছেন সেই বদি, রুমী, আজাদকে দেখতে হলে ঘুরে আসুন।





সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১:১৩
২২টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিরিতের সংস্কৃতিওয়ালা তুমি মুলা’র দিনে আইলা না

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৬


---- আমাদের দেশে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সমুন্নয়ন তলানিতে। তেমন কোন সংস্কৃতিবান নেই, শিরদাঁড়া সোজা তেমন মানুষ নেই। সংস্কৃতির বড় দান হলো ভয়শূন্য ও বিশুদ্ধ আত্মা। যিনি মানবের স্খলনে, যেকোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×