নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আমার নিরক্ষর কিন্তু বুদ্ধিমতী মায়ের কাছ থেকে এই শিক্ষাই পেয়েছিলাম,যথাযথ কর্তব্য পালন করেই উপযুক্ত অধিকার আদায় করা সম্ভব। - মহাত্মা গান্ধী

পদাতিক চৌধুরি

হাই,আমি পদাতিক চৌধুরী।পথেঘাটে ঘুরে বেড়াই।আগডুম বাগডুম লিখি। এমনই আগডুম বাগডুমের পরিচয় পেতে হলে আমার ব্লগে আপনাদেরকে স্বাগত।

পদাতিক চৌধুরি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফ্রম সাতক্ষীরা টু বেলগাছিয়া (খন্ড-১/পর্ব- অষ্টম)

২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৪৯



সেদিন তিনজনে মিলে এক প্রকার ছুটতে ছুটতেই আমরা বাড়িতে চলে আসি।এসে দেখি উঠোনে প্রচুর মানুষের ভিড়।হুডখোলা গাড়িটাকে ঘিরে আশপাশের লোকজনের আগ্রহ ও কারো কারো উঁকিঝুঁকি মারতে দেখে মনে মনে বেশ খুশি হই। কি সুন্দর চকচকে গাড়িটা। গাড়িটাকে অবশ্য আমি আগেও একবার দেখেছিলাম। প্রথমবার কাজে গিয়ে হালদার বাবুর বাড়িতে গাড়িটিকে দেখে অবাক হয়েছিলাম। দাদার কাছ থেকে জেনেছিলাম ওনারা মাঝে মাঝে গাড়িতে করে বেড়াতে যান। কিন্তু কোথায় যান প্রশ্ন করাতে দাদা পাল্টা বলেছিল, যাওয়ার জায়গার কি অভাব আছে? আজ গাড়িটিকে আমাদের বাড়ির সামনে দাঁড়ানো দেখে দাদাকে করা সেদিনের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাই। দাদা যে হেলতো ফেলতো মিস্ত্রি নন,যাকে শহরের বাবুরাও মান্য করেন। ভেতরে ভেতরে রীতিমতো গর্ব অনুভব করতে থাকি। মনে মনে কৃতজ্ঞতা মিশ্রিত ধন্যবাদ দিতে থাকি দাদাকে। দূর থেকে আমাদেরকে এভাবে হন্তদন্ত হয়ে ছুঁটে আসতে দেখে, হালদার বাবু স্মিত হাস্যে গাড়ি থেকে নেমে এলেন। কাছে এসে দাঁড়াতেই দাদাকে জড়িয়ে ধরলেন। দাদা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে,
- আরে আরে বাবু মশাই! এ কি করছেন? আমি যে কাজের মধ্যে ছিলাম;গায়ে ময়লা-টয়লা আছে।
-তার চেয়ে অধিক ময়লা যে আমাদের মনেই আছে রুস্তম ভাই।
দাদা কোনো প্রতিউত্তর না দিয়ে বরং ওনাকে ভদ্রস্থ জায়গায় বসাতে শশব্যস্ত হয়ে পড়লো। মুহূর্তের জন্য এদিক ওদিক ঘোরাঘুরির করে উপায়ন্তর না পেয়ে ওনার হাত ধরে বাড়ির দিকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেও আবার থেমে গেলো। কিছুটা স্বর্গোক্তি করে আপন মনে বলে উঠলো,
-বাবু মশাই মানি লোক; আমার এই ভাঙাচোরা বাড়িতে ওনাকে কোথায় যে বসতে দেই?
দাদার অস্বাভাবিকত্ব বুঝতে হালদার বাবুর বাকি রইলো না। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করতে,
- তোমাকে একদম ব্যস্ত হতে হবে না রুস্তম ভাই। আমি এখানেই ভালো আছি।
কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে উনি আবারো বলতে লাগলেন,
-তোমার পড়শীরা অত্যন্ত ভালো মানুষ রুস্তম ভাই। ওদের সঙ্গে এতোক্ষণে জমিয়ে গল্প করছিলাম। পাশে দাঁড়ানো একজনের দিকে আঙুল দেখিয়ে জানালেন,
-ওই যে মকবুল।ও গাছে উঠে আমাকে ডাব পেড়ে খাওয়ালো। এত জল যে খেয়ে শেষ করতেই পারছিলাম না।
সাথে সাথে আরো জানালেন,
-এত মানুষজনের সঙ্গে কথা বলতে পেরে আমার সত্যিই খুব ভালো লাগছে। এখন বলো কেমন আছো তোমরা?
দাদা উত্তরে জানালো,
-আছি বাবু। আপনাদের আশীর্বাদে ভালো আছি। মাঝের কিছু দিন অবশ্য একটু সমস্যার মধ্যে ছিলাম। এবার দাদাও হাসতে হাসতে পাল্টা জিজ্ঞেস করলো,
- তা বাবু, আপনারা কেমন আছেন? দিদিমণি কেমন আছেন? ছোটবাবুরা দুজনেই ভালো আছে তো?
হালদার বাবু কোনোক্রমে উত্তর দিলেন,
- হ্যাঁ তোমার ছোটবাবুরা সকলেই ভালো আছে। আমিও ভালো আছি। দিদিমণিও ভালো আছেন।
দাদা আবার কি যেন বলতে চাইছিল। এমন সময় হালদার বাবু দাদাকে একপ্রকার থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন,
-তুমি বলছো বটে, ভালো আছ। তবে আমি তো আর অবুঝ নই, কি ঝড়টাই না তোমার মাথার উপর দিয়ে বয়ে গেছে।যাক উপরওয়ালার ইচ্ছায় এখন যে অনেকটাই স্বাভাবিক হতে পেরেছ, এটাই আমাদের বড় পাওয়া।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দাদা এক্কেবারে নীরব হয়ে গেল। সংগত কারণে হালদার বাবুও চুপ হয়ে গেলেন। বেশ কিছুক্ষণ দু'জনে আবার নীরব রইলেন। এবার হালদার বাবু বারদুয়েক গলা খাকারি দিয়েও পরিষ্কার না হওয়ায় কিছুটা আরষ্ট গলায় বলে উঠলেন,
-একটা কথা বলবো বলে এসেছিলাম। কিন্তু বলতে যে বড্ড সংকোচ হচ্ছে রুস্তম ভাই ...
