somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলচ্চিত্রে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ

৩০ শে অক্টোবর, ২০০৮ রাত ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত বছরের রাজনৈতিক ছবিগুলো, যা সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে উদারপন্থী হলিউডের অবস্থান চিহ্নিত করে, দর্শকদের উদাসীনতায় মুখ থুবড়ে পড়ে। অস্কার বিজয়ী অভিনেতারাও সিনেমা দর্শকদের 'লায়ন্স ফর ল্যাম্বস', 'ইন দ্য ভ্যালি অফ এলাহ', অথবা 'রেন্ডিশন'-এর মতো সিনেমা দেখার জন্য আকৃষ্ট করতে পারেনি। দর্শকদের মতে, এ ধরনের ছবিগুলো অনেকটা বক্তৃতা করে জনগণকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে। প্রডিউসররা প্রচলিত ধারার সঙ্গে সাম্প্রতিক হট ইস্যুকে মিশিয়ে নতুন কিছু তৈরি করার চেষ্টা করেছেন বটে, কিন্তু খুব বেশি লোক এক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেনি। সৌদি আরবের কাহিনী নিয়ে জেমি ফক্সের অ্যাকশন ফিল্ম 'দ্য কিংডম' কিংবা টম হ্যাঙ্কসের আফগানিস্তাননির্ভর কমেডি ছবি 'চার্লি উইলসন'স ওয়ার' এসব তারকা-অভিনেতার বছরের সবচেয়ে কম বক্স অফিস হিট ছাড়া আর কিছু দেয়নি। আমেরিকানরা বোধহয় তাদের ক্রয় লিস্টে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের সিনেমার টিকেটের জন্য কোনো জায়গা রাখে না।
হয়তো 'বডি অফ লাইস' এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটাবে। মধ্যপ্রাচ্যে নির্ভিক রজার ফেরিসের চরিত্রে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও আর তার বস হফম্যানের চরিত্রে রাসেল ক্রো অভিনয় করেছেন এ ছবিতে। অস্কার বিজয়ী 'দ্য ডিপার্টেড' ছবির লেখক উইলিয়াম মোনাহান এর স্ক্রিপ্ট লিখেছেন আর পরিচালনা করেছেন রিডলি স্কট, যিনি এর আগে 'ব্লাক হক ডাউন' ছবির মাধ্যমে দেখিয়েছেন কিভাবে পলিটিক্যাল বাজারে সাসপেন্স তৈরি করতে হয়। বড় কথা হলো, 'বডি অফ লাইস' তৈরি হয়েছে ডেভিড ইগনেশাস-এর বেস্ট সেলারের ওপর নির্ভর করে যেখানে ফেরিস পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য নিজেকে নিয়োজিত করে, ট্র্যাডিশনাল অন্যান্য স্পাই কাহিনীগুলোর মতোই।
লিওনার্দো কিংবা রজার এ অশুভ শক্তির সঙ্গে পেরে উঠবে কি না তা আমরা জানি না, তবে দর্শকদের মন জয় করার মাধ্যমে 'বডি অফ লাইস' বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধকে নিয়ে একটি ফিল্ম করা সম্ভব এবং এর উন্নত স্পাই থ্রিলিং-এর মাধ্যমে দর্শকদের আকৃষ্ট সম্ভব।

