কঞ্জুস মহিলা যখন সরকার প্রধান
১৯৯৪ সাল সম্ভবত। US ট্যুরে গিয়েছেন বেগম জিয়া। প্রধানমন্ত্রী তিনি, স্বাভাবিক কারনেই ফাষ্ট ক্লাসে তাঁর আসন। তবে পুত্র আরাফাত রহমানের স্থান হয়নি তাঁর আশেপাশে। একই বিমানে প্রধানমন্ত্রী পুত্র নিজ খরচে টিকিট কেটেছেন সস্তার ইকোনমি ক্লাসে। আদরের ছোট পুত্র বাইনা ধরেছে 'আম্মা ষ্টেটস থেকে একটা লেদার জ্যাকেট কিনে নিয়ে যাব। দেখ আম্মা ৪ বছরের পুরান এই সোয়েটারের চেহারা কি হয়েছে'!
উত্তরে আম্মা যা বললেন তা শুনে হোচট খেলেন বেবী আপা (মিলন ভায়ের স্ত্রী) 'কাপড়ের চেহারা খারাপ হয়েছে কারণ তুমি যত্ন নাওনি। তাই নতুন আরেকটা ডিজার্ভ কর না'।
বেবী আপা ফোরং কাটলেন 'স্যুভেনির হিসাবে হলেও একটা জ্যাকেট তার প্রাপ্য।'
মা'র মন তো হঠাৎ গলে গেল।
'আমার তো অত টাকা নাই বেবী, আর ওর বাবাও বিলাসিতা অপছন্দ করতো। তো ঐ জ্যাকেটের দাম কত কোকো?' জানতে চাইলেন আম্মা।
পেছন থেকে লাফ দিয়ে সামনে চলে আসলো তরুন কোকো। বললঃ 'আম্মা ৫০/৬০ ডলার হবে'।
বিশাল সাইজের ব্রাউন ব্যাগ থেকে ছোট্ট একটা চামরার পার্টস বার করলেন বিদগ্ধ সেই কৃপন মহিলা। ১০০ ডলারের একটা নোট মিলন ভায়ের হাতে দিয়ে বললেন ১ টা টাকাও যেন অপচয় না হয়...ঘন্টা তিনের ভেতর নয়া জ্যাকেট নিয়ে হাজির ইয়াং চ্যাপ্টার।
'দেখি স্লিপটা দাও' - বললেন তৃতীয় বিশ্বের একজন প্রধানমন্ত্রী। পকেট থেকে ৪৭ ডলারের পেমেন্ট রিসিড বার করে টেবিলে রাখল PM পুত্র।
এরপর পুত্রের হাত থেকে বাকি ৫৩ ডলার একে একে গুনে নিলেন সেই মহিয়সি নারী...
সেই ট্যুরে বেগম জিয়া US ট্যুরে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান করেন। তিনি উঠেছিলেন Grand Hyatt New York হোটেল স্যুটে। স্যুটেই নিউইয়র্কার বাংলাদেশী কমিউনিটির সাথে বসেন তিনি। কোন হলরুম ভাড়া করেন নি। স্যুটের মহামান্য গেষ্টের জন্য প্রচুর ফ্রেস ফ্রুট কমপ্লিমেন্টারি ছিল। তো আগত অতিথী আপ্যায়নে মিলন ভাই প্যাকেটেজাত ড্রাই ফ্রুটস নিতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়া ভ্রু কুচকে মিলন ভাইকে ঝুড়ির তাজা ফলগুলোর দিকে ইংগিত করেন।
অতিথি বিদায়ের পর বেগম জিয়া মিলন ভাইকে ডেকে বললেন "ড্রাই ফ্রুটসগুলোর জন্য তোমাকে আলাদা পে করতে হবে। কিন্তু ফ্রুটসগুলো Complementary"
ভিআইপি স্যুটে সরবরাহকৃত প্যাকেটজাত ফলের জন্য পে করতে হবে বিষয়টি শুনে মিলন ভাই কিছুটা বিস্মিত হলেন। তিনি তাৎক্ষণিক হোটেল কর্তৃপক্ষকে কল করে বিষয়টা জেনে অবাক হলেন। বললেনঃ 'ম্যাডাম আপনিই সঠিক' মিলন ভাই ভেবেই পেলেন না এত ক্ষুদাতিক্ষুদ্র বিষয় কিভাবে একজন প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার চোখ এড়িয়ে গেল না। প্রতি উত্তরে বেগম জিয়া বললেনঃ 'ফ্রি তাজা ফল থাকতে অপচয় করবে কেন?
আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়া মানুষটাই এমন। সংযমি, প্রচার বিমুখ, বাহুল্য ও নাটুকেপনা বিবর্জিত। কোন টাকা কোনো ভাবেই নষ্ট হোক; সহ্য করার মানুষ তিনি নন। প্রপাগাণ্ডা যতই চালুক না কেন তিনি কেয়ার করেন না। রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করে নিজের বা স্বামী প্রেসিডেন্ট জিয়ার নামে ঢোল বাজানো-ও বেগম জিয়ার কম্ম নয়।
বৃক্ষ তোমার নাম কি, ফলে পরিচয়!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ২:২৮