এতক্ষণে দাদা যেন নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছে। মুখের কোনে এক টুকরো হাসি নিয়ে বলে উঠলো,
- বাবু আপনি নিঃসংকোচে বলতে পারেন। তবে আপনি কি বলতে চাইছেন, বিষয়টা আমার কাছে অবোধ্য নয়। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে হয়তো আপনাকে আমার খোঁজে এতদূরে আসতে হতো না। উল্লেখ্য আপনার ওখান থেকে এসে নিজের বাড়িতে কিছুতেই মন বসছিল না। আপনি বড়খোকার কাছ থেকে ইতিমধ্যে শুনেছেন কিনা জানিনা। ওর মা চলে যাওয়ার পর থেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে এতটাই খারাপ অবস্থার মধ্যে ছিলাম যে তা ঠিক বলে বোঝাতে পারবো না। অথচ আমি জানতাম আমার অনুপস্থিতিতে দোকানের কাজকর্ম সমাধা করা আপনার পক্ষে বেশ সমস্যার হতে পারে। উল্লেখ্য একটা কথা আপনাকে বলার সাহস হয়নি কোনদিন। শেষের দিকে ওর মা প্রায়ই বলতো, বয়স হয়ে গেছে এখন যেন আমি শহরের কাজটি ছেড়ে দেই। আমি অবশ্য ওর কথায় শুরুতে খুব একটা আমল দিই নি। শরীর ঠিকঠাক চলছিল বলে প্রায়ই হেসে উড়িয়ে দিতাম। তবে আমারও যে একেবারে সায় ছিল না তা নয়। সারা জীবন বাইরে থেকে কাজ করেছি। এবারে বড় খোকাকে সব বুঝিয়ে চলে যাব বলে ভিতরে ভিতরে তৈরি হচ্ছিলাম। কিন্তু তার আগেই সবকিছু তালগোল পাকিয়ে চলে গেল। সাথে সাথে পরিস্থিতি যে দ্রুত বদলে যাবে তা কল্পনাই করতে পারিনি।
পরিবেশটা আবার থমথমে হয়ে গেল। দাদা মুখ নিচু করে মাটির দিকে চেয়ে রইল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে হালদার বাবু দাদার কথারই মান্যতা দিয়ে সান্ত্বনার সুরে বললেন,
-যা কপালে ছিল সেটা তো হয়েই গেছে রুস্তম ভাই। যদিও প্রসঙ্গটা উত্থাপন করাই আমারই ভুল হয়ে গেছে। শুধু শুধু পুরানো কথা মনে করিয়ে তোমার মনটা ভারাক্রান্ত করে দিলাম।
-না না এজন্য দুঃখের কি আছে, দাদা বলে উঠলো।
হালদার বাবু আবারও বললেন,
-তুমি যে জানো না তা নয়। তবুও বলছি,আমাদের সবাইকে একদিন পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যেতে হবে। কাজেই আর পিছনে ফিরে তাকানো ঠিক হবে না। তুমি বুদ্ধিমান মানুষ। ইতিমধ্যে সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছ। কাজকর্মে মনদিয়ে আবার স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা কর। বাকিটা তো উপরওয়ালার উপর ছাড়তেই হবে।
-হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন বাবুমশাই। কাজকর্মে থাকলে বরং ভালো থাকা যাবে। বাড়িতে বসে না থেকে এই কারণে গ্রামের টুকটাক বাঁশের কাজ করছিলাম।
-কাজই যখন করছ, তাহলে তোমার পুরানো জায়গায় নয় কেন রুস্তম ভাই? তুমি গুণী মানুষ; বাঁশের কাজ করা তোমার মানায় না। দয়াকরে আমাকে ফিরিয়ে দিও না। তুমি তো জানো, ব্যবসা নামেই ছিল আমার;সবই তোমার। যে কারণে তোমার অনুপস্থিতিতে ব্যবসা লাটে ওঠার উপক্রম। তুমি আবার আগের মতো ভার নাও। অদক্ষ হাতে আমি আর ওসব দায়িত্ব সামলাতে পারছি না।
-বুঝতেই পারছি বাবু আপনার অসুবিধার কথা। তবে আমি অনেকটা বেকায়দায় পড়েছি। অস্বীকার করব না যে আমার মন আপনাদের ওখানে বাঁধা ছিল বা এখনও আছে। আপনাদের যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি তাতে আমি চীরকৃতজ্ঞ। আবারো ফিরে যাওয়ার কথা আমি যে ভাবিনি তা নয়। কিন্তু বড্ড অসহায় হয়ে পড়েছি। মনের শক্তি যে সব হারিয়ে ফেলেছি বাবু মশাই।
সেদিন দুজনের মধ্যে আরও অনেক আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু পরের দিকে সেসব কথা আমার আর ভাল লাগছিল না। হালদার বাবুর প্রস্তাবে শুরুতে দাদার সঙ্গে আবার কাজে যাওয়ার সুযোগ আমার কল্পনালোকে শহরে কাজে যাওয়ার স্বপ্ন চিকচিক করে ওঠে। প্রথমদিকে দাদা রাজি না হওয়াতে ভিতরে ভিতরে বেশ মুষড়ে পড়েছিলাম। দাদার উপর অসম্ভব রাগ হচ্ছিল এসময়। এমন অপ্রত্যাশিত কাজের সুযোগ নষ্ট হতে চলেছে দেখে কিছুটা বিরক্ত হয়ে আমি বাড়ির ভিতরে চলে আসি। বেশ কিছু সময় পরে আবারো ফিরে ফিরে যাই পূর্বস্থলে। গিয়ে বুঝতে পারি ওনার অনুরোধ দাদা ফেলতে পারেনি। অবশেষে শহরে কাজে যেতে রাজি হয়েছে। তখন এক অদৃশ্য যুদ্ধজয়ের অনুভূতিতে মুগ্ধ হয়ে ভিতরে ভিতরে উল্লসিত হই। কার্যত এক অনাবিল আনন্দে আমার কল্পলোকে আনন্দের ফল্গুধারা বয়ে যায়।

