নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন সুন্দর করে সাজাও । আমি নারী তাই কথাও বলি নারীদের নিয়ে।

কামরুননাহার কলি

আমার নাম কামরুননাহার কলি, আমি একজন ভার্সিটির ছাত্রী। আমার সখ লেখালেখি আর বই পড়া। আমি দেশকে ভালোবাসি, ভালোবাসি দেশের মানুষদের।

কামরুননাহার কলি › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘একটি স্বপ্ন’

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:২৫

কামরুননাহার কলি


নিশি স্কুলে পড়ে সবে মাত্র ক্লাস সেভেনে। প্রায় ৫/৬ কি.মি পায়ে হেটেই স্কুলে যায়। প্রতিদিন ছোট ছোট পায়ে দৌড়িয়ে দৌড়িয়ে আনন্দের সাথে স্কুলে ছুটে যায়। তাতে কোনো কষ্টই হয়না, গরিবদের বোধ হয় বিধাতা এই রকম কাজে কোনো কষ্ট দেন না। কিছু পান্তা পানি খেয়ে সেই সকাল ১০টা বাজে ঘর থেকে স্কুলের উদ্দেশ্য বেড় হয়। আসে সেই বিকাল ৫টায়, সারদিন না খেয়েই ক্লাস করে। এইটুক মেয়ে জীবনের কত কষ্টই না করে। কখনোই মায়ের কাছে অভিযোগ করেনি ‘মা আমি স্কুলে যাবো না হেটে হেটে, আমার কষ্ট হয়’। নিশি জানে মাকে বললে মা কখনো বলবে না, কেনো যাবিনা? স্কুলে না পড়লে মানুষ হবে কি করে। অন্য বন্ধুরা স্কুলে না গেলে তাদের মায়েরা বলে “লেখাপড়া না করলে মানুষ কি করে হবে”। কিন্তু নিশির মা বলবে; ভালো না লাগলে আর পড়ার দরকার নাই, ঘরে কাজ করো। নিশি জানে মা এছাড়া আর কিছুই বলবেনা। তাই শত কষ্ট সহ্য করে নিশি লেখাপড়া করে যাচ্ছে। পড়ালেখা করে নিশি বড় চাকরি করবে, অনেক টাকা রোজগার করবে, নিশি সুন্দর একটা স্বপ্ন গড়বে। তারপর বাবা মায়ের কষ্ট দূর করবে, এটাই নিশির একমাত্র উদ্দেশ্য। এই কথাটা হয় তো নিশি সবাইকে বোঝতে দেয় না কারো কাছে বলেও না। কারণ, নিশির কথাটা শুনে যদি কেউ হেসে উড়িয়ে দেয়। যদি কেউ বলে গরিব ঘরে জন্ম নিয়ে বড় লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। এরকম মধ্যবিত্ত মানুষ গুলোকে মনে হয় বিধাতা আঙ্গুলের ডগায় করে ঘুরান। বিধাতা এদের সাথে খেলা করতে খুব ভালোবাসেন। “কখনো সুখে হাসান আবার কখনো দুঃখে কাদান এদেরকে ” বিধির নিলা বোঝা বড়ই কঠিন।

