somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেম-কচুরি

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কি মনে হয় ? পারবি ? আমার মনে হয় পারবি না ! কথাটা বলতেই হো হো করে হেসে ওঠে সুবল...
আসলে হাসবারই কথা , কিছুক্ষন আগে যা ঘটে গেছে ,তা মনে হলে আমারও রাগের চেয়ে হাসিই পায় বেশী, তবে মনের মধ্যে যে একটা জেদ রয়ে গেছে এটা কিন্তু সত্যি ...

গেলো মিনিট বিশেক আগে আমি টুম্পাকে প্রোপজ করেছি , আমাদের ক্লাসের সবার সামনে তাও আবার কচুরি ফুল দিয়ে ! আচ্ছা !! কুচুরি ফুলের ভাল কোন নাম আছে ? আছে হয়তো । সে যাই হোক , কচুরি ফুল দিয়ে কেউ কোন মেয়েকে প্রোপোজ করে ? আমি নিজেও শুনি নাই...
টুম্পা হচ্ছে আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে , পরী দেখেছেন ? দেখননিতো ? তাহলে বুঝবেন কিভাবে ? স্বপ্নে যদি কোন দিন পরী দেখেন তাহলে বুঝবেন সেটাই টুম্পা !!!

আমাদের ক্লাসের সবাই টুম্পাকে পেতে চায় । আর চাইবেই না কেন ? এরকম একজন রমনী কারো গার্লফ্রেন্ড হোক সেটা যে কোন পুরুষই চাইবে ।
আরেকটা কথা বলি আমি আমাদের ক্লাসের ৭ নাম্বার ব্যক্তি এর আগে আরো ৬ জন টুম্পাকে প্রোপজ করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে । ছোটবেলায় দাদীর গল্পে শুনেছিলাম রাজার ৭ ছেলের মধ্যে সপ্তমজন রাজকন্যাকে পেতে সক্ষম হয়েছিল আর বাকী সবাই ব্যর্থ । তাই মনে মনে জাল বুনতে ক্ষতি কি ? আর প্রত্যাখ্যাত হয়ে জেদটা আরএকটু বেশী বেড়ে গেল । টুম্পাকে ছাড়ছি না !!

শোন সুবল , হাসবি না ! আমি টুম্পাকে আমার বানাবো আর এটাই শেষ কথা ।
সুবল আমার কথা শুনে মনে হয় আরেকটু মজা পেল , তখনি
সে বলল- মামা , তাইলে বাজী হয়ে যাক?
-ওকে ডান
দেখ - ডান-বাম যাই বলিস , তোর হাতে সময় সাত দিন এই সাতদিনের মধ্যে টুম্পার সাথে প্রেম করতে হবে নাইলে তুই বাজীতে হারবি আর আমার একটা ইচ্ছা পূরন করবি ! না হলে আমি তোর ইচ্ছা !!
-ওকে ! কথাটা বলেই হোস্টেলের দিকে রওনা দিলাম।l

সারাদিন গেল ভাবতে ভাবতে কি করে টুম্পাকে পাব। না পেলেতো না পাওয়ার কষ্ট আবার বাজীতে হার , কি করবো বুজতে পারছি না । আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয় ! সিনেমাতে দেখেছি নায়ক তার ভালবাসা পাবার জন্য নায়িকার সামনে গিয়ে হাত কাটে আর তখনি
নায়িকা তার ওড়না ছিড়ে তার কাটা হাত বেধে দেয় তারপর জড়িয়ে ধরে গান শুরু হয় । আমার কি তাই করা উচিৎ ?
এখনি যাব ওর বাসায় ? না ! এখন অনেক রাত হয়েছে ,এখন না ।
আরে মাথা পুরাই গেছে আমার !!! রাত হলে মাথায় আরো বেশী সমস্যা হয়। আচ্ছা কচুরি ফুল দিয়ে প্রোপোজ না করে , গোলাপ দিয়ে করলে মনে হয় রাজি হত !!!
আরে কুচুরি ফুলের মর্ম তুমি কি বুঝবে বালিকা ? কখনো কচুরি ফুলের পাপড়ি হাতে নিয়ে দেখো কত সৌন্দর্য তার ।আমি নি:সন্দেহে বলতে পারি তা গোলাপকেও হার মানাবে।
গন্ধ ?
সেতো আমার মনেও আছে , ভালবাসার গন্ধ ।তোমার মনে আমার জন্য মায়া থাকলে, তা তুমি আপনাআপনি পাবে ।