বাবুর চলে যাওয়ার কয়েকদিন পর স্থানীয় কাজগুলো যতটা সম্ভব শেষ করে দাদার সঙ্গে আমিও রওয়ানা দেই। বিগত কয়েক দিন ধরে খুব শিহরিত ছিলাম দ্বিতীয়বার কাজে যাওয়ার জন্য। বারবার এ সময় দাদির কথা মনে পড়ছিল। অথচ আমাকে কাজে নিয়ে যাওয়া নিয়ে মানুষটার জীবদ্দশায় দাদার সঙ্গে শেষের একদিন কি তুমুল ঝগড়াটাই না হয়েছিল।।আজ বেঁচে থাকলে কি খুশিই না হতো মানুষটা। শহরে দ্বিতীয় বার রওনা হবার দিনে একটা ঘটনা আজও ভোলার নয়। ঠিক যে সময় বার হব,এমন সময় সামনে আসমাকে দেখে বিষণ্ণতার অঘোর ছায়ায় মনটা ভারাক্রান্ত হয়। কেমন একটা মায়াবী চাহনি নিয়ে কামরার মুখে এসে ঈষৎ কাৎ হয়ে দাঁড়িয়েছিল মেয়েটি।দাদা তখন কি একটা কাজে বাইরে বের হয়েছিল। শুরুতে এমন ভঙ্গিতে ওকে দেখে আমার গলা শুকিয়ে যায়; মুখের কথা যায় আটকে। অনেকটা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়ি।কোন হাতামাথা না পেয়ে অসহায় ভাবে কিছু একটা বল বলার জন্যই যেন ওকে বলি,
-আসমা আমি দাদার সঙ্গে শহরে কাজে যাচ্ছি শুনেছিস?
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে নীরবে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।ওর ওই নিরাবতাই যেন আমাকে বেশি কুঠারাঘাত করে। মনে হল যেন কিছু একটা বলবে।
-আসমা কিছু বলবি?
এবার ও পাল্টা আমাকে জিজ্ঞেস করে,
-তুই আবার আমার মায়ের মতো একেবারে হারিয়ে যাচ্ছিস না তো মাহমুদ ভাই?
ওর কথা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই।
-আরে নারে। আমি তো কাজ করতে যাচ্ছি রে। কিছুদিন পরে আবার বাড়ি চলে আসবো।
ও আবার জিজ্ঞেস করে,
-ঠিক চলে আসবি তো মাহমুদ ভাই?
এবার আমি ওর থুতনি ধরে নাড়া দিয়ে বলি,
-হ্যারে হ্যাঁ পাগলি হ্যাঁ। ঠিক চলে আসবো।
-তাহলে একটা কথা রাখবি?
-কি কথা?
- আমার মাকে ওখানে পাওয়া যায় কিনা একটু খোঁজ নিবি?
মাতৃহীন মেয়েটার এমন আবদারে কি উত্তর দেব ভেবে বিচলিত হয়ে পড়ি। কিছুটা আমতা আমতা করে,
-আচ্ছা ঠিক আছে,দেখবোরে...
আসমার সঙ্গে কথা বলাকালীন বাইরে থেকে দাদার ডাক কানে এলো। আমি সাড়া দিয়ে বেরিয়ে এলাম। বারান্দায় উঠে দেখি ততক্ষণে মা পান্তাভাত বেড়ে বসে আছে।পাশে আরেকটি চাচাইয়ে জহরের খাওয়া মাঝপথে। আমরা দুজনে পাশাপাশি আরও দুটি চাটাইয়ে বসে পড়লাম।মা আসমাকেও খেতে বলেছিল। কিন্তু ও আমাদের চলে যাওয়ার পরে খাবে বলে জানিয়েছিল। যাইহোক পেটভরে খেয়েদেয়ে সকাল সকাল আমরা শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিই।

পথে আসতে আসতে বারে বারে আসমার করুন মুখচ্ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। যে আনন্দে যাত্রা করব ভেবেছিলাম, ক্রমশঃ পরের দিকে এক নিদারুণ যাতনা যেন আমাকে আবিষ্ট করে ফেলে। একদিকে ভালো যেমন লাগছিল ওর কথা ভেবে; সঙ্গে মনে মনে কিছুটা ব্যস্ত হই দ্রুত গ্রামে ফেরার কথা চিন্তা করে। কিন্তু পরক্ষণেই এক বিষণ্ণতা যেন আমাকে গ্রাস করে। অসহায় বোধ করি,গ্রামে ফিরলে মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলে কিইবা উত্তর দেবো মেয়েটার। দ্বিতীয়বার শহরে ফিরে শত ব্যস্ততার মধ্যেও এই যাতনা দোটানা ছায়ার মতো সমানে আমাকে ক্ষতবিক্ষত করতে থাকে।

হালদার বাবুর দোকানটা দোকান হলেও অনেকটা কাঠগোলার মতই ছিল। আবার কাঠগোলা হলেও ছিল অনেকটা দোকানেরই মত। হরেক কিসিমের কাঠ চারিদিকে ডাই করে সাজানো থাকতো। কাঠের সম্ভার প্রচুর হলেও বিভিন্ন রকম আসবাবপত্রও তৈরি করে বিক্রি করা হতো। সেদিক থেকে একে আবার দোকানও বলা যায়। এলাকার লোকেরা অবশ্য কাঠগোলা বলেই জানত। আমার ব্যক্তিগত অভিমত ব্যাপ্তির দিক থেকে এবং কাঠের প্রাচুর্যের কারণে এলাকাবাসীর মতই কাঠগোলা বলাই সঙ্গত। যাইহোক দাদার অনুপস্থিতিতে বাপজানই কাঠগোলার বা দোকানের হেডমিস্ত্রিতে পরিণত হয়েছিল। যদিও বাপজান কখনোই দাদার বিকল্প হতে পারেনি। অন্তত হালদার বাবুর কথাতেই সেরকম ইঙ্গিত ফুটে উঠেছিল। দাদা ফিরে আসায় সকলে মিলে আবার নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করে। প্রসঙ্গক্রমে এখানে আর একজনের নাম উল্লেখ না করলেই নয় সে হল স্বপন কাকা। দাদার অনুপস্থিতিতে হালদার বাবু হয়তো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন কিন্তু মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এই স্বপন কাকা। দাদার জন্য প্রায়ই নাকি বাপজানের কাছে হা-হুতাশ করে বিষন্নতা প্রকাশ করত। সম্ভবত সে কারণেই দাদাকে ফিরে পেয়ে স্বপন কাকার উচ্ছ্বাস ছিল সর্বাধিক, চোখে পড়ার মতো।

