নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ মৃত্যু চোখ

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:১৪



এক

সকালের এই সময় টা তানজিনার কাছে আর আগের মত নেই । একটা সময় ছিল সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গার পরেই সে চলে যেত দক্ষিন দিকের জানলাটার কাছে । জানালার ঠিক পাশেই বড় কড়ুই গাছটা আছে । ডালপালার অনেক যার অনেকতাই চলে আছে জানলা দিয়ে ভিতরে ! রীতিমত জানলা আটকাতে কষ্ট হয় !

তানজিনার মা প্রায়ই চিৎকার করে ডালপালা গুলো কেটে পরিস্কার করার জন্য, তানজিনার জন্য পারে না ! আগে মা একটু বেশি চিৎকার করতেন কিন্তু তানজিনার সাথে ঐ দূর্ঘটনা ঘটার পর থেকে খুব বেশি কথা বলেন না ! মেয়ে যা বলেন তাই মেনে নেন !



তানজির এখন সকাল সকালই ঘুম ভাঙ্গে ! কিন্তু আগের মত ব্যস্ততা আর নেই ! সারাদিন ঘরে শুয়ে থাকা ! সময় কাটানোর জন্য যে ল্যাপটপ টা নিয়ে বসবে সেটারও উপায় নেই !

ডাক্তারের পরিস্কার নিষেধ আছে, কোন ভাবেই টিভি কিংবা মনিটরের উজ্জল আলোর দিকে এক টানা বেশি সময় তাকিয়ে থাকা যাবে না । বই পড়া যাবে তবে বেশি সময় ধরে না !



তানজিনার একা একা বেশি সময় ধরে ঘরের ভিতর বসে থাকতে ভাল লাগে না ! তবুও কিছু করার নেই ! বসে থাকতে হয় ! বাবা মায়ের কড়া নির্দেশ ! আগে সুস্থ হও তারপর যা ইচ্ছা কর !



অপুকে একবার ফোন দিবে কি না একটু ভাবলো !

নাহ ! চিন্তাটা বাতিল করে দিল পরক্ষনেই ! সবে মাত্র সকাল হয়েছে । জনাবের এতো জলদি ঘুম ভাঙ্গবে না !



তানজিনার বিছানা থেকে উঠে জানালার দিকে একটু এগিয়ে গেল ! রোদ এখনও উঠে নি ! তাই বাইরের উজ্জল আলোর পরিমান একটু কম ! তবে এখনই সূর্যয়ের আলো এসে হাজির হবে !



তানজিনা জানলা দিয়ে বাইরে তাকালো ! ওর জানলা দিয়ে বেশ খানিকটা আকাশ দেখা যায় সাথে বাইরের রাস্তার বেশ খানিকটা স্থান দেখা যায়, আর রাস্তার পাশের ফাঁকা জায়গা টুকু ! চারিপাশে উচু উচু বিল্ডিং থাকলেও কেবল ওর জানালার পাশের এই জায়গা টুকু এখনও সিমেন্টের জঙ্গলে পরিনত হয় নি । তবে কথা কানে আসছে যে দু তিন মাসের ভিতরেই নাকি এখানেও বিল্ডিং বানানোর কাজ শুরু হবে ! তখন আর এই গাছটা হয়তো থাকবে না । জানালা দিয়ে তখন হয়তো আর আকাশটাও দেখা যাবে না !



তানজিনা জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো !

বেশ কয়েকজন বৃদ্ধ ফাঁকা জায়গাটাতে হাটাহাটি করছে ! আর নিজেদের ভিতর খোশ গল্পে মেতে আছেন । প্রায় সবাইকে চেনে সে ! তানজিনাদের বিল্ডিংয়েই থাকে কয়েকজন ! আর দুতিনজন থাকে আশে পাশে বিল্ডিংয়ে !

কিন্তু ঐ কালো আলখাল্লা পরা লোকটা কে তো ঠিক চেনা যাচ্ছে না !

তানজিনা নিজের চোখের উপর আরেকটু জোর দিল !

