somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামূদ জাতির ধর্ম বিশ্বাস ঃ একটি পযর্ালোচনা

২০ শে এপ্রিল, ২০১২ সকাল ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভূমিকা

পৃথিবীতে মানবের সৃষ্টি কখন? কে এই মানবের স্রষ্টা? পৃথিবীর সৃষ্টি কখন? ইত্যাদি যাবতীয় প্রশ্নের কোন সমাধান আজও খুজে পাওয়া যায়নি। এ সম্পর্কে ধর্মগ্রন্থগুলো ও বিজ্ঞানীদের মতামত অনেক ভিন্ন। তবে অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ ও মুসলিমদের ধর্মগন্থ আল কুরআনে মানব সৃষ্টি এবং পৃথিবীর অনেক প্রাচীন জাতি ও গোত্র নিয়ে আলোচনা বর্ণিত আছে। অধিকাংশ ইউরোপীয় প্রাচ্যবিদ ও ধর্মগ্রন্থ আল কুরআনের আলোকে সামূদ জাতির ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে আলোচনা করা হল।

সামূদ জাতির পরিচয়ঃ

পৃথিবীতে মানব জাতির সূচনার পর অনেক মানব সম্প্রদায় এসেছে। সভ্যতার পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিবর্তনের ফলে অনেক সম্প্রদায়ের বিলুপ্তি ঘটেছে। সামূদ জাতি তেমনি একটি সম্প্রদায়। সামুদ জাতির পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমরা স্মরণ কর সেই বিষয়টি যখন তিনি আদ জাতির পর তোমাদরেকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন আর তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে তোমরা সমতল ভূমিতে প্রাসাদ ও পাহাড় কেটে আবাস গৃহ নির্মাণ করেছো...” (সূরা আরাফ, আয়াত- ৭৪)। গবেষকদের মতে, অন্যান্য আরব গোষ্ঠীর মত সামূদ একটি প্রাচীন ধ্বংশপ্রাপ্ত গোত্র। খ্রিষ্টপূর্বের সারগন (Sargon) এর শিলালিপি সহ এরিস্টটল, টলেমি, প্লিনি এর বর্ণনাতে সামূদ নামটির ভিন্নতাসহ উল্লেখ পাওয়া যায়। E.Glasesr মনে করেন সামূদ জাতি লিহয়ান ( প্লিনির মতে,(Leohieni) জাতির সাথে সম্পৃক্ত। সামূদ নামটি হল পুরাতন ও বর্তমানে এর নতুন নাম হল লিহয়ান।
ইমাম আবু জাফর তাবারী (রঃ) সামূদ জাতির পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, সামূদ হচ্ছে- সামূদ ইবনে গায়ির ইবনে ইরাম ইবনে সাম ইবনে নূহ ((আঃ))। আবার তিনি হচ্ছেন জাদীস ইবনে গায়িবের ভ্রাতা। আবার তিনি এও বলেন সামূদ হল একটি গোত্রের নাম যাদের গোত্র প্রধানের নাম হিসেব এই নামকরণ করা হয়।
আবার কিছু কিছু পন্ডিত ছামুদের পরিচয় দিতে গিয়ে দুটি মতামত উল্লেখ করেন, ক. সামূদ ইবনে আমের ইবনে এরাম ইবনে সাম ইবনে নূহ। খ. সামূদ ইবনে সাদ ইবনে আওছ ইবনে এরাম ইবনে সাম ইবনে নূহ। এই জাতিকে দ্বিতীয় আ’দ বলা হয় এবং এরা হল আরবে বায়েদার অন্তর্গত।
আল্লাহ তাআলা সামূদ জাতিকে সৎ পথে পরিচালিত করার জন্য নবী হিসেব সালিহ (আঃ) কে প্রেরণ করেন। এই সালেহ (আঃ) এর পরিচয় সম্পর্কে দুটি মতামত পাওয়া যায়...
১. ইমাম বাগবী রঃ সালিহ (আঃ) এর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, ছালেহ ইবনে ওবাইদ ইবনে মাশেহ ইবনে উবাইদ ইবনে হাদের ইবনে সামূদ।
২. ওহাব ইবনে মুনাব্বেহ বলেন, ছালেহ ইবনে উবাইদ ইবনে জাবের ইবনে সামূদ।

