নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইলো পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাড়ির কাছে আরশিনগর

০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর বারডেম ২ চোখে পড়ল। বেশিদূর চলে এসেছে কি? এখানেও এক-দু'জনকে জিগ্যেস করল। কিন্তু এখানেও কেউ কিছু বলতে পারল না। নিজের ওপর প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হলো মৃণালের। ৩ বছর হলো ঢাকায় এসেছে সে; অথচ এই সহজ ঠিকানাটা খোঁজে বের করতে পারছে না। গ্রামের নিরক্ষর মানুষ শহরে এসে জায়গা খুঁজে পেতে যে সমস্যা হয়, এখন মৃণালের তেমনই সমস্যা হচ্ছে।

চ্যানেল এস, ৩৩, সেগুনবাগিচা- এই ঠিকানাটা একটু বলতে পারবেন? এক পাঠাও চালককে জিগ্যেস করল মৃণাল। ভদ্রলোক গুগল ম্যাপ বের করে ঠিকানাটা দেখিয়ে দিলেন।

সোজা গিয়ে বামে এগোল মৃণাল। ওখানে গিয়ে একজনকে জিগ্যেস করতেই উনি বললেন, ঠিকানাটা ঠিক হচ্ছে না। এসএ টিভি তো? মৃণাল বলল, এসএ টিভি অন্যটা। আমি শুধু এস চ্যানেল খুঁজছি। তিনি বললেন, কোন চিপায় টিভি চ্যানেল খুলে বসেছে কে জানে! সোজা বামে চলে যান। তারপর কাউকে জিগ্যেস করুন।

যেতে যেতে সামনে পড়ল গাজী টেলিভিশনের অফিস। তার একটু পরই চ্যানেল এস। ঢুকবে কি না ভাবতেই মোবাইলে সময় দেখে নিল মৃণাল। আরও দুই ঘণ্টা সময় হাতে আছে। সাক্ষাৎকার দুপুর ১২টায়। মৃণাল আগে আগে চলে এসেছে মহাখালী থেকে। যানজটে পড়লে বিরাট সমস্যা। তাই সাড়ে ৯টায়ই রওনা দিয়েছিল।

হাঁটতে হাঁটতে শিল্পকলার সামনে চলে এল। হঠাৎ খেয়াল হলো এখান থেকে চ্যানেল এস মাত্র ২-৩ মিনিটের রাস্তা। এখানেই প্রথমে কয়েকজনকে ঠিকানা জিগ্যেস করেছিল। কেউ বলতে পারেনি। কত কাছে অথচ বেগার খাটুনি গেল। লালনের গানটা মনে পড়ে গেল মৃণালের। বাড়ির কাছে আরশিনগর সেথা পড়শি বসত করে, এক ঘর পড়শি বসত করে। আমি একদিনও না দেখিলাম তারে।

এই সময়টায় কী করা যায়? গ্যাস্ট্রিকের চাপ দিয়েছে। একটু আগে একটা গ্যাসের ওষুধ কিনেছিল মৃণাল। এক চা দোকান থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ওষুধটা খেয়ে নিল।

বেঞ্চে বসে থাকা অবস্থায় মাথাটা চক্কর দিয়ে ওঠল। চোখটাও ব্যথা করছে৷ এটা অবশ্য নতুন কিছু না। কোনো ইন্টারভিউ দিতে গেলে সে বরাবরই নার্ভাস থাকে। মাথাব্যথা, গলাব্যথা, চোখব্যথা এই সেই এসে তখন ধরা দেয়।

গত রাতে হঠাৎ ফোনটা এসেছিল। সুমিষ্ট কণ্ঠের এক মেয়ে বলল, "কাল আপনার ইন্টারভিউ আছে"। মৃণাল বলল, "ঠিকানাটা টেক্সট করে দেবেন"। মেয়েটা জি আচ্ছা বলল। কিন্তু টেক্সট করল না। মৃণাল খোঁজে বের করল কবে এই চ্যানেলে আবেদন করেছিল।

এমন না যে তার চাকরি নেই। ছোটোখাটো একটা আছে। অল্প বেতনে পোষায় না, তার ওপর কত রকম কথা শুনতে হয়। মৃণালের ইচ্ছে করে সব ছেড়েছুড়ে চলে যায়। কিন্তু যাবে কোথায় সে? তার যাওয়ার কোনো জায়গা তো নেই। ঢাকা শহরে একটা চাকরি জুটানো অনেক কঠিন। অনেক প্রতিষ্ঠান তো নিয়মিত বেতনই দেয় না। বর্তমান চাকরির আগে এক জায়গায় ২ মাস বিনে পয়সায় কাজ করেছে মৃণাল। তার আগে ৮-৯ মাস কোচিং করিয়েছে মাসে মাত্র ৫-৬ হাজার টাকায়।