দুর্ঘটনা পরে চোখের উপর একটু জোর না দিলে দুরের জিনিস কেমন যেন ঝাপসা লাগে !

বেশ য়েকবার চেষ্টার পরেও তানজিনা লোকটাকে চিন্তে পারলো না !

নাহ ! লোকটার চেহারা দেখা যাচ্ছে না ! কালো কাপড় দিয়ে আপদমস্তক ঢাকা ! গরমের এই সময়ে কেউ এমন পোষাক পরে থাকতে পারে তানজিনার ধরনার বাইরে ছিল !

লোকটা বাইরের গড়ন একেবারে ছিপছিপে ! কালো আলখাল্লা টা ঢিলাঢোলা হলেও স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে লোকটা বেশ চিকন আর একটু লম্বা ! প্রয়োজনের তুলনায় একটু যেন বেশি লম্বা ! এমন নম্বা মানুষ সাধারন আজকাল দেখা যায় না !



হঠাৎই তানিজনা একটা বিষয় লক্ষ্য করলো ! কালো আলখাল্লা পরা লোকটা পাশের বাসা রইস আঙ্কেলের পিছনেই কেবল ঘুরঘুর করছে । অন্য কারো পিছনে যাচ্ছে না ! আরেকটা বিষয় আশ্চার্যের বিষয় অন্য সবার আচরনে মনে হচ্ছে কালো লোকটাকে কেউ যেন দেখতে পাচ্ছে না ! কেবল তানজিনা নিজের ঘর থেকে পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে !

কেন ?



লোকটার মতলব তো ঠিক সুবিধার মনে হচ্ছে না !

একবার কি আঙ্কেলকে চিৎকার করে সাবধান করে দেবে নাকি ?

তনজিনার নিজের ভিতরেই কেমন একটু দ্বিধা বোধ করলো ! ডাকতে যাবে ঠিক তখন তানজিনার চোখে এক অদ্ভুদ দৃশ্য ধরা পড়ো !

কালো আলখাল্লা পরা লোকটা হঠাৎ করেই নিজের মাথার কালো কাপড়টা সরিয়ে ফেলল ! তানজিনা অবাক হয়ে দেখলো কালো কাপড়ের আড়াল থেকে যে মুখটা বেড়িয়ে আসলো সেটা আর কারো নয় স্বয়ং রইস আঙ্কেলে নিজের চেহারা ! একি চেহারার দুজন !!



রইস আঙ্কেল এক জায়গার দাড়ালো ! এতোক্ষন একভাবে হেটে সে খানকি টা ক্লান্ত হয়ে গেছে । একটু বিশ্রাম দরকার !

এতোক্ষন কালো লোকটা রইস আঙ্কেলের পিছন পিছন ঘুরছিল কিন্তু এখন লোকটা একেবারে তার সামনা সামনে দাড়িয়ে আছে । কিন্তু রইস আঙ্কেল সেটা দেখতে পাচ্ছে বলে মনে হল না ! অন্তত তার আচরনে তো সে রকম কিছু মনে হল না !



তানজিনা একভাবে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে !

কিছু একটা হতে চলেছে । তানজিন মনের ভিতর কেবল একটা কথাই মনে হল খারাপ কিছু একটা হতে চলেছে !

কয়েক মূহুর্তের নিরবতা । তারপর তানজিনা দেখতে পেল কালো লোকটা মুহুর্তের ভিতরেই সচল হয়ে রইস আঙ্কেলের শরীরের ভিতর ঢুকে পড়লো ! রইস আঙ্কেল কয়েক মুহুর্ত একদম চুপ তারপর বুকে হাত দিয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন ! আসে পাশে লোকজন তাকে ধরাধরি করে বাসায় নিতে চাইলো কিন্তু তানজিনার মনে হল রইস আঙ্কেল মারা গেছে !

এমন মনে হওয়ার কোন কারন নেই তবে তানজিনার মনে হল সে মারা গেছে !





দুই

অপু হাসতে হাসতে বলল

-তো বেসিক্যালি তুমি কি বলতে চাচ্ছ ? তুমি আজরাইল দেখতে পাও ?