এ প্রসঙ্গে স্বপন কাকার পূর্ববর্তী জীবনের দু-চার কথা না বললেই নয়। একেবারে শৈশবেই কাকা বাবা-মাকে হারিয়েছিল। বড় বড় দাদারা থাকলেও তারা ছিল ছোট্ট ভাইটির প্রতি চূড়ান্ত উদাসীন।খাওয়া-দাওয়া না পেয়ে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াতো। এমনই চূড়ান্ত অবহেলার মধ্যে কোন এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের মাধ্যমে হালদার বাবুর দোকানে স্বপন কাকার কাজের সন্ধান হয়।বয়সে কাকা ছিল সে সময় খুবই ছোট্ট। বাপ-মা হারা ছোট্ট ছেলেটিকে এমন কচি বয়সে কাজে আসতে দেখে দাদাও নাকি খুব আবেগ তাড়িত হয়ে পড়ে। প্রথম প্রথম নাকি দাদা ওকে কাজে না লাগিয়ে সারাক্ষণ চোখে চোখে আগলে রাখতে। খাওয়ান-দাওয়াত করাত নিজের হাতে।রাতে ঘুমাতোও দাদার পাশে। বহুদিন পর্যন্ত দাদা এভাবে কাকাকে আগলে রেখেছিল।ফলে একটু বড় হতেই দাদার মধ্যে স্বপন কাকা পেয়েছিল প্রকৃত বাবার সন্ধান। একই সঙ্গে পাশে বাপজান থাকলেও দাদা স্বপন কাকাকেই নাকি বেশি ভালোবাসতো। বাপজানও এসব বিষয় নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে উল্টে ছোট্ট ভাইটিকে খুব আপন করে নিয়েছিল। সম্ভবত বাপ-মা হারানোই কাকার প্রতি দাদার প্রবল অপত্যস্নেহ তৈরি হয়েছিল। অথচ এই হালদার বাবুও নাকি শুরুতে বয়সে খুব ছোট্ট হওয়াতে স্বপন কাকাকে কাজে নিতে চাননি।দাদার ছত্রচ্ছায়ায় কাকা বড় হচ্ছেন দেখে হালদার বাবু একারণে ভীষণ খুশি হয়েছিলেন। পরের দিকে দাদাকে প্রায়ই বলতেন,
-স্বপনকে তুমি এমন ভালোবাসা দিয়েছ যে বুড়ো বয়সে নিজের ছেলেরা ফেললেও তোমার কোনো চিন্তা নেই। স্বপন তোমাকে চিরকালই আগলে রাখবে রুস্তম ভাই।
দাদাও হাসতে হাসতে উত্তর দিত,
-স্বপন আমারই ছেলে বাবু। ছেলেবেলার হারিয়ে গেছিল, ভাগ্যগুণে ওকে আবার ফিরে পেয়েছি। একটা ভালো সম্বন্ধ দেখে সংসারী না করানো পর্যন্ত আমার শান্তি নেই বাবু।
সংসারের কথা উঠলে স্বপ্ন কাকা লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকতো বা অন্য দিকে চলে যেত।
দাদা আরও বলতো,
-স্বপনকে এমন কাজ শিখিয়ে দেবো যে শুধু একজন মিস্ত্রি নয়, প্রকৃত একজন কাষ্ঠশিল্ফী হয়ে সারা জীবন যেন সুনাম অর্জন করতে পারে।

এমনই একটা মধুর পরিবেশে কয়েক বছর পর ঘটে গেল মারাক্তক একটা অঘটন......

বিশেষ দ্রষ্টব্য:-পোস্টটি সামুর নির্বাচিত পাতায় স্থান পাওয়ায় প্রেরণা বোধ করছি। কৃতজ্ঞতা জানাই কাল্পনিক ভালোবাসা ভাইকে।



মন্তব্য ৩০ টি রেটিং +১০/-০

মন্তব্য (৩০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:০৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
দাদা আমি ভেবেছিলাম আপনিও হয়তো
উপন্যাসটির যবনিকাপাত করে দিয়েছেন!!
অনেক দিন কোন সাড়া শব্দ না পাওয়াতেে
এমন মনে হয়েছে। আবার ফ্রম সাতক্ষীরা টু বেলগাছিয়া
দেখতে পেয়ে মনে হলো আপনার ওখানে হয়তো শীত
জেকে বসেছে তাই কম্মলের নিচ থেকে বের হতে একটু
সময় নিলো। আপনাকে ধন্যবাদ ফিরে আসার জন্য একটু
দেরী হলেও।

