somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি কিছু লিখতে চাই

২০ শে মার্চ, ২০২২ রাত ৯:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(গিরিজা টিক্কুর লাশ)

হ্যা, কিছু লিখতে চাই। কিন্তু কি লিখবো? লিখে হবেটাই বা কি! মানুষের পাঠ্যাভ্যাস এখন শূন্যের কোঠায়। লেখক ডক্টর মুহাম্মদ জাফর ইকবাল একবার তাঁর একটি লেখায় শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, আগামী দিনে বই হয়তো জাদুঘরে স্থান পেতে চলেছে। কথাটা তখন হাস্যকর লেগেছিলো। সে কোন্ কৈশোরে পড়েছিলাম! মোবাইল ফোন তখনও আসেনি। কাছাকাছি সময় কম্পিউটার এসেছে। ছিলো হাতে গোণা। সময়কাল, এই ধরুন শূন্য দশকের শুরুর দিকে। গ্রন্থের লেখাগুলো তারও বেশ আগে লেখা নিঃসন্দেহে। যতোদূর মনে করতে পারি, প্রিয় গগন ও অন্যান্য বইয়ের অন্তর্ভুক্ত কোনও প্রবন্ধ। বইয়ের শিরোনামের লেখাটিও মনে আছে। বেলজিয়ামের ঘটনা। গগন নামের জনৈক প্রবাসী বাংলাদেশী যুবক সেখানে কয়েকজন পাকিস্তানি যুবক কর্তৃক বাংলাদেশের নারীদের সম্পর্কে অবমাননাকর অশ্লীল মন্তব্যের প্রতিবাদ করায়, সেই উগ্র পাকিস্তানিরা বেলজিয়ামের রাস্তায় প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে হত্যা করে তাকে। এর প্রতিবাদে লেখা। সেখানে ডক্টর মুহাম্মদ জাফর ইকবাল পাকিস্তান রাষ্ট্র ও সেখানকার মানুষদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেন। লেখায় তিনি এরকমও বলেছিলেন যে, উড়োজাহাজে ভ্রমণের আগে নিশ্চিত হয়ে নেন, যাত্রা পথে কোনও পাকিস্তানি তাঁর সহযাত্রী হতে যাচ্ছে কিনা। পাকিস্তানি নেই নিশ্চিত হয়ে টিকিট ক্রয় করেন বা যাত্রা করেন। দেশ বিদেশ সর্বত্র। নেহাতই নিরুপায় না হলে কোনও পাকিস্তানির সঙ্গে যানবাহনে ভ্রমণ করতেও ইচ্ছুক নন তিনি। এ সংশ্লিষ্ট আরও কিছু বিষয় এসেছে লেখাতে। পাকিস্তানি ক্রিকেটার শহীদ আফ্রিদিকে মাঠে কোনও বাংলাদেশী তরুণী কর্তৃক ম্যারি মি আফ্রিদি লেখা পোস্টারের কথাও এসেছে। প্রিয় গগন ও অন্যান্য দারুণ বই। আরও বিভিন্ন বিষয়ে চমৎকার সব প্রবন্ধ নিবন্ধের সংগ্রহ। ডক্টর মুহাম্মদ জাফর ইকবাল মহান মানুষ। তিনি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন। পাকিস্তানি বর্বরতা দেখেছেন। নিজেও এর একজন ভিক্টিম। তাঁর পিতা মুক্তিযুদ্ধে নিহত হন। সেজন্য পাকিস্তান ও পাকিস্তানিদের প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত এ ক্ষোভ ও ঘৃণার মনোভাবকে বাড়াবাড়ি বলতে পারি না।

সদ্য সমাপ্ত হয়েছে বইমেলা। যথারীতি প্রচুর বই প্রকাশ হয়েছে। বিক্রিও আশানুরূপ, প্রচুর। কিন্তু যদি প্রশ্ন করি যে, বিক্রিত এ বইগুলো আদৌ কি প্রত্যাশানুরূপ পূর্ণভাবে পঠিত হবে? উত্তর হলো, না। স্মার্টফোন ল্যাপটপ কম্পিউটার ইত্যাদি প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও যথেচ্ছ ব্যবহার বইকে আজ আপামর সাধারণের কাছে নিছকই অপ্রয়োজনীয় ও কিঞ্চিত বিড়ম্বনারও বস্তুতে পরিণত করেছে। বই রাখার বা সংগ্রহের সংস্কৃতি উঠে গেছে। বিষয়টা অবশ্য বড়ো পরিসরে চর্চার দাবি রাখে। তাই আপাতত এখানেই ইতি টানছি।