নাইন ইলেভেনের বিধ্বংসী ঘটনা মুসলিম দেশগুলোর ভূমিকে স্পাইদের বিচরণক্ষেত্র বানিয়েছে, যেমনটি হয়েছিল স্নায়ুযুদ্ধের সময় বার্লিনে। কিন্তু এখানকার অবস্থা ভিন্ন। কেজিবি চাইলেই কোনো পলিটিক্যাল ঘটনা ফাঁস করতে পারে না কিংবা সাদা চামড়ার আমেরিকানরা আরব দেশে আল কায়েদার গোপন সেলে অনুপ্রবেশ করতে পারে না। ফেরিস তথ্য বের করার জন্য স্থানীয় জনগণকে ব্যবহার করে। অবশ্য তার এবং হফম্যানের প্লান বিশাল এবং বিস্তৃত- মৃত কোনো ব্যক্তির প্রতি তথ্য পাচারের অভিযোগ করা এবং একটি কাল্পনিক সিআইএ গুপ্তচর তৈরি করা যাকে টেররিস্টরা নিজেদের লোক বলে ধরে নেয়। দায়িত্বটা ফেরিসের ওপর সে নিজেকে কতোটা সফলতার সঙ্গে তুলে ধরে নিজেকে নেতৃস্থানীয় পদে আসীন হতে পারে।
লেখক ইগনিশাস এ ঘটনা তার বইয়ের প্রথম অধ্যায়েই লিখেছেন কিন্তু মোনাহান এবং স্কট প্রায় এক ঘণ্টা সময় নিয়েছেন তার বাস্তবায়নে, তুলে ধরেছেন আরব দেশে একজন আমেরিকানকে প্রতিদিন কি পরিমাণ ঝুঁকির মোকাবেলা করতে হয়। ফেরিস যখন নিজেকে আরব মরুভূমিতে নিজের জীবনকে পাল্টে ফেলতে ব্যস্ত, হফম্যান তখন দূর থেকে তাকে পর্যবেক্ষণ করছেন, যেন গড দেখছেন তার সৃষ্টিকে।
বডি অফ লাইস একটি জটিল ছবি, এখানে আগ্রহের বিষয় যেমন আছে, তেমনি আছে অস্পষ্ট এবং কর্কশ বিষয়ও। এ ধরনের ছবি দর্শকদের বুদ্ধিমত্তা, তাদের পাজল মেলানোর ক্ষমতা নিয়ে খেলা করে। ফলে সিনেমাটি পুরো দুনিয়ার জগাখিচুরি - কাতার থেকে সিরিয়া, আম্মান থেকে বাগদাদ, ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার
থেকে ভার্জিনিয়ায় হফম্যানের অফিস পর্যন্ত।
অ্যাকশন ছবিতে ফ্যানদের প্রয়োজন মেটাতেই মাঝে মধ্যে বিরতি হিসেবে বিস্ফোরণ আর গোলাগুলি রয়েছে। প্রথম শটটা স্যালুট করার মতো, কিন্তু পরে ওগুলো যেন রুটিনে পরিণত হয়েছে। নির্মম অত্যাচারের দৃশ্যটুকু বাদে কোনো দৃশ্যই মাত্র একবার ঘটেনি বরং ঘুরে ফিরে একাধিকবার এসেছে। চিফ টেররিস্টের বক্তব্য - ‘আমরা রক্ত দিয়েছি, এবার তারা রক্ত দেবে, ততোক্ষণ পর্যন্ত দেবে যতোক্ষণ পর্যন্ত শেষ না হয়’ - সিনেমার প্রতিঘাত যেন এখানেই।
পুরনো এবং আধুনিক সব ছবিতেই যা প্রচলিত তা হলো, সেই মেয়েটি, যে সুন্দর ফুল কিংবা ল্যান্ডস্কেপের মতো সুন্দর, যে নায়কের হৃদয় হরণ করে নেয় এবং শেষ মুহ‚র্তে তাকে বিপদে ফেলে দেয়। এ ছবিতে ফেরিস জর্দান নার্স আয়েশার প্রেমে পড়ে। এ ধরনের ছবিতে প্রেমের দুটো মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে - দর্শকের চোখকে প্রশান্তি দেয়া এবং নিজেকে জিম্মি হিসেবে তুলে দেয়া। নায়ক হিসেবে ফেরিস যতো লোককেই মারুক না কেন অথবা যতো ঝুঁকিই নিক না কেন, তখন তার কিছুই করার থাকে না যখন তার গার্ল ফ্রেন্ড...!
গতানুগতিক ছবিতে রূপান্তরের আগেই এ ছবিতে আমেরিকান এবং আরব ধূর্ততা তুলে ধরা হয়েছে। ডিক্যাপ্রও তার মেধা ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন এখানেও। ক্রো সে তুলনায় কিছুটা বিচ্যুত এবং হতাশাজনক। সে তার চরিত্র ভালোভাবেই ফুটিয়ে তুলেছে, শুধু গায়ের লম্বা, ঢোলা আর পুরনো কোটটি ছাড়া।
সব মিলিয়ে বডি অফ লাইস ভালো-মন্দ মিশিয়ে একটি ছবি। আগের সন্ত্রাসবিরোধী ছবিগুলোর পরিণতি যা-ই হোক না কেন, তুলে ধরার মতো যথেষ্ট বিষয় বাকি রয়ে গেছে এখনো।


টাইমস অবলম্বনে, দৈনিক যায়যায়দিনে প্রকাশিত
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×