২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৩৫

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: শুভসন্ধ্যা প্রিয় নুরু ভাই।
সাম্প্রতিক কালে ব্যস্ততাটা একটু বেড়ে গেছে। ব্লগে ঢুকে তেমন সম্ভব হচ্ছে না।যদিও এর আগে ভয়ঙ্কর নেট সমস্যায় ভুগেছি বেশ কিছুদিন। তারপর সামুও কয়েকদিন টানা সমস্যায় চলেছে.....
আর গল্পের যবনিকাপাত ঘটতে এখনো ঢের বাকি আছে।বুঝতেই তো পারছেন ফ্রম সাতক্ষীরা টু বেলগাছিয়া'একটি এক্সপ্রেস ট্রেন। মাঝের দুরত্ব অনেকটাই।আপনার মত বরিষ্ঠ জন যেখানকার প্যাসেঞ্জার তাদের কথা মাথায় রেখে ঘনঘন স্টপেজ দেইবা কি করে। এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক হিসেবে একটু লং স্টপেজ না দিলে আপনারাই যে আবার লোকাল ট্রেন বলে গালি দেবেন। আর শীতকালে এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী হওয়ার মজাই আলাদা।আরও যদি স্নো ফলস পড়ে তাহলে তো কোন কথাই নেই।
আপনার আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপনে প্রীত হলাম। প্রতি ধন্যবাদ আপনাকেও।
নিরন্তর শুভেচ্ছা জানবেন।

২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:২০

রাজীব নুর বলেছেন: দাদা বাশের কাজ মানে কি? বাঁশ দিয়ে ঘর বানানো?

২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৩৯

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: শুধুমাত্র ঘর নয়। ঘর নির্মাণের ও শয্যার যাবতীয় উপকরণ সবই বাঁশ দিয়ে তৈরি।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ প্রিয় ছোট ভাইকে।

৩| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৪৮

মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন: মধুর পরিবেশে হঠাৎ ঘটে গেল অঘটন- কি সে অঘটন, জানতে আর দেরি সইছে না। আশাকরি পরবর্তী পর্ব তাড়াতাড়ি আসবে। শুভেচ্ছা জানবেন।

২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:১০

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: সুপ্রিয় হোসেন ভাই,
পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। গল্পটি আপাতত আপনার কাছে মধুর মনে হওয়াতে আনন্দ পেলাম আবারো ধন্যবাদ আপনাকে।
হ্যাঁ ইচ্ছে আছে পরবর্তী পর্ব খুব শীঘ্রই পোস্ট করব। আশা করি এভাবে আগামীতেও আপনাকে পাশে পাব।
শুভেচ্ছা নিয়েন।

৪| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:০৮

রামিসা রোজা বলেছেন:

ফিরছি লেখায় একটু পরেই ...

২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:০২

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: ধন্যবাদ আপু আপনাকে।
আপনার পরবর্তী কমেন্ট উত্তর দিচ্ছি...

৫| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৩৩

রামিসা রোজা বলেছেন:
গতকাল আপনার এ সিরিজটি পড়ে প্রথম প্লাস দিলাম এবং মন্তব্যটা লেখার পর দেখলাম গেলো না। হালদার বাবুর গাড়ি দেখার আগ্রহটা এমনভাবে প্রকাশ করেছেন যেন বর্ণনায়
চোখে ভাসছে । আসমার মা'কে খুঁজে পাওয়ার আশায়
আসমার বুকফাটা আর্তনাদবেশ করুন । পুরো গল্পের মধ্যে
এক ধরনের রক্তের সম্পর্কের চেয়েও অন্য কোন সম্পর্কের
মূল্যায়নও প্রাধান্য পেয়েছে সেটা খুব ভালো লেগেছে ।
হঠাৎ আবার কি অঘটন ঘটলো সেটা দেখার আশায় রইলাম।
ভালো লাগছে আপনার এই সিরিজ পড়তে ।
শুভকামনা রইলো ।

২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:০৬

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: বরাবরের মতো এবারও আপনার সুন্দর বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্যে প্রীত হলাম অসংখ্য ধন্যবাদ আপু আপনাকে। সামুতে একটা সমস্যায় আমি মাঝে মাঝে পড়ি। প্রতি মন্তব্য করার সবুজ বাটন না আসা। তবে আজ ও গতকাল নিজের ব্যক্তিগত কাজে সারাদিন ব্লগে ঢুঁ মারার সময় হয়ে উঠেনি। যেকারণে ক্ষমাপ্রার্থী। গল্পে রক্তের সম্পর্কের চেয়েও অন্য যে সম্পর্কের কথা ইঙ্গিত করলেন তাতে অত্যন্ত আনন্দিত হলাম। আবারো ধন্যবাদ আপনাকে। হঠাৎ অঘটনটি জানতে হলে পরবর্তী পর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।
পোস্টটিতে like' করাতে প্রেরণা পেলাম কৃতজ্ঞতা জানবেন।
নিরন্তর শুভেচ্ছা আপনাকে।

৬| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৪৩

ইসিয়াক বলেছেন: আবার অপেক্ষা..... যাহোক এ পর্বটা মোটামুটি লাগলো। ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা গল্পের গতিকে ব্যহত করছে কিনা একটু ভেবে দেখবেন। লেখার গতি সাবলীল। উপস্থাপন চমৎকার কিন্তু কাহিনী কেন জানি মনে হচ্ছে একই আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে।
শুভকামনা রইল প্রিয় দাদা।

২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:১২

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: বিলম্বিত প্রতিমন্তব্য দেওয়ার জন্য প্রথমে ক্ষমাপ্রার্থী। একজন লেখকের লেখার যেমন দৃষ্টিকোণ থাকে পাঠকেরও তেমন দৃষ্টিকোণ থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। লেখক-পাঠকের দৃষ্টিকোণ যদি না মেলে তাহলে লেখায় কিছু বৈপরীত্য আসতেই পারে। কাজেই আপনার বিপরীত ধর্মী দৃষ্টিতে যে বিষয়টি ধরা পড়েছে তাতে আনন্দিত হলাম। ধন্যবাদ আপনাকে। কাহিনীর আবর্তনটি একজায়গায় লাগলেও ঘটনাগুলো পর্যায়ক্রমিক। আর পর্যায়ক্রমিক ঘটনা একটা বিশেষ জায়গায় আবর্তন হওয়াটাও স্বাভাবিক।
আপনার শুভেচ্ছা গ্রহণ করলাম। আপনার জন্যও রইলো নিরন্তর শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।

৭| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৪৭

ইসিয়াক বলেছেন: অনেক কষ্টে ব্লগে ঢুকলাম।আপনার পোস্টে মন্তব্য করবো বলে। অবশেষে সফল হলাম।শুভেচ্ছা প্রিয় দাদাকে। ভালোবাসা জানবেন।

২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৪৯

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: আমার যে কি আনন্দ তা ঠিক বলে বোঝাতে পারবো না। আমার মতো একজন নগণ্য ব্লগারের ব্লগে ঢোকার জন্য আপনার এমন যাতনাময় অভিজ্ঞতার কথা শুনে পুলকিত হলাম। আপনার স্থান মম অন্তরে।
নিরন্তর শুভেচ্ছা আপনাকে।

৮| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৫৯

নীল আকাশ বলেছেন: আমি আবার ফিরবো এই পোস্টে................।

২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৪৯

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: আপনার আগমনের অপেক্ষায় রইলাম ...

