[লেখাটি কোনো জরিপ বা গবেষনা হতে লিখিত নয় বিধায় তথ্যগত বিভ্রাট ও অমিল থাকতে পারে। আমার কাছে সংখ্যার চেয়ে বৈচিত্র ও সংগ্রামটি বেশি গুরুত্বপূর্ন।এই লেখাটির কিছু বিশেষ অংশ অনুলিখিত হয়েছে আমার কিছু সুহৃদের দেয়া তথ্যকে ভিত্তি করে। লেখার পরবর্তি অংশে তাদের সৃজিত অংশগুলো আসবে। ব্লগে আমার নিজের পরিচয় উহ্য থাকায় তাদের নামও নিচ্ছি না। কেউ যদি জানেন, নীক নেম কী করে বদলাতে হয়, একটু জানাবেন। আমি সত্যি নামে লিখতে চাই। ]
আমার অনেক দিনের একটা ইচেছ ছিল ঢাকার স্ট্রীট ফুড নিয়ে লেখা। অনেকদিন ধরে তথ্য যোগাড় করে সেই লেখাটা লিখি গত বছর। সেই সময় হতেই আরেকটা লেখার প্ল্যান ছিল। ঢাকার অপ্রচলিত ও ব্যতিক্রমী ধরনের পেশার মানুষদের নিয়েও লিখব। আমার একটা অভ্যাস আছে। রিক্সায় উঠলে বা এমনকি মোটরবাইকে চড়লেও তার ড্রাইভারের হাল, ঠিকুজি জেনে নেয়া। তার ব্যবসার খোঁজ খবর নেয়া। তাদের রুজি রুটি, কাজের ধরন, জীবন জগত সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।
এই সাধারন কৌতুহলটাই আমাকে জানবার সুযোগ করে দেয়, এই ঢাকার বুকে কত মানুষ কতরকমভাবে যে বেঁচে আছে। এর কোনো সীমা নেই। অত্যন্ত আগ্রহ উদ্দীপক সেই জগত। আমার কাছে তাদের রোজগারের পরিমানের চেয়েও বেশি আগ্রহের জন্ম দেয় তাদের সংগ্রামের ধরনটি। কীভাবে একজন প্রায় অশিক্ষিত মানুষ ঢাকার বুকে এসে নিজের চেষ্টায় বেশ ইর্ষনীয় একেকটি স্বাধীন পেশায় নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন, সেটাই আমাকে টানে।
আমার অনুজ ও প্রোফেশনাল মেট নন-কনভেনশনাল পেশার উত্থান নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখেছিলেন। বিশ্বব্যাপীই ননকনভেনশনাল পেশার বাজার বড় হচ্ছে। দাপট বাড়ছে। বাংলাদেশও হয়তো তার কাছে নতি স্বীকার করবে অচীরেই। ঢাকার নন-কনভেনশনাল পেশার রকমফের, আয় রোজগার, প্রফিট মার্জিন, টিকে থাকা, পুলিশি ঝামেলা, শহরে নতুন আসার পর সার্ভাইভাল টেকনিক শেখার ইতিহাস জানার চেষ্টা করতে হলে পড়ুন। এই পেশাগুলোকে নন-কনভেনশনাল বললেও আসলে এইসব পেশায় বিশাল সংখ্যক মানুষ জড়িত আছেন। কিন্তু মানুষ ওগুলোকে খুব একটা দাম দেয় না।
আমি ওগুলোকে নন-কনভেনশনাল বলছি যে জন্য, তা হল, বাংলাদেশের মানুষ তাদের নানারকম সামাজিক ট্যাবু পেরিয়ে যেই দুটো সহজ দিককে পেশা হিসেবে সামাজিক স্বীকৃতি দেয়, তা হল, হয় চাকরী করো নয় বড় ব্যবসা করো। এর বাইরে সবই তাদের কাছে ওঁচা। আমি যেই মেসেজটি এখানে দিতে চেয়েছি, তা হল, আমরা যাতে পড়াশোনা শেষ করে একটা বিসিএস কিংবা কেরানীর চাকরি পেতেই হবে, না পেলে জীবন শেষ, তা না করে বিকল্প ভাবনাটাও ভাবি।
