নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্য রয়েল এক্সপ্রেস অথবা একটি গল্প অথবা অন্য কিছু......

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:৫৯





-কটা বাজে ?

-বারোটা প্রায় ।

-কার ঘড়ির না আপনার ?



ছেলেটা আমার দিকে কিছুক্ষন বোকার মত তাকিয়ে রইলো ! আসলে আমি এমন একটা কথা বলব ছেলেটা ভাবতে পারে নি ! আমি হাসতে থাকলাম ! ছেলেটা বলল

-না ! আমার বারোটা কেন বাজবে ?

-বাজতেও পারে ! বলা যায় না ! ছেলেদের অবশ্য বারোটা বেশি বাজে এবং দ্রুত বাজে !! হি হি হি !



এই রকম একটা অপরিচিত ছেলের সামনে এই ভাবে হাসাটা ঠিক না তবে আমার কেন জানি মজা লাগছে ! অবশ্য আজকে দিনটাই একটা অন্য রকম একটা দিন ! কাজ কারবার করছি সব উল্টা পাল্টা ! যা করছি সবই ভাল লাগছে !





বাসে করে নানী বাড়ি যাচ্ছি ! একা ! এবং সেটা বাসার কেউ জানে না ! গত কাল রাতে আম্মু আমাকে বিনা কারনে বকা দিয়েছে তখন থেকেই মেজাজ খারাপ ছিল ! কিছু একটা করতে ইচ্ছে করছিল যাতে আম্মুর একটা শিক্ষা হয় ! আমি না থাকলে ঠিকই বুঝতে পারবে আমি কি !

তাই তো সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে স্বাভাবিক ভাবে নাস্তা খেলাম তার পর বের হয়ে এলাম ! একটু এদিক ওদিক ঘুরলাম ! তারপর এই সিদ্ধান্ত নিলাম ! কেউ জনাবেও না আমি কোথায় যাচ্ছি ! মোবাইল ফোন টা বন্ধ করে রেখেছি ! এখন খুজে বের করুক আমাকে !

বাস ছাড়তে ছাড়তে প্রায় এগারোটা বেজে গেল ! বাসটার নাম "দ্য রয়েল একপ্রেস" ! নানুদের বাসায় যাবার জন্য সব থেকে ভাল বাস ! আমি টিকেট কেটে উঠে পড়লাম বাসে ! বাসে উঠার পর একবার আম্মুর জন্য মন খারাপ লাগছিল ! আব্বুও নিশ্চই অনেক অস্থির হবে !

হোক একটু ! বিকেলে নানুর বাসায় পৌছে একটা ফোন করে দিলেই হবে !

বাসে উঠার পর অবশ্য বেশ মজা লাগছিল ! একা একা ৪/৫ ঘন্টার একটা জার্নি । মজাই লাগছিল ! তবে ভয়ে ছিলাম আমার পাশে কে বসবে এই টা নিয়ে ! যদিও জানলার ধারে সিট পাই নি, আমি জানলার পাশেই বসলাম ! যে আসবে তাকে রিকোয়েস্ট করলে নিশ্চই আমাকে উঠিয়ে দিবে না !

মেয়েদের রিকোয়েস্ট ছেলেরা ফেলতে পারে না ! তবে মেয়ে আসলে ভিন্ন কথা !





কিছুক্ষন পর কালো ব্যাগ কাধে একটা রোগা পাতলা ছেলেকে আসতে দেখলাম, হাতে একটা নিউজ পেপার ধরা ! আমার সামনে এসে প্রথমে নিজের পকেট থেকে টিকেট বের করলো ! সিট নাম্বার দেখলো ! তারপর আমার পাশের সিটে, মানে যেটা আমার সিট, সেটাতে বসে পড়লো । আমি যে তার সিটে বসে আছি একবার বললও না সিট টা আমার ! চুপচাপ আমার সিটে বসে পড়লো !

এমন কি বাস চলতে শুরু করলেও আমার সাথে একটুও কথা বলার চেষ্টা করলো না ! আশ্চার্য !

আমি একটা মেয়ে, ছেলেটির পাশে বসে অথচ আমার দিকে তাকানোর সময় নেই জনাবের কাছে ।

থাপ্পড় দেওয়া দরকার ! তার উপর একটা ইংরেজি পত্রিকা পড়তেছে ! ভাব নিচ্ছে !