৯| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৫১

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: প্রতিমন্তব্য দেওয়ার সবুজ বাটন না আসায় কারো মন্তব্যের উত্তর দিতে পারলাম না। বেশ কয়েকবার লগ ইন লগ আউট করে অবস্থার উন্নতি হয়নি।দুঃখিত। আগামীকাল আবার চেষ্টা করব....

২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৫৮

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: সমস্যা স্বরূপ বিলম্বিত উত্তর দেওয়ার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। সাথে পোস্টে মন্তব্যকারী সকল বন্ধুদেরকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা রইলো। কমেন্টটি সংগত কারণে ডিলিট করলাম না।

১০| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১২:১৯

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




পদাতিক চৌধুরী ভাই, গুগল ক্রোমে লগইন করুন - আমার ধারণা মন্তব্য উত্তর সমস্যাটি থাকবে না। গল্পে অঘটনটা না ঘটলে ভালো লাগতো। আমরা সারা বিশ্ব এখন অঘটনে আছি।

২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:০১

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: প্রিয় ঠাকুরমাহমুদ ভাই,

আমি বরাবরই ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহার করি। তোর সমস্যাটি ব্রাউজারের নয়। ব্লগে এমন সমস্যায় আমি এর আগেও বহুবার পড়েছি।সেক্ষেত্রে লগইন-লগআউট করলে সমস্যা মিটে যেত। কিন্তু এবারে কিছুতেই সমস্যা মেটে নি। মাঝে গতকাল অবশ্য সময়াভাবে চেষ্টা করেনি। সুন্দর সাজেশনের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
পোস্টটিতে লাইক করাতে প্রেরণা পেলাম কৃতজ্ঞতা জানবেন।
নিরন্তর শুভেচ্ছা আপনাকে।

১১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৪০

ফটিকলাল বলেছেন: অসাধারন সিরিজ

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৮

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা জানবেন।

১২| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৫

আহমেদ জী এস বলেছেন: পদাতিক চৌধুরি,



আপনার পোস্টের শিরোনামগুলো বেশ জটিল। এই যেমন -"ফ্রম সাতক্ষীরা টু বেলগাছিয়া (পর্ব-১২/প্রথম খন্ডের অষ্টম পর্ব)" বোল্ড করা অংশ বুঝতে ধাক্কা লাগে। এর কারনেই মনে হয় যেন আগেই পড়েছি এই পর্ব কারন এতো পর্বের খুটিনাটি মনে থাকার কথা নয়। যারা আপনার লেখায় ধারাবাহিক নন তাদের জন্যে এটা কষ্টকর।
আশা করি ব্যাপারটি ভেবে দেখবেন। পাশাপাশি ৬ নং মন্তব্যে সহব্লগার ইসিয়াক এর কথাগুলোও ভেবে দেখার মতো।

যাকগে, আসমার কথা, স্বপনকাকুর কথা বলতে বলতে আবার কোন অঘটন বাঁধিয়ে বসলেন ?

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৪৫

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন:
বহুদিন পর আপনার কমেন্ট পেয়ে খুশি হয়েছি। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। আসলে ধারাবাহিক পর্বগুলোতে হঠাৎ করে এলে বুঝতে অসুবিধা হওয়ারই কথা। শিরোনাম সম্পর্কে বলি, গল্পটি মূলত দুটি খণ্ডে। একদম শুরুতে প্রথম চারটি পর্ব ছিল সূচনা পর্ব।মুল গল্প বা প্রথম খন্ড পঞ্চম পর্ব থেকে শুরু হয়েছে।আর এই খন্ড বিভাজনটি পঞ্চম পর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে।সেদিক থেকে দেখতে গেলে এই পর্বটি প্রথম খন্ডের অষ্টম পর্ব। আপনার উল্লেখিত শিরোনামে সেটিই উল্লেখ করা হয়েছে।। যাইহোক ব্যস্ততার মধ্যেও এসেছেন এটাই বড়। মন্তব্যের জন্য আবারো ধন্যবাদ।
শুভেচ্ছা জানবেন।

১৩| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৫

করুণাধারা বলেছেন: দেরি করে পোস্টে এসে ভালোই হয়েছে পদাতিক চৌধুরী, কী অঘটন ঘটলো জানার জন্য বেশি অপেক্ষায় থাকতে হবে না...এমনিতে পুরো গল্প জুড়েই একের পর এক দুর্ঘটনা, এরপর কার ওপর খাঁড়া নেমে আসবে বুঝতে পারছি না।

আসমা চরিত্রকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। তবে হালদার বাবু আর মাহমুদের দাদার কথোপকথনের মধ্যে "উল্লেখ্য যে" কথাটা একটু বেমানান লেগেছে। আমরা সাধারণত এই শব্দগুচ্ছ লিখিত ভাষায় ব্যবহার করি।