সামূদ জাতির বসবাসের স্থানঃ

প্রাচীন ঐতিহাসিক নৃবিজ্ঞানিরা সামূদ জাতির বসবাসের স্থান হিসেবে দোমাসা (Domatha), হেগরা (Hegra) এর কথা উল্লেখ করেন। যা দুমাতুল জানদাল ও আল ইলা এর উত্তরে হিজর নামক স্থানে অবস্থিত।
গবেষকগন ‘আল ইলা’, ‘আাল হিজর’ ও আশেপাশের এলাকাতে যে সমস্ত শিলালিপি খুজে পেয়েছেন ঐগুলোর ভিত্তিতে তাদেরকে ‘লিহয়ানী’ বা ‘সামুদী’ বলা হয় বলে উল্লেখ করেন।
কারো কারো মতে বসবাসের স্থান হিসেবে বলা হয়েছে হিযাজ ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী স্থান ‘ওয়াদিয়ুল কুরা’ ও তার আশে পাশের এলাকা।
ইবনে হুমায়দ ইবনে ইসহাক থেকে বর্ণনা করেন, হিযাজ ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী ১৮ মাইল এলাকা জুড়ে তারা বসবাস করত।
অনেক ঐতিহাসিক হিজাজ ও সিরিয়ার মর্ধবর্তী স্থানের ওয়াদিয়ুল ক্বোরা পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাকে তাদের বসতি বলে উল্লেখ করেন। আধুনিক কালে এই স্থানটি ‘ফাজ্জানকাহ’ নামে প্রসিদ্ধ। এই স্থানে সামূদ জাতির ধ্বংশের চিহ্ণ আজও দেখতে পাওয়া যায়। অনেক মিশরীয় এই জায়গা প্রত্যক্ষ করেছেন যাকে ‘শাহী হাবিলা’ বা ‘রাজকীয় প্রসাদ’ বলা হয়।
ঐতিহাসিক মাসউদী বলেন, যে ব্যক্তি সিরিয়া হতে হেযাজে আগমন করে তার পথিপার্শ্বে সামূদ জাতির বিধ্বস্ত বস্তির ধ্বংশাবশেষ এবং তার পুরাতন চিহ্ণ তাদের দৃষ্টিগোচর হয়।
হিজরের এই স্থানটি মাদিয়ান শহরের দক্ষিনপূর্ব দিক হতে পূর্ব দিকে এমন ভাবে অবস্থিত যে এর সামনে আক্বাবা উপসাগর পরে।

সামদু সম্প্রদায় ও তৎপূর্ববর্তী অবস্থাঃ

আল্লাহ তাআলা আ’দ জাতিকে ধ্বংশ করে দেওয়ার পর হযরত মূসা (আঃ) এর সাথে যারা ভালো সহচর ছিল তারাই মূলত সামূদ এর সম্প্রদায়। তাদের ভালো কাজের জন্যে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। আল্লাহ আ’দ সম্প্রদায়ের লোকদের মত তাদের শক্তিশালী করে সৃষ্টি করেন। তারাও বিশাল বিশাল পাথর কেটে গৃহ নির্মণ করেছিল।
আল্লাহ সামূদ জাতির গৃহ ও বসবাসের সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ... এবং সামূদের প্রতি যারা উপত্যকার পাথর কেটে গৃহ নির্মাণ করেছিল। (সূরা ফাজর, আয়াত- ৯)।
ইবনে হুমায়দ ইবনে ইসহাকের বরাত দিয়ে বলেন , আল্লাহ তাআলা মহাশক্তিশালী আ’দ জাতিকে ধ্বংশ করার পর সামূদ জাতিকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করে সৃষ্টি করেন যেন তারা আল্লাহর ইবাদত করতে পারে। কিন্তু তারা নিজেরা প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পরে এবং আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীর পরিবর্তে নাফরমানী করতে থাকে।
ইমাম তাবারী তার তাফসীরে বলেন, (সূরা আরাফ, আয়াত নং ৬৮-৭৩)।
ইমাম তাবারী বলেন, হে আমার সম্প্রদায় আমি আমার প্রতিপালকের বাণী তোমাদের নিকট পৌছে দিচ্ছি এই জন্যে যে, তোমরা দেব-দেবী ও অন্যন্য উসাসকদের উপাসনা না করে একনিষ্ঠ ভাবে এক আল্লাহ তাআলার উপাসনা কর। কেননা আল্লাহ নূহ (আঃ) এর সম্প্রদায়কে ধ্বংশ করে তোমাদরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন। তোমরা সাবধান থেকো যেন তোমাদের ধ্বংশ করে অন্য কাওকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত না করে।
উপরিক্ত বর্ণনা হতে প্রতীয়মান যে সামসাময়িক ধর্মীয় অবস্থা বলতে তৎকালীন মানুষরা নবী রাসূলদের নিকট হতে রিসালতের বানী ও ভয়ভীতি শোনা সত্তেও আল্লাহর উপাসনা না করে দেব-দেবী , মূর্তি ও অন্যান্য উপাসকদের উপাসনা করত। তাই আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংশ করে দেন এবং সামূদ জাতিকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেন এবং তাদের সৎপথে পরিচালিত করতে নবী সালেহ (আঃ) কে পাঠান।

