পৃথিবীর মাঝে অনেক লোক রয়েছে যারা ধর্ম বিশ্বাস করেন না , যা দেখেনা তার বিশ্বাস ও করে না, আবার কেউ কেউ কোন দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য কোন কিছুই বিশ্বাস করেনা কিন্ত এমন কোন লোক খুজে পাওয়া যাবেনা যে কিনা মৃত্যুকে অস্বীকার করে। যদিও মুত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে অনেকের সংশয় বা সন্দেহ আছে কিন্ত মৃত্যু হবেনা এমন লোক খুজে পাওয়া দুস্কর । পৃথীবীর ইতিহাসের এমন কোন রাজা-প্রজা, ধনী-দরিদ্র, সুফী- সাদক, আস্তিক- নাস্তিক, নর-নারী নাই যে মৃত্যুকে জয় করতে পেরেছে। এখন প্রশ্ন হলো মুত্যু কি? এটা কি কোন প্রাণী? আধৌ কি এর আলাদা সত্তা আছে? মালাকুল মাউত কে? সে কি সবার কাছে রূহ কবজ করার জন্য আসে? নাকি তার সহকারী আছে?
মৃত্যু শব্দটিতে আরবীতে মওত বলে। আল্লাহ তাআলা এটাকে সৃষ্টি করার পর শত আবরনের মাঝে গোপন করে রাখেন। এটার আকৃতি আকাশ এবং ভূমন্ডল এর ছেয়ে বিশাল। অত:পর এটাকে সত্তরটি শৃংখলে আবদ্ধ করেন । যার একটি শৃংখল এক হাজার বছরের রাস্তার সমান। আদম আ: এর সৃষ্টির পূর্বে ফেরেশ্তারা মৃত্যু সম্পর্কে অবগত ছিলনা যখন তিনি আদম আ: কে সৃষ্টি করলেন তখন মৃত্যুকে ঢেকে রাখা আবরণগুলো ছিন্ন করে দিলেন এবং ফেরেশ্তাদেরকে উহার দিকে তাকাতে বললেন , যখনই ফেরেশ্তারা মৃত্যুকে দেখল সকলে অচেতন হয়ে পড়ে গেল এবং ঐ অবস্থায় দুই হাজার বছর থাকল। যখনই তাদের হুশ আসল তখন তারা বলল: ইয়া আল্লাহ এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ আপনি কি কিছূ তৈরি করেছন? তখন আল্লাহ বললেন আমিই উহার চেয়ে মহিয়ান এবং গরিয়ান । সুতরাং বুঝা গেল মুত্যু একটা প্রাণী। যাকে বহন করে আছে আযরাইল।
এখন প্রশ্ন হল আযরাইলকে কেন তার জিম্মায় দেওয়া হল এবং সে কিভাবে এটাকে নিয়ন্ত্রন করে?
হাদীসে বর্নিত আছে আল্লাহ যখন আদম আ: কে সুষ্টি করতে ইচ্ছে করলেন তখন ফেরেশ্তাদেরকে মাটি আনতে বললেন কিন্ত কোন ফেরেশ্তারা মাটি আনতে পারলেন না কারণ মাটি তাদের নিকট খুব আকুতি মিনতি করতে লাগল তখন তারা মায়ার বর্শবর্তী হয়ে মাটি না নিয়ে চলে আসলো , কিন্ত যখন ই আল্লাহ অাযরাইলকে পাঠালেন তখন আযরাইল কোন অনুরোধের তোয়াক্কা না করে আল্লাহর আদেশ পালন করে মাটি নিয়ে আসলেন এবং আল্লাহ ঐ মাটি দিয়ে আল্লাহ আদম আ: কে কুদরতী হাতে সৃষ্টি করলেন । এটার একটা মর্মার্থ হল ,যার হাতের মাটি দিয়ে শুরু ,তার হাত দিয়েই তার সমাপ্তি হবে। কারণ সেই পারবে মায়ের কোল থেকে ছেলেকে ছিনিয়ে নিয়ে আসতে। আযরাইলকে যখন এই দ্বায়ীত্ব দেওয়া হয় তখন আযরাইল অসম্মতি প্রকাশ করেছিলো কারণ এটাকে সে নিয়ন্ত্রন করতে পারবে না। কিন্ত আল্লাহ যখন মৃত্যুকে তার নিয়ন্ত্রনে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন তখন আযরাইল দ্বায়ীত্ব গ্রহণ করে।
এখন প্রশ্ন হলো আযরাইল কি নিজে জান কবজ করে? নাকি তার সহকারী আছে?