-আপনি কোথায় যাবেন ?

-এই বাস যেখানে যাবে সেখানে !

-আরে কি আশ্চর্য আমিও সেখানে যাবো !

ছেলেটি আবারও আমার দিকে তাকালো । কিছুক্ষন তাকিয়েই থাকলো ! ছেলেটির চোখে কিছু একটা আছে । গভীর কিছু একটা ! একবার তাকিয়ে থাকালে আবার তাকাতে মন চায় !

-আচ্ছা আমি না চুয়াডাঙ্গার কিছু চিনি না !

ছেলেটি কিছুটা অবাক হয়ে বলল

-তাহলে যাচ্ছেন কেন ? আপনার সাথে কেউ নেই ?

-জি না !

-কেউ নেই ?

-উহু !

-আপনার তো অনেক সাহস !

-জি ! আমি অনেক সাহসী ! আজকে বাসা থেকে পালিয়ে যাচ্ছি নানুর বাড়ি ! সাহস না থাকলে কি যেতে পারতাম ?

ছেলেটি আরও কিছুক্ষন আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলল

-এটা সাহস বলে না ! বলে বোকামী ! একটা মেয়ের এভাবে একা একা এতো দুরে যাওয়া ঠিক না !

-বলেছে আপনাকে !



যাক ছেলেটা কথা বলা শুরু করেছে ! সময় টা ভাল যাবে মনে হচ্ছে । আমি আমার নানার নাম বললাম । ছেলেটা চিন্তে পারলো ! অবশ্য আমার নানা ঐ এলাকর একজন বিখ্যাত মানুষ ! অনেক ব্যবসা বানিজ্য আছে ! চিনতে পারার কথা !





ফেরী ঘাটে এসে বেশ কিছুটা সময় লেগে গেল ! একটু জ্যাম ছিল ! আমার একটু ভয় ভয় করতে শুরু করলো ! রাত হয়ে গেলে আবার কেমন হয়ে যাবে ! ভেবেছিলাম বিকেলের ভিতরেই পৌছে যাবো ! কিন্তু ফেরি ঘাটেই তো একটু দেরি হয়ে গেল ! বাসায় একবার ফোন দিবো কি না বুঝতে পাছি না !

না থাক ! শহরের বুকেই নানুর বাসা ! খুব বেশি সমস্যা হবে না !

কিন্তু ছেলেটার চোখে একটা অন্য রকম অস্থিরতা দেখতে পাচ্ছিলাম ! ছেলেটা এতো অস্থির কেন হচ্ছে ?

বাসায় কি খুব জরুরী কাজ আছে ?





ফেরীতে উঠেই ছেলেটি বাস থেকে নিচে নেমে গেল ! আমি কিছুক্ষন এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করলাম ! উপরে যাওয়ার পথে দেখি ভিআইপি কেবিনে ছেলেটা বসে আছে চুপ করে ! সামনে এক কাপ চা কিন্তু ছেলেটার চোখের দৃষ্টি দুরে নদীর দিকে !

আমিও ঢুকে পড়লাম ভিতরে ! বয়কে চা দিতে বলে ছেলেটার মুখোমুখি বসলাম !

-আপনি আচ্ছা মানুষ তো ?

আমার কথা ছেলেটার তন্ময় ভাঙ্গলো ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-কেন ?

-বারে এখানে আসবে আমাকে বলবেন না ? আমিও আসতাম !

-ও !

আবারও অন্য দিকে তাকায় ?



পাজি ছেলে ! এদিকে তাকাও ! একটা মেয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে অন্য দিকে তাকানো টা অভদ্রতা !



আমি হঠাৎ বললাম

-আপনার মন খারাপ ?

-কেন ?

-আপনার চোখ দেখে মনে হচ্ছে ! মন খারাপ ?

ছেলেটা কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল

-আজকে আমার প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে !

ছেলেটা কথাটা বলল অন্য দিকে তাকিয়ে ! আমি খানিকটা ধাক্কার মত খেলাম কথাটা শুনে ! অন্তত ছেলেটার কাছ থেকে এই কথা শোনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না !

-আমি যাচ্ছি ওকে শেষ বারের মত একটু দেখতে !