প্রতিদিনের মতো আজও নিশি স্কুল থেকে আসলো ৫টা বাজে। মনে মনে রাজ্যের কল্পনা নিয়ে আসলো। মা হয়তো অনেক মজার কিছু রান্না করে রেখেছে। ওহঃ বিষন ক্ষুদা পেয়েছে আজ পেট ভরে খাবো। ক্ষুদার এই তিপ্ত মিটাতে বই গুলো টেবিলে কোন রকম রেখেই হাত-মুখ না ধুয়ে খেতে চলে গেলো। দু’কেজি চালের পাতিলায় হাত নিচে কি যেনো একটু পরে আছে। এতো বড় একটা পতিলায়র নিচের দিকে পরে আছে একফুটো গমের সুজি। না আছে তাতে লবন না আছে তাতে চিনি। মা গম বেজে শিল পাটায় বেটে একটু সুজি করে সবাইকে খাইয়েছে। বাকিটা নিশির জন্য রেখে দিয়েছে। সারাদিনের না খাওয়া ছোট্ট একটা মেয়ে দু’মুঠো ভাত খাওয়ার আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু এসে ভাতই খেতে পারলোনা। ক্ষুদার যন্ত্রণা যে কি যন্ত্রণা সেটা তারাই বোঝে, যারা দু বেলা দু’মুঠো ভালো করে খেতে পারেনা। নিশি আস্তে আস্তে মায়ের কাছে যেয়ে বলল ‘মা ভাত খাবো’। মা তো অমনি রেগেমেগে আগুন, বলল ভাত নাই। ভাতের বদলে আমার আর তোর অকর্ম বাপের মাথা খাইয়া বাচ। নিশি মাথা নিচু করে চলে গেলো, ক্ষুদার জ্বালা তো মিটাতে হবে তাই ঐ গমের সুজি খেয়েই ক্ষুদা মিটালো।
পর দিন সকালে নিশি অভাবের কথা সব ভুলে যায় ভুলে যায় ক্ষুদা কথা। গম আর চাল ভাজা খেয়ে স্কুলে উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। মা নিশিকে বলল আজ স্কুল থেকে তারাতারি আসবি। অর্ধেক ক্লাস করে দুপুর দুপুর চলে আসবি, “বিকেলের লঞ্চে ঢাকায় যাবো”। নিশি কথা না বলে স্কুলের পথে হাটা দিলো। নিশির কত দিনের চেনা সরু এই পথে হাটছে আর ভাবছে মা ঢাকা যাবে কেনো?। মা কি বাবার সাথে রাগ করে ঢাকা চলে যাবে! তাহলেকি মা আর আসবেনা বাড়িতে। তবে, আমার পড়ালেখা সেটার কি হবে! এই ভেবে নিশির মনটা একেবারেই খারাপ হয়ে গেলো। নিশি ভাবলো আর কি আমার পড়া হবেনা? আমি কি বড় চাকরি করতে পারবোনা ! আমি কি আমার বাবা-মায়ের কষ্ট দূর করতে পারবোনা! ক্ষণিকক্ষণ পর আবার ভাবলো ঢাকা তো আমি কখনো যাইনি এবার মায়ের সঙ্গে যাবো। মা যদি বেড়াতে যায় তাহলে তো আবার ফিরেই আসবো। ঢাকার শহরের নাম শুনছে নিশি কিন্তু কখনো দেখেনি। শুনেছে ঢাকায় কত বড় বড় দালান, কত বড় বড় গাড়ি, আরো কত কিছু আছে কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যায় নিশি। ভাবলো আজ তারাতারি আসবো স্কুল থেকে, এসে তো জামাকাপুর গোছাতে হবে বই ও নিয়ে যেতে হবে। ওখানে যেয়ে পড়ালেখা করতে হবে, তারপর স্কুলে এসে পরিক্ষা দিবো। আর যদি মা ঢাকায় থেকে যায় তাহলে ওখানকার স্কুলে ভর্তি হবো। এই সব ভাবতে ভাবতে কখন যে স্কুলের আঙ্গিনা এসো পড়লো খেয়ালই করেনি। স্কুলের কাছে এসে নিশি ভাবলো এই স্কুলটি কত সুন্দর, এখানে কত বান্ধবী আছে ওরা নিশিকে কত আদর করে। কিন্তু ওরা কি জানে নিশি কত কষ্ট করে জীবনের সাথে, হয়তো জানেনা। তবুও তো এই স্কুলের বন্ধুরা নিশিকে কত আদর করে, কত ভালোবাসে। এই স্কুল ছেড়ে তো নিশির যেতেই ইচ্ছে করে না। আবার ভাবলো “বেড়াতেই তো যাবো আবার ফিরে আসবো তাতে কি হবে মানুষ বেড়াতে যায়না”।