সামূদ জাতির বসবাসের সময়কালঃ

সামূদ জাতির বসবাসের সময়কাল সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন মতামত পাওয়া যায় না। নিশ্চিত করে যা বলা যায় তা হল তাদের যুগ হল ইব্রাহিম (আঃ) এর পূর্বেকার যুগ। ঐতিহাসিক ও নৃবিজ্ঞানীর যা বলেন তা হল সামূদ জাতির বস্তি গুলোর নিকটের কবর সমূহের উপর আরামী ভাষায় লিখিত কিছু ফলক রয়েছে। সে ফলকে যে তারিখ তাতে বুঝা যায় এই যুগ ঈসা (আঃ) এর পূর্বের ও মূসা (আঃ) এর পরের সময়।
কিন্তু আসলে মূল কথা হল, কবর গুলো হল তদের যারা ঐ স্থানে হাজার হাজার বছর পর এসে বসবাস করে এবং একসময় মারা যায়। আর তারা কবরের ফলকগুলো আরামী ভাষায় লিখার কারণ হল পরবর্তীদের কাছে তাদের প্রাচীন স্মৃতি ধরে রাখা।
খ্রিষ্টান ঐতিহাসিক ও বিখ্যাত আরবী সাহিত্যিক জুরযী যায়দান তার ‘আল আরব কাবলাল ইসলাম’ গ্রন্থে বলেন, কবর সমূহের নাম ফলক পাঠ করলে যা প্রকাশ পায় তা হল সালেহ জাতির বস্তি সমূহ হযরত ঈসা (আঃ) এর জন্মের কিছু কাল পূর্বে নাবতীদের ক্ষমতাধীন হয়ে গিয়েছিল। তারা ‘বাতরা’ নামক স্থানের অধিবাসীদের অন্তর্গত।
অনেক প্রাচ্যবিদ পন্ডিত সামূদ জাতির ইতিহাস ঐসময়কার খোদায়ী করা পাথর হতে স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে পাঠ করেন। ঐসব পাথরের প্রচীনত্বের উপর ভিত্তি করে বলেন,
সর্বপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ প্রসাদের ধ্বংশাবশেষগুলো হল ‘ক্বছবে’ বিনতে’, ‘কবরে বাশা’, ‘ক্বেলআহ্’ এবং ‘বূরজ’ নামে নামকৃত।
ইউরোপীয় প্রাচ্যবিদ পন্ডিতরা সেখানকার একটি কবরের ফলকে নাবতী অক্ষরের লেখা উদ্ধার করেছেন, যা ঈসা (আঃ) এর পূর্বেকার। এবং সে লেখার বিষয়বস্তু হল এমন....... “মকবারা কুমকুম বিনতে এয়াযেলাহ বিনতে হারাম এবং কুমকুমের বেটি কালবাহ নিজের ও নিজের সন্তানের জন্যে নির্মাণ করেছ। তার নির্মাণ কার্য মোবারক মাসে আরম্ভ হয়। এবং তা নাবতীদের বাদশা হারেমের সিংহাসনে আরোহনের নবম বর্ষ ছিল”। (অর্থাৎ কবরের পরিচয় ও তার সময়কাল সম্পর্কে ঐ লেখাটা ছিল।)
আরবীতে আরো একটি ফলক পাওয়া যায়, যার অর্থ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। (আরবি লেখাটা হল...


