| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উদাসীফাহিম
আমি এক উদাসী মানব.....।. ঘৃণা করি বাংলাদেশের দুই ভন্ড সম্প্রদায় লিগ ও জামাতকে....আমি এমনি..এভাবেই থাকতে চাই আজীবন.......
সৈ য় দ জি য়া উ র র হ মা ন
১৯৭৬ সাল থেকে ভয়েস অব আমেরিকায় দীর্ঘ ৩৫ বছরের কর্মজীবনে ওয়াশিংটন থেকে পরিবেশিত বাংলা সংবাদ-বুলেটিনে ইতিহাসের অনেক প্রখ্যাত নেতা-নেত্রীর মৃত্যুর খবর পড়তে হয়েছে আমাকে। মিসরের কায়রোতে ক্যান্সার আক্রান্ত ইরানের শাহ রেজা পাহলভীর মৃত্যুর খবর, মিসরের রাজনীতিতে ফৌজী কুচকাওয়াজে সামরিক অভিবাদন গ্রহণকালে বিক্ষুব্ধ সৈন্যদের গুলিতে প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের নিহত হওয়ার খবর, পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউল হকের ফাঁসিতে ঝুলে বাংলাদেশে গণহত্যার ইন্ধনদাতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর মৃত্যু ও পরে বিমান দুর্ঘটনায় জেনারেল জিয়াউল হকের প্রাণহানির সংবাদ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দেহরক্ষীদের গুলিতে নিহত হওয়া ও তার পুত্র সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর আত্মঘাতী হামলাকারীর বিস্ফোরণে জীবন নাশের খবর, ইস্রাইলের প্রধানমন্ত্রী ইত্সাক রাবিনের নিহত হওয়া ও তার কিছুকাল পরে ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের প্রয়াণের খবর পড়েছি আমি। এছাড়া পড়েছি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নিহত হওয়ার খবর।
এগুলো নিঃসন্দেহে ছিল সংশ্লিষ্ট সময়ে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বেতার-সংবাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য খবর। বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক বেতার প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভয়েস অব আমেরিকা গুরুত্বের সঙ্গে বস্তুনিষ্ঠভাবে এসব সংবাদ বিস্তারিত পরিবেশন করেছে। কিন্তু এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নিহত হওয়ার খবর ছিল ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের পক্ষে বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ।
১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের প্রশাসন পাকিস্তানকে সমর্থন যুগিয়েছে। প্রেসিডেন্ট নিক্সনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে গণহত্যায় লিপ্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন প্রকাশ্যে।
যদিও আমেরিকার বার্তা-মাধ্যম বেশ কিছুসংখ্যক সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্য, শিল্পী-সাহিত্যিক-মানবতাবাদী এবং বৃহত্তর আমেরিকান জনগোষ্ঠী সোচ্চার হয়েছে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতার বিরুদ্ধে। প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী জর্জ হ্যারিসন বাংলাদেশের বিপন্ন মানুষের জন্য অর্থ সংগ্রহের প্রচেষ্টায় সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন নিউইয়র্ক শহরে।
কিন্তু এসব সত্ত্বেও ভয়েস অব আমেরিকার আন্তর্জাতিক বেতার-অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ সম্ভব হয়নি নিক্সন প্রশাসনের ভূমিকার দরুন। কারণ তখন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভয়েস অব আমেরিকার ছিল প্রশাসনের নীতি অনুসরণের বাধ্যবাধকতা। পরবর্তীকালে অবশ্য কংগ্রেসের অনুমোদিত একটি সনদে ভয়েস অব আমেরিকার অনুষ্ঠান নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রচারের নির্দেশনা ঘোষিত হয়। তা সত্ত্বেও ’৭০-এর দশকের পুরো সময়টাতেই ভিওএ’র বাংলা অনুষ্ঠানের প্রতি বাংলা ভাষাভাষী শ্রোতাদের এক ধরনের বিরাগ ভাব বেশ জোরাল ছিল। ১৯৭৮ সালে ভিওএ’র বাংলা বিভাগের প্রধান ইশতিয়াক আহমেদ শ্রোতাদের আস্থা অর্জনের প্রচেষ্টায় ঢাকায় সাংবাদিক ও শ্রোতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভয়েস অব আমেরিকার সীমাবদ্ধতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু তারপরও মেঘ কাটেনি।