মনে কত আনন্দ নিয়ে মায়ের সাথে আজ নিশি ঢাকায় যাচ্ছে। মা যাবার সয়ম বাবাকে বলেছিলো “এই আমি মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় চললুম কাজের উদ্দেশ্য” তুমি বসে বসে আঙ্গুল চুষে খাও। যাবার সয়ম ছোট ভাই – বোনদের রেখে গেলো মা। আসার জন্য ওরা খুব কান্না করছিলো, কিন্তু মা আনেনি। ‘মা ঘুমিয়ে আছে লঞ্চের এক পাশে’। লঞ্চে নিশি কখনোও উঠেনি, এতো বড় লঞ্চ নিশি কখনোই দেখেনি। লঞ্চ ভর্তি মানুষ, নিশি ভাবলো, তারা সবাই মনে হয় নিশিদের মতোই ঢাকায় যায়। এতো মানুষ দেখে নিশির কাছে খুব ভালো লাগছে। গভির রাতে যখন সবাই যে যার মতো ঘুমিয়ে আছে নিশি তখনও জেগে ছিলো। হঠাৎ নিশির চোখ পড়ে গেলো লঞ্চের জানালার দিকে। দৌড়িয়ে সেখানে গেলো, জানালা দিয়ে রাতের আকাশের দিকে তাকালো। নিশি কথনোই এই ভাবে আকাশের দিকে তাকায়নি। তাই মনে হচ্ছে যেনো আজই প্রথম আকাশ দেখতেছে। মনে হয় জীবনের আর কখনোই আকাশ দেখেনি। রাতের তারাগুলো মিটিমিটি জ্বলছে, চাঁদটি লঞ্চের সাথেই দৌড়াচ্ছে। নিশি দেখছে চাঁদাটি ওর সাথে সাথেই ঢাকায় যাচ্ছে। শান্ত নদীটির মাঝে কত রকম আলো, নিশির প্রশ্ন এতো রাতে নদীর মধ্যে এই আলো কেনো জ্বলছে? কারা আছে ওখানে আর তারা কি করছে নদীর মধ্যে? নাকি তারাও আমাদের মতো ঢাকায় যাচ্ছে নৌকায় করে। নিশির এতো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো কেউ নেই। হঠাৎ নিশির মনে পড়ে গেলো বাড়ির কথা, এই পরিবেশটা নিশিকে খুব এককিত্ব করে দিচ্ছে। সারাদিনের পর নিশিকে খুব একা করে দিয়েছে রাতের পরিবেশটা। বাড়িতে ওর ছোট ভাই বোন আছে ওরা থাকলে হয়তো ভালো লাগতো। নিশি ভাবলো ওরা এখন কি করে বাড়িতে? ‘ভাত খেয়েছে নাকি না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে আছে’। আসার সময় কি কান্নাই না কাদলো মায়ের সাথে। ওদের কথা মনে পড়তে নিশির চোখের কোণ দিয়ে এক ফোটা অশ্র গড়িয়ে পড়লো। মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে মা ঘুমিয়ে আছে। কত দিন পর মা এতো সুখে ঘুমাচ্ছে কে জানে।
সকাল বেলা লঞ্চ ঘাটে এসে থামলো। যে যার মতো করে লঞ্চ থেকে নেমে গেলো। নিশিরাও নামলো, নিশি এতোক্ষণে মাকে কিছু জিজ্ঞসা করেনি। গাড়িতে উঠে নিশি মাকে বলল “মা আমরা কোথায় যাবো” মা শান্ত গলায় বলল তোর খালাদের বাসায়। নিশি শুনেছে খালারা নাকি অনেক বড়লোক, তাদের অনেক টাকা আছে। সে খালাকে নিশি কখনোই দেখেনি। কিন্তু মায়ের যে এতো কষ্ট সেটা তারা কিছুই জানেনা। মাও তাদের কখনি বলেনি আর তারাও জানার চেষ্টা করেনি। আজ হয়তো