সামূদ জাতির ধর্মীয় বিশ্বাস ও তাদের উপাসকবৃন্দঃ

সামূদ জাতি হল পৃথিবীর একটি মহাশক্তিশালী সম্প্রদায় যাদেরকে আল্লাহ তাআলা তাদের অবাধ্যতার কারণে ধ্বংশ করে দেন। তাদের ধর্মীয় মতাদর্শ কি ছিল এ সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কোথাও কোন আলোচনা না থাকলেও আল্লাহ তাআলা সালেহ (আঃ) কে বিভিন্ন সময়ে ছামদুদের সম্পর্কে যে সমস্ত আয়াত অবতীর্ণ করেন তার প্রেক্ষিতে সামূদ জাতির ধর্ম বিশ্বস ও তাদের উপাসকদের সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়।
আল্লাহ সামূদদের বিভিন্ন অবাধ্যতা ও অপকর্মর কারণে অনেক হুশিয়ারী প্রাদান করেন। এ থেকে বুঝা যায় তারা কোন একক সত্তার উপর বিশ্বাস স্থাপন না করে দেব-দেবী ও মূর্তি পূজা সহ অন্যান্য বিষয়কে স্রষ্টা হিসেবে স্বীকার করত। যেমন আল্লাহ সূরা শুআরার ১৪৪-৪৫ নং আয়াতে বলেন, “অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আমি তোমাদের নিকট এর জন্যে কোন প্রতিদান চাই না, আমার পুরুস্কার তো রয়েছে জগত সমূহের প্রতিপালকের নিকটে”। অপর দিকে আল্লাহ সূরা আরাফের ৭৩ নং আয়াতে বলেন, “আর আমি সামূদ জাতির নিকটে তার ভ্রাতা সালিহ (আঃ) কে প্রেরণ করেছিলাম, সে বলেছিলঃ হে আমার জাতি তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর কোন মা’বুদ নেই....” উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইমাম তাবারী রঃ বলেন, হে আমার সম্প্রদায় তোমরা এমন ইলাহর ইবাদত কর যার কোন শরীক নেই। তোমাদের জন্য আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন বৈধ ইলাহ নেই যার তোমরা ইবাদত করবে আমি তোমাদের যা বলছি তার সত্যতা প্রমাণের জন্য তোমাদরে নিকটে দলীল এসেছে। আমি বলছি আমার প্রতিপালকের নিকট হতে অকাট্য প্রমাণ হচ্ছে এই উটনী। উপরিক্ত কথা দ্বারা বুঝা যাচ্ছে তারা অন্য কোন উপাসকের উপাসনা করত তাই আল্লাহ সেই উপাসকদের বাদ দিয়ে এক আল্লাহর উপাসনার কথা বলেন। অপরদিকে এই প্রসংগেই আল্লাহ সূরা নামলে বলেন, “আমি অবশ্যই সামূদ জাতির নিকট তাদের ভ্রাতা সালিহ (আঃ) কে পাঠিয়েছিলাম, এই আদেশ সহ, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, কিন্তু তারা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে বিতর্ক লিপ্ত হল”। (সূরা নামল, আয়াত নং-৪৫)
আবু তুফাইল বলেন, সালিহ (আঃ) যখন একত্ববাদের ধর্ম প্রচার করেন তখন তারা বলত তুমি যা বলছ তোমার উক্তিতে যদি সত্যবাদী হও তাহলে আমাদের কাছে কোন একটি নিদর্শন উপস্থিত কর তখন আল্লাহ তাআলা টিলা থেকে একটি উটনী বের করেন তিনি তদের বললেন, তোমরা একে কষ্ট দিবেনা তাহলে আল্লাহর শাস্তি তোমাদের উপর আসবে। এর দ্বারাও বুঝা যাচ্ছে যে সালিহ (আঃ) এর একাত্ববাদ প্রাচারের আগে তারা অন্য কোন বাতিল মতাদর্শে বিশ্বসী ছিল।
বর্ণনাকারী আবদুল আযীয বলেন,
সামূদ জাতি যখন সালিহ (আঃ) এর আদেশ অমান্য করে উটনীকে হত্যা করল তখন তাদের উপর শাস্তি অবতীর্ণ এবং আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংশ করে দিলেন। অর্থাৎ আল্লাহ যে একাত্ববাদের কথা বললেন এবং যে সমস্ত বিষয় নিষেধ করলেন তার ইংগিত এখানে। এর দ্বারাও এটা স্পষ্ট যে তারা অন্য কোন উপাসকের উপাসনা করত।