গল্প বরাবরের মতো আকর্ষণীয়, প্লাস। পরের পর্বের অপেক্ষায়।

নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৫৪

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: অনেকদিন পর আপনাকে ব্লগে দেখে ভীষণ খুশি হয়েছি আপু। ডিসেম্বর মাসটা আপনার ভালো যায়না- শুনে খারাপ লাগছে। তবে যেহেতু প্রতি বছর এমনই হয় কাজেই খুব সতর্ক থাকবেন বা থাকার চেষ্টা করবেন আশাকরি। এতকিছুর মধ্যেও ব্লগে আপনার দেখা পেয়ে স্বস্তি পেলাম।
হ্যাঁ আপু গোটা গল্পটাতে এমনই কিছু ঘটনা আছে।সময়ের অভাবে আমিও বড্ড অনিয়মিত হয়ে গেছি। দেখি দু-এক দিনের মধ্যে পরবর্তী পর্ব দেওয়ার ইচ্ছা আছে।
আসমা চরিত্রটি ভালো লাগলেও উল্লিখিত কথোপকথনটি বেমানান লেগেছে,এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনা শেয়ার করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের এক শিক্ষক ছিলেন বিকাশ চন্দ্র চৌধুরী নামে। সংক্ষেপে বিকেসি স্যার। আমি নিজের সমস্যার জন্য প্রথম দুই মাসে সপ্তাহে দুই দিন করে ক্লাস করে কোনক্রমে নিজের এনরোলমেন্টকে ধরে রেখেছিলাম।সব স্যার ম্যামের ক্লাস করা সেসময় সম্ভব হতো না। নভেম্বর মাসে প্রথম মেসে থাকার ব্যবস্থা করে নিয়মিত ক্লাস করতে শুরু করি। আর তখনই দেখি বিকেসি স্যারের ক্লাস দিনের পর দিন অফ যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি উনি অ্যাজমার সমস্যার জন্য শীত শুরুর আগেই অনেকটা বেশি বেশি পড়িয়ে এগিয়ে রাখেন। শীতের শেষে নাকি আবার ক্লাসে আসবেন। উল্লেখ্য আমাদের ডিপার্টমেন্টটি চারতলায় অবস্থিত।যদি কোনদিন এসে দেখেন লোডশেডিংয়ের কারণে লিফ্ট অচল তাহলে উনি সেদিন বাড়ি চলে যেতেন। যাইহোক এত নিয়মকানুন মেনে চলা স্যারকে আমি ফেব্রুয়ারিতে প্রথম দেখি। আমার বাড়ি বসিরহাট শুনে উনি একটা গল্প বলেছিলেন।
স্যার অসম্ভব ঘুরতে ভালো বাসতেন। তবে ওনার গন্তব্য হতো নিজের জেলা, মহকুমা, পাশের জেলা, আশপাশের গ্রামগঞ্জ, লোকজন, পুরানো স্থাপত্য, জনজাতি এসব।তো স্যারের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ে, আমার কথা শুনে প্রথম জানতে চান, আমি বসিরহাটের ছেলে কিনা। হ্যাঁ বলাতে এবার জিজ্ঞেস করেন,বাড়ি কোথায়? উনি চিনবেন কি না মনে করে আমি একটু দূরের ল্যান্ডমার্ক উল্লেখ করাতে উনি আমাকে ধমক দিয়ে মিথ্যা বলছি কেন জানতে চান। উল্লেখ্য একটা ন্যারো রাস্তায় মোড়ে একটা চায়ের দোকানকে না বলে দূরের ল্যান্ডমার্ক বলাতে ধমক দেন।এবারে বলেন, ঐ দোকানে চা খাওয়ার সময় দোকানীর কথা শুনে উনি বইয়ের ভাষায় না বলে আঞ্চলিক ভাষায় যে ভাবে সকলের সঙ্গে কথা বলেন সেইভাবে কথা বলতে নাকি অনুরোধ করেন। বিনিময়ে চায়ের দোকানদার জানিয়েছিল,বাবু আমরা আপনার সঙ্গে আলাদা করে শুদ্ধ করে কথা বলছিনা।সবার সঙ্গে যেভাবে বলি সেইভাবে আপনার সঙ্গেও বলছি।স্যার দোকানীর কথায় খুশি হতে পারেননি।পরে শহরের আরও অনেক চায়ের দোকান ও পথচলতি লোকের সঙ্গে কথা বলে কনফার্ম হন, বসিরহাট হলো সেই বিরল জায়গা যারা বইয়ে উল্লিখিত বাংলায় কথা বলেন। উল্লেখ্য প্রত্যেক ব্যাজে অথবা কয়েক বছর পর পর আমার মতন দু-একজনের সঙ্গে কথা বলে সেই কারণে উনি বুঝতে পারেন যে আমরা বসিরহাটের ছেলে।।
পোস্টে লাইক করাতে প্রেরণা পেলাম কৃতজ্ঞতা জানবেন

নিউ ইয়ারের শুভেচ্ছা জানবেন আপু।

১৪| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৮

মা.হাসান বলেছেন: বসির হাটের লোকেরা কোন বিশেষ ভাষায় কথা বলে তা জানার জন্য কৌতুহল হচ্ছে।

অবশেষে শহরে। কেউ গ্রাম ছেড়ে শহরে আসার জন্য পাগল, কারো মন আবার শহরে বসে না।
আমার ধারণা ছিলো কাঠগোলা মুর্শিদাবাদের একটা জায়গার নাম। বড় যে কোনো কাঠের গুদামকেই কাঠ গোলা বলা হয় জানা ছিলো না।

পোস্টের শেষে আপনার চিরাচরিত সিগনেচার দেখে দ্বিধায় আছি পরের পর্ব পুরোটা পড়বো না প্রথমটা পড়েই অফ যাবো :-<