এরপর আকস্মিকভাবে ১৯৮১ সালের ৩০ মে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে রাতের বেলায় একদল বিদ্রোহী সেনা-সদস্যের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। এই মর্মান্তিক ঘটনার খবর ওয়াশিংটনে আসার পর ৩১ মে শনিবার সকালে ভয়েস অব আমেরিকায় বাংলা বিভাগের প্রধান ইশতিয়াক আহমেদ বিভাগের সবাইকে দফতরে ডেকে পাঠান। আমার সেদিন সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিল । বিভাগীয় প্রধান আমাদের এক ঘণ্টার অনুষ্ঠানের প্রায় পুরোটাই বাংলাদেশের বিপর্যয়-ঘটনার ওপর আলোকপাতের পরিকল্পনা করেন। আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয় সংবাদ পাঠের। আমার অন্যান্য সহকর্মীর মধ্যে কেউ কেউ উদ্যোগ নেন নিহত রাষ্ট্রপতির এর আগেকার নেয়া সাক্ষাত্কার অবলম্বনে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারের—এই ঘটনায় দেশ-বিদেশের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিশেষ প্রতিবেদন উপস্থাপনের এবং বিশ্ব নেতৃবর্গের মন্তব্য প্রচারের। সেদিন ১০ মিনিটের নির্ধারিত বিশ্বসংবাদের সাত মিনিটই নির্দিষ্ট করা হয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির নিহত হওয়ার খবর পরিবেশনের।
ভিওএ’র সম্প্রচারিত যে খবর সেদিন আমি পড়েছি, তার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যুতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের ও বিশ্বনেতৃবর্গের প্রতিক্রিয়া। তাতে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন, জাপান, আরব বিশ্ব, দক্ষিণ এশিয়া ও দূরপ্রাচ্যের নেতৃবর্গ ছাড়াও নিকটতম প্রতিবেশী ভারতের প্রতিক্রিয়া। আমার কাছে এখনও আছে টেপে ধরে রাখা আজ থেকে ৩২ বছর আগে সম্প্রচারিত ওই সংবাদের রেকর্ড। তাতে ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দীর্ঘ একটি বক্তব্য। তিনি বলেছিলেন, ‘প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়ার ছিল রাষ্ট্র নায়কোচিত দূরদর্শিতা। তিনি ছিলেন তার নিজের দেশের সার্বিক অগ্রগতির প্রচেষ্টায় নিবেদিত।’
ওই দিন সংবাদ পাঠের অনুভূতি ছিল অন্য এক ধরনের, অন্যান্য দিনের খবর পড়ার মতো সহজ-স্বাভাবিক নয়। স্টুডিওতে আমার পাশের টেবিলে আরেকটি মাইক্রোফোনের সামনে বসে অনুষ্ঠান ঘোষিকার দায়িত্ব পালন করছিলেন যে সহকর্মিনী, তিনি তার চাপাকান্না রোধ করতে পারছিলেন না এবং মাঝে-মধ্যেই তার শব্দ আসছিল আমার কানে। তাছাড়া বার্তা কক্ষের পাঠানো সর্বশেষ খবর নিয়ে আসার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন যে সহকর্মী, তিনি প্রতি মুহূর্তের আপডেট খবর নিয়ে ঝড়ের বেগে প্রবেশ করছিলেন স্টুডিওতে এবং সঙ্গে সঙ্গে পড়তে হয়েছে সেই খবর। সব মিলিয়ে ছিল ব্যাপক উদ্বেগ, উত্কণ্ঠা আর উত্তেজনা।