আমার আলাপ হওয়া ও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে পাওয়া গল্পগুলো সাজাতে চেষ্টা করেছি আমার এই লেখায়। কিছু গল্প জোড়া দিয়েছি আমার সুহৃদদের পাঠানো গল্পের সাথে:
১.পান বিক্রেতা: কেরামত আলি। থাকেন বাড্ডা। পেশায় একজন পান বিক্রেতা। যমুনা ফিউচার পার্কের ওদিকে গিয়েছি একটা কাজে। রাত ১১:১৫ টা। বৃদ্ধ কেরামত আলি ছোট্ট একটা টিনের বাকেটে করে পান বিক্রি করেন। চুল ও দাড়ি সব সাদা হয়ে গেছে। ধূসর ভ্রূ যুগল তাকে একটা আলাদা পবিত্র লুক এনে দিয়েছে। আমি অভ্যাসবশত অন্যান্য পান বিক্রেতাকে এড়িয়ে তার কাছ হতে একটা পান নিই। চাচা অনেক আয়াসে কাঁপা কাঁপা হাতে পান সাজেন। পানটা মুখে পুড়ে তাকে জিজ্ঞেস করি, বয়স কত? ”৭৫ বৎসর” তার উত্তর। ”ছেলেমেয়ে নাই?” “না বাবা, মেয়ে ছিল, বিয়া দিছি। ছেলে নাই।” বৃদ্ধ কেরামত আলি ৭৫ বছর বয়সে এখনো পেটের ভাত জোগাড়ে পান বিক্রী করেন। রাত ১১:১৫ তেও। প্রতিদিন তিনি সকাল হতে সন্ধ্যা গড়িয়ে গভীর রাত অব্দি তাই যমুনার সামনের চত্বরে পান বিক্রী করেন। প্রতিটি পান এখন ৭ টাকা (একটি পান, দুটুকরো সুপারি, চুন, সামান্য জরদা, কখনো কখনো মিস্টি পানের উপকরন)। তিনি প্রতিদিন প্রায় দুই পোণ পান (৮০ টাতে এক পোণ) বিক্রী করতে পারেন। তার মানে দাড়াল, ১৬০টি পান X ৭ টাকা = ১১২০ টাকার সেল। প্রতিটি পানে গড়ে তার লাভ ২ টাকা। মানে প্রতিদিন নেট লাভ ৩২০ টাকা, মাসে গড়পড়তায় ৯ হাজার টাকা। যা এখনও বেশিরভাগ প্রাইভেট জবে একজন এমবিএ হোলডারের প্রাথমিক বেতনের সমান।
২.চামেলী কন্যা: চামেলী ছবিটি দেখেছেন কারিনার? ঢাকা শহরের চামেলীদের (আমি মানুষ হিসেবে তাদের প্রাপ্য সম্মান দেখানোর স্বার্থে চামেলী নামে লিখব।) জানি, প্রথমেই আপনি একটি প্রশ্ন করে বসবেন “কী করে জানলেন ওদের কথা?”, সাথে থাকবে আপনার অর্থপূর্ণ একটি ক্রূঢ় হাসি। না ভাইজান, চাইলেই অনেক কিছু জানা যায়। চামেলীদের প্রতি পূর্ন সম্মান ও সমীহ নিয়েই বলছি। ঢাকায় তিন রকমের চামেলীরা আছে। ফাইভ স্টার হোটেল ও এসকর্ট চামেলীরা, মধ্যম/সস্তা মানের হোটেল ও ভাড়া বাড়ির চামেলীরা আর পার্ক, ফুটপাত, স্ট্রীট চামেলী। ফাইভ স্টার হোটেল ও এসকর্ট সার্ভিসের কর্মীরা প্রতিরাতের কয়েক ঘন্টার সার্ভিসের জন্য আয় করে ৫০০০ হতে ১৫০০০ পর্যন্তও। ফুটপাত ও পার্কের ভাসমান চামেলীরা প্রতি রাতে গড়ে ২ হতে ৫ জন কাষ্টমার ডিল করে। গড়ে তারা প্রতিজন হতে চার্জ করে ৫০ হতে ১৫০ টাকা। তার মানে প্রতিরাতে তাদের আয় ১০০ হতে ৬৫০ টাকা। মাসে গড়পড়তায় ৩০০০ হতে ১৫০০০ টাকা।