কথাটার ভিতর কিছু একটা ছিল ! আমার বুকটা কেমন যেন কেঁপে উঠলো ! এতো বিষন্ন কোন কথা হতে পারে আমি ভাবতেও পারি নি !



ছেলেটা অন্য দিকে তাকিয়ে কথা বলছিল ! আমার চোখে চোখ রেখে নয় ! আমার কেন জানি মানে হচ্ছে ছেলেটা নিজের চোখের জল আটকানোর আপ্রান চেষ্টা করছে ! একটা অপরিচিত মেয়ের সামনে কেঁদে ফেলাটা নিশ্চই লজ্জার হবে !



আমি কি বলবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না ! বললাম

-আমার নাম স্পর্শীয়া ! তুমি ?

হঠাৎ করে কেন জানি ছেলেটাকে তুমি করে ডাকতে ইচ্ছে হল ! কেন হল আমি বলতে পরবো না !

ছেলেটি বলল

-আমি সুমন !

-কখন জানতে পেরেছো বিয়ের কথা টা !

-আজই ! ওর সাথে অনেক দিন যোগাযোগ ছিল না !

-কেন ?

-কোন কারন নেই ! আসলে আমাদের দুজনেরই জানা ছিল যে আমাদের বিয়ে হবে না কোন দিন ! আমার পড়ালেখা শেষ হয় নি ওদিকে ওর বিয়ের বয়স হয়ে যাচ্ছে ! এসব নিয়ে দুজনেই একটু ডিপ্রেসড ছিলাম ! তবে ...।

-তবে ?

-থাক ! এখন বলতে ভাল লাগছে না !



আমি আর কিছু জানতে চাইলাম না ! কেবল সুমনের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম ! ছেলেটার চোখে গভীরতা দেখেছিলাম এখন সেটা আরও পরিস্কার দেখা যাচ্ছে ! কাছের মানুষটিকে হারানোর কষ্ট ! গভীর কষ্ট !



ফেরি পার হয়ে আবার যাত্রা শুরু হল তবে এবার ছেলেটি অত কথা বলল না ! আমিও কথা বললাম না বেশি ! সুমনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম !

কত বড় একটা কষ্ট নিয়ে ছেলেটি ছুটে চলেছে স্বভাবিক ভাবে ! নিশ্চই বুকের ভিতর তোলপাড় চলছে ! বাইরে না দেখা গেলেও ঝড় চলছে ঠিকই !

কিন্তু বাইরে থেকে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না !





চুয়াডাঙ্গায় বাস টা যখন থামলো তখন সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে ! সুমন যখন রিক্সা নেমে তখনই আমি বললাম

-আমি তোমার সাথে আসি ?

-কোথায় ?

-বিয়ে বাড়িতে ! আসবো ?

সুমন কি যেন ভাবলো ! বলল

-আচ্ছা !



দুজনেই রিক্সা চেপে বসলাম ! যতই রিক্সাটা এগোচ্ছিল সুমনের উৎকন্ঠা আমি বুঝতে পারছিলাম ! সাথে সাথে আমি নিজেও যেন কেমন যেন অনুভব করছিলাম ! বোঝাতে পারবো না !

রিক্সাটা কয়েকটা বাক নিয়ে একটা গলির মাথায় এসে থামলো ! সামনে অন্ধকার ! কিছুক্ষন দাড়িয়েই রইলাম ! রিক্সাটার পাশে ! সুমন লম্বা একটা নিঃশ্বাস টেনে সামনে হাটা দিল ! আমি ওর পিছনে ! একটা বাড়ির সামনে এসে দাড়ালাম !



পুরো বাড়ি লাইটিং করা ।আলো জ্বলছে নিভছে ! তবে ভেতর থেকে খুব বেশি আওয়াজ আসছে না। কেমন একটা নিরব নিরব ভাব !

তবে কি বর যাত্রী বউ নিয়ে চলে গেছে ?

সুমন শেষ দেখা করতে পারলো না !

আমি অন্ধকারের ভিতরেও সুমনের মুখের অস্থিরতা ঠিকই বুঝতে পারছিলাম ! সুমন অস্থির ভাবে কাকে যেন ফোন দিল ! ওর হাত কাঁপছিল !

কিছুক্ষন পরেই একজন বের হয়ে এল !

