somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরুষের কান্না, পুরুষের দায়:

১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকাল ফেসবুকে তো নানা ঘাঁইকিচিংই হয়। ফেসবুকের বদৌলতে আজকাল সবাইই কী-বোর্ড বিপ্লবী, সবাই লেখক, সবাই বুদ্ধিজীবি, সবাই মানবতাবাদী, সবাইই ধোয়া তুলসীপত্র বিশেষজ্ঞ। #WorkLifeBalance করে করে মুখে ফেনা তুলে ফেলছি আমরা। সাধু। ধুসা।
তো, ফেসবুক বুদ্ধিজীবিদের একটি অংশ নানা রঙে রাঙিয়ে একটি ট্রেন্ড ইদানীং খুব প্রমোট করছেন। সেটি হল, ক্যারিয়ার আর টাকার পেছনে খুব বেশি না দৌড়ে পরিবার ও সন্তানদের সময় দিতে। প্রকৃত মানুষ, সুনাগরিক, মানুষের মতো মানুষ, ডিভাইন সুখ, অল্পে সন্তুষ্টি, পরিবারকে সময় দাও-ব্লা ব্লা ব্লা এসব বাজ ওয়ার্ড খুব বাজার পাচ্ছে আজকাল।
মোদ্দা কথা হল, ক্যারিয়ারের পেছনে দৌড়ে পরিবার ও সন্তানদের বখে যেতে না দিয়ে, তুমি লাগলে সব কোরবান করো। আরো কথা আছে, কথা বাড়ালাম না।
সব সাধু। দারুন আহবান। নিঃসন্দেহে এই আহবান চমৎকার।
তবে, দাদারা,
আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, একজন পুরুষ, একজন বাবা, একজন স্বামী-তার কি আসলেই কোনো চয়েস আছে?
দায়ীত্বের যে দাসখত পুরুষ হিসেবে আমরা দিয়ে জগতে এসেছি, সেই দায়ীত্ব পালনে কি সত্যিই লিমিট বেঁধে দেবার অধিকার আমাদের হাতে আছে? সুযোগ কি আছে বড় চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঘরে ফিরে এসে সময় বাঁচানোর?
পরিবারকে মানুষের মতো মানুষ করতে ইচ্ছে করে ছোট চাকরিতে চলে আসার সুযোগ কি ক্যাপিটাল এই জগত আমাদের দিয়েছে? একজন বাবার কি আসলেই সুযোগ আছে, অধিকারও কি আছে, যে, সে ব্যবসা-বানিজ্য কমিয়ে, গুটিয়ে এনে পরিবারকে সময় দেবে?
বলবেন, আছে আছে।
আমি তো দেখি না। আজ তক কোনো পরিবার, কোনো সন্তান, কোনো স্ত্রী, কোনো প্রেমিকা-কেউ কি বলেছে,
ও গো বা’জান,
ও প্রাণের স্বামী,
ওগো প্রিয় বাবা,
আমাদের মোটা চালেই হয়ে যাবে, আমাদের হাত খরচ লাগবে না, আমাদের চিকিৎসা না হয়ে মরলেও অসুবিধা হবে না, আমাদের ভাল স্কুলে পড়তে হবে না,
আমাদের স্ট্যাটাস চাই না, আমাদের বন্ধু মহলে ঝাকমারি দেখাতে হবে না, আমাদের পকেটমানি লাগবে না, আমার বিয়েতে জাকজমক লাগবে না, আমার জন্য ঈদে শাড়ি, শশুরবাড়ির গিফট লাগবে না?