মা খালার কাছে সব খুলে বলবে। কিন্তু খালা কি নিশিদের আদর করবে? ‘নাকি করবে না’। গাড়ি চলছে শো শো করে, শহরটা একে বারেই অদ্ভুত ধরনে। গ্রামের থেকে একেবারেই ভিন্ন একটা শহর। গ্রামের সাথে এর কোন মিলই নাই। বাস থেকে নেমে, অনেক দূর আসার পর নিশিরা খালার বাসায় এসে পড়লো। খালা-খালুকে দেখে নিশি সালাম করলো। কত সুন্দর বাসা পাকা করা, টাইস করা নিশি কখনোই দেখেনি এমন বাসা। একেবারেই রাজপ্রসাদ, নিশি টিভিতে, ছবিতে এরকম কত বাড়ি দেখেছে কিন্তু বাস্তবে আজ এই প্রথম দেখলো। খালাকে দেখে মনে হলো না যে খালা নিশিদের দেখে খুব একটা খুশি হয়েছে। তবুও মা খালার কাছে সব খুলে বললো। মায়ের কাছে খালা সব শুনলো, শুনে বাবা উপর তেলেগুনের জ্বলে উঠলো। খালা মাকে খুব বকা দিতে লাগলো, কেনো আসলো ঢাকায়, এতো ঝামেলা নিয়ে। নিশি তা পাশে বসে বসে সব শুনছে। খালা মাকে এই কথাও বলল, সে আমাদের এই জামেলা মাথায় নিতে পারবে না। তারা কত বড়লোক নামিদামি মানুষ, তদের পরিচয় আছে ধনি ধনি মানুষের সাথে। এ কথা খালা মাকে শুনালো। তারা যদি জানতে পারে মা তার বোন’ তাহলে তারা কি বলবে। যদি শুনে ঢাকায় এসেছে কাজের জন্য তাও আবার গার্মেন্টেস-এর কাজে। মা একটা কথাও বললো না, সব নিরবে শুনে গেলো। অনেক কথা হওয়া পরে মা বলল আমি গার্মেন্টেসই কাজ করবো। এছাড়া আর কোনো উপায় নাই। শুধু নিশি কে একটু আপনের কাছে সারাদিন রাখবেন। ও বই নিয়ে আসছে পড়বে। খালা তো শুনে আরো রেগে গেলো, বলল এই টুক পুচকি মেয়ে আমি পারবো না সারদিন দেখে রাখতো। “ভাত খাইতে ভাত পায় না তার আবার পড়া লেখা” ওকে নিয়ে যাবি, তোর সাথে ওকেও গার্মেন্টেস-এ কাজে লাগিয়ে দিবি। নিয়েই যখন এসেছিস কাজ করাবি। দুজনে কাজ করলে টাকাটা বেশিই পাবি। সেটা নিয়ে মা মেয়ে দুজনি ভালো থাকতে পারবি। খালার এই সব কথা শুনে নিশির মনটা একেবারেরই খারাপ হয়ে গেলো। কত স্বপ্ন নিয়ে নিশি ঢাকায় এসেছে আর এসে এসব কথা শুনে।
সারারাত মা চিন্ত করলো কি করবে নিশিকে, এই টুক মেয়ে কি কাজ করবে। ওকে তো আমি কাজের জন্য আনেনি ওর বাবার উপর রাগ করে আর একাএকা আসবে এই অচেনা শহরে, তাই নিয়ে এসেছি। ও তো স্কুলে পড়ে এই বয়সে মেয়েটার জীবনটা এই ভাবে নষ্ট হয়ে যাবে। নিশির দিকে পাশ ফিরে মা বলল, শোন নিশি তোর খালা যদি তোকে কাল কোথায়ও যেতে সাধে যাবি না, বলবি আমি যাবো না। মা বলল, আমি একাই কাজ করবো তারপর দু’তিন মাস পর মানি তোর পরিক্ষার আগে আগেই চলে যাবো বাড়িতে। তুই বাসায় থেকে পড়বি একটুও দুষ্টামি করবি না। সারদিন পড়বি বাসায় বসে। আর বলল বাড়িতে যেয়ে কাউকে বলবি না আমি যে গার্মেন্টেসে কাজ করেছে। নিশি হঠাৎ প্রশ্ন করলো ‘মা গার্মেন্টম কি’? মা শুনে বলল ওখানে জামা কাপুর বানানো হয় ছেলেমেয়েদের। নিশি জানতোই না যে গার্মেন্টস কি, কিন্তু দেখো নিয়তির