কিছুক্ষন কেউ কোন কথা বলল না !

আমি কেবল অন্ধকারে দুটি ছায়া মুর্তি দেখতে পাচ্ছিলাম ! সুমন কেবল একটা কথা জানতে চাইলো

-কখন গেছে ?

-এই তো ঘন্টা খানেক !





সুমন আর কিছু না বলে পিছন ফিরে হাটা দিল ! আমি এলাম ওর পিছন পিছন ! কেন জানি আমার নিজের খুব কান্না আসছিল !

কান্না আসার কোন কারন নেই তবুও !

ল্যাম্প পোস্টটার নিচে আমাদের রিক্সাটা দাড় করানো ছিল ! আমি ওখানে গিয়ে সুমনের চেহারা দিকে তাকালাম !

ছেলেটা এখনও চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করছে !

বোকা ছেলে !

একটু কাঁদো !

কেউ যদি কান্না দেখেই ফেলে ক্ষতি কি !

কান্না চেপে রেখো না !

কান্না চেপে রাখতে নেই !





সুমন রিক্সায় উঠতে উঠতে বলল

-চল তোমাকে পৌছে দিয়ে আসি ! রাত হয়ে গেছে !

আমি চুপ করে উঠে বসলাম ওর পাশে ! রিক্সা আবারও চলতে শুরু করলো ! পুরো রিক্সা ভ্রমনে ও কেবল একটা কথা বলল

-জানো স্পর্শীয়া, আমার জীবনের একটা একটা খুব বড় ইচ্ছে ছিল ওকে বউয়ের সাজে দেখবো ! লাল বেনারশি হাত মেহেদী....

সুমন কথাটা শেষ করলো না ! দেখলাম হাত দিয়ে চোখ মুছলো !

কাঁদলো কি একটু ?

আমার আবারও কান্না আসতে লাগলো !

আশ্চার্য আমার কান্না কেন আসছে ?

একটা অচেনা ছেলের জন্য কান্না কেন আসছে ?





নানুর বাড়ির গেটের সামনে নেমে পরলাম ! সুমনও নামলো ! একটু হাসার চেষ্টা করে বলল

-আচ্ছা তাহলে আসি ?

সুমনের কন্ঠে কিছু একটা ছিল ! আমি সুমন কে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে ফেললাম !

কেন ফেললাম জানি না ! কেবল সুমনের কষ্টটা নিজের কষ্ট মনে হচ্ছিল !

খুব বেশি কষ্ট লাগছিল !



সুমন ঐ রিক্সা নিয়েই চলে গেল ! আমার চোখ দিয়ে তখনও পানি পড়েই চলেছে ! গেট বেল বাড়িয়ে যখন নানু বেরিয়ে এল তখনও আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে !

নামু আমাকে দেখে না যত টা না অবাক হয়েছে তার চেয়েও বেশি অবাক হল আমার চোখের পানি দেখে ! বলল

-এই কি হয়েছে তোর ? কাঁদছিস কেন ? আমার নানু ভাই টা কাঁদছে কেন ? এই কে আসিস তোরা ? এদিকে আয় ! আমার নানু ভাই কাঁদছে কেন ?



আমি কোন কথা বললাম না ! কেবল নানু জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চললাম !

এই কান্না কার জন্য আমি জানি না ! কান্নার কারনও আমার অজানা !

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:০৮

নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন: :( :(

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৮

অপু তানভীর বলেছেন: :( :(

২| ০১ লা মে, ২০১৪ রাত ১২:০৭

স্বপ্নের ফেরিওয়ালা নিলয় বলেছেন: অনেক সুন্দর

০১ লা মে, ২০১৪ দুপুর ১:২৬

অপু তানভীর বলেছেন: :) :) :) :)

৩| ০১ লা মে, ২০১৪ রাত ১২:৩২

ক্লান্ত তীর্থ বলেছেন: কান্না কান্না কান্না!

কি অপূর্ব এ কায়া-কান্না!

০১ লা মে, ২০১৪ দুপুর ১:২৭

অপু তানভীর বলেছেন: কান্নার আছে আলাদা একটা ভাষা !

৪| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:১৫

অবাধ্য সৈনিক বলেছেন: :((

১৫ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:৫৫

অপু তানভীর বলেছেন: :) :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.