মুক্তিযুদ্ধ : বঙ্গবন্ধু : বাংলাদেশ -
আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি- প্রত্যেকে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো-
তোমাদের যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে -
মনে রাখবা আমরা যখোন মরতে শিখেছি –
তখোন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবেনা –
রক্ত যখোন দিয়েছি- রক্ত আরো দেবো –
এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো –
ইনশাল্লাহ- এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম –
এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধিনতার সংগ্রাম – জয়বাংলা-
মাত্র ১৮ মিনিটের একটি ভাষণ সাড়ে সাত কোটি নিরিহ নিরস্র অশিক্ষিত বাঙালি জাতিকে মুহুর্তে সশস্র গেরিলা যোদ্ধা বানিয়ে-
পৃথিবির তৃতিয় শক্তিধর পাকিস্থানি হানাদার বাহিনিকে ৯৩ হাজার সৈন্য সহ আত্মসমর্পনে বাধ্য করে মাত্র ০৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে (জনযুদ্ধে) –
কেউ কেউ জাতির পিতার সমান্তরাল নেতা বানাতে চান অনেককে -
নিজেও জাতির পিতার সমান্তরাল নেতা হোতে চান কেউ কেউ –
তাদের সেই হিন ইচ্ছেকে আমি দৃঢ় চিত্তে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করে বলতে চাই –
বাংলাদেশের জনযুদ্ধ বা স্বাধিনতা যুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধ কি ১০০ মিটার বা ১,০০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতা ছিলো ?
কিংবা ১০,০০০ হাজার মিটার রিলে রেস ছিলো ?
কেউ বাশিতে ফু দিলে দৌড় শুরু হয়ে গেলো -
নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছে -
প্রথম- দ্বিতিয়- তৃতিয় স্থান অধিকার করলো ?
বাংলাদেশের জনযুদ্ধ বা স্বাধিনতা যুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধ দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রাম- আন্দোলন - কারাভোগ ও গোটা জাতির অপরিসিম ত্যাগ তিক্ষিার বিনিময়ে অর্জিত ফসল –
স্বাধিনতার ঘোষণাপত্র পাঠের কৃতিত্বতাকে আমি এ ভাবে মূল্যায়ন করি-
মনেকরি UNO (উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা) সাহেব ১৪৪ ধার জারি করে,
একটি মাইক নামিয়ে একজন ঘোষককে দিয়ে পুরো এলাকায় ১৪৪ ধার জারির ঘোষণা প্রচার করালেন –
এলাকাবাসি কার ঘোষনা শুনলেন ?
মাইকে ঘোষকের - মাইকে ঘোষক কি ১৪৪ ধার জারি করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন ?
তেমনি ভাবে রাষ্ট্রপতি যদি রাষ্ট্রে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন -
দেশবাসি টেলিভিশন ও বেতারের ঘোষকদের মাধ্যমে জরুরি অবস্থা ঘোষণার খবর জানতে পারেন-
জরুরি অবস্থা ঘোষণা কে ঘোষনা করলেন রাষ্ট্রপতি না কি টেলিভিশন ও বেতারের ঘোষকগণ বা সংবাদ পাঠকগণ ?