তানজিনার মেজাজটা খারাপ হল ! মুখ গোমড়া করে বলল

-এই জন্য আমি তোমাকে বলতে চাই নি !

-আরে আরে রাগ কর কেন ?

-রাগ করবো না ? আমি এই কটা দিন কি পরিমান মানষিক কষ্টের ভিতরে আছি আর তুমি আমার সাথে ফাইজলামি করছো ?

-আচ্ছা তুমি নিজেই একটু ভেবে দেখো তো তুমি কি বলছো ? অন্য কেউ হলে তোমাকে স্রেফ পাগল ভাববে ! আর কিছু না !

-আচ্ছা ঠিক আছে আমি পাগল ! পাগলের সাথে প্রেম করতে হবে না তোমার !

এই বলে তানজিনা আর বসলো না ! উঠে পড়তে চাইলো ! কিন্তু অপু তাকে উঠে যেতে দিল না ! চট করেই তার তার হাত ধরে আবার বসিয়ে দিল ! হাসি মুখে বলল

-আমার পাগলই ভাল ! বেশি সুস্থ মেয়ের সাথে প্রেম করে মজা নেই ! আর তুমি তো পাগল না ! মহিলা পাগল ! আমার সুইট পাগলী !

-তুমি ছাড়ো.....।

তানজিনা কথা শেষ করলো না ! ওর চোখ আটকে গেল রাজু ভাস্কর্যের ঠিক পাশেই একটা ছেলের দিকে ! বিশ বাইশ হবে বয়স ! কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ ! চোখে একটা মোটা ফ্রেমের চশমা !

তানজিনা আর অপু টিএসসির এই পাশটা বসে আছে ! তানজিনার মুখের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যেতেই অপু বলল

-এই কি হল ?

-ঐ ছেলেটাকে দেখছো ?

-কোন টা ?

-ঐ যে কালো নীল টিশার্ট পড়া কাঁধে ব্যাগ !

অপু তানজিনার ইশারা লক্ষ্য করে তাকালো ! বলল

-ঐ যে মোটা ফ্রেমের চশমা পরা !

-হুম !

-হুম ! কি সমস্যা ?

-ওর ঠিক পিছনের একজন কে দেখতে পাচ্ছো কালো আলখাল্লা পরা !

অপু কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল

-আমি কেবল কালো জিন্স পরা ঐ সুন্দরী মেয়েটাকে দেখতে পাচ্ছি ! আর কাউকে তো দেখা যাচ্ছে না !

-অপু !

কথার মাঝে কিছুটা বিরতি ! তানজিনা বলল

-ছেলেটা এখনই মারা যাবে !

অপু হয়তো তানজিনার এই কথাটাও উড়িয়ে দিতো হেসে কিন্তু তানজিনার বলার ধরনে দেখে অপু কোন প্রকার হাসি ঠাট্টা করলো না । আরও ভাল করে বলল কারতে পারলো না !



তানজিনার মত অপুও তাকিয়ে রইলো ছেলেটির দিকে !

ছেলেটি খানিকটা বেখিয়ালে পথ চলছে ! কোন দিকে যেন হুস নেই ! হাটার ধরন দেখেই অপু মনে হল আসলে ছেলেটি সুস্থির নেই ! দুই পায়ের ভিতর কোন সমন্বয় নেই !

এই ভাবে হাটতে থাকলে ছেলেটি দুর্ঘটনায় পড়বে !

অপু উঠতে যাবে তখন তানজিনা অপু হাত চেপে ধরলো !

কেবল মুখ দিয়ে একটা শব্দ বের হয়ে এল

-এখন !!!



অপু লক্ষ করলো ছেলেটি হাটতে হাটতে হঠাৎ করেই দুই পায়ের উপর ব্যালেন্স হারিয়ে ঠিক রাস্তাট মাঝে খানে চিৎ হয়ে পরে গেল ! আর পরবি তো পড় ঠিক ঐ সময়ে পাশ দিয়ে একটা ল্যান্ড রোভার যাচ্ছিল । গতি খুব বেশি ছিল না কিন্তু ছেলেটি একেবারে চিৎ হয়ে পরেছে । মাথাটা পড়েছে একেবারে চাঁকার নিচে !