সম্প্রতি ভারতে কাশ্মীর ফাইল্স নামের একটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এটা নিয়ে ভারতসহ বিশ্বে তোলপাড় চলছে। সেখানে ইসলামি জঙ্গি জেহাদিদের দ্বারা স্থানীয় হিন্দু কাশ্মীরী পন্ডিতদের নির্যাতিত হয়ে কাশ্মীর ত্যাগের বিভিন্ন ঘটনা উঠে এসেছে। এগুলো আমি আগে থেকে জানি। তাই নতুন করে সিনেমা দেখার দরকার নেই। সেখানকার হিন্দুদের ওপর উগ্র ইসলামি জঙ্গি জেহাদিদের সংঘবদ্ধ বীভৎস আক্রমণ নির্যাতনের ঘটনাগুলো জানলে শিউরে উঠতে হয়। আমার তখন মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি, বিহারি ও তাদের স্থানীয় দোসরদের পৈশাচিকতা, পাশবিকতার কথা মনে পড়ে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধেরও মূল ভিক্টিম ছিলো হিন্দুরাই। একটি ঘটনা বলতে চাই। মা’র মুখে শুনেছি। মা তখন টাঙ্গাইলে অবস্থিত ভারতেশ্বরী হোমসের একজন আবাসিক ছাত্রী। মুক্তিযুদ্ধের সময় আটকা পড়েন। স্কুলের এক কোণে গাদাগাদি করে রাখা হয় আটকে পরা ছাত্রীদের। টাঙ্গাইল থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন দূরবর্তী জেলায় বাড়ি হওয়ায় যারা যেতে পারেনি, তারা স্বাক্ষী এ ঘটনার। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা ভারতেশ্বরী হোমসে আসে। তখন প্রিন্সিপাল ছিলেন প্রতিভা মুৎসুদ্দি। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, এখানে কোনও হিন্দু ছাত্রী আছে কিনা? জবাবে তিনি জানান যে, এ প্রতিষ্ঠানে কোনও হিন্দু পড়ে না। ছাত্রীদের সকলেই মুসলমান। অল্প কিছু বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে সফলভাবে তিনি উদ্ভুত পরিস্থিতির মোকাবেলা করেন। একটু এদিকসেদিক হলে ভয়ংকর রকমের অনাসৃষ্টি ঘটতে পারতো। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য পরবর্তীতে প্রতিভা মুৎসুদ্দিকে একুশে পদক দিয়ে সম্মানিত করা হয়।

যাই হোক গিরিজা টিক্কুর কথা বলে লেখাটি শেষ করতে চাই। বিশ বছরের কাস্মীরী হিন্দু পণ্ডিত সম্প্রদায়ের একজন তরুণী। হাসপাতালে টেকনিশিয়ানের কাজ করেন। বিবাহিতা। দুয়েকজন সন্তানও থেকে থাকবে। (ইন্টারনেটে তার পরিবার সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। হাজারো ঘটনার একটি। স্বাভাবিকভাবেই সমস্ত তথ্য অতো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সংরক্ষণ করা যায়নি।) ঘটনার দিন নিজের বেতন সংগ্রহের জন্য তিনি পাশের গ্রাম থেকে ভ্যালিতে আসেন। সেখানে তিনি তখন তার এক মুসলিম সহকর্মীর বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। কাশ্মীরে অশান্তি শুরু হয়ে গেছে এর মাঝে। টিক্কু লক্ষ্য করেননি যে, তাকে অনুসরণ করে চলেছে কতিপয় জঙ্গি। এভাবে এক পর্যায়ে গিরিজা টিক্কু তার মুসলিম বান্ধবীর বাসা থেকে অপহৃত হন। তার সহকর্মী বান্ধবী, বান্ধবীর পরিবারের সদস্যরা ও স্থানীয় লোকজন সবাই মূক দর্শক হয়ে ছিলো। কেউ এগিয়ে আসেনি। অনেকে তো এও বলেন যে, এতে নাকি গিরিজার সহকর্মী মুসলিম বান্ধবীর সম্মতি ছিলো। সে-ই জানিয়েছিলো যে গিরিজা টিক্কু একজন হিন্দু। এখন তাদের ঘরে অবস্থান করছে। তারপরের ঘটনা শুনলে যে কোনও সভ্য সুস্থ বিবেকবান মানুষ মাত্রেরই অন্তরাত্মা কেঁপে উঠবে। অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে গিরিজা টিক্কুকে পালাক্রমে অনেকে মিলে ধর্ষণ করে। পাশবিক নির্যাতন করে। এখানেই শেষ নয়, তারপর মেকানিকাল কাজে ব্যবহৃত হয়, বড়সড় ধারালো একটি করাত দিয়ে কেটে দু’ভাগে বিভক্ত করা হয় শরীর। জীবিতাবস্থাতেই কেটে দু’ভাগ করা হয়। এ অবস্থায় দুদিন পর সড়কের পাশে পাওয়া যায় গিরিজাকে। তার সঙ্গে এ বর্বরতার কারণ, এটা দেখে স্থানীয় বাকি হিন্দুরা যেন আতঙ্কিত হয়ে কাশ্মীর ত্যাগ করে। আমার হাত থেমে আসছে এখানে। বোধশক্তিহীন হয়ে পড়ছি গিরিজা টিক্কুকে নিয়ে লিখতে গিয়ে। কী বীভৎস! কী পৈশাচিক!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০২২ বিকাল ৩:১৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×