রাসূল স: বলেছেন , আযরাইল এর অনেক সহকারী ফেরেস্তা আছে যাদেরকে আযরাইল নির্দেশ দিলে কার্য সম্পাদন করে থাকে। শুধুমাএ নবী ও রাসুলের রুহ কবজ করার দ্বয়ীত্ব নিজে সম্পাদন করে থাকে। অর্থাৎ জান কবয করার জন্য আযরাইল স্বশরীরে হাজির হন।তিনি আরো বলেন , মানবকুল আযরাইলের নিকট একটি সুশজ্জিত পেয়ালা ছাড়া আর কিছু নয় যেটাতে হরেক রকম ফল দ্বারা সাজানো থাকে।
কখন মানুষ মারা যায়?
হাদীস বর্নিত হয়েছে আল্লাহ যখন আযরাইলেকে মুত্যুকে দ্বায়ীত্বে নিযুক্ত করলেন তখন কেয়ামত পর্যন্ত যত লোক আসবে সকলের নাম এবং মুত্যু তারিখ স্থান নির্ধারিত একটি বই দেন । সেটা অনুসারে তিনি তার কার্য সম্পাদন করেন। কোন কোন বরণনা মতে, আসমানে এমন একটি গাছ আছে যেটাতে সকল প্রাণের নাম সহ যাবতীয় তথ্য রয়েছে, যখনই কোন লোক মারা যায় তার চল্লিশদিন পূর্বে ঐ গাছের একটি পাতা ঝরে পড়ে তখন আযরাইল তার সহযোগি ফেরেস্তাদের নাম, স্থান এবং মৃত্যু সময় বলে দেন তারা সময় মত জান কবয করে নেন।
কিভাবে আযরাইল রূহ কবজ করে এবং তার আকৃতি কি?
হাদীস অনুসারে আযরাইলের চারটি মুখ রয়েছে যার একটি হল মাথার দিকে যা দিয়ে নবী রাসূলদের জান কবজ করেন । আরেকটি সম্মুখদিকে যেটা দিয়ে নেককারদের আত্না গ্রহণ করেন । আরেকটি পিছনদিকে যার মাধ্যমে বদকারদের রূহ কবজ করেন । বাকিটা হলো পায়ের দিকে যা দ্বারা জ্বিন এবং শয়তানের রূহ কবজ করেন। রাসূল স: বলেছেন, কীট পতঙ্গ,পাখি যখন আল্লাহকে ভুলে যায় তখন সেটা এমনিতে মরে যায়। কারো কারো মতে, সে দ্বায়ীত্ব ও আযরাইল পালন করে থাকেন। আর আযরাঈলের আকৃতি বুঝানোর জন্য একটি হাদীসই যথেষ্ট যেখানে রাসূল স: বলেছেন, পৃথিবীর সব পানি যদি একসাথ করে তার মাথায় ঢেলে দেওয়া হয় তখন ঐ পানির এক ফোটাও জমিনে পড়বেনা।
অবশেষে মৃত্যুর একটি কথা দিয়ে শেষ করতে চাই, যা বলেছিলো মুত্যু নিজেই খুব চিৎকার করে যখন সে আযরাইলের নিয়ন্ত্রনে যায় তা হলো : হে সৃষ্টিজীব মনে রাখ খুব ভালো করে! আমি তোমাদের মাঝে একদিন আসবই । আমি তোমাদের মাঝ হতে তোমাদের মা-বাবা, সন্তান-সন্তাতি, আত্মীয় স্বজনকে তোমাদের কোল থেকে নিয়ে আসব সে তোমরা যেখানেই থাকবে। এমন কোন জীব নাই, যে আমার স্বাদ গ্রহণ হতে বন্ঞ্চিত হবে।
সুতরাং আমাদের উচিত , মুত্যুর সম্মুখে যাওয়ার আগে প্রস্ততি গ্রহণ করা । কারণ এটার কাছে কোন লভিং বা সুপারিশ কাজে আসবে না। আল্লাহ আমাদের সকলকে প্রস্ততি গ্রহণ করার তাওফিক দান করুক। আমিন ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:০২