না, কেউ বলেনি। বরং, সবাই লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে গেছে। লিস্ট পূরণ করতে না পারলে অদৃশ্য অপমানের খাড়া ঝুলিয়েছে। পুরুষকে পুরুষত্বের চাবুকে অদৃশ্যভাবে পিটিয়ে তাকে নিজেকে ভুলে টাকা আয় করতে ঠেলে দিয়েছে।
রাষ্ট্র ও পরিবার-দুই ই আমরা পুরুষদের সাথে দ্বিচারীতা করে গেছে, করে যাচ্ছে। রাষ্ট্র আমাদের পুরো ব্যবস্থাটাকেই এমনভাবে দাড়া করিয়েছে, যে, আমরা না চাইতেও আমাদেরকে অষ্ট প্রহর মুখে রক্ত তুলে সারভাইব করতে হবে। কর্পোরেট দানব আমাদেরকে এক দুষ্টচক্রে আবদ্ধ করে দিয়েছে।
পরিবারকে সময় দেয়া গৃহমুখী, পরিবারমুখী স্বামী-বাবা-ছেলে সন্তানকে প্রিয়জনকে নিয়ে সরকারী হাসপাতালের বারান্দায় ঠাঁই নিতে যখন বাধ্য হতে হয়, যখন সেই সন্তানকে তার বাবা, তার প্রিয়তম মা, তার প্রিয়তমাকে ধুঁকে ধুঁকে বিনা চিকিৎসায় মরার দৃশ্য সহ্য করতে হয়, তার পরেও যদি তাকে গেলাতে চেষ্টা করা হয়, যে, ‘টাকা জীবনে কিছুই না, ক্যারিয়ার বাদ দাও, ঘরে ফেরো”-সেসব কি খুব বিকোয় বাজারে?
ঘরে ফিরে স্ত্রীকে কাজে সাহায্য করার উপদেশ নিয়ে নারী পুরুষের ভুড়ি ভুড়ি পোস্ট রোজ পাই। কত কত বিজ্ঞাপনে মধুর করে তার দৃশ্যায়নও হয়। সাধু সাধু।
কিন্তু, প্রতিদিন মুখে রক্ত তুলে যখন পুরুষ খাটে, প্রতিটি টাকার নোট আয় করার জন্য সে যে কতরকম অপমান সহ্য করে, বসের কত রকম তাচ্ছিল্য, মালিকের লাথি সে পশুর মতো সয়ে যায়, সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে তাকে প্রতিদিন নিজের সাথে নিজেকে কতটা যুদ্ধ করতে হয়, নিজের কী কী আরামকে বিসর্জন দিতে হয়,
প্রতিটি টাকা আয় করার জন্য তাকে কতজনের গলগ্রহ সহ্য করতে হয়, কত কত কত দিনের দুপুরের ঘুম তাকে কোরবান করতে হয়-কই? কেউ তো কোনোদিনও বলেনি, তুমি এবার অবসর নাও, ঘরে বসে যাও। আমি আমরা দেখছি।
কই, স্ত্রীকে ঘরের কাজে সাহায্য করার এডভোকেসী করনেওয়ালারা কোনোদিনও এই দাবী তো তোলেননি, যে, তাহলে, স্ত্রীও অফিস গিয়ে স্বামীর কাজে একটি দিন অন্তত সহায়তা করুক? করা তো দূরে, কেউ কোনোদিন উচ্চারন কি করেছেন? ঘরের কাজে সাহায্য করার এ্যাডভোকেসী খুব প্রশংসিত হয়। একটিবার স্রেফ কথার কথা হিসেবে সুশীল সাহিত্যের পাতায়ও কি বলা যেত না, তাহলে পুরুষকে তার অফিসের কাজে সাহায্য করো?
সাহায্য কী করবেন, আপনারা তো বলেই দিচ্ছেন, অফিসের কাজ বাসায় এনো না, বাসাকে সময় দাও। অথচ, আমি পুরুষ, আমি স্বামী জানি, অফিসে শেষ করতে না পেরেই আমি ঘরে কাজ নিয়ে ফিরি।
সারাদিন মুখে রক্ত তুলে খাটার পরে বাসায় এসেও কাজ করা কি পুরুষ সখ করে করে? কী-আমাকে খুব একপেশে মনে হচ্ছে?
হলে হোক। আমি আজকে অন্তত দুইপেশে বলতে পারছি না। সারাজীবনই তো দুইপাশে বলেছি। আজ না হয় আমাদের নিয়ে একটু বেশিই বলি।
পুরুষ আসলে কষা-মলের মতো। এপাশেও গন্ধ, ওপাশেও বদবু। তারা কাজ কম করলে ভাদাইম্যা। বেশি করতে গেলে পরিবারের প্রতি উদাস।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:২৯
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×