বেতার সংবাদ সংস্থায় বার্তা পরিবেশনের ক্ষেত্রে তখনও কম্পিউটার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়নি। ভিওএ’র বার্তা কক্ষে সংবাদ সংগৃহীত হতো বিশ্বব্যাপী প্রতিনিধিদের পাঠানো টেলিফোন ও তারবার্তা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ-সংস্থার পাঠানো খবরাখবর থেকে। তারপর এসব খবর ভিওএ’র কেন্দ্রীয় বার্তা কক্ষ থেকে ৫২টি ভাষার অনুষ্ঠান বিভাগে পাঠানো হতো টেলিপ্রিন্টারের মাধ্যমে। ওই দিন আমাদের বাংলা বিভাগের টেলিপ্রিন্টারে যেসব আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থার খবরাখবর আসে তার মধ্যে রয়টার্স, এএফপি ও এপি’র পাঠানো সংবাদ ছিল নির্ভরযোগ্য। কিন্তু বাংলাদেশের ঘটনা সম্পর্কে অধিকাংশ খবর আসে ভারতীয় বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া বা পিটিআই-এর মাধ্যমে। দুঃখের বিষয়, পিটিআই-এর পরিবেশিত খবর ছিল বেশিরভাগই গুজবের পর্যায়ে। যেমন এসব খবরে ছিল ‘ভারতীয় বাহিনী সতর্ক ব্যবস্থা হিসেবে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের এলাকায় প্রবেশ করেছে’, ‘ঢাকায় রাস্তায় রাস্তায় হাতাহাতি লড়াই চলছে’, ‘চট্টগ্রামে বিদ্রোহীদের অবস্থানের ওপর সরকারি বাহিনীর বিরামহীন বোমাবর্ষণ চলছে’ ইত্যাদি।
এ অবস্থায় প্রয়োজন ছিল খুবই সতর্ক ও সঠিক তথ্য বিচারের বিচক্ষণতার এবং সংবাদ বাছাইয়ের দক্ষতার। বিভাগীয় প্রধান ইশতিয়াক আহমেদ এ ক্ষেত্রে অনন্য দক্ষতার পরিচয় দেন সেদিন। তার ফলে যেসব খবর তিনি বাছাই করে আমাকে দিয়েছিলেন সংবাদ বুলেটিনে পড়ার জন্য, তার প্রতিটিই ছিল সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ। পরবর্তীকালে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি সংবাদপত্রের মন্তব্যে বলা হয় ‘মে মাসের ৩১ তারিখে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নিহত হওয়ার খবর প্রচারিত হয় যেসব আন্তর্জাতিক বেতারে, তার মধ্যে একমাত্র ভিওএ’র বাংলা খবরই ছিল একশ’ ভাগ সঠিক।’ পরদিন ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস ও লস-এঞ্জেলেস টাইমসহ আমেরিকার প্রধান দৈনিক সংবাদপত্রগুলোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির নিহত হওয়ার খবর এবং ঢাকায় লাখ লাখ মানুষের সমাবেশে তাকে সমাহিতকরণের ছবি ফলাও করে প্রকাশিত হয় প্রথম পৃষ্ঠায়। এছাড়াও পরপর কয়েক দিন বাংলাদেশের খবরাখবর প্রাধান্য পায় আমেরিকার পত্র-পত্রিকায়। আর সেসব সংবাদ-বিবরণী প্রতিদিনই বাংলা অনুবাদ করে প্রচারিত হয় ভিওএ’র বাংলা অনুষ্ঠানে। গোটা বাংলাদেশে তখন নিহত রাষ্ট্রপতির প্রতি সহানুভূতির প্রকাশ ব্যাপক এবং বহির্বিশ্বের প্রতিক্রিয়া জানার আগ্রহ জোরাল।
এর ফলে বাংলাদেশের শ্রোতাদের কাছে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা অনুষ্ঠান অতীতের সব প্রশ্ন আর অবিশ্বাস অতিক্রম করে হয়ে ওঠে জনপ্রিয়। ওই সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আটজন শিক্ষক ওয়াশিংটনে পাঠানো এক চিঠিতে ভিওএ’র বাংলা সংবাদকে ‘সঠিক ও যথার্থ’ বলে অভিনন্দিত করেন। এর আগে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগে প্রতি মাসে বাংলাদেশ, ভারত ও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল থেকে শ্রোতাদের যে চিঠিপত্র আসত, তার সংখ্যা গড়ে মাত্র একশ’ থেকে দেড়শ’র মধ্যে সীমিত ছিল। রাষ্ট্রপতি জিয়ার মৃত্যুর ঘটনার পরবর্তী কয়েক মাস পর্যন্ত শ্রোতাদের পাঠানো এই চিঠির সংখ্যা দাঁড়ায় প্রতি মাসে চার থেকে পাঁচ হাজার।
৩০ শে মে, ২০১২ বিকাল ৩:২৮
উদাসীফাহিম বলেছেন: হুম। তার মত দুরদর্শি রাষ্ট্রনায়ক বাংলাদেশে আসেনি, নিকট ভবিষ্যতে আসবে বলেও মনে হয়না।
২|
৩০ শে মে, ২০১২ সকাল ১০:২৬
সজল৯৫ বলেছেন: এই দূর্ঘটনার কারনে বাংলাদেশ অনেক... পিছিয়ে গেছে।
৩০ শে মে, ২০১২ বিকাল ৩:২৯
উদাসীফাহিম বলেছেন: ঠিকি বলেছেন। তার মত দুরদর্শি রাষ্ট্রনায়ক বাংলাদেশে আসেনি, নিকট ভবিষ্যতে আসবে বলেও মনে হয়না।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে মে, ২০১২ সকাল ১০:২৩
শ।মসীর বলেছেন: জাতির অপূরনীয় ক্ষতি হয়ে যাওয়া একটি দিন........।