আমরাতো ১৯৭১ খৃস্টাব্দের ০৭ মার্চের রেসকোর্সের ঘোষনার পরেই সাড়ে তিন হাত বাশের লাঠি নিয়ে মুক্তিবাহিনির প্রশিক্ষণ শুরু করি – প্রত্যেক ইউনিয়নে-
বরিশালে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে বেসামরিক সচিবালয় স্থাপন করে -
বি এম কলেজ, বি এম স্কুল, মহিলা কলেজ, এ কে স্কুল মাঠে সাড়ে তিন হাত বাশের লাঠি নিয়ে মুক্তিবাহিনির প্রশিক্ষণ শুরু করি-
তারও আগে
১৯৭১ খৃস্টাব্দের ০২ মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধিন বাংলার পতাকা উত্তোলন –
১৯৭১ খৃস্টাব্দের ০৩ মার্চে পল্টন ময়দানে জাতির পিতাকে সামনে রেখে ছাত্রলিগ স্বাধিনতার ইশতেহার পাঠ করে -
১৯৭১ খৃস্টাব্দের ২৩ মার্চের পাকিস্থান দিবসে সারা দেশ সহ পল্টন ময়দানে
স্বাধিন বাংলার পতাকা উত্তোলন-
গান ফায়ার-
গার্ড অব অনার প্রদান-
মার্চপাস্ট –
ছাত্র ইউনিয়নের ছাত্রী ব্রিগেড রাজপথে সশস্র মহড়া কি কোনো বাশিওয়ালার বাঁশির ফু’র অপেক্ষায় হোয়েছিলো ?
যারা বলেন, ১৯৭১ খৃস্টাব্দের ২৭ মার্চের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের ঘোষনা না শুনলে মুক্তিযুদ্ধ হোতো না-
তাদেরকে আমি দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বলি, ২৬ মার্চ যদি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুও বলতেন, মুক্তিযুদ্ধ হবে না-
সকলে ঘরে ফিরে যাও-
কোনো বাঙালি ঘরে ফিরতো না -
জাতিকে বঙ্গবন্ধু এতোটাই স্বাধিনতাকামি মুক্তিকামি মরোনোন্মুখ করে তৈরি করেছিলেন যে তাকে আর ঘরে ফেরানো যেতো না-
১৯৭১ খৃস্টাব্দের ০১ মার্চের ইয়াহিয়ার জাতিয় সংসদ অধিবেশন বাতিলের ঘোষনার সাথে সাথে সারা দেশে যে বিক্ষোভ নামে-
ঢাকার জনতা বঙ্গবন্ধুর কাছে ছুটে যায় পরবর্তি নির্দেশনার জন্যে –
জাতির পিতাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৪৭ খৃস্টাব্দের স্বাধিনতার পরেই তার কলেজে টেবিলে দাড়িয়ে ঘোষণা দেন-
এই স্বাধিনতায় বাঙালির মুক্তি আসবেনা –
ঢাকায় চলো –
ঢাকায় গিয়ে নতুন করে বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম শুরু করতে হবে-
সে লক্ষে্ ১৯৪৮ খৃস্টাব্দে ছাত্রলিগ প্রতিষ্ঠা করেন-
১৯৪৯ খৃস্টাব্দে আওয়ামি লিগ প্রতিষ্ঠা করেন-
১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত ভাষা আন্দোলন-
১৯৫৪ খৃস্টাব্দে ‘যুক্তফ্রন্ট’ নির্বাচন-
১৯৬২ খৃস্টাব্দে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধি আন্দোলন-
১৯৬৬ খৃস্টাব্দে বাঙালির মুক্তি সনদ ০৬ দফা জাতির জামনে পেশ-
১৯৬৯ খৃস্টাব্দে আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং ০৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে গণঅভ্যুত্থান-
সকল রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি-
১৯৬৯ খৃস্টাব্দে ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজবকে “বঙ্গবন্ধু” খেতাব প্রদান-
১৯৭০ খৃস্টাব্দে সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামিলিগের একক নিরঙ্কুশ বিজয়- বাঙালি জাতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে একক সিদ্ধান্তের ক্ষমতা দেন -