আল্লামা সুদ্দী রঃ বলেন, আল্লাহ তাআলা সালিহ (আঃ) ক সামূদ জাতির নিকট পাঠান। তিনি তদের সত্যের দিকে ডাকলেন কিন্তু তারা তার উপর মিথ্যা আরোপ করল। তখন তারা নিদর্শন চাইলো তখন সালিহ (আঃ) আল্লাহর আদেশে তাদের জন্যে পাহাড় থেকে একটি উটনী বের করে নিয়ে আসলেন এবং এর ক্ষতিসাধন করতে নিষেধ করলেন কিন্তু তারা উটনীটির পায়ের রগ কেটে দিয়ে হত্যা করলেন। তখন আল্লাহ তদের উপর শা্স্তি নাযিল করেন। আলোচ্য ব্যাখ্যা দ্বারা স্পষ্ট যে সামূদ জাতি অসত্য ও ভ্রান্তের পথে ছিল এবং এক আল্লাহর ইবাদত না করার কারণে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে দেব-দেবী ও মূর্তি পূজা ছেড়ে দিয়ে ইসলামের পথে ফিরে আসতে বলেন।
সামূদ জাতির ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ বলেন, “আর আমি সামূদ সম্প্রদায় এর নিকট তাদরে ভ্রাতা সালিহ (আঃ) নবীরূপে প্রেরণ করলাম, সে বললোঃ হে আমার কওম তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ছাড়া কেউ তোমাদের মাবূদ নেই.....” (সূরা হূদ, আয়াত- ৬১)। অপর আয়াতে বলেন, “তারা বললোঃ হে সালেহ তুমি তো ইতপিূর্বে আমাদের মধ্যে আশা-ভরসাস্থল ছিলে তুমি কি আমাদরেক কঐ বস্তুর উপাসনা করেতে নিষেধ করছো যাদের উপাসনা আমাদরে পিতৃপুরুষেরা করে আসছে? আর যে ধর্মের দিকে তুমি আমাদরে ডাকছো বস্তুতঃ আমরা তো তৎসম্ভন্ধে গভীর সন্দেহের মধ্যে রয়েছি”। ( আয়াত-৬২)
অন্য সূরা আল ক্বামারে আল্লাহ বলেন, “সামুদ সম্প্রদায় সতর্ককারীদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছিল, তারা বলেছিল আমরা কি আমাদরেই এক ব্যক্তির অনুসরণ করব? তবে তো আমরা বিপথগামী এবং উম্মাদরূপে গণ্য হব”। (সূরা ক্বামার, আয়াত-২৩-২৯)
তবে সবচাইতে ভালোভাবে তাদের ধর্ম বিশ্বাস ও তাদের উপাসকদের সম্পর্কে জানা যায় ঐ সময়কার কবরের উপরে খুজে পাওয়া নাবতী অক্ষরে লিখিত বিভিন্ন বিধি নিষেধ থেকে যা পরবর্তীদের জন্যে লিখে রাখা হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞাটি ছিল এমন... “‘লা’ত’, ‘মা’নত’, ‘আমান্দ’, এবং ‘কায়েসের’ লা’নত তার প্রতি যে এই কবর গুলো বিক্রয় করবে কিংবা দায়বদ্ধ রাখবে। কিংবা এটা হতে কোন দেহ বা অঙ্গ বের করবে কিংবা এখানে ‘কুমকুম’ ও তার কন্যা কিংবা তার সন্তানদের ব্যতীত অন্য কাওকে দাফন করবে। আর যেই ব্যক্তিই তার উপর লিখিত বিষয়ের বিপরীত করবে তার উপর ‘যুশ’, ‘শরা’, ‘হোবাল’ ও ‘মানাতের’ পাঁচটি লা’নত হোক........”। এই সমাধির নির্মানকারী হলেন ওয়াহবুল্লাহ ইবনে ওবায়দা । উপরোক্ত আলোচনাতে আমরা সামূদ জাতির যে সমস্ত উপাসকদের নাম পাই তারা হলঃ “লা’ত”, “মা’নত”, “আমান্দ”, “কায়েস”, “যুশ”, “শরা” ও “হোবল”।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে অনুধাবন করা যায় যে সামূদ জাতির আল্লার একত্বেবাদে বিশ্বাস ছিলনা বরং তারা বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজাসহ নিজেদের তৈরি মূর্তির পূজা করত।