তিন

-তুমি নিশ্চিত এই জায়গা ?

-তাই তো মনে হচ্ছে !



তানজিনা নিজের আপন মনের বাড়ির চারিপাশে ঘুরে দেখতে লাগলো ! আসলেই কি এটা সেই জায়গা !



আজকে তানজিনা আর অপু বিক্রম পুরের এই সিরাজদিখান নামের এই জায়গাটাতে এসেছে ! গ্রামের নামটা ঠিক বলতে পারবে না ।

পুরোনো দুই তলাবাড়ি ! টিনের ! বেশ বড় ! এদিককার বাড়ি গুলো প্রায় সবই টিন দিয়ে তৈরি ! বর্ষাকালে এই জায়গা গুলোতে নাকি একেবারে পানি উঠে যায় তাই সহজে কেউ পাকা বাড়ি করতে চায় না !

তানজিনার হঠাৎ বলল

-আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এই জায়গায় আমি এর আগেও একবার এসেছি ! কেমন জানি পরিচিত মনে হচ্ছে !

অন্য সময় হলে হয় তো অপু হেসে উঠতো কিন্তু আজকে উঠল না ! কারন ঢাকা থেকে এতো টা পথ তানজিনার কথা অনুযারী ওরা এসেছে !

অপু গাড়ী চালিয়েছে তানজিনা চোখ বন্ধ করে একবার বলেছে ডানে যাও একবার বলে বাঁয়ে যাও ! আস্তে আস্তে এখানে এসে পৌছেছে !

কিন্তু অপুর যতদুর ধারনা সে কিংবা তানজিনা কেউ এখানে এর আগে আসে নি ! তাহলে সে কেমন করে পথ চিনলো !

অপু বলল

-তাই ?

-হুম ! কেন জানি মনে হচ্ছে এই বাড়িটার পিছনে একটা ডোবা পুকুর আছে !

অপু তাকিয়ে দেখলো ! বাড়ির পিছনের দিকে যাওয়ার কোন উপায় নেই ! যেতে হলে হয়তো বাড়ির ভেতর দিয়েই যেতে হবে !

অপু বলল

-চল ভেতরে যাওয়া যাক !





বাইরে থেকে বাড়িটাকে যতটা পুরানো মনে হয় ভেতরে আসলে তত টা পুরানো না ! বরং বেশ পরিস্কার পরিছন্ন এবং পরিপাটি মনে হচ্ছে । ওদেরকে আসতে দেখেই বাড়ির বারান্দায় বসে থাকা এক মাঝ বয়সী লোক এগিয়ে এলো !

লোকটা মাথায় ঘন চুল। যার অল্প কিছুতে পাক ধরেছে । চেহরা বেশ সম্ভ্রান্ত ভাব আছে ! পরনে একটা কালো খদ্দরের পাঞ্জাবী আর লুঙ্গি !

লোকটাই আগে কথা বলল

-আপনাদের তো ঠিক চিনলাম না !

-আসলে আমরা ঢাকা থেকে এসেছে ! আমি অপু রায়হান ! এই আমার বন্ধু তানজিনা ! আমরা এসেছি ঢাকা থেকে !

-আচ্ছা ! আসুন ভেতরে আসুন !



বারান্দায় ওদের বসায় ব্যবস্থা করা হল !

বাড়ি টা মনে হচ্ছে গ্রামের গেরস্ত পরিবার ! অনেকেই দেখা যাচ্ছে আসছে যাচ্ছে ! ঘরের ভেতর থেকে কেউ কেউ আবার উকি মারছে । দেখার চেষ্টা করছে !

ভ্রলোক নিজেই নিজের পরিচয় দিলেন ! ভদ্রলোকের নাম আব্দুল গাফফার চৌধুরি ! এই গ্রামের একজন গেরস্ত পরিবার, জানা গেল ঢাকায় লোকটা আড়তের ব্যবসা আছে ! সদর ঘাটে !

