somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওরা আমার ছোট ভাইকে হলি আর্টিজেন হামলায় ফাঁসাতে চেয়েছিল!

০১ লা আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার ছোট ভাইয়ের নাম জাহিদ।
এটা ওর সার্টিফিকেট নাম। পুরো নাম জাহিদ হাসান। আমরা পরিবারের সবাই ওকে হাসান বলেই ডাকি। হাসান আমার ছয় বছরের ছোট। ছয় বছরের ছোট হলেও এখন আমার চেয়ে বড় মনে হয়। ছোটবেলা থেকেই আমাকে খুবই মান্য করে। আমি একটা কথা বললে সেটার দ্বিমত করে না সহজে। আমিই পড়াতে বসাতাম হাসানকে। ছোটবেলায় ও একটু দুষ্ট টাইপের ছিলো। দুষ্ট বললে ভুল হবে বরং দুরন্ত বলাই শ্রেয়। দুরন্তপনার কারণে মা-বাবার কাছে মার খেত মাঝে মাঝেই। হাসান যখন মার খেত তখন আমার খুবই খারাপ লাগতো। প্রতিবাদ করতে পারতাম না অবশ্য। হাসান মার খাওয়ার পর আমি ওকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদতাম। আর ওকে এটা সেটা দেখিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করতাম।

আমার যতটুকু মনে পড়ে হাসানের সাথে কখনোই ঝগড়া করিনি আমি।
আমার খেলনা কিংবা কোন নতুন খাতা কলম যখন যেটাই চাইতো দিয়ে দিতাম। কোথাও সমবয়সীদের সাথে যেতে চাইলে আমার পিছু নিতো হাসান। তখন দেখা যেত সমবয়সীরা আমাকে সাথে নিতে চাইতো না। ছোট ভাইটার এমন কান্ডে মন খারাপ হতো ঠিকি কিন্তু রাগ করতাম না ওর উপর।

আমার খুব ইচ্ছা ছিল ছোটভাইটাকে ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াবো। ইঞ্জিনিয়ার বানাবো।
সেই লক্ষ্যে ২০১৪ সালে এসএসসি শেষে ভর্তি করিয়ে দেই ঢাকার গ্লাস এন্ড সিরামিক ইন্সটিটিউটে। তখন আমি অনার্স ২য় বর্ষে পড়ি। অবশ্য ঢাকায় রেখে ভাইকে পড়ানোর মতো খরচ জোগানোর মত সামর্থ্য ছিলো না আমার পরিবারের। কিন্তু অনার্স থাকাকালিন আমি একসাথে প্রায় পাঁচটা টিউশনি করিয়ে সেই টাকা থেকে ভাইকে খরচ পাঠাতাম। আমার নিজের তেমন খরচা ছিলো না বললেই চলে। সরকারি বৃত্তি পাওয়াতে ভার্সিটির টিউশন ফি আর ক্রেডিট ফি লাগতো না। দুইটা ব্যাংক থেকে বৃত্তিও পেতাম প্রতি মাসে ২৫০০ করে। সে টাকা থেকে বাসায়ও পাঠাতাম টাকা। আর তাইতো ছোট ভাইয়ের পড়ার খরচ নিয়ে তেমন টেনশন করার কিছু ছিলো না।

ঢাকায় ভালো দেখে একটা মেসে উঠিয়ে দেই আমার ভাইকে।
মেসের খরচ এবং আনুসঙ্গিক খরচ সহ ৫/৬ হাজার টাকাতো লাগতোই। একে একে চার সেমিস্টার শেষ হয় ওর। তখন আমি বাটন ফোন চালালেও ওকে কিনে দিয়েছিলাম এন্ডয়েড ফোন। নিয়মিতই খোঁজ খবর রাখতাম। প্রতিদিন সময় করে একবার ফোন দিতাম। বিকাল বেলা। আমর বাড়ি থেকে মা-বাবাও দিনে একবারই ফোন করতো ওকে। সেই একবার কথা হলে তেমন আর টেনশন করতাম না হাসানকে নিয়ে।

২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজেনে হামলা হয়।
সেই হামলার কয়েকদিন পড়ের কথা। বর্তমান সরকারী দলের ছাত্র সংগঠন কর্তৃক অপহৃত হয় আমার ভাই। ওকে আটকিয়ে রাখা হয় তিনদিন। প্রতিদিন নিয়ম করে বাড়িতে এবং আমার সঙ্গে একবার করে কথা বলতে দিতো ওরা। সেই জন্যে আমরা আর কোন চিন্তা করতাম না হাসানকে নিয়ে। অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতো ও। তিনদিন আটকিয়ে রেখে অস্ত্র হাতে দিয়ে স্বীকারোক্তি নেয়া হয়। ওকে দিয়ে স্বীকার করানো হয় যে ও হলিআর্টিজেনে হামলার সাথে জড়িত ছিল। সেই স্বীকারোক্তির ভিডিও ধারন করা হয়। ভাইটিকে ব্ল্যাক মেইল করে বাড়িতে টাকা চাওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে ওরা। এক লাখ টাকা দাবী করে হাসানের কাছে। নইলে ফাঁসিয়ে দেবার হুমকি দেয়।

