somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাঁদ-তারা কি ইসলামের প্রতীক?

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিশ্বের বিভিন্ন ধর্ম বিভিন্ন প্রতীক ধারণ করে। যেমন, খ্রীস্টান ধর্মের 'ক্রস', হিন্দু ধর্মের 'ঔঁ' কিংবা ইহুদী ধর্মের 'দাউদের তারা বা star of David'।যদি প্রশ্ন করা হয় , ইসলাম ধর্মের এই রূপ কোন প্রতীক আছে কিনা। অনেকেই এক বাক্য 'চাঁদ-তারা' বা Crescent Moon & Star এর কথা বলবেন।

আধুনিক কালে সমগ্র বিশ্বে চাঁদ-তারার এই প্রতীক ইসলামের তথা মুসলমানদের প্রতিনিধীত্ব করে এবং ইসলামী প্রতীক রূপে স্বীকৃত। তাই, আধুনিক বিশ্বের অনেক ইসলাম ধর্মীয় স্থাপনায় Crescent Moon & Star বা চাঁদ-তারা খচিত দেখা যায়।পবিত্র প্রতীক হিসাবেএই চাঁদ-তারা কুরাআন শরিফ সহ ধর্মীয় গ্রন্থের মোড়কে চাঁদ-তারা স্থান পেযেছে।এমন কি কযেক টি মুসলিম রাষ্ট্র তাদের জাতিয় পতাকায় এই চাঁদ-তারা কে স্থান করে দিযেছে।

মহানবী (সাঃ) এর যুগে ইসলামী প্রতীক কি ছিল?
ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে ধর্মীয় প্রতীক হিসাবে চাঁদ-তারার ব্যবহার ছিল না।মহানবী(সাঃ) এর জীবদ্দশায় মুসলমানদের এইরূপ কোন প্রতীক ছিল না। সে সময় মুসলামন সেনাবাহিনী বা ধর্মীয় কাফেলা পরিস্থিতির ভিত্তিতে সাধারণত কালো, সাদা ও সবুজ এক রংয়ের পতাকা বহন করতো।এবং পরবর্তীতে আরবের মুসলমান শাসকরাও কালো, সাদা ও সবুজ এক রংয়ের পতাকা ব্যবহার করতেন যাতে কোন চিহ্ন বা লেখা থাকতো না।

ইসলামী পতাকা সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ


মহানবী (সাঃ) কর্তৃক ব্যবহৃত প্রদান পতাকা ছিল "Al- Uqaab" যার উৎস কুরায়শদের পতাকা। এবং পরবর্তী ৪জন খলিফায়ে রাশেদীন মহানবী(সাঃ) পদাংক অনুসরণ করেন এবং নিখাদ কালো পতাকা নব বিকশিত মুসলিম বিশ্বের জাতীয় পতাকায় পরিনত হয়।
উমাইয়া শাসকদের (৬৬০ সাল হতে ৭৫০ সাল) পতাকা সম্পর্ক সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না । তবে স্পেন বিজয়ী উম্মাইয়ারা সাদা পতাকা ব্যবহার করতো।

আব্বাসিয়া শাসন কালে (৭৫০ সার হতে ৯৬০ সাল) জাতীয় রং ছিল কালো এবং পতাকাও ছিল নিরেট কালো ( ৫ ফুট বাই ৩ ফুট) । তবে তা ইসরামের প্রথম যুগের "Al- Uqaab" এর সাথে সংশ্লিষ্ট নয়।হাশেমী আন্দোলনের সময় উমাইয়া শাসকের হাতে আব্বাসিযাদের নেতা ইমাম ইব্রাহিম নিহত হলে শোকের প্রতীক হিসাবে তারা বালো পতাকা বহন করতো যা তাদের শাসন আমলে জাতীয় পতাকা পরিনত হয়।

উত্তর আফ্রিকার প্রায় পুরটা এবং পশ্চিম এশিয়া কিছু অংশের শাসক ফাতেমী ( শিয়া সম্প্রদায়) শাসকরা নিখাদ সবুজ পতাকা ব্যবহার করতো।৭ম আব্বাসীয় খলিফা মামুনুর রশিদ শিয়া সম্প্রদায়ের সাথে সংহতি প্রকাশে তাঁর শাসন কালে অর্ধ সাদা-অর্ধ সবুজ জাতীয় পতাকা অনুমোদন করেন।

পঞ্চদশ শতকে উসমানীয় বংশের শাসকদের শাসন আমলে চাঁদ-তারা ইসলামের প্রতীক হিসাবে ব্যবহার হতে শুরু হয়।এ আমলে রাষ্ট্রিয় ও ধর্মীয় পতাকায় পৃথক রঙ ব্যবহার শুরু হয়। রাষ্ট্রীয় পতাকা লাল আর ধর্মীয় পতাকা সবুজ।

ত্রয়োদশ শতকের পূর্বের মুসলমানদের কোন স্থাপনায় বা বইযের মোড়কে চাঁদ-তারা অনুপস্থিত।এমনকি বর্তমান মূল পবিত্র কাবা শরীফের কোথাও চাঁদ-তারা নেই।(খুব সম্ভবত বর্তমান মসজিদ আল হারামেও কোন চাঁদ-তারা বা Crescent Moon & Star নেই।..একান্ত আমার অনুসন্ধান)

চাঁদ-তারা ইসলামের প্রতীক হিসাবে ব্যবহাবের সূচনাঃ
১৪৫৩ সালে তুর্কিরা ইস্তাম্বুল (Constantinople) দখল করে নেয়। তৎকালিন বিজিত Constantinople এর নগর পতাকা ছিল চাঁদ-তারা খচিত আর উসমানিয়া শাসকরা সেই পতাকা কে নিজস্ব হিসাবে গ্রহন করে নেয়।কথিত আছে, উসমানিয়া বংশের প্রথম শাসক উসমান (১ম) একদিন স্বপ্নে দেখেন যে, চাঁদ-তারা খচিত পতাকা পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্তে ছুটে চলেছে।এটাকে শুভ লক্ষণ বিবেচনায় চাঁদ-তারা কে মুসলমান বিশ্বের পতাকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়।