কথা বার্তা বেশ পরিস্কার শিক্ষিত মনে বেশ !

গাফফার চৌধুরী বলল

-এবার যদি বলতে আপনাদের আসার কারন টা কি ?

অপু একটু যেন অস্বস্তি বোধ করলো ! কিভাবে বলবে ঠিক বুঝে উঠে পারলো না ! অপুর অস্বস্তি দেখে তানজিনা নিজেই বলল

-আপনাদের বাড়ির পিছনে কি কোন ডোবা আছে ?

গাফফার চৌধুরী খানিকটা অবাক হয়ে বলল

-আছে ! কেন ?

আবারও কিছুটা নিরবতা ! তানজিনা বলল

-শুনতে হয়তো আপনার কাছে একটু অবাক লাগবে তবুও বলছি, আপনার পরিবারের কেউ কি কাউকে আই ডোনেট করেছে আই মিন চোখ দান করেছে ?

কথাটা শুনেই গাফফার চৌধুরী কেমন একটু গম্ভীর হয়ে গেল !

কিছুক্ষন কোন কথা বললেন না । হঠাৎই গাফফার চৈধরীর চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো !

অপু তাড়াতাড়ি বলল

-দেখুন আমরা আসলে আপনাকে হার্ট করার জন্য কিছু বলি নি ! আমরা কেবল জানতে চাইছি ! যদি ..।

চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল

-না না ঠিক আছে ! তোমাদের এই বাড়ির ঠিকানা কে দিয়েছে ?

-আসলে কেউ দেয় নি ! তানজিনা আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে ! আসলে জিনিসটা আজিব শোনাবে কিছুটা তবে মাস তিনেক আগে তানজিনার একটা বড় এক্সসিডেন্ট হয়, সেখানে ওর চোখ দুটো বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ! ভাগ্য ভাল যে সঙ্গে সঙ্গেই ডোনার পাওয়া গেছিল ! এখন আমাদের মনে হচ্ছে মানে তানজিনার মনে হচ্ছে ডোনারটা এই বাসার কেউ ছিল !



এই কথা বলার পরই হঠাৎ ঘরের ভেতর থেকে এক মহিলা ছুটে বেড়িয়ে এল ! তারপর তানজিনার চোখের কাছে চোখ নিয়ে একভাবে তাকিয়ে রইলো !

ঘটনা এটোটাই দ্রুত ঘটলো যে সবাই একটি অপ্রস্তুত হয়ে গেল !

মহিলা কিছুক্ষন তাকয়ে থেকে বলল

-হ্যা ! এটা আমার মিলির চোখ ! আমার মিলির ! আমার মেয়ের চোখ !!







চার

অপু একটু অবাকই হয়েছ । একটু না বেশ খানিকটা অবাক হয়েছে ! এতোদিন তানজিনার কথা গুলো ওর বিশ্বাস হয় নি ! কিন্তু কোন প্রকার ঠিকানা ছাড়া তানজিনা যেমন করে ওর আই ডোনার কে খুজে পেল তা আসলেই খানিকটা অবাক করার বিষয় !

গাফফার চৌধুরী বলল

-আমি জানতাম একদিন কেউ কেউ না কেউ আসবে !

-কিভাবে জানতেন ?

-আসলে তুমি যে কথা গুলো বলত সেটা আমার মেয়েটাও বলতো ! বলতো তার ভেতরে নাকি কিছু একটা আছে ! শেষ সময়টাতে ও কেমন জানি কথা বার্তা বলতো ! ওর ভিতর কি জানি আছে ! আমার মেয়েটা ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পরেছে ! তাই ওর কথা গুলো ফেলে দিতে মন চাই তো না ! তবে যখন ও মরনের পরে চোখ দান করার কথা বলল তখন আমরা কেউই রাজি ছিলাম না ! কিন্তু মেয়ের শেষ ইচ্ছা কিছুতে ফেলে দিতে পারলাম না । আমি জানতাম আমার মেয়ের চোখ একদিন কেউ নিয়ে আসবে । মাঝে মাঝে ও অদ্ভুদ কিছু কথা বলতো যার অনেক টাই আশ্চার্য ভাবে সট্যি হয়ে যেত ! সেই চোখই তুমি পেয়েছ !