সামূদ জাতির উপর আল্লাহর শাস্তি ও তাদরে ধ্বংশঃ

আল্লাহ যখন আদ জাতিকে ধ্বংশ করে সামূদ জাতিকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করে পাঠালেন এবং সাথে সাথে তাদের হেদায়েতের জন্যে আল্লাহ নবী হিসেবে সালিহ (আঃ) কে পাঠান। তখন সামূদ জাতি সালিহ (আঃ) এর নিকট তার নবী হওয়ার সত্যতার প্রমাণ চাইলে তখন তিনি আল্লাহর কছে প্রার্থনা করলে সামূদ জাতিকে নিদর্শন স্বরূপ আল্লাহ একটি উটনী প্রেরণ করেন। এটিকে নির্দিষ্ট এলাকাতে চড়তে দিতে ও নির্দিষ্ট দিনে পানি পান করাতে বলেন। যখন পাহাড় থেকে উটনী বেড়িয়ে এল তখন সামূদ জাতির বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা সালিহ (আঃ) এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে চাইলে যুওয়াব বিন আমর বিন লবীদ ও তাদের মূর্তির রক্ষনাবেক্ষনকারী আল হুবাব রুবার বিন সাময়ার বিন জুলহাস ও অন্যন্যারা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ইসলাম গ্রহনে বিরত রাখে। যেমন আল্লাহ বলেন, “তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক প্রধানরা তখন তাদের মধ্যকার দুর্বল ও উৎপীড়িত মুমিনদেরকে বললোঃ তোমরা কি বিশ্বাস কর যে, সালেহ (আঃ) তার প্রতিপালক কর্তৃক প্ররিত হয়েছে? তারা উত্তরে বললোঃ নিশ্চয়ই যে পয়গামসহ সে প্রেরিত হয়েছে আমরা তা বিশ্বাস করি”(সূরা আরাফ, আয়াত-৭৫)।
সামূদ সম্প্রদায়ের একটি মহিলা ছিল উনাইযাহ বিনতে গানাম বিন মিজলাস নামে এবং তার অনেকগুলো সুন্দরী কন্যা ছিল। অন্য একটি মহিলা ছিল সাদূফ বিনতে আল মাইয়্যা বিন দাহর বিন আল মাইয়্যা। তারা উভয়ে ধনাঢ্য ছিল। তারা উটনীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করল এবং সামূদ জাতির শক্তিশালী যুবকদের বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে উটনী হত্যা করতে উৎসাহিত করল।
সাদূফ উটনী হত্যা করার শর্তে নিজেকে সমার্পণ করবে বলে এক ব্যক্তিকে ডাকলে সে রাজী না হওয়ায় মিসদা ইবনে মিহরাজ আল মাহইয়া নামে তার চাচাতো ভাইকে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার শর্তে উটনী হত্যার জন্য ডাকল।
অপর দিকে উনায়যাহ বিনতে গানাম নাম্মী মহিলটি কুদার বিন সালিফ নামে এক ব্যক্তিকে ডাকলো। এই দুই পুরুষ ও উভয় মহিলা এবং তাদের আত্মীয়রা মিলে পাহাড়ের পিছনে ওৎপেতে থেকে উটনীকে আক্রমন করল এবং তার পায়ের রগ কেটে দিয়ে হত্যা করল। তখন সামূদ জাতিকে সালিহ (আঃ) গযবের দুঃসংবাদ প্রাদান করেন এবং চার দিনের মধ্যে ধ্বংশ হয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এই প্রসংগে আল্লাহ বলেন, “অতঃপর তারা উষ্ট্রীটিকে মেরে ফেলল এবং গর্ব ও দাম্ভিকতার সাথে তাদের প্রতিপালকের নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে চলতে লাগলো এবং বললোঃ হে সালেহ তুমি সত্য রাসূল হয়ে থাকলে আমাদরেকে যে শাস্তির ভয় দেখাচ্ছ তা আনয়ন কর, সুতারং তাদেরকে একটি প্রলয়ংকারী বিপদ এসে গ্রাস করে নিলেো, ফলে তারা নিজেদের গৃহের মধ্যেই নতজানু হয়ে পড়ে গেল”। (সূরা আরাফ, আয়াত-৭৭-৭৮)। এই প্রসংগে সূরা ক্বামারে আল্লাহ বলেন, “.... অতঃপর তার এক সংগীকে আহবান করল সে উষ্ট্রিকে ধরে হত্যা করল আমি তাদেরকে আঘাত হেনেছিলাম এক বিকট আওয়াজ দ্বারা; ফলে তারা হয়ে গেল খোয়াড় প্রস্তুতকারী বিখন্ডিত শুষ্ক শাখা-প্রশাখার ন্যায়”। (সুরা ক্বামার, আয়াত- ৩০-৩১)। সূরা শামসেও আল্লাহ তাদের ধ্বংশ সম্পর্কে উল্লেখ করেতে গিয়ে বলেন, “কিন্তু তারা তাকে মিথ্যাবাদী বললো, অতঃপর ঐ উষ্ট্রিকে কেটে ফেললো। সুতারং তাদের পাপের জন্যে তাদের প্রতিপালক তাদেরকে সমূলে ধ্বংশ করেদিলেন, অনন্তর তিনি তাদেরকে ভূমিস্মাৎ করে ফেললেন”। (সূরা শামস, আয়াত-১৪)। এবং সালেহ (আঃ) তারা কিভাবে ধ্বংশ হবে তার একটি বর্ণনাও প্রাদান করেন। তিনি বলেন গযবের নমুনা হল এমন যে বৃহস্পতিবার তোমাদের চেহারা হলুদ হয়ে যাবে তারপর শুক্রবার চেহারা লাল হয়ে যাবে এমনিভাবে শনিবার দিন চেহারা কালো হয়ে যাবে এবং রবিবার আযাব অবতীর্ণ হবে এবং তোমরা সকলে ভূমিকম্পে অথবা ঝাঞ্চাবায়ুতে ধ্বংশ হয়ে যাবে। আল্লাহ কুরআনে উভয় প্রকার শাস্তির কথা উল্লেখ করেন।