একদিন সন্ধ্যে বেলা।
হাসান আমাকে ফোন দিয়ে বলতেছে, ভাই ৪০ হাজার টাকা দিতে পারবা? আমি তো ওর কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম। বললাম এত টাকা দিয়ে কি করবি? ভাবলাম কোন অঘটন বাধালো কি না। হাসান বললো পড়ে বিস্তারিত বলবে। শুধু এইটুকু বললো ওকে নাকি শিবিরের ছেলেদের সাথে ক্যাম্পাসে চলাফেরার জন্যে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আটকিয়ে রেখেছে। এখন টাকা না দিলে নাকি তেঁজগাও শিল্পাঞ্চল থানায় হাজির করা হবে। আমি বললাম এতা টাকা তো আমার কাছে নাই। কম দিলে হবে না? ওদেরকে ফোনটা দিতে বললাম। কথা বললাম ওই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগের এক নেতার সাথে। সে আমাকে জানালো হাসান শিবির করে। আর সে জন্যে ওরা হাসানকে পুলিশে দিচ্ছে। ওর নামে মামলা হয়েছে। টাকা না হলে জেলে যেতে হবে।

ঘটনার কিছুই বাড়িতে জানালাম না।
মা-বাবা খুবই চিন্তা করবে। বাবা-মা কান্নাকাটি করবে ভেবে শুধু বড় চাচাকে ও আর আমার ছোট চাচাকে জানালাম। ওনারা কোন সমাধান দিতে পারলেন না। ঢাকায় আমার পরিচিত তেমন কেউ নেই। কার সাথে কথা বলবো কোথায় যাব চিন্তায় অস্থির ছিলাম। রাতটা কোনমতে পার করলাম। এলাকার এক বড় ভাই যিনি আমাকে সিলেট থাকতে সাহায্য করেছিলেন তাকে জানালাম ঘটনাটা। সেই ভাই তার পরিচিত কয়েকজন সাংবাদিককে ঘটনা জানানোর পর পরিস্থিতি উল্টা হলো। থানায় বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেল।

সিরামিকসের এক ছাত্র (সেও ছাত্র লীগেরই) আমাকে ফোন দিয়ে বললো, এই কয়টা টাকার জন্য ভাইয়ের জীবনটা নষ্ট কইরেন না। আপনিতো মিডিয়াকে জানিয়ে দিলেন সব কিছু। ওদেরকে থামতে বলেন। ১০ হাজার টাকা পাঠান জলদি। আমি ছাড়ানোর ব্যবস্থা করছি।
তার নাম্বারে বিকাশ করা ছিলো। ১০ হাজার টাকা পাঠালাম। ওরা হাসানকে ছেড়ে দিলো। বললো আরো ১০ হাজার টাকা বাড়ি গিয়ে পাঠাতে। হাসানের ফোনটি থানায় রেখে দেয়।

বাড়িতে আসার পর হাসানকে আর ঢাকায় পাঠায়নি আমার মা-বাবা।
অনেকদিন বসা ছিলো বাড়িতে। অবশেষে এখন ইরাক প্রবাসী। আমার স্বপ্ন ধ্বংস হলো। ছোটভাইয়ের এই পরিস্থিতির জন্যে নিজেকে খুবই অপরাধী মনে হয়। মনে হয় আমার অনেক কিছুই করার ছিলো। কিছুই করতে পারলাম না ওর জন্য। ইরাকে একটা তিন তারকা মানের আবাসিক হোটেলে হোটেল বয়ের কাজে বিদেশ যায়। ওখানে যাবার পর অবশ্য সেই হোটেলেই ইলেক্ট্রিকের কাজ করে।

ছোটবেলায় দুরন্তপনার কারণে সব কিছুতেই ওর আগ্রহ ছিলো বেশি। বাসার নষ্ট রেডিও থেকে শুরু করে সব ইলেক্ট্রিক জিনিস খুলতো একাই। বিদ্যুতের কাজে ওর আগ্রহ ছিলো বরাবরই। সেই দুরন্তপনাই ওর জীবিকার হাতিয়ার হলো অবশেষে।

ছবি সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:৩৬
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×