-জি ! সাথে সাথে সেই কিছু একটাও ! তাই না ?

-হুম !



গাফফার চৌধুরী একটু সময়ের জন্য ভেতড়ে চলে গেলেন ! ফিরে এলেন কিছু সময় পরেই ! হাতে একটা ছোট নোটবুক !

-এটা নাও !

তানজিনা নোট বইটা হাতে নিল !

-এটা মিলির শেষ সময়ের সঙ্গি ! ও অনেক কিছু লিখেছে । হয়তো তুমি বুঝতে পারবে ! আর আজকে তোমরা দুপুরে দেখেও যাও ! মিলির মা তোমাকে পেয়ে যেন তার মেয়েকে পেয়েছে ! তোমরা খেয়ে গেলে অনেক খুশি হবে !





ঢাকা পৌছাতে পৌছাতে প্রায় রাত হয়ে গেল ! মিলির মা যেন কিছুতেই ওদেরকে আসতে দিবে না ! শেষে বলে এসেছে যে আবার যাবে ওরা ! সময় পেলেই যাবে !

পুরো রাস্তাটা তানজিনা মিলির নোট বুকটা পড়তে পড়তে এসেছে । বিভিন্ন দিনের কথা বার্তা লেখা তাতে ! একবারে শেষের কয়েকটা লাইনে তানজিনার চোখ আটকে গেল !

মিলি লিখেছে

"আকে দিশান কে জড়িয়ে ধরেছিলাম ! যতক্ষন ছায়াটা ছিল ততক্ষন ! এক পর্যায়ে ছায়া টা আমার চোখের সামনে থেকে গায়েব হয়ে গেল ! এর মানে ঠিক বুঝলাম না । মৃত্যু পথযাত্রীকে কি তাহলে বাঁচানো সম্ভব?"

তারপরের কয়েকটা পেজে কেমন আঁকা জুকি করা !

একপেইজে এসে লেখা

"আমি বুঝে গেছি আমাকে কি করতে হবে"

বেশ কয়েকবার লাইনটা লেখা !

ব্যস !

এখানেই নোটবুকটা শেষ ! তার মানে কি ? মিলির শেষ দিন গুলোতেও কি মিলি কাউকে বাঁচিয়েছিল ! মৃত্যুদুতের হাত থেকে ?

আর ও কি বুঝে গেছিল ?

তানজিনা নোটবুক বের বন্ধ করে একটু চোখ বন্ধু করে রইলো !



আচ্ছা হঠাৎ করেই মিলি কেন নিজের চোখটা দান করে দিল !

সব চেয়ে অবাক করার বিষয় যেটা তানজিনা আর অপুকে অবাক করেছে সেটা হল এই চোখ গুলো মিলির নিজের না ! স্কুলে থাকতে মিলির চোখটা প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল ! একটা দুর্ঘটনায় পরে মিলিও নিজের চোখ হারিয়েছিল ! তারপরেই চোখ প্রতিস্থাপন করা হয় !

আশ্চার্য !

কার এই চোখ ?

তানজিনা চোখ বন্ধ করেই চিন্তা করতে লাগলো !





পাঁচ

-আরে আপনি কি করছেন ? আমার মেয়েকে ছাড়ুন !!

বই মেলা ! চারিদিকে অসংখ্যা মানুষ ! মোটামুটি সবাই তানজিনার দিকে তাকিয়ে আছে ! তানজিনা একটা ৫/৬ বছরের মেয়ের জড়িয়ে বসে আছে ! পাশে অপু দাড়িয়ে আছে অপ্রস্তুত ভাবে !

মেয়ের মা বারবার মেয়েকে ছেড়ে দিতে বলছে !

হঠাৎই তানজিনা কঠিন গলায় বলল

-আপনি কি চান আপনার মেয়ে মারা যাক !