ব্যবসাও শুরু করা যায়। কিন্তু এত পুঁজি পাবে কোথায়? তাছাড়া করোনা মহামারিকালে এক ব্যবসা শুরু করে যে ধাক্কা সে খেয়েছে, এখন নতুন কিছু শুরু করার আগে হাজারবার ভাবে। অল্প পয়সায় স্ট্রিটফুডের ব্যবসা অবশ্য শুরু করা যায় কিন্তু সাহস হয় না।

কারও ওপর জেদ কিংবা অভিমান নেই মৃণালের৷ কর্তাশ্রেণি অবশ্যই চাইবে ভালো কাজ। কাজ ঠিকমতো না হলে বকাঝকা তো করবেই। এতে রাগ করলে চলবে না। কিন্তু মন খারাপ হয় এটা ভেবে যে, এত অল্প টাকায় তো চলা যায় না। আজকে ইন্টারভিউ দিতে যে এসেছে, এটাও এক বন্ধুর কাছ থেকে ধার করে। সব মিলিয়ে ধার মোটামুটি ১৫ হাজার হয়ে গেছে।

সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে। হাঁটতে হাঁটতে চ্যানলের সামনে চলে এল সে। তারপর সোজা তিনতলায়। আসলেই কোনো এক চিপায় চ্যানেলটা। ঠিকমতো বেতন দেয় কিনা কর্মীদের কে জানে। চ্যানেলটা আদৌ মানুষ দেখে? এটাসেটা ভাবছিল মৃণাল।

ইন্টারভিউয়ের জন্য অপেক্ষা করছে। এর মধ্যে কাগজে কিছু লেখালেখি করতে হলো। একে একে সবাইকে ডাকা হচ্ছে। মৃণাল খেয়াল করল একেকজন তারচেয়ে কমপক্ষে ২৫-৩০ বছরের বড়। অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বটে। তার কি হবে?

বেশ সময় নিয়ে ইন্টারভিউ নেওয়া হচ্ছে। পিয়ন চা দিয়ে গেছে। চা খেতে খেতে রিসিপশনের মেয়েটাকে দেখল মৃণাল। বেশ সুন্দর আছে। গত রাতে সেই কি ফোন দিয়েছিল না কি পাশে বসা মহিলাটা ফোন দিয়েছিল? কণ্ঠস্বর শুনে মুগ্ধ হয়েছিল মৃণাল। মন-মেজাজ ভালো থাকলে মেয়েটাকে এটাসেটা হয়তো জিগ্যেস করত।

ডাক পড়ল মৃণালের। কক্ষে প্রবেশ করতেই জিগ্যেস করা হলো আগে কোথায়, কোন পোস্টে কাজ করত। সব বলল মৃণাল। তাদের চাহিদামতো হচ্ছে না। কথাবার্তাও মিলছে না। পদ কি ভুল হলো? এরা মাঠ পর্যায়ের লোক চাচ্ছে। মৃণালের তো সে অভিজ্ঞতা নেই।

খুব অল্প সময়ে ইন্টারভিউ শেষ। মৃণালকে বলা হলো পরে ডাকা হবে। কেমন ডাকা হবে সেটা সে ভালোমতোই জানে। এর আগে দেশ টিভিতেও বলেছিল ডাকা হবে। পরে আর ডাকেনি। দেশটিভির হিসেবটা অবশ্য আলাদা। সেখানে সে মোটামুটি একটা ভালো বেতন প্রত্যাশা করেছিল। কর্তৃপক্ষ কম পয়সায় লোক চাচ্ছে। বলতে গেলে মৃণালের অনাগ্রহে চাকরিটা হয়নি, কিন্তু এখানে সে এক কথায় অযোগ্য ঘোষিত হয়েছে।

প্রেসক্লাবের দিকে হাঁটছে মৃণাল। একজনের সাথে দেখা করতে হবে। সহজ রাস্তা, কিন্তু ভুল হয়ে যাচ্ছে। মাথায় কি সমস্যা হয়ে গেল তার? একসময় পৌঁছল ঠিক জায়গায়। এর আগে মেট্রোরেলের স্টেশনটা একটু দেখে নিল। সুন্দর এক জিনিস বানিয়েছে সরকার। সুযোগ করে উঠতে হবে।

প্রেসক্লাবে জনৈক বড় ভাইয়ের সাথে সুখ-দুঃখের অনেক আলাপ চলল। মনটা খুব খারাপ ছিল। ভাইয়ের সাথে কথাবার্তা বলে মনটা হালকা হলো।

কোনো কাজকর্ম আছে কি না জানতে চাইলে মৃণাল বলল আজ সবকিছু থেকে ছুটি। লাঞ্চের পর আরও অনেক কথাবার্তা। একসময় একযোগে মেট্রোরেলে মতিঝিল পর্যন্ত ভ্রমণ। নেমে বিদায় নিয়ে মালিবাগের পথ ধরল মৃণাল।