চলবে....................৫ পর্বে সমাপ্য।আমার অনেক দিনের একটা ইচেছ ছিল ঢাকার স্ট্রীট ফুড নিয়ে লেখা। অনেকদিন ধরে তথ্য যোগাড় করে সেই লেখাটা লিখি গত বছর। সেই সময় হতেই আরেকটা লেখার প্ল্যান ছিল। ঢাকার অপ্রচলিত ও ব্যতিক্রমী ধরনের পেশার মানুষদের নিয়েও লিখব। আমার একটা অভ্যাস আছে। রিক্সায় উঠলে বা এমনকি মোটরবাইকে চড়লেও তার ড্রাইভারের হাল, ঠিকুজি জেনে নেয়া। তার ব্যবসার খোঁজ খবর নেয়া। তাদের রুজি রুটি, কাজের ধরন, জীবন জগত সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।
এই সাধারন কৌতুহলটাই আমাকে জানবার সুযোগ করে দেয়, এই ঢাকার বুকে কত মানুষ কতরকমভাবে যে বেঁচে আছে। এর কোনো সীমা নেই। অত্যন্ত আগ্রহ উদ্দীপক সেই জগত। আমার কাছে তাদের রোজগারের পরিমানের চেয়েও বেশি আগ্রহের জন্ম দেয় তাদের সংগ্রামের ধরনটি। কীভাবে একজন প্রায় অশিক্ষিত মানুষ ঢাকার বুকে এসে নিজের চেষ্টায় বেশ ইর্ষনীয় একেকটি স্বাধীন পেশায় নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন, সেটাই আমাকে টানে।
আমার অনুজ ও প্রোফেশনাল মেট নন-কনভেনশনাল পেশার উত্থান নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখেছিলেন। বিশ্বব্যাপীই ননকনভেনশনাল পেশার বাজার বড় হচ্ছে। দাপট বাড়ছে। বাংলাদেশও হয়তো তার কাছে নতি স্বীকার করবে অচীরেই। ঢাকার নন-কনভেনশনাল পেশার রকমফের, আয় রোজগার, প্রফিট মার্জিন, টিকে থাকা, পুলিশি ঝামেলা, শহরে নতুন আসার পর সার্ভাইভাল টেকনিক শেখার ইতিহাস জানার চেষ্টা করতে হলে পড়ুন। এই পেশাগুলোকে নন-কনভেনশনাল বললেও আসলে এইসব পেশায় বিশাল সংখ্যক মানুষ জড়িত আছেন। কিন্তু মানুষ ওগুলোকে খুব একটা দাম দেয় না।
আমি ওগুলোকে নন-কনভেনশনাল বলছি যে জন্য, তা হল, বাংলাদেশের মানুষ তাদের নানারকম সামাজিক ট্যাবু পেরিয়ে যেই দুটো সহজ দিককে পেশা হিসেবে সামাজিক স্বীকৃতি দেয়, তা হল, হয় চাকরী করো নয় বড় ব্যবসা করো। এর বাইরে সবই তাদের কাছে ওঁচা। আমি যেই মেসেজটি এখানে দিতে চেয়েছি, তা হল, আমরা যাতে পড়াশোনা শেষ করে একটা বিসিএস কিংবা কেরানীর চাকরি পেতেই হবে, না পেলে জীবন শেষ, তা না করে বিকল্প ভাবনাটাও ভাবি।
আমার আলাপ হওয়া ও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে পাওয়া গল্পগুলো সাজাতে চেষ্টা করেছি আমার এই লেখায়। কিছু গল্প জোড়া দিয়েছি আমার সুহৃদদের পাঠানো গল্পের সাথে:
