ছবি : নেট থেকে।
মায়া নিজের বেড রুমে জানালার পাশে রকিং চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে মৃদু মৃদু দোল খাচ্ছে। সদ্য ফোটা গোলাপের মত মুখটা শ্রাবণের আকাশের মত কালো হয়ে আছে কারো আগমনে শ্রাবনী টপ টপ করে ঝরবে।
মায়া মনে মনে ভাবছে আয়ান কেমন করে বলতে পারল!! আমি হিংসুটে রাগী মেয়ে!! অথচ ছোট্ট বেলায় থেকেই শুনে আসছি আমার মনটা সাদা কাগজের মত পরিস্কার ও কুসুমের মত কোমল।একমাত্র লিখা পড়া ছাড়া আমি কখনো কারো সাথে কোন হিংসা করি নাই, আমি চাইতাম আমার ক্লাসে আমিই সব সময় ফাষ্ট হবো, এ ছারা তো কখনো ক্লাসের মেয়েদের সুন্দর ড্রেস বা জুতো দেখে কখনো আমার মনে লোভ বা হিংসা আসেনি, অন্যদের ভালো টিফিন দেখেও কখনো আম্মুর কাছে বায়না করিনি। আমার সম বয়সীদের সুন্দর খেলনা দেখেও কখনো কিনতে চাইনি,এ জন্য আম্মু সব সময় আমাকে বলত আমার লক্ষী সোনা মেয়ে।
কলেজ, ইউনির্ভাসিটিতে পড়ার সময়ও ক্লাসমেটরা বয়ফ্রেন্ড- গার্লফ্রেন্ড নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে, রোষ্টুরেন্টে খেতে , মুভি দেখতে যেত আরো কত রকমের আনন্দ করত কই এসব দেখে তো কখনো এতটুকু হিংসা আসেনি আমার মনে।
আমার সমবয়সী কাজিনদের কত জাক জমক করে বিয়ে হয়েছে সেই হিসাবে আমাদের বিয়েটা খুবই সাদা মাটা ভাবে হল এতে ও তো আমার মনে কোন কষ্ট বা আফসোস নেই। আয়ানকে আমি পছন্দ করেছি তাকে নিজের করে পেয়েছি এতেই আমি খুশী।
আমি না হয় ভাল রান্না পারি না তাই বলে কি আয়ান অন্যদের খাবার খেয়ে এত প্রশংসা করবে!! কালকে সে বাসায় তো ইনিয়ে বিনিয়ে কত প্রসংশা করেছেই আবার বাসায় এসেও বল্ল, অনেকদিন পর পেটভরে টেষ্টি খাবার খেলাম!! তাই তো আমি রাগ করে মাঝ খানে কোল বালিশ দিয়ে অন্য দিকে ঘুরে শুয়েছি, আয়ান আমার গায়ে হাত রেখেছিল আমি ঝামটা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছি, তাই ও আমাকে রাগ কুমারী, হিংসুটে মেয়ে বল্ল!!
রান্না করতে আমার কত কষ্ট হয়। মাছ, গোস্ত, কাটতে গিয়ে প্রায়ই আমার হাত কেটে যায়, গরম পাতিলের ছ্যাঁকা লেগে কতদিন আমার হাত পুড়ে গিয়েছে, পিয়াজ কাটতে আমার চোখের পানি নাকের পানি এক হয়ে যায় তবু আমি আমার সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে চেষ্টা করি সেরা রান্নাটাই ওর জন্য করতে। আয়ান কেন এটা বুঝে না, আমার রান্না টেষ্টি না হোক এই খাবারের মাঝে আমার আন্তরিকতা, মায়া মমতা জড়ানে আছে, আছে আমার ভালবাসা মাখানো।
আমি জানি আমার আয়ান আমাকেই ভালবাসে শুধু আমাকেই, কিন্ত ওর মুখে অন্য কারো সামান্য প্রশংসা শুনলে আমার অন্তর পুড়ে যায় আমার মাথায় খুন চেপে যায় ইচ্ছে করে কালবৈশাখি ঝড় হয়ে সব লন্ড ভন্ড করে দেই।
আয়ান বাহির থেকে দরজা খুলে বাসায় ঢুকে বেড রুমে উকি দিয়ে দেখে মায়া চোখ বন্ধ করে আছে সে চুপি চুপি মায়ার কাছে যেয়ে মায়ার কপালে ছোট্ট একটু চুমু দিয়ে,আমার রাগ কুমারী পূর্ণিমা চাঁদের মত মুখটা আমাবস্যা করে কি ভাবছে ?
মায়ার চোখ বেয়ে এবার সত্যি শ্রাবণের ধারা নেমে আসে। আয়ান মায়ার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে এই পাগলী মেয়ে কি হচ্ছে এসব!! তুমি জান না তোমার চোখের পানি আমি সহ্য করতে পারি না।
মায়া আয়ানের হাত শক্ত করে ধরে, আয়ান আমি রাগী না এটা আমার কষ্ট আমি অন্যদের মত ভাল রাধতে পারি না, তুমি পেট ভরে খেতে পারো না এটাই আমার কষ্ট, তবে আমি হিংসুক, হ্যা! আমি সত্যি হিংসুক সেটা শুধু তোমার ভালবাসার জন্য, এ হিংসা আমার ভালবাসার হিংসা।
হা - হা - হা আয়ান উচ্চ শব্দে হেসে মায়ার মাথা নিজের বুকে চেপে ধরে পাগলী মেয়ে আমার ফর্মালিটিস ও বুঝে না! আমার দুষ্টমিও বুঝে না! !
অপটপিক : তিনদিন আগে আমার ভাবী রান্না করাব সময় মোবাইলে কথা বলতে বলতে তরকারীতে লবন দেওয়ার কথা ভুলে যায়, ভাইয়া ভাবীকে কিছু বলেনি শুধু ভাত না খেয়ে উঠে গিয়েছে তাতে দেখলাম ভাবীর মন খারাপ করে বসে আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:১৬