অশেষ শুভকামনা।

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:০১

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: হেহেহে.... আমি অবশ্য আপনার কমেন্টের শেষ থেকেই শুরু করলাম। যেহেতু দীর্ঘদিন ধরেই আপনার অনুপস্থিতিত ‌কাজেই আমার পোস্টের শেষ অংশ নিয়ে আপাতত আর কেউ প্রশ্ন তুলবেন না। এই ফাঁকে যতটা সম্ভব দৌড়ানো যায় সেটাই আমার লক্ষ্য ছিল।কিন্তু আপনি যে বিলম্বিত এসেও এমন লেজ ধরে টানাটানি করবেন সেটা তো এক্কেবারেই বুঝতে পারিনি। এমতাবস্থায় বিধায় এবারটা ক্ষমা করে দিন।শুধু আপনি পরে আবার কখন অনুপস্থিত থাকবেন সেটা কাইন্ডলি একটু জানিয়ে যাবেন কারণ তখন থেকেই না হয় আপনার অনুপস্থিতির স্পেশাল পোস্ট দেব। হেহেহে...
কেউ গ্রাম ছেড়ে শহরে আসার জন্য পাগল আবার কারও বা শহরে মন বসেনা। ব্যক্তিগতভাবে আমি অবশ্য পড়ার মতাদর্শে বিশ্বাসী। শহরে বাঁধা পড়ে গেছি। কিন্তু আমার স্বপ্ন, আমার গ্রাম।যেখানে আমার বাবা-মা শুয়ে আছেন।লকডাউনে বহুদিন গ্রামে যেতে পারিনি।এখন আর আগের মেঠোপথ নেই ঠিকই কিন্তু সেই আকাশ বাতাস মাঠঘাট পুকুর গাছপালা গ্রাম্য পড়ালেখা নাজানা লোকগুলোকে প্রচন্ড মিস করি। এদের সঙ্গে দুদন্ড বসে মনে ভীষণ শান্তি পাই।তাই তো সুযোগ পেলেই গ্রামে গিয়ে অক্সিজেন নিয়ে আসি। যাইহোক অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে ফেললাম।
কাঠগোলা বা গোলা নিয়ে আলোচনা পরবর্তী পর্বে আরো একপ্রস্থ হয়েছে। আর বসিরহাট নিয়ে কৌতুহলী হয়েছেন জেনে খুশি হলাম। একটু সময় নিয়ে আসবেন আমি আপনাকে নিয়ে বসিরহাটে ঘুরিয়ে সরেজমিনে দেখাবো। এখানে বাগদা এবং হন্যে চিংড়ি বিখ্যাত।চিংড়ি মাছ অবশ্য নিরামিষের মধ্যেই পড়ে, আশা করি আপনার সমস্যা হবে না। হেহেহে...

সবশেষে আপনার শুভেচ্ছা গ্রহণ করলাম। আপনার জন্যও রইলো নিরন্তর শুভকামনা।


১৫| ০৮ ই জুন, ২০২১ দুপুর ১২:১২

খায়রুল আহসান বলেছেন: সাবলীল গতিতে এগিয়ে চলেছে জীবনের সুখ দুঃখের গল্প। গল্পের শেষে এসে যে 'অঘটন' এর সংকেত পাওয়া গেল, পরবর্তী পর্বে না যাওয়া পর্যন্ত তার বিশদ বিবরণ পাওয়া যাবে না। চেষ্টা করবো, যত দ্রুত সম্ভব, সে পর্বটাও পড়ে ফেলতে।

রক্তের সম্পর্কহীন স্বপনের সাথে দাদার 'প্রবল অপত্যস্নেহ' তৈরি হওয়ার মানবিক আচরণটি মনে রেখাপাত করে গেল! "পুরো গল্পের মধ্যে এক ধরনের রক্তের সম্পর্কের চেয়েও অন্য কোন সম্পর্কের মূল্যায়নও প্রাধান্য পেয়েছে সেটা খুব ভালো লেগেছে" - রামিসা রোজা এর এ মন্তব্যটার সাথে (৫ নং) আমিও একমত।

১ নং প্রতিমন্তব্যটা ভাল হয়েছে। ১৩ নং প্রতিমন্তব্যে বলা গল্পটা দারুণ হয়েছে। উভয়টি 'লাইকড'।

পোস্টে দশম ভাল লাগা + +।

১৬ ই জুন, ২০২১ রাত ১২:২১

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: বলেছেন: সাবলীল গতিতে এগিয়ে চলেছে জীবনের সুখ দুঃখের গল্প। গল্পের শেষে এসে যে 'অঘটন' এর সংকেত পাওয়া গেল, পরবর্তী পর্বে না যাওয়া পর্যন্ত তার বিশদ বিবরণ পাওয়া যাবে না। চেষ্টা করবো, যত দ্রুত সম্ভব, সে পর্বটাও পড়ে ফেলতে।"-ধন্যবাদ স্যার এমন আন্তরিক মন্তব্য করার জন্য। পারিবারিক ব্যস্ততায় কিছুতেই আর নিয়মিত হতে পারছিনা।যেমন পারছিনা নুতন করে পোষ্ট দিতে বা অন্যের পোস্টে কমেন্ট করতে। তবুও চেষ্টায় আছি আবার নিয়মিত হবার...

"রক্তের সম্পর্কহীন স্বপনের সাথে দাদার 'প্রবল অপত্যস্নেহ' তৈরি হওয়ার মানবিক আচরণটি মনে রেখাপাত করে গেল! "পুরো গল্পের মধ্যে এক ধরনের রক্তের সম্পর্কের চেয়েও অন্য কোন সম্পর্কের মূল্যায়নও প্রাধান্য পেয়েছে সেটা খুব ভালো লেগেছে" - রামিসা রোজা এর এ মন্তব্যটার সাথে (৫ নং) আমিও একমত।"- খুবই ভালো কথা বলেছেন স্যার। রক্তের বন্ধন না থাকলেও এমন কিছু সময় আসে যখন এমন সম্পর্ক নিকটাত্মীয়তার বন্ধনকেও হার মানিয়ে দেয়। গল্পের তেমনই একটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। রামিসা রোজাপু তারই ইঙ্গিত করলেন। আপনিও বিষয়টি উল্লেখ করাতে প্রীত হলাম অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

এক নম্বর প্রতিমন্তব্য ও 13 নম্বর প্রতিমন্তব্যে গল্পটি ভালোলাগাতে চমৎকৃত হলাম আবারো ধন্যবাদ স্যার আপনাকে।
পোস্ট দশম লাইক ও ডাবল প্লাসে অনুপ্রেরণা পেলাম কৃতজ্ঞতা জানাই স্যার আপনাকে।‌

বিনম্র শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জানবেন।


আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.