ভালবেসে চিৎকার করে খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গালো এলার্ম দিয়ে রাখা ঘড়িটা। চিৎকারটা এমন, যে বিছানায় থাকা মুশকিল।
ভালই হয়েছে, আমার জন্য এমন ভালবাসাটাই দরকার। কারণ এর আগে পরপর দু’বার রাজধানীর টিকেট কেটে ঘুমিয়েছিলাম, ফের নতুন করে টিকেট কেটে যেতে হয়েছিল।
আজ ঢাকা যেতে হবে, চাকরীর ইন্টারভিউ আছে।
তাড়াহুড়ো করে গাড়িতে উঠলাম।
আমার সিটটা জানালার ধারে, তাই বাইরে তাকিয়ে দেখছি মানুষের ব্যস্ততা, কখনো হাট-বাজার আবার কখনো শষ্যে ভরা দীর্ঘ ধান ক্ষেত। এসব দেখতে দেখতে মনটা উদাস হয়ে যায়। প্রতিবারই যাত্রার সময় মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি এবার বাড়ীতে ফিরে নিজেকে নতুন করে সাজাবো, এ করবো, ও করবো।
যাইহোক গাড়ীর গতির সাথে আমার চিন্তা চলতে চলতে হঠাৎ থেমে যায়। কি ব্যাপার ? শুনলাম সকালের নাস্তার জন্য ২০/৩০ মিঃ যাত্রা বিরতি।
এলেঙ্গা পার হয়ে গাড়ীটা দাঁড়িয়েছে।
হোটেলে গিয়ে নাস্তার অর্ডার দিলাম। হোটেলের চেহারা অনুযায়ী নাস্তার কোয়ালিটিটা ভাল। নাস্তা শেষে বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে ফিরতেই দেখি একটা ছেলে তোয়ালা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আমিতো হোটেলের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
ছোট-বড়, শহরে-গ্রামে অনেক হোটেলেই গিয়েছি কিন্তু এমন আতিথেয়তা কখনো পাইনি। নিজেকে অনেক বড় কিছু মনে হচ্ছিল। যাইহোক আমি আমার দু’হাত মুছে নিলাম তোয়ালাতে।
হাত মোছা যখন শেষ তখন ছেলেটি বললো, ভাই এটা কি হলো ?
ছেলেটির কথাটা হঠাৎ পিনের মত মাথায় বিঁধলো, বুঝলাম সামথিং রং।
তৎক্ষনাত সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে ছোট শিশু কোলে নিয়ে এদিকেই আসছে।
সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপারটা পরিষ্কার হলো যে, তোয়ালাটা আমার জন্য নয়, ঐ শিশুটির জন্য ধরেছিল ছেলেটা।
আমি তো শেষ! সরি বলার মতো সাহসটুকুও হারিয়ে ফেলেছি।
তাড়াতাড়ি গাড়ীতে গিয়ে বসলাম।
আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা এখনো আমাকে লজ্জা দেয়। ঐ শিশুটির কাছে আমি সরি।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৩৮