১.পান বিক্রেতা: কেরামত আলি। থাকেন বাড্ডা। পেশায় একজন পান বিক্রেতা। যমুনা ফিউচার পার্কের ওদিকে গিয়েছি একটা কাজে। রাত ১১:১৫ টা। বৃদ্ধ কেরামত আলি ছোট্ট একটা টিনের বাকেটে করে পান বিক্রি করেন। চুল ও দাড়ি সব সাদা হয়ে গেছে। ধূসর ভ্রূ যুগল তাকে একটা আলাদা পবিত্র লুক এনে দিয়েছে। আমি অভ্যাসবশত অন্যান্য পান বিক্রেতাকে এড়িয়ে তার কাছ হতে একটা পান নিই। চাচা অনেক আয়াসে কাঁপা কাঁপা হাতে পান সাজেন। পানটা মুখে পুড়ে তাকে জিজ্ঞেস করি, বয়স কত? ”৭৫ বৎসর” তার উত্তর। ”ছেলেমেয়ে নাই?” “না বাবা, মেয়ে ছিল, বিয়া দিছি। ছেলে নাই।” বৃদ্ধ কেরামত আলি ৭৫ বছর বয়সে এখনো পেটের ভাত জোগাড়ে পান বিক্রী করেন। রাত ১১:১৫ তেও। প্রতিদিন তিনি সকাল হতে সন্ধ্যা গড়িয়ে গভীর রাত অব্দি তাই যমুনার সামনের চত্বরে পান বিক্রী করেন। প্রতিটি পান এখন ৭ টাকা (একটি পান, দুটুকরো সুপারি, চুন, সামান্য জরদা, কখনো কখনো মিস্টি পানের উপকরন)। তিনি প্রতিদিন প্রায় দুই পোণ পান (৮০ টাতে এক পোণ) বিক্রী করতে পারেন। তার মানে দাড়াল, ১৬০টি পান X ৭ টাকা = ১১২০ টাকার সেল। প্রতিটি পানে গড়ে তার লাভ ২ টাকা। মানে প্রতিদিন নেট লাভ ৩২০ টাকা, মাসে গড়পড়তায় ৯ হাজার টাকা। যা এখনও বেশিরভাগ প্রাইভেট জবে একজন এমবিএ হোলডারের প্রাথমিক বেতনের সমান।
২.চামেলী কন্যা: চামেলী ছবিটি দেখেছেন কারিনার? ঢাকা শহরের চামেলীদের (আমি মানুষ হিসেবে তাদের প্রাপ্য সম্মান দেখানোর স্বার্থে চামেলী নামে লিখব।) জানি, প্রথমেই আপনি একটি প্রশ্ন করে বসবেন “কী করে জানলেন ওদের কথা?”, সাথে থাকবে আপনার অর্থপূর্ণ একটি ক্রূঢ় হাসি। না ভাইজান, চাইলেই অনেক কিছু জানা যায়। চামেলীদের প্রতি পূর্ন সম্মান ও সমীহ নিয়েই বলছি। ঢাকায় তিন রকমের চামেলীরা আছে। ফাইভ স্টার হোটেল ও এসকর্ট চামেলীরা, মধ্যম/সস্তা মানের হোটেল ও ভাড়া বাড়ির চামেলীরা আর পার্ক, ফুটপাত, স্ট্রীট চামেলী। ফাইভ স্টার হোটেল ও এসকর্ট সার্ভিসের কর্মীরা প্রতিরাতের কয়েক ঘন্টার সার্ভিসের জন্য আয় করে ৫০০০ হতে ১৫০০০ পর্যন্তও। ফুটপাত ও পার্কের ভাসমান চামেলীরা প্রতি রাতে গড়ে ২ হতে ৫ জন কাষ্টমার ডিল করে। গড়ে তারা প্রতিজন হতে চার্জ করে ৫০ হতে ১৫০ টাকা। তার মানে প্রতিরাতে তাদের আয় ১০০ হতে ৬৫০ টাকা। মাসে গড়পড়তায় ৩০০০ হতে ১৫০০০ টাকা।
চলবে....................৫ পর্বে সমাপ্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:১৮