নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ জারিনের গল্প

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫৩









এক



-এই কই তুমি ?

-কই থাকবো আর ! অফিসে ।

-অফিসে মানে ? তোমার না এখন বাইরে থাকার কথা ?

-কোথায় বাইরে থাকার কথা ?

-মানে কি ? ফাজলামো কর নাকি ? তোমার জন্য শাফায়েত কে কাটিয়ে এসেছি । এখন অফিসে বললে তো হবে না ! এখনই নিচে নামো ! এক্ষন নিচে নামবা !

-জারিন, দেখো একন কাজের সময় ডিস্টার্ব করবা না ! তোমাকে বলেছিলাম বাইরে যাবা নাকি তুমি তখন পরিস্কার বলে দিলে তুমি তোমার জানুর সাথে বের হবা ! তো যাও এখন তার সাথে । আমি নাই । এখন কাজে আছি ।



কিছুক্ষন ফোনের ওপাশে কোন কথা শুনতে পেলাম না । জারিন নিশ্চই রাগ সামলানোর চেষ্টা করছে । রেগে গেলে জারিনের মুখ দিয়ে ঠিক মত কথা বের হয় না । কয়েক মুহুর্ত পরে জারিন বলল

-তুই নিচে নামবি নাকি আমি উপরে আসবো ? টাই ধরে টানতে টানটে নিয়ে আসবো কিন্তু !

-টাই পাচ্ছো কই ? আমি তো টাই পরি না ! তুমি জানো না ?

-সমস্যা নেই আমার সাথে টাই আছে । আমি আগে টাই পরাবো তার পর টানতে টানতে নিয়ে আসবো । ৫ মিনিট সময় দিলাম !

এই বলে জারিন ফোন রেখে দিল ।

আমি আর বেশি অপেক্ষা করাটা সমীচিন মনে করলাম না । জারিন যেমন মেয়ে উপরে চলেও আসতে পারে । বস কে বলে নিচের দিকে হাটা দিলাম ।





ভাবতে অবাক লাগে কদিন আগেও জারিনের সাথে আমার সম্পর্ক অন্য রকম ছিল । আমাকে যেন চেনেই না এমন একটা ভাব ধরে সব সময় আমার সামনে দিয়ে হাটা চলা করতো । কথা বলার সময় কেমন টেনে কথা বলতো । আর আমি আঠার মত লেগে ছিলাম ওর সাথে । ও পাত্তাই দিতো না । একদিন আমাকে সরাসরি বলল

-আপনি আমার পেছনে কেন লেগেছেন ?

-পেছনে লেগেছি ?

আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম এমন একটা ভাব করলাম । বললাম

-আপনি কি লোকাল বাস নাকি যে আপনার পেছন পেছন লেগে থাকবো, জাগয়া না থাকলেও উঠার চেষ্টা করবো ?

জারিন আমার দিকে ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে থেকে বলল

-বাহ ! খুব সুন্দর মুখের ভাষা দেখা যাচ্ছে আপনার । যাই হোক আমার কিন্তু বয়ফ্রেন্ড আছে ।

আমি বিন্দু মাত্র দমে না গিয়ে বললাম

-তো ? আপনি কি ভেবেছেন যে আপনার সাথে প্রেম করার জন্য আমি আপনার পেছনে লেগেছি ? আচ্ছা আপনারা নিজেদের কে কি ভাবেন বলেন তো ? সবাই আপনাদের সাথে প্রেম করতে চায় ? আজিব !



আমার এই কথা শুনে জারিন যেন একটু থামলো । কি বলবে ঠিক খুজে পেলো না ! আমি এই নিরবতাকে কাজে লাগালাম । বললাম

-আপনি আপনার প্রেমিক ছাড়া আর অন্য ছেলের সাথে কথা বলেন না ?

-কেন ?

-আহা বলেন না ? বলেন না ?

-বলি ?

-নিশ্চই আপনার অনেক ছেলে বন্ধু আছে ? আছে না ?

-আছে ?

-সবার সাথেই কি আপনি প্রেম করেন ?

-কি বলছেন এসব ?

-এটাই তো ? তেমনি একটা ছেলে কি একটা মেয়ের সাথে কেবল প্রেম করার জন্য কথা বলে । আমাদের কথা বার্তা কি স্বাভাবিক হতে পারে না ?



জারিন সেদিন অবশ্য আর কথা বলে নি । ওখান থেকে উঠে চলে গিয়েছিল । কিন্তু পরদিন আবার এসে হাজির ।



তারপর থেকেই আমাদের কথা বলা শুরু । এক সাথে আড্ডা হাসি কান্না ঝগড়া কত কিছু । ওর সাথে সময় গুলো কেমন করে চলে যায় ! বুঝতেই পারি না !





নিচে নেমে দেখি ঠিক রাস্তার পাশেই ও দাড়িয়ে আছে । চোখে কালো সান গ্লাস চুল গুলো খোলা । আমাকে দেখতেই এগিয়ে এল !

-এতো দেরি হল কেন ?

-আরে বাবা অন্যের চাকরি করি তো ! অনুমুতি নিতে হয় না ?