শেষ কথাঃ

উপরিক্ত আলোচনা পর্যালোচনার ভিত্তিতে আমরা অনুধাবন করতে পারলাম যে আল্লাহ তাআলা এযাবত কালে যত সম্প্রদায়কে এই পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন তাদের প্রত্যেকের জন্য একজন বার্তাবাহক প্রেরণ করেছেন তাদের নিজেদের মধ্য থেকে। যখন সম্প্রদায়ের লোকেরা আল্লাহর উপাসনা ভুলে গিয়ে যখন অন্য কারো উপাসনা করতো তখন ঐ বার্তাবাহক তাদেরকে সৎ পথে ফিরে আসতে আহবান করেতেন। যদি তারা ফিরে না আসত তখন তিনি আল্লা্হর কাছে প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাদের সমূলে ধ্বংশ করে দেন। এবং সামূদ জাতির ধর্ম বিশ্বাস সম্পর্কে আমরা কোন একক স্রষ্ট্রার অস্থিত্ব খুজে পাইনি বরং তার বহু দেব-দেবী ও নিজেদের তৈরি মূর্তি সমূহের উপাসনা করত।

সহায়ক গ্রন্থাবলীঃ

১. আল কুরআনুল কারীম
২. বোখারী শরীফ
৩. তাফসীরে তাবারী শরীফ
৪. তাফসীরে মারেফুল কুরআন
৫. তাফসির ফি যিলালিল কুরআন
৬. তাফসীরে ইবনে কাছীর
৭. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া
৮. ইসলামী বিশ্বকোষ
৯. আল আরব ক্বাবলাল ইসলাম (জুরযী যায়দান)
১০. কাসাসুল কুরআন
১১. প্রাচীন সভ্যতা (বিজয়চন্দ্র মজুমদার)
১২. কুরআনে বর্ণিত ২৫ জন নবী রাসূল (মাওলানা মোঃ রেজাউল করিম)
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×