১৯৭১ খৃস্টাব্দে ০৭ মার্চের ১৮ মিনিটের ভাষণ সাড়ে সাত কোটি নিরিহ নিরস্র অশিক্ষিত বাঙালি জাতিকে মুহুর্তে সশস্র গেরিলা যোদ্ধা বানিয়ে-
পৃথিবির তৃতিয় শক্তিধর পাকিস্থান হানাদার বাহিনিকে ৯৩ হাজার সৈন্য সহ আত্মসমর্পনে বাধ্য করে মাত্র ০৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে (জনযুদ্ধে) –
৩০ লাখ শহিদের জিবনের বিনিময়ে ১০ লক্ষাধিক নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে-
নারী কেবলমাত্র সম্ভ্রম বিসর্জন দেননি-
অসংখ্য নারী সম্মুখ সমরে সশস্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন-
অসংখ্য নারী মুক্তিবাহিনির সদস্যদের আশ্রয় দিয়েছেন-
অসংখ্য নারী আহত মুক্তিবাহিনির সদস্যদের নাসিং সেবা দিয়েছেন-
অসংখ্য নারী মুক্তিবাহিনির সদস্যদের রান্না করে খাইয়েছেন-
প্রায় ০১ কোটি বাঙালির শরণার্থি হবার বিনিময়ে-
গোটা বাঙালি জাতির অপরিসিম ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে –
অর্জিত আমাদের এই স্বাধিনতাকে যারা বিতর্কিত করতে চান –
তারা সচেতন স্বাধিনতা বিরোধি-
সদ্য স্বাধিন, যুদ্ধবিদ্ধস্থ দেশকে পুনর্গঠনের জন্যে জাতির পিতাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দল মত নির্বিশেষে সকলকে আহ্বান জানান-
কিন্তু স্বাধিনতার পরাজিত চিহ্নিত মুসলিম লিগ, জামায়াতে ইসলামি, নেজামে ইসলামি সহ সকল মুসলিম ধর্মাবলম্বি দল, সকল পিকিংপন্থি কমিউনিস্ট রাজনৈতিক দলসমুহ জাতির পিতাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ডাকে সাড়া না দিয়ে অযৌক্তিভাবে সদ্য স্বাধিন, যুদ্ধবিদ্ধস্থ দেশের নবিন সরকারকে “উতখাতের” ডাক দেন-
স্বাধিনতার পরাজিত চিহ্নিত শত্রুদের সাথে যুক্ত হয় মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে আসা ছাত্র লিগের পথভ্রষ্ট ও বিপথগামি হটকারি অংশ-
গঠন করে “জাসদ”-
তারা জামাতের ‘দৈনিক সংগ্রামের’ অফিস ও প্রেস ব্যবহার করে “জাসদ”এর “গণকন্ঠ” প্রকাশ করে- মধ্যপ্রাচ্য থেকে অনুদান সংগ্রহ করে দেয় জামাত শিবির-
স্বাধিনতা বিরোধি ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধি মুসলিম লিগ, জামাত শিবির, পিকিংপন্থি কমিউনিস্ট রাজনৈতিক দলসমুহ ও ‘জাসদ’ই ১৫ আগস্টের পথ রচনা করে –
দেশকে ৪০ থেকে ৬০ বছর পিছিয়ে দেয় -
আজকের ২০৪১ খৃ: অভিষ্ট জাতির পিতা বেচে থাকলে ১৯৮০ - ৯০ খৃ: অর্জন সম্ভব হতো –
আমি দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বলছি-
১৯৭১ খৃ: মুক্তিযুদ্ধে মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকরা অংশ গ্রহণ করেনি-
উপরন্তু পাকিস্থানি হানাদার বাহিনির দোষর হিসেবে বা সমান্তরাল বাহিনি রাজাকার, আল বদর , আল সামস, প্রভুতি বাহিনি গঠন করে বাঙালি নিধনে লিপ্ত ছিলো-
আজকেও জামাত শিবির হেফাজত সহ সকল ইসলামি দল ও দেশের সকল পিরদের দল বাংলাদেশে স্বাধিনতার বিরুদ্ধে কাজ করছে – সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে-
জাতিকে সতর্ক থাকার বিনত অনুরোধ জানাচ্ছি-
– জয়বাংলা- জয়বঙ্গবন্ধু -
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ১২:০৯