১৩৪৩ সাল থেকে ১৪৫৩ সাল পর্যন্ত উসমানিয়া শাসকদের পতাকা।যা নিরেট লাল।


প্রথম উসমানিয়া শাসক উসমান (১ম) এর পুত্র রোহান (১ম) (যে এক জন Byzantine রাজকন্যাকে বিযে করে) Byzantine পতাকার সাথে সম্বনানয় সাধন করে পূর্বে পতাকায় Crescent Moon বা প্রথমার চাঁদ যুক্ত করে। এবং পরে চাঁদের সাথে তারা যুক্ত হয়।


উসমানিয়া সাম্রাজের (Ottoman Empire) ১৫১৭ সাল হতে ১৮৪৪ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত পাতাকা।
ধারনা করা হয়, পাঁচ শীর্ষযুক্ত তারা ইসলামের প্রধান পাঁচ স্তম্ভ কে নির্দেশ করে। বিন্তু , উসমানিযা সাম্রাজ্যের পতাকায় সর্বদা পাঁচ মাথার তারা ছিল না।


১৭৯৩ থেকে ১৮৪৪ সার পর্যন্ত উসমানিয়া শাসকদের ধর্মীয় বা Flag of the Caliphate.

যা হোক কয়েক পঞ্চদশ শতক হতে বিংশ শতাব্দীর সূচনা লগ্ন পর্যন্ত উসমানীয়া বংশ নানা ভাবে নানা প্রকারে সমগ্র বিশ্বের নান প্রান্তের মুসলমানদের শাসন করেছে, প্রতিনিধিত্ব করেছে এবং মুলমানদের প্রতিনিধিরূপে একাধিকবার ইউরোপের খ্রস্টানদের সাথে ক্রৃসেড বা যুদ্ধে লিপ্ত হযেছে।এই ৫ শত বছরের উসমানিয়া শাসন কালে Ottoma সাম্রাজের পতাকা তথা প্রতীক ইসলামের প্রতীকে পরিনত হযেছে।

প্রতীক হিসাবে চাঁদ-তারার আদি ইতিহাসঃ
ইসলামের আবির্ভাবের বহু আগে থেকে কয়েক সহস্র বৎসর ধরে চাঁদ-তার প্রতীকের ব্যবহার আসছে। চাঁদ-তারা প্রতীকের নানা রুপ ব্যবহার ইতিহাস পাওয়া গেলেও এর ব্যবহারের উৎসে রযেছে প্রচীন মধ্য এশিয়ান ও সার্বিয়ারদের সূর্য -চন্দ্র-তারা দেবতাদের উপাসনার সাথে।


উসমানিয়াদের Constantinople বিজযের আগে বর্তমান ইস্তাবুল ছিল Byzantium সাম্রাজের রাজধানী। Byzantium বা গ্রীকদের প্রকৃতি-শিকার আর রক্ষাকারী আদি দেবী Diana মাথায় শৌভিত ছিল Crescent Moon. উপরে দেবী Diana র ছবি, মাথায় Crescent Moon শোভিত।


অপর দিকে তারা বা Star হচ্ছে Carthaginian প্রধান দেবী Tanit প্রতীক , যে সমগ্র বিশ্বজগতের অধিকর্তী।এই দুই শুভ প্রতীকে Byzantium দ্বারা গৃহিত হয়।



Byzantium মুদ্রায় Crescent Moon & Star বা চাঁদ-তারা।


উসমানিয়াদের ইস্তাম্বুর বিজয়ের পূর্বে Byzantium পতাকায় Crescent Moon & Star বা চাঁদ-তারা।


ব্যবিলিনিয় মুদ্রায় দেবীদের সাথে Crescent Moon & Star বা চাঁদ-তারা।

উপসংহারঃ

দেখা যায় যে,মুসলমানরা শত শত বৎসর ধরে বিভিন্ন অঞ্চলে শাসনকালে উক্ত এলাকার ঐতিহ্য সংস্কৃতির নানা উপকরণ নিজের হিসাবে আত্মীকৃত করেছে।এমন কি, এই গ্রহন কালে মুসলিম সমাজে মধ্য অপর ধর্মীয় বহ্যিক উপকরণ অবাধে অনুপ্রবেশ ঘটেছে।এটা সকল জাতি ধর্মের জন্য সমান ভাবে সত্য । কেননা, এটাই সমাজ বিকাশ ও বিবর্তনের সাধারন নিয়ম।

পঞ্চদশ শতকে উসমানিয়া শাসকদের কর্তৃক গ্রীক আর ক্যাথরজিয়ান দেবীর প্রতীক কে মুসলমান সাম্রাজের প্রতীকে পরিনত করা বা পতাকা ভুক্ত করার মাধ্যমে তারা মুসলমান বিশ্ব কে এই সকল দেবীদের উপাসকে পরিনত করেছে এ কথা বললে তা নিতান্ত হাস্যকর হবে।

একই ভাবে আমাদের দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালান, হাতে রাঁখি বাঁধা কিংবা কপালে টিপ পরা নিয়ে ইসলাম গেল বলে হৈচৈ করা নিতান্ত হাস্যকর নয় কি ?

************************************************
সূত্রঃ
1)The Crescent Moon:Is it a symbol of Islam? Click This Link

2) Islamic Symbols

3) Category:Flags of the Ottoman Empire

4) Islamic flags



সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:২১
৩৫টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×