-হুম ! তোমরা কেবল চাকরি কর !

আমি হেসে বললাম

-তোমার প্রেমিক কই ?

-জানি না !

-ঝগড়া হয়েছে ?

-জানি না ।

-আরে বাবা । কি হয়েছে ?

-কিছু হয় নি । তুমি চাও আমি চলে যাই ?

-আচ্ছা ঠিক আছে । রিক্সা নেব !

-না ।

-তাহলে ?

-আগে ফুচকা খাওয়াও তারপর ?

-এই সময়ে ফুচকা ?

-হুম ।

-জারিন !

-আমি খাবো খাবো খাবো !

জারিন বাচ্চা মেয়েদের মত চিৎকার করে উঠলো । আমি হাসলাম ।



জারিনের ফুচকা আবার খুব বেশি পছন্দ । সময় অসময় নাই । সকাল বিকাল দুপুর রাত । দেখা হলেই তাকে ফুচকা খাওয়াতে হবে । তাও আবার কেবল রাস্তার পাশের ফুচকা ।







দুই



-আমাকে তুমি বিয়ে করবে ?



বিকেল এখনও হয় নেই । ছুটির দিন, তাই এলাকাটা একটু বেশি ভিড় । মানুষ জন রাস্তার এদিক ওদিক দারিয়ে বসে গল্প করছে । আমি আর জারিনও এক কোনায় বসে আছি । ওর হাতে ফুচকার প্লেট । আমার হাতে একটা পানির বোতল । এমন সময় জারিন কথা টা বলল । ওর চেহারা দিকে তাকিয়ে মনে হল না যে ও আমার সাথে রসিকতা করছে । আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম

-সিরিয়াস ?

-হুম ! করবে ?

-অবশ্যই করবো ! চল এখনই বিয়ে করে ফেলি ! কিন্তু আমার প্রতি এতো সদর হলে কেন ? তোমার সাফায়েত কোথায় ?

-ও আমাকে বিয়ে করবে না ! আমাকে পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছে ওর পক্ষে আমাক বিয়ে করা সম্ভব নয় ?

-কেন ? কারন বলে নি !

-না । বলেছে .....।

জারিন আর কথা না বলে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো । আমি আবার বললাম

-তুমি কি সত্যি সিরিয়াস ?

-হুম ।

-আজই ?

-আজই !

-আরেকবার ভেবে দেখো কিন্তু ? এটো বড় একটা সিদ্ধান্ত !

-আমি অনেক ভেবেছি । আর এতো ভাবলে চলবে না । তুমি কি চাও যে আমি সারা জীবন তার জন্য বসে থাকি সে আমাকে বিয়ে করবে না বলে আমি তার বিরহে চিরো কুমারি হয়ে থাকবো ?

-না মানে আমি সেই কথা বলি নি তো ?

-তাহলে ? দেখো তোমাকে আমার বেশ পছন্দ । যদি তুমি বিয়ে না করতে চাও ওকে ফাইন ! বাবা আমার বিয়ের জন্য ছেলে দেখা শুরু করেছে ! তাদের কাউকে বিয়ে করে ফেলবো !

-আরে কি বল ! আমি এই সুযোগ ছাড়বো নাকি ? চল চল এখনই চল !

-ফুচকা শেষ করি !





তিন



আর কোন চিন্তা ভাবনা না । ওখান থেকে সোজা কাজী অফিস । কয়েকজন বন্ধু ফোন করে ডেকে আনলাম । এক ঘন্টার ভিতর কাজ শেষ ! জীবিত থেকে বিবাহিত । কিন্তু খুব বেশি খারাপ লাগছে না । জারিনের দিকে তাকিয়ে দেখি ও কেমন লজ্জা লজ্জা চোখ নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে । আমার দিকে তাকাতে যেন লজ্জা পাচ্ছে !

-আমি বললাম

-তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো ?

-না লজ্জা পাবো কেন ? ইডিয়েটের মত কথা বলবা না !

-হুম ! ইডিয়েট না হলে কি আর কেউ বিয়ে করে ?

-এই কি বললা ? কি বললাম তুমি ?

-কিছু না ! কিছু না ! তো কি করবো এখন ? তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি !

-কার বাসায় ?

-তোমাদের বাসায় ?

-বাহ রে ! আমি আমার স্বামীর বাসায় যাবো ! আর কারো বাসায় না !

-সিরিয়াস লি ?

-জি সিরিয়াসলী । চলেন বাসায় ! বিয়ে করেছেন না এর প্যারাটাও তো নিবেন নাকি ?







পরিশিষ্ট !



জারিন মাঝে মাঝেই বালিশ ফেলে দিয়ে আমার বুকের উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে থাকে । মাঝে রাত পর্যন্ত আমি টের পাই ও ঘুমায় নাই ! একদিন হঠাৎ করেই জারিন বলল

-তুমি জানতে, তাই না ?



পুরো ঘর অন্ধকার ! এর ভিতর জারিনের কন্ঠে কেমন জানি লাগলো । বললাম

-কি জনাতাম ?

-সাফায়েতের বিষয়ে ?

