মহানবী হযরত মোহাম্মদ স: এর ওপাতের পর সকল বিরোধী এবং স্বার্থান্বেশী মহল তাদের মনের বাসনা পরিতৃপ্ত করার জন্য নিজের মনগড়া ধর্ম পালন করতে থাকে, যার ফলে অনেক দল এবং উপদলের সুষ্টি হয়। কোন দল রাজনৈতিক আবার কোন দল ধর্মীয় , কেউ আবার সুফি , কেউ আবার দার্শনিক মতবাদের আলোকে ধর্মের ব্যাখ্যা দিতে শুরু করে। এভাবেই তৈরি হয় বিভক্তি এবং ধর্মের মধ্যে কোন্দল এবং দল-উপদলের । ঠিক তেমনি একটি দল হল জাবারিয়া। যাদের মূল ধর্মীয় বিশ্বাস গড়ে উঠে ভাগ্য কেন্দ্রিক। অর্থাৎ তাকদির হল তাদের নিকট মৌল বিষয়।
জাবারিয়া শব্দটি আরবী শব্দ জাবর শব্দ হতে উৎপন্ন। জাবর শব্দের অর্থ হল -বাধ্যতা ,নিয়তি,অদৃষ্ট। অদৃষ্টবাদ বা খোদার স্বেচ্ছাচারে বিশ্বাসী দলই হল জাবারিয়া। এই মতের প্রতিষ্ঠাতা হলেন- জাহম বিন সাফওয়ান। যার মুত্যু হল ৭৮৫হি; । জাবারিয়াগণ মানুষের ইচ্ছার স্বধীনতা এবং কর্মের স্বাধীনতা পুরোপুরি অস্বীকার করে। তাদের মতে প্রত্যেক কাজ খোদার নিকট হতে আসে। মানুষের কোন কাজ করার ক্ষমতা নেই। আল্লাহ যাহা ইচ্ছা করেন তার প্রকিফলিত রূপ ই হল মানুষ। যার কারনে জাহম বলেন: প্রকৃতপক্ষে মানুষ কোন কাজ করেনা।
তাদের যুক্তি হল-
১. সুরা বাক্বারা-২৮৪ আয়াত। অর্থাৎ আল্লাহযাকে ইচ্চছা ক্ষমা করবেনএবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দিবেন । আল্লাহ হলেন সকল কিছুর ওপর শক্তিমান।
২. সুরা বাক্বারা-২৭২ আয়াত । যেখানে বলা হয়েছে হেদায়াত একমাএ আল্লাহর হাতে।
৩. সুরা আলে ইমরানের -২৬ আয়াত।
কিন্ত মজার ব্যাপার হল তারা যে সকল আয়াতকে যুক্তি হিসেবে পেশ করে সেখানে আল্লাহর সর্বময় ক্ষমতার প্রকাশ ঘটে কিন্ত ইচ্ছার স্বাধীনতার কোন প্রতিফলন ঘটেনা। তারা ইচ্ছার স্বাধীনতার আয়াত গুলো উল্লেখ করেনাই।
তাদের উৎপত্তির কারন গুলো হল:-
১. প্রাক ইসলামী যুগে মানুষের মধ্যে এমন ধারণা প্রবল ছিল কিন্ত রাসূল স: এ ওপাতের পর তারা আবার তাদের পুরনো বিশ্বাসে চর্চা করতে থাকে।
২. উমাইয়্যা শাষকদের কতিপয় তাদের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য তাদের প্রতি সমর্থন জানায় । কারন এটার মাধ্যমে তাদের অত্যাচার বা অন্যায় কাজে তাদের কোন হাত নেই সেটা প্রমান করে।
৩. তারা কোরআনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্টার কথা বলা হয় তাহলে আল্লাহর এই বিধান মেনে নেতে হবে। অর্থাৎ মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা নেই তাহলে কোরআন মেনে নেওয়া হবে অন্যথায় তা অস্বীকার করা হবে।
মোট কথা হল তাকদীর ব্যপারে তাদের কোন ধারণা টা পুরোপুরি সঠিক ছিলনা যার কারনে তারা বেশিদিন টিকতে পারেনাই এবং সমাজে প্রসিব্দি লাভকরতে পারেনাই। তাদের মতে যা কিছু ঘটে সব কিছুই আল্লাহর ইচ্ছায় ঘটে যা পরোক্ষভাবে নিজের মধ্যে আল্লাহর অস্তীত্বের প্রমান করে। যেটা বর্তমানে আমাদের সমাজে কিছু ভান্ত লোক তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এই সব মতামত প্রচার করে। তবে আগের টা ছিল শুধুমারএ তাকদির কেন্দ্রিক এখন সেটার আধুনিক ভার্সন হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:২০