এই প্রশ্নটা শুনে হঠাৎ থমকে গেল মহিলা ! অপু নিজেও খানিকটা অবাক হল !

মেয়ের মা আমতা আমতা করে বলল

-জি না !

-তাহলে চুপ করে দাড়িয়ে থাকুন ! আমি আপনার সামনেই আছি । আপনার মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছি না !



তানজিনা আসলেই মেয়েটাকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছে না ! কেবল হাটু গেড়ে বসে রইলো মেয়েটাকে জড়িয়ে ! হাত তিনেক দুরে সেই কালো আলখাল্লা পরা ছিপছিপে লম্বা লোকটা দাড়িয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে !

তানজিনা মেয়েটিকে আরেকটু জোরে জড়িয়ে ধরলো ! যেন কিছুতেই তাকে ছেড়ে দেবে না !

-কি নাম মা মনি তোমার ?

-আমার নাম লিরা !

-লিরা মা মামনি ! আমার নাম তানজি ! বুঝেছো ! তোমার কোন ভয় নেই ! আমি আছি !

-আমার ভয় করছে না !

-এই তো গুড গার্ল ! ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই !



তানজিনা তাকিয়ে দেখলো কালো ছায়াটা এখনও দাড়িয়ে আছে ! হঠাৎ কালো ছায়ার মুখ থেকে কালো কাপড় সরে গেল ! সেখানে লিরার চেহারাটা ভেসে উঠলো ! কিন্তু সেখানে কোন কোমলতা নেই ! আছে এক ধরেনর হিংস্র ভাব ! ছায়ার চোখ দিয়ে যেন আগুন জ্বলছে ! এভাবে আরও কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পরে কালো আলখাল্লা পরা লিরা ভিড়ের ভিতর হারিয়ে গেল !

তানজিনাও তখন লিরাকে ওর মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে মেলা থেকে বেরিয়ে এল !





সন্ধ্যা বেলা !

ওরা দুজন টিএসসিতে বসে আছে !

-ওটা কি ছিল ?

-তুমি বুঝো নি ?

-না ! ওভাবে চিনো না জানো না, একটা বাচ্চা মেয়েকে জড়িয়ে ধরার মানে কি ?

তানজিনা উত্তর না দিয়ে হাসলো কেবল মনে মনে !







পরিশিষ্টঃ

-সকল ফর্মালিটি তৈরি ! আপনি কেবল সাইন করলেই হবে !



তানজিনা একটু হেসে কলম টা তুলে নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় সাইন করে দিল ! যখন বেরিয়ে আসবে তখন সাদা এপ্রোন পরা ভদ্রলোক বলল

-আসলেই আপনাদের মত ইয়াং এডুকেটেড ছেলেমেয়েদের কে এমন মানবতার সেবায় এগিয়ে আসতে দেখে খুব ভাল লাগছে ! মৃত্যুর পর চক্ষু দান একটি মহৎ গুন !

তানজিনা একটু হেসে বলল

-আপনাকেও ধন্যবাদ ! আপনারাও তো কম করছেন না ! ভাল থাকবেন !









স্বীকারোক্তিঃ বেশ কদিন আগে একটা মুভি দেখেছিলাম ! "দ্য আই" গল্পটার প্রথম অংশ টুকু লিখেছিলাম সেই মুভিটা দেখার পর ! গল্পটার মুল কাহিনী সেই নিয়ে যাই নি তবে এই টুকু স্বীকার করতেই হবে গল্পটা ঐ মুভির দ্বারা খানিকটা অনুপ্রানীত!



মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:১৩

বেলা শেষে বলেছেন: Good , beautiful, i like it .
thenk you very much,
Up to next time.

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:২৩

অপু তানভীর বলেছেন: আপনাকেও থেঙ্কু !!

২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৩৫

দি ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো বলেছেন: অপু ভাই, সনি আট চ্যানেলের একটা লাইট অপেরার সাথে কাহিনিটা মিলে গেল।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৪৩

অপু তানভীর বলেছেন: সনি আট ?
মিলে যেতে পারে ! কে জানে !!