কি বলবো ঠিক বুঝলাম না ! চুপ করে রইলাম ।

-জানতে না ?

বললাম

-জানতাম ।

-তাহলে ? চুপ করে কেন ছিলে ? আর কেনই বা এলে আমার জীবনে ! আমি ওকে ছাড়া আর আর কোন দিন কিছু ভাবতেই পারি নি । ও কিভাবে আমাকে ছেড়ে চলে গেল ! এভাবে আল্লাহ কেন ওকে কেড়ে নিলো বলবা ? কেন ?



অনেক আগে থেকেই জানতাম জারিনের সাফায়েত আর বেঁচে নেই । কিন্তু মেয়েটা তবুও কল্পানায় তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল । সবার সাথে এমন একটা ব্যবহার করতো যেন এই মাত্রই তার সাথে কথা বলেছে ।

এটা নিয়ে ওর বাবা মা খুব বেশি চিন্তায় ছিল ! ওর বাবা মায়ের কাছ থেকে সব কিছু আমি জানতে পারি ! তারপর কি মনে হল জারিনের প্রতি আমার আগ্রহ জন্মালো !



জারিন হঠাৎ করেই ফোঁপানো শুরু করলো ! আমি ওর মাথায় হাত রাখলাম ! বললাম

-সাফায়েত কিন্ত কিন্তু আজকে উপর থেকে তোমাকে দেখে অনেক খুশি হয়েছে । বুঝছো ? তুমি যে তার জন্য নিজের জীবন কে ঐ এক জায়গায় আটকে রেখেছিলে এতে সে কষ্টই পেত কেবল ! আর কিছু না !

বুঝছো ?



জারিন কোন কথা বলল না ! তবে ওর কান্না আস্তে আস্তে থেমে এল ! ঘুমিয়ে পড়লো মনে হয় ধীরে ধীরে । আমি ওর মাথায় হাত রেখে সামনের দিন গুলোর কথা ভাবতে লাগলাম !

মন্তব্য ২১ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৬

আলম দীপ্র বলেছেন: কল্পনা আর বাস্তবের সংমিশ্রণ । ভালো লাগল । অপু ভাই আছেন কেমন ?

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩১

অপু তানভীর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ !


আমি ?
একটু শরীর খারাপ ! বাদ বাকী সব কিছু ঠিক আছে :):)

২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৮

আবু শাকিল বলেছেন: সুন্দর গল্প ।ভাল লাগা নিয়ে পড়ে গেলাম। :) :)

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩৭

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ :):):)

৩| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩২

নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন: ভালো লাগলো :)

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪০

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ :):):)

৪| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪৫

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: বেশ সুন্দর গল্প

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:০১

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ পরিবেশ বন্ধু :):)

৫| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:২০

জয় সুমন বলেছেন: ভাই আজকে কেন জানি চোখের পানি আটকে রাখতে পারলাম নাহ । যাকে খুব ভালোবাসা যায় তাকে কেনও হারাইতে হয় ??? হয়তো একদিন জারিনের জায়গায় আমি থাকবো ।আমার কল্পনার রাজ্যে আমার ভালোবাসার সেই রাজকন্যাকে বাচিয়ে রাখবো ।হয়তো স্বপ্নে তার হাত ধরে হাঁটবো । ভাই আমার রাজকন্যাটার জন্য একটু দোয়া করিয়েন ।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:০৩

অপু তানভীর বলেছেন: আপনার রাজকন্যার জন্য দোয়া রইলো ! কিন্তু এমন কথা কেন বলছেন ? কিচ্ছু হবে না দেখেন ! আপনার রাজকন্যা আপনার কাছেই থাকবে ! :):)

৬| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩৯

কলমের কালি শেষ বলেছেন: হুম.. গল্পটি পড়ে ব্যতিক্রমী ভালো লাগলো । লেখককে ধন্যবাদ । :)

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৪

অপু তানভীর বলেছেন: পাঠককেও ধন্যবাদ :):)

৭| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৬

মৌমিতা আহমেদ মৌ বলেছেন: সবকিছু এত্ত সোজা না!!!! জীবন অনেক কঠিন!!! আর প্রেম ভালোবাসা আরও বেশি কঠিন!!! যাই হোক। মন্তব্য করেছি মানে তো আর বলে দিতে হবে না যে লেখাটা ভালো হয়েছে!! তাই না??? B-)) B-)) এত্ত পিরীতি আসে কোথা থেকে???

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:২৩

অপু তানভীর বলেছেন: জীবনে পীরিতি নাই তো তাই লেখায় দিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় ! :D :D B-)) B-))

৮| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৯

ইনসোমনিয়াক দাঁড়কাক বলেছেন: ভাল লাগল!!

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:২৩

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৯| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:২৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

ভাইয়া, তোমার লেখার হাত অনেক ভালো ।
ভালো কিছু লেখার কাজে লাগাও।
আশা করি তুমি নাম করতে পারবে।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২৩

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য :):)

১০| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:১৯

অঘটনঘটনপটীয়সী বলেছেন: :(

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৭

অপু তানভীর বলেছেন: :( :(

১১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:০৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ভিন্ন স্বাদ..............

++

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫০

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ !!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.