কি পরিহাস সেই গার্মেন্টেসেই কাজ করতে হলো নিশিকে। ঘুমিয়ে পড়লো মা মেয়ে দুজনই। সকাল বেলা খালা উঠে এসে বলল আর ঘুমাতে হবে না। চল আমার সাথে তোদের দু’জনিকে গার্মেন্টস দেখিয়ে দিয়ে আসি। তোরা তো আবার কিছু চিনিস না “যত জ্বালা আমাকেই দেখতে হয়” এখন আমার গার্মেন্টেসের দরজায় যেতে হবে তোদের জন্য। জীবনে যার ধারেকাছে যাইনি আজ তোদের কারণে যাইতে হবে সেখানে। খালার এই ধমকানি নিশিকে একেবারেই হতাশ করে দিয়েছে। নিশি যখন দাড়িয়ে ছিলো তখন খালা এসে বলল ‘তুই দাড়িয়ে আছিস কেনো’, রেডি হয়ে আমার সাথে চল। মা বলল না বোন ওকে নেওয়ার দরকার নেই, ওকে দিয়ে কাজ করাবো না। আমিই কাজ করবো ওকে কাজের জন্য আমি আনেনি। খালা তো রেগে আগুন, ফুসে উঠে বলল ‘না পারবো না ওকে আমার কাছে রাখতে পারবোনা’। তোর মেয়ে তোর সাথে করেই নিয়ে যাবি। পারবো না এতো জ্বালা সইতে, বাসায় কত ধনি বড়লোক সম্মানি মানুষজন আসে। তাদের সামনে এই ভিক্ষুকের মতো চেহেরা নিয়া দাড়াবে আর আমার সম্মান যাবে। সেটা হতে দেওয়া যাবেনা। নিশি এতোক্ষণ সব শুনেছিলো, এইবার নিশি বলল “মা আমি কাজ করবো” আমাকে নিয়ে যাও। এখানে একাএকা সারাদিন আমি থাকতে পারবো না মা, তোমার সাথে আমাকেও নিয়ে যাও। মা আর কথা বাড়ালেন না, নিশিকে নিয়েই যেতে হলো। নেমে আসলো নিশিও কাজের উদ্দেশ্যে এই আজব শহরের রাস্তায়। নিশি কত মানুষ দেখলো এতো মানুষ রাস্তার দু’পাশে। লাইন বেধে সবাই হাটছে, মাকে বলল ‘মা’ এতো মানুষ কেনো রাস্তায় এরা কোয়ায় যায়? গার্মেন্টেসে যায়। এদের দেখে নিশি ভয় পেয়ে যায়, এতো মানুষ এই ঢাকায় থাকে আর গার্মেন্টেসে কাজ করে। নিশি ভাবলো বড়লোকেরা বুঝি ঘুমিয়ে থাকে, আর যারা গার্মেন্টে কাজ করে তাদের মনে হয় খুব সকালে উঠতে হয়। কারণ তাদের কে তো পেট বাচাতে হবে, টাকা না থাকলে কেউ আদর করেনা। সেটা নিশি বুঝে গেছে। এর মধ্যে একটা আট তালা বিল্ডিংয়ের সামনে যেয়ে দাড়ালো। খালা কয়েকজন কে জিজ্ঞিসা করলো, দু’জন লোক নেওয়া যাবে কাজে। কেউ যখন বলে কোন দু’জন? তখন খালা নিশিকে আর মাকে দেখিয়ে দেয়। তখন তো সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে নিশির দিকে। তারা তখন খালাকে বলে “আপনে কি পাগল হয়ে গেছেন এইটুক মেয়ে গার্মেন্টেসে কাজ করবে”। ‘ওর জন্য কি আপনেদের থালে দু’মুঠ ভাতও জোটে না’। এরকম কয়েকটি বিল্ডিংয়ে যেয়ে যেয়ে ফিরে আসে মা আর নিশিকে নিয়ে খালা। যে দেখে নিশিকে সেই বলে এইটুকু মেয়েকে কেনো গার্মেন্টেসে দিবেন। ওর এখন পড়ালেখার বসয়, ওকে পড়ান। কিন্তু খালা কি আর সে কথা শুনে। পড়ের দিন আবার নিশিকে নিয়ে আসে। সেইদিন নিশিকে অন্য ব্যাসে সাজিয়ে নিয়ে আসে। খালার পুরণো মোটাসোটা একটা বোকরা পড়িয়ে। যাতে নিশির বয়স বেশি দেখা যায়, তাই খালা বুদ্ধি করে বোকরা পড়িয়ে আনে। মানুষ দেখলে যাতে না বোঝে এটা ছোট্ট একটা মেয়ে। কি আর করা, নিশিকে যে কাজ করতেই হবে। না হলে মাকে বকা শুনতে হবে, নিশিকেও অনেক অপমান সইতে হবে।