তবে দ্যা আই মুভিটার থেকে গল্পটা খানিকটা অনুপ্রানীত !

৩| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:২৮

শান্তির দেবদূত বলেছেন: যদি মৌলিক লেখা হত তাহলে আপনার হাত সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে দিতাম; এতো ভালো লেগেছে গল্পটা। যেহেতু মুভি থেকে অনুপ্রাণিত তাই আপাতত রুপা দিয়ে বাঁধিয়ে রাখা যায়, কি বলেন, অনুপ্রাণিত হয়েও এত সাবলিল লেখা লিখে যাওয়া চাট্টিখালি কথা না। শুভকামনা রইল।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:২৫

অপু তানভীর বলেছেন: মুভি থেকে অনুপ্রনীত খানিকটা ! মুভিতে জ্যাসিকা এলবার মৃত মানুষ দেখতে পেত এবং সে এইটা দেখতে পেত যে মানুষ গুলো মারা যাচ্ছে বা যাবে তাদের আশে পাশে বিভিন্ন ছায়া মুর্তি ঘোরা ফেরা করছে !
সেখান থেকে গল্পটা লেখার কথা মাথায় আসে !!


অনেক অনেক ধন্যবাদ ! আপনার এরকম মন্তব্য পেলে আরও এরকম গল্প লিখতে অনুপ্রানীত হই ! না হলে জানেনই তো আমার লেখার ক্ষেত্র তো এইটা না !

:):)

৪| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:১৮

উদাস কিশোর বলেছেন: দ্যা আই মুভিটার থেকে গল্পটা খানিকটা অনুপ্রানীত হলেও চমত্‍কার লিখেছেন ।
অনেক ভাল লাগলো

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:২৬

অপু তানভীর বলেছেন: আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ !!
গল্প পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা ! :)

৫| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:১৮

উদাস কিশোর বলেছেন: দ্যা আই মুভিটার থেকে গল্পটা খানিকটা অনুপ্রানীত হলেও চমত্‍কার লিখেছেন ।
অনেক ভাল লাগলো

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:২৬

অপু তানভীর বলেছেন: :):):):)

৬| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:৪৫

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: অনুপ্রাণিত হলেও লেখাটা বেশ সাবলীল লেগেছে। +

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:২৭

অপু তানভীর বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ কাভা ভাই !! :):):)

৭| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৩

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: লেখাটি খুবই চমৎকার হয়েছে।














ধন্যবাদ।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:৩০

অপু তানভীর বলেছেন: আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ !! :):)

৮| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৩১

রাসেলহাসান বলেছেন: লেখাটি সুন্দর হয়েছে।।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:৩০

অপু তানভীর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ !! :)

৯| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৫৪

আম্মানসুরা বলেছেন: গল্প পড়ে ভাল লেগেছে তাই লেখক কে অনুসরণে রাখলাম।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:৩১

অপু তানভীর বলেছেন: এতোদিন পরে নিলেন ! যান আপনের সাথে কথা নাই :P :P :P


ধন্যবাদ !

১০| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৫১

আমি সাদমান সাদিক বলেছেন: সুন্দর হয়েছে :)

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:২৫

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ ! :) :) :)

১১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:২২

তাসজিদ বলেছেন: ভিন্নতা আছে, স্বীকার করতেই হবে। লাভার বয়!!

++++++++

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:০৪

অপু তানভীর বলেছেন: হাহহাহাহাহা

লাভার বয় !! =p~ =p~ =p~

১২| ২০ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:৩৫

সিলা বলেছেন: এক্কেবারে মনের মত গল্প কেন বল্লাম? কারন আমার এমন ভয় পাওয়া ধরনের গল্প গুল পরতে খুব ভাললাগে।
ভউতিক গল্প ছবি র দিকে আমার খুবি আকর্ষন।
আমি কিন্তু ভিতুরডিম অনেক ভয়পাই তারপর ভয়ের দিকেই আকর্ষন বেসি!!!

২০ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:৫৩

অপু তানভীর বলেছেন: :):)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.