রফিক সাহেব সকালে ঘুম থেকে উঠে বাজারে বের হয়েছে,আজ তার ছুটি। তাই সপ্তাহের বাজার একদিনেই করে রাখে সে।
সে একজন সামান্য সরকারি কর্মচারী, মাসের শুরুর দিক ভালো থাকলেও শেষের দিকের অবস্থা খুব একটা ভালো থাকেনা।
অথচ সবার অভিযোগ তার দিকে সে সরকারি চাকরি করে, সরকার তাকে মাস শেষে মোটা অংকের বেতন দেয়।
অথচ যাদের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে তারা কিন্তু জানেনা,রফিক সাহেবের বেতন গাণিতিক হারে বাড়লেও তার খরচ বেড়ে যায় জ্যামিতিক হারে,অনেকটা বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির মতো। লোক বাড়ছে ব্যাপক হারে,কর্মসংস্থান,কৃষি জমি কমছে জ্যামিতিক হারে।
এইতো গত জুলাইয়ে তার বেতন বেড়েছে সর্বসাকুল্যে হাজার টাকার মতো।কিন্তু সাথে সাথে গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে,বাজারের মাছের দামটাও বেড়ে গেছে।সাথে বছরের শুরুতে বেড়ে যায় বাসা ভাড়া থেকে সকল নিত্ত প্রয়োজনীয় জিনিসের।
আর দুঃখের বিষয় হলো, সরকারি চাকুরীজীবিদের বেতন বাড়লে শুধুমাত্র তাদের ব্যয় বাড়েনা,এর প্রভাব দেশের সকল নাগরিকের উপরেই পরে।
রফিক সাহেব ভাবতে থাকে,এইরকম ভাবে চলছে কেন।যাইহোক সে আনমনেই আবার বাজার করার দিকে মনোযোগ দেয়।সে সামান্য মানুষ তার চিন্তা ভাবনা সামান্যই থাকা দরকার।
শংকিত ধরে শংকিত চিত্তে সে বাজার করতে থাকে। মাছ,মুরগী,ডাল,মরিচ, আদা সব কিনতে থাকে,সবকিছুর দামই তার কাছে বেশী মনে হয়।
যাইহোক এবার তাকে পেয়াজ কিনতে হবে,দোকানদারকে সে জিজ্ঞেস করেছে এই পেয়াজ কতো টাকা কেজি,দোকানদার পান চিবিয়ে পানের পিক ফেলে লাল দাত গুলা বের করে বলে স্যার নেন স্যার সবার কাছে ২৫০ টাকা বেচলেও আপনার জন্য ২২০ টাকা।রফিক সাহেব একটু বুকে ব্যাথা অনুভব করে।শুধু পেয়াজই যদি এত দাম দিয়ে কিনতে হয়,অন্যান্য সবকিছু কিনবে কিভাবে।
সে তখন ভাবতে থাকে এইদেশে এত জমি,পেয়াজ যদি ঠিকঠাক আবাদ করা যায়।প্রতিবছরে যে পেয়াজ উৎপাদন হবে,তা নিজের দেশের মানুষ তরকারি তে শুধু পেয়াজ ভুনা করে খেয়েও বাইরে পাঠাতে পারবে,তাহলে সংশ্লিষ্ট সকলের কাজটা কি আসলে।ব্যবসায়ীরা আর কতকাল সাধারণ নাগরিকের জিম্মি করে রাখবে?
আর এইদিকে ভারত শুধু পেয়াজ বন্ধ করে দিল,তাই পেয়াজ ২২০ টাকা কেজি।ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। ভারত যদি অন্যান্য পণ্য বন্ধ করে দেয় তাহলে কি হবে।আর ভারতের সাথে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক টা কেমন যে তাদের উপর আমরা চাপ দিতে পারিনা।
আর পেয়াজ ব্যবসায়ীরা এতই শক্তিশালী যে এই পেয়াজ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাংগা যাচ্ছেনা??
যাইহোক রফিস সাহেবের এত চিন্তা করে লাভ নেই।সে ৫ কেজি পেয়াজের জায়গায় ১ কেজি পেয়াজ কিনে গর্বিত অনুভব করতে লাগলো।
রফিক সাহেব দুর্বল মানুষ,তাই সে প্রতিবাদ না করে পেয়াজ কম খাবে বলে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে বা পেয়াজ ছাড়া কিভাবে রান্না করা যায় তাই নিয়ে সে ভাবতে থাকে।
অন্যদিকে পেঁয়াজ নিয়ে বিসিএস পরীক্ষার্থীরা নতুন করে প্রিপারেশন শুরু করেছে বলে জানা গেছে। তারা এখন বাগধারা কে নতুন ভাবে শিখছে। নিচে কিছু নমুনা দেয়া হলো:
'পেঁয়াজ দেখে হাত কামড়ানো' =আফসোস করা
‘পেঁয়াজ তোলা’=মারা যাওয়া
'পেঁয়াজের মাছি'= সুসময়ের বন্ধু
'পেঁয়াজ কেনা'= সৌভাগ্য লাভ করা
‘অল্প দামে পেঁয়াজের গল্প’=আজগুবি গল্প
'পেঁয়াজ ব্যবসায়ী '=নিষ্ঠুর
‘যার অনেক পেঁয়াজ আছে’=গভীর জলের মাছ
আবার অনেকেই বিখ্যাত রন্ধন শিল্পী কেকা আপার শরনাপন্ন হচ্ছে বলে জানা গেছে। তাদের দাবী এক পেঁয়াজে কিভাবে আস্ত গরু ভুনা করা যায় তারই রেসিপি শিখাতে হবে।
( বড় ভাই " মো. শামীমুল হক" এর লেখা আংশিক পরিমার্জিত।)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:০৮