প্রথম যেই দিন নিশি গার্মেন্টেসে কাজ করার জন্য ভিতরে গেলো, কেমন একটা পরিবেশ একটুও পছন্দ হলো না নিশির কাছে। নিশি যখন কাজ করে তখন বোকরা খুলে রেখে কাজ করে। সবাই তখন দেখে নিশিকে, সবাই বলে কি সুন্দর একটা মেয়ে, কারো সাথে কথা বলে না, কথা বলতে লজ্জা পায়। মেয়েটার প্রতি সবার কেমন জানি একটা মায়া হয়ে গেলো। সবাই নিশির মাকেই দোষ দিচ্ছে এইটুকু মেয়েকে কেনো এনেছেন কাজ করতে। মা কি বলবে মাও যে নিরুপায়, মায়ের বুক ফেটে কান্না আসা ছাড়া আর কিছুই না। নিশিকে একটা বড় মেয়ের সাথে সুতা কাটার কাজ দিয়েছে গার্মেন্টেস। নিশি বসে বসে সুতা কাটে সারাক্ষণ, কখনো কখনো নিশি এতো কাজের চাপ সইতে না পেরে ঘুমিয়ে পড়ে যায়। সাথে থাকা মেয়েটা বারবার দমক দিয়ে উঠিয়ে দেয়। অনেকে আবার বড় মেয়েটাকে বকাও দেয় বলে ছোট্ট মেয়েটার সাথে এমন করো কেনো? তারা বলে ‘ওর হয়তো ঘুম আসে তাই ঘুমিয়ে যায়’। কিন্তু কয়েকদিন নিশি এখানে ভালোই ছিলো হঠাৎ শুনতে পারে এখানকার মানুষগুলো এতো বাজে বাজে বকা দেয় একজন আরেকজনকে। যা শুনে নিশি সবার মুখের দিকে অবাক হয়ে চেয়ে থাকে। এমনি একদিন একটা বড় মেয়ে নিশিকে একটা বাজে কথা বলল সেটা শুনে নিশি কেদে দিলো, আর গার্মেন্টেসের একজন বায়ার এসে ঐ মেয়েটাকেও বকা দিলো। নিশির এতো বাজে কথা নিশির শুনতে একটু ভালো লাগে না। ইচ্চে হয়ে বাড়িতে চলে যায়। নিশি মাকে যেয়ে বলল “মা আমি আর এখানে কাজ করবো না” এখানের মানুষগুলো খুব খারাপ একটু আদর করে না। এরা সবাই সবাই কে বাজে বাজে বকে। ওরা এতো খারাপ কেনে মা? চলো আমরা বাড়িতে চলে যাই এই শহরের কেউ ভালো না সবাই কেমন নিষ্ঠুর। “মা আমি পড়া লেখা করে তোমাকে আরো বড় চাকরি করে খাওয়াবো”। চলো মা আমরা বাবা আর ছোট বোনদের কাছে চলে যাই। ওরা আমাদের জন্য কাদছে চলো মা আমরা আর এই শহরে থাকবোন। মা তিন মাস পর নিশিকে নিয়ে আবার বাড়িতে আসলো। আবার নিশি স্কুলে যায় পড়া লেখা করে ভুলে গেছে নিশি সেই গার্মেন্টেসের কথা, ভুলে গেছে নিশি গার্মেন্টেসের মানুষগুলোর বাজে বকা আর ভুলে গেছে নিশি খালার সেই হৃদয়বিদায়ক কথা। এখন নিশির একটাই উদ্দেশ্য নিশি পড়া লেখা করে অনেক বড় চাকরি করবে, যেখানে কোনো বাজে কথা হয়না যেখানে গেলে কোনে সম্মান যায় না, যেখানে গেলে সবাই নিশিকে সম্মান করবে সেখানেই নিশি বড় হয়ে চাকরি করবে। আর মাকে দেওয়া কথা রাখবে, কষ্ট দুর করবে মা-বাবার………………………………. বড় হবে একদিন অনেক বড় হবে নিশি, এটাই নিশির বড় স্বপ্ন। এই “একটি স্বপ্ন” নিয়ে নিশি বহু পথ পাড়ি দিচ্ছে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:১১