সাবেক শিক্ষার্থীদের বাসায় যাবে কি না ভাবছে। অনেকদিন যোগাযোগ হয় না। এদিকে এসে ব্যাচ চালু করা যায় কি না ভাবছিল মৃণাল। বন্ধু সজিবকে একটা ফোন দিল। বিকেলে একবার ফোন দিলে সে জানিয়েছিল যাত্রাবাড়ি আছে। এখন বাসায়।

মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে আসতে বলল সজিব। এর আগে শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করে আসবে কি না এটা সজিবকে বলা হলে সে বলল দেখা করো। অন্য দিন আমাকে ফোন দিও। মৃণাল বুঝতে পারল সজিব রাগ করেছে।

আবুল হোটেলের এখানে ৩০ মিনিটের মতো অপেক্ষা করল মৃণাল। সজিব এল না। রাগ কমেনি হয়তো। সে ভুল বুঝেছে। বুঝুক। মৃণাল যেমন এক মাথায় হাজার চিন্তা নিয়ে ঘুরে-বেড়ায়; এটা সজিবের বোঝার কথা না। সে চল্লিশ হাজার টাকা বেতন পায়। এক জায়গায় ২ ঘণ্টা বেকার বসে থাকলেও তার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু মৃণালের তো এমনে চলে না।

গাড়িতে উঠে সে আবার উপলব্ধি করল জগৎ-সংসারে তার আপন বলতে কেউ নেই। খোঁজ-খবর নেওয়ার মতোও কেউ নেই। সে কেমন আছে, কীভাবে আছে; এটা জিগ্যেস করার মতো একটা মানুষ তার বড় দরকার ছিল।

ছবি: সংগৃহীত

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২৭

প্রামানিক বলেছেন: পুরোটাই পড়লাম

০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ধন্যবাদ :)

২| ০৯ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪২

নীলসাধু বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
আমি অনেকদিন পর আবার আপনার পোষ্ট পড়লাম।

০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:১৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: জেনে ভালো লাগল। শুভেচ্ছা জানবেন। :|

৩| ০৯ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: সাধু সাধু! এক সাধূর পোষ্টে আরেক সাধুকে মন্তব্য করতে দেখে আনন্দ পেলাম।

০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কিন্তু আমি তো চকলেট দিতে পারব না B-)

৪| ০৯ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৫

কামাল১৮ বলেছেন: ভালো লিখেছেন।বর্তমানে লেখাপড়া শেষ করে চাকরি পাওয়া, সত্যি বিড়ম্বনা।

০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:১৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আসলেই :(

৫| ০৯ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৯

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: আমিতো ভাবছিলাম কোন ভ্রমণ গল্প, এখন তো দেখছি জিবনের গল্প।

.................শুভ কামনা জানিয়ে গেলাম সাধু

০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:১৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আপনার মায়ের গল্পটা পড়ার পর অনেকক্ষণ কাঁদলাম :((

৬| ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:১১

শ্রাবণধারা বলেছেন: বেশ লিখেছেন।

মৃণাল সাহেব পত্রিকা অফিসে চাকরির চেষ্টা করে দেখেছে কি? আমার ধারনা মৃণাল সাহেব মিডিয়া লাইনে গেলে ভালো করতে পারেন!

০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: পত্রিকা অফিসে চেষ্টা চালাচ্ছে। হচ্ছে হবে দীর্ঘসূত্রিতা।

৭| ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:০৩

মনিরা সুলতানা বলেছেন: জীবন সংগ্রাম!
ভালো লেখা।

০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: চলছে চলবে :(

৮| ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩৩

করুণাধারা বলেছেন: যুদ্ধ করতে করতে একদিন মৃণাল জয়লাভ করবেই।

০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: হয়তোবা।

৯| ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩৭

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: অনেক ভালো লিখেছেন।

১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

১০| ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৪৫

রানার ব্লগ বলেছেন: বেশ লেগেছে। আপনার লেখার এই ধরন টা আমার বেশ পছন্দ।

১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:১২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ধন্যবাদ। প্রীত হলাম।

১১| ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৭

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:



লালন জীবনে চাকুরী করেনি মনে হয়।

১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:১১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: হুঁ।

১২| ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩০

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: চাকরীর সাক্ষাতকারে কোম্পানির লোকেরাই অনেক সময় প্রস্তুত থাকে না প্রশ্ন করার জন্য। ফলে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করে।

১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:০৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: পরে একজনের কাছ থেকে জানলাম যে পদের জন্য আবেদন করেছিলাম, পদটা আছে ওদের। তাহলে কেন এমন বিড়ম্বনার শিকার হলাম কে জানে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.