দেখতে দেখতে সাতদিন চলে গেল, আমি কিছুই করতে পারলাম না । কারন , সেদিনের পর থেকে টুম্পা আর ইউনির্ভাসিটিতে আসেনি । সুবল জিতে গেছে তার বাজীতে , কিন্তু আমার মনের অবস্থা দেখে সে আর কিছু বলেনি। টুম্পার কোন খোজ পাচ্ছি না ,এমনকি ওর বান্ধবীরাও জানে না । নিজেকে নিজের কাছে অনেক ছোট মনে হচ্ছে ।আচ্ছা ঐদিনের ঐকাজটা না করলে মনে হয় এতো কিছু হত না । মনে মনে ভাবলাম আমিও আর যাব না ।
এভাবে দুমাস চলে গেল । দুমাস পরে একদিন গেলাম ইউনির্ভাসিটিতে । ততদিনে পরিস্থিতি একদম স্বাভাবিক হয়ে গেল । তবে ক্লাসে না গিয়ে গেলাম লাইব্রেরীতে। লাইব্রেরীর বাইরে দেখি টুম্পা একছেলের সাথে কথা বলছে ।
আরে ভাই বললে বলুক , আমার কি ?
আমি আমার মত লাইব্রেরীতে ঢুকি ।

-পবিত্র !!!
আমি ?
-জ্বি, তুমি !!!
আমি মনে হয় স্বপ্ন দেখছি , টুম্পা কি , আমাকে ডাকলো ?
আরে স্বপ্ন না !! আমার দিকেই তো আসছে...

-পবিত্র !!! তোমার বাইক আছে ?
আছে তো । কেন ?
-এটা নেও !!
চিঠি ! এযুগে চিঠি ?
-এখন খুলবে না আমি যাওয়ার পর খুলবে ।

মেয়েদের মন কেউ বুঝে না ! আজ পর্যন্ত কেউ যদি বলে আমাকে , সে মেয়েদের মন সম্পর্কে জানে তবে আমি তাকে বলবো ,
-অাপনি ভাই আবার জন্ম নিয়ে আসেন ।
যাই হোক চিঠি খুলে রীতিমত আমি অবাক । চিঠিতে শুধু এতটুকু লেখা -

“রাত ৮টার সময় বাইক নিয়ে আমার বাসার সামনে আসবে।”

আরে.. কাম নাই আমার ? রাতবিরাতে তোর বাসার সামনে যাব? বললেই হলো !!!

রাত ৮টা । টুম্পার বাসার সামনে বাইক নিয়ে ১ঘন্টা যাবত দাড়িয়ে আছি , মহারানীর কোন খবরই নাই ।
আপনি কি মনে করেছেন ?আমি যাব না ? তাই কি হয় ?যেতে তো আমাকে হবেই । খুব চাপ ভাই ..
ঐতো টুম্পা আসছে , কিন্তু বৌ সেজে কেন ?

-পবিত্র!!!! জলদি্ বাইক স্ট্যাট কর ।
মানে ?
-সর ...মানে মানে করার সময় নাই ! চাবি দাও !
তুমি বাইক চালাতে পারো?
এ মেয়েতো সাংঘাতিক রে বাবা!! যেমন মনে করছিলাম তেমন না ।

শো শো করে বাইক চলছে, ৭০ গতিতে ,
আর চালক ? টুম্পা !!
আমি পিছে বসে । আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না !!

টুম্পা বাইক থামাও !আমার কথা একটু শোন আগে । কিছু দূর গিয়ে আমরা থামলাম । জায়গাটা একটু নিরিবিলি, আমি আগে কখনো আসিনি ।
আমাকে একটু বল টুম্পা, আমরা কোথায় যাচ্ছি আর তুমি বৌ সেজে কেন ?

টুম্পা আমার দিকে হাসতে হাসতে বললো -আজ আমার বিয়ে ছিল আর বিয়ের আসর থেকে আমি তোমার সাথে পালিয়ে আসলাম।

কিন্তু তুমিতো আমাকে ভালবাস না তাহলে কেন আমার সাথে পালালে?

-পবিত্র ! তুমি জানো আমি তোমাকে কতটুকু ভালবাসি ? সেদিনের পর থেকে আমি প্রতি রাতে তোমার ফুলের গন্ধ পেতাম ।সেদিন সবার সামনে তোমাকে ফিরিয়ে দেবার একটাই কারন ছিল ..আমি চাই না আমাদের ভালবাসার কথা কেউ জানুক ।তবে তুমি চাইলে এখন আমাকে ফিরিয়ে দিতে পার ।

আমি একটু একটু করে টুম্পার কাছে এগিয়ে গেলাম " তোমার হাতটা একটু ধরি?
টুম্পা আমার দিকে বড় বড় চোখ করে " হাত ধরতে হলে ফুল দিতে হবে ?

কি ফুল ?
-কচুরি ফুল !!!
গন্ধ পাও?
-পাইতো ........
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫৭
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×