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: গল্পটি মোটামুটি লেগেছে।
আশা করি সামনে আরও ভাল হবে।

আমাকে একটি প্রশ্ন করতে চেয়েছিলেন আমার সাম্প্রতিক পোষ্টে কিন্তু পরে আর প্রশ্নটি করেননি।

২| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:১৮

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
আচ্ছা আমি যেটা বলতে চেয়েছি সেটা হলো। আমি তো নতুন, আমার এই পেজটি খুলেছি ১ মাস সামথিং হবে। কিন্তু আমার লেখাগুলো প্রথম পেজে কেনো আসেনা এটা যদি একটু বলতেন। আর সে জন্য কি করতে হবে । দয়া করে যদি বলতেন ।

আপনি নিয়মিত আপনার মৌলিক লেখা গুলো পোষ্ট করতে থাকুন।
সবার লেখা পড়ে সেখানে ভাল মন্তব্য করার চেষ্টা করুন।আশা করি এক সময় প্রথম পাতায় দ্রুত স্থান পাবেন।
আমি একটি লিংক দিচ্ছি এটাতে ক্লিক করে লেখাটি পড়ুন। আশা করি আপনার উপকার হবে।

৩| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:২১

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: এই লেখাটি পড়ুন। সমাধান

৪| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:১৯

কামরুননাহার কলি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া ।

৫| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:০০

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: গল্পের প্লট ভাল ছিল। প্রচুর পড়ুন।

৬| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:০৯

কামরুননাহার কলি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া #গিয়াস উদ্দিন লিটন । তবে প্রচুর পড়ুন এটা বুজতে পারিনি।

৭| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:০৬

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: প্রচুর পড়া মানে হল ,ভাল লিখতে গেলে প্রচুর পড়তে হয়।
লিটন ভাই এটিই বুঝিয়েছেন।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:১৮

কামরুননাহার কলি বলেছেন: বুঝছি এবার । কিন্তু আমি যে বই পড়ি না!

৮| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৯

কালীদাস বলেছেন: প্লটটা পুরান এবং লেখাটাও দুর্বল। নতুন কিছু করার অনেক স্কোপ ছিল আপনার। প্লাস ওপরের কমেন্টগুলোতে যেটা আসেনি, প্রচুর গ্রামাটিকাল ভুল আছে অনেক বানান ভুল সহ। আরও পড়ুন, নতুন কিছু ভাবুন।

শুভকামনা রইল।

৯| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:১৬

কামরুননাহার কলি বলেছেন: প্লটটা পুরান কি না জানিনা তবে এটা একটি বাস্তব ঘটনা। লেখাটা হয়তো দুর্বল হতে পারে এবং বানানও । তবে শুধরিয়ে নিবো। ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